10/10/2025
রিফাইন চিনির ক্ষতি সম্পর্কে এখন অনেকেই জানেন। বাট, রিফাইন লবণ নিয়ে তেমন কোনো কথা নেই! কিন্তু কেন?! আসলে রিফাইন লবনের ইনসাইড হয়তো অনেকেই জানে না!
তাই আসুন, একটু আলাপ করি...
লবনের (Nacl) মূল উপাদান হল, সোডিয়াম (Na) এবং ক্লোরাইড (Cl), সামুদ্রিক লবনে প্রায় 95% Nacl থাকে এবং বাকি 5% থাকে ট্রেস এলিমেন্ট। কিন্তু এটাকে রিফাইন করে ১০০% সোডিয়াম ক্লোরাইড করতে ধাপে ধাপে কিছু কেমিক্যাল যোগ করা হয় এবং প্যাকেটজাত করার আগেও কেমিক্যাল যোগ করা হয়।
লবণ নিয়ে বিস্তারিত ঘাটাঘাটি করে দেখলাম, লবণ রিফাইন করা হয় মূলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পারপাজে। কেননা গ্লাস, প্লাস্টিক, ব্যাটারি ও পেপার থেকে শুরু করে অসংখ্য জিনিসপত্র তৈরিতে রিফাইন লবণের (১০০ Nacl) প্রয়োজন হয়। উল্লেখ্য, রিফাইন লবণে কোনো আয়োডিন থাকে না। তাই সেই একই লবণ মানুষকে খাওয়ানোর জন্য সিনথেটিক আয়োডিন যোগ করা হয়।
WHO/UNICEF/ICCIDD সুপারিশ করে যে, প্রতি কেজি লবণে ২০-৪০ মিলিগ্রাম আয়োডিন যোগ করতে হবে। ২০১৪ সালে প্রথম আলোর এক নিউজে বলা হয়েছে, ৫২ শতাংশ লবণে আয়োডিন মেশানো হচ্ছে: বিসিক।
থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে মানব শরীরে আয়োডিনের প্রয়োজন আছে। তবে সেই আয়োডিন কেমিক্যাল থেকে কেনো নিতে হবে?! এটা কখনো ভেবেছেন?! হ্যাঁ, বিশ্ব ব্যবসার জন্য আপনার সিন্থেটিক আয়োডিন ও রিফাইন লবণ খাওয়া প্রয়োজন। কি অবাক হলেন?! মূলত ফুড এবং ড্রা'গ মা:ফিয়ারা প'শ্চিমের বিশেষ প্রেসক্রিপশনে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে, ভয় দেখিয়ে সাদা চিনির মত সাদা লবণেও আমাদের অভ্যস্ত করেছে ফেলেছে!
অথচ, আয়োডিনের প্রাত্যহিক উৎস গুলোর মধ্যে রয়েছে দুধ, ডিম, মাছ বিশেষত সামুদ্রিক মাছ ও শৈবাল, রসুন, বাদাম, ডালিম, আপেল, কলা, কমলা, আঙুর, তরমুজের মতো ফল এবং রিফাইন বিহীন সামুদ্রিক লবণ।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি লিটার দুধে প্রায় ৬০০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন থাকে। উপরের অন্যান্য খাবারেও কমবেশ আয়োডিন আছে।
এখন কথা হল, আয়োডিনের এতগুলো বিকল্প থাকতে রিফাইন লবণে সিন্থেটিক আয়োডিন মেশিয়ে খাওয়াতে হবে কেন?! তাছাড়া হিউম্যান বডিতে সবারই যে আয়োডিনের ঘাটতি আছে, এটা কি পরীক্ষা করা হয়েছে?! হয় নাই! তাহলে পরীক্ষা না করেই সবাইকে এভাবে রিফাইন লবণ খাওয়ানোর কারণ কি?! ওই যে বললাম না, বিশ্ববাণিজ্য! কেননা অতিরিক্ত আয়োডিন ও রিফাইনকৃত লবণে অনেক ক্ষতি রয়েছে! আর যত ক্ষতি তত ব্যবসা! এখনো বুঝেন নাই?!
সুতরাং আপনার ভালো না লাগলেও এটাই সত্য যে, প্যাকেটজাত ধবধবে সাদা, মিহি ও আয়োডিনযুক্ত লবণ সুস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফ্যাক্টরিতে যেই প্রসেসে লবণ রিফাইন ও আয়োডাইজ করা হয় তাতে সামুদ্রিক লবণের প্রাকৃতিক গুণাবলি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, সিন্থেটিক আয়োডিনযুক্ত প্যাকেটজাত রিফাইন লবনে মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে!
আয়োডিনের ঘাটতি হলে যেমন গলগণ্ড রোগ হতে পারে (এটার অবশ্য আরো অনেক কারণ আছে), মস্তিষ্কের বিকাশ কম হওয়া সহ কতিপয় সমস্যা হয়, তেমনি আয়োডিন বেশি খেলেও অনেক সমস্যা হয়। [বোল্ডস্কাইয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ।]
শরীরে আয়োডিন বেশি হলে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। এতে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোন বেশি নিঃসৃত হয়ে হাইপারথাইরয়েড, থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ এবং থাইরয়েড ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও জ্বর, পাকস্থলীতে ব্যথা, জ্বালাপোড়া, বমি ও ডায়রিয়া সহ আরো অনেক সমস্যা হয়।
ফাইনালি, তাহলে সমাধান কি?!
আমরা কি খোলা লবন ব্যবহার করব? হ্যাঁ, এটাই সমাধান। তবে বাজারে দুই ধরনের খোলা লবণ পাওয়া যায়। একটা হচ্ছে একদমই 'র', যেটা খুবই নিম্নমানের এবং এতে ধুলা ও ময়লা থাকে। আর একটা হচ্ছে, যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা লবণ, তবে প্রাকৃতিক। এটা মধ্যম পর্যায়ের। আমি সবসময় মধ্যম পন্থা অবলম্বনের পক্ষে। এটা রান্নায় ব্যবহার করুন তবে খাবারের সাথে (এক্সট্রা লবণ প্রয়োজন হলে), সালাদ ও শরবতে পিংক সল্ট ব্যবহার করুন। পিংক সল্টে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় 84 টি মিনারেলস আছে!!
বিশ্বাস করুন, আগামীতে পিংক সল্ট সুপার ফুড হতে যাচ্ছে! পিংক সল্ট প্রধানত ডিটক্সিফিকেশনে, হজম শক্তি বাড়াতে, ঘুমের উন্নতি ঘটাতে, হাইড্রেশন বাড়াতে, হরমোনের ব্যালেন্স ঘটাতে এবং লো প্রেসার জনিত মাইগ্রেন সারাতে ম্যাজিকের মত কাজ করে।