13/05/2024
Facebook Friend আসলেই কি Friend?
Friend বা বন্ধু এমন একটি সম্পর্ক , মানুষ নিজ পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনদের বাহিরে যাকে বেশি বিশ্বাস করে, যার উপর বেশী আস্থা রাখে, অন্য কাউকে না বলা কথাটিও যাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারে। বন্ধুত্বের গভীরতা কিংবা মাত্রা নির্ধারণে বাংলায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে, “বিপদে বন্ধুর পরীক্ষা হয়”। অর্থাৎ প্রকৃত বন্ধুরা বন্ধুর বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। Friendship সম্পর্কিত Wikipedia's definition হলো , “Friendship is a term used to denote co-operative and supportive behavior between two or more people”। অর্থাৎ পারস্পরিক নির্ভরতা, সহযোগিতা এবং আস্থা ইত্যাদি হলো বন্ধুত্বের মূল ভিত্তি।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে Facebook এর কল্যাণে Friend শব্দটি বৈশ্বিক মাত্রা পেয়েছে। Facebook এর একজন একাউন্ট হোল্ডার ইচ্ছে করলে শত, সহস্র বন্ধু নির্বাচন করতে পারেন। বন্ধুরা দেশী/বিদেশী, পরিচিত/অপরিচিত, মেয়ে/পুরুষ, বাস্তব/অবাস্তব, সত্যিকার এমনকি ফেক-বন্ধুও হয়ে থাকেন। সোস্যাল মিডিয়া বিশেষ করে Facebook এর আমাদের অগণিত বন্ধু তৈরি হয়, যা নিয়ে আমরা অনেকে গর্বিত হই।
সত্যিকারের বন্ধু পাওয়া আসলে সৌভাগ্যের বিষয়। জীবনে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য বন্ধুর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বের বৃহত্তম অলাভজনক প্রতিষ্ঠান Mayo Clinic বিশেষজ্ঞ স্টাফদের মতে মানুষের স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকার উপর বন্ধুত্বের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ভালো বন্ধু থাকা মানে স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা, জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়, বিষাদ দূর হয়ে জীবন আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠে, নিজের উপর আস্থা বৃদ্ধি পায়, এমনি আরো অনেক কিছু। অর্থাৎ মানসিক প্রশান্তি এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে বন্ধুত্বের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্টাফদের মতে বাস্তব জীবনে বন্ধুদের সাথে সহজে সংবেদনশীল তথ্যাদিও শেয়ার করা যায়। কিন্ত সোস্যাল মিডিয়ার বন্ধু বাস্তব জীবনের বন্ধুদের মত বিশ্বস্ত না হওয়ায় তাদের সাথে সংবেদনশীল তথ্যাদি বিনিময় মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ফেক সোস্যাল মিডিয়া বন্ধুর দ্বারা অপরিসীম ক্ষতির আশংকা থাকে।
Facebook Friend আসলেই কি Friend? বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাপী অনেক গবেষণা হয়েছে। Oxford University এর Evolutionary Psychology বিষয়ের প্রফেসর Robin Dunbar এর গবেষণাটি বিশ্বব্যাপী বহুল সমাদৃত। তার গবেষণামতে সোস্যাল মিডিয়ার বন্ধুদের ওপর বাস্তবের বন্ধুদের ন্যায় মোটেও নির্ভর করা যায় না। তিনি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন মানুষের Cognitive Limitation থাকার কারণে অগণিত বন্ধুর সাথে নিবিড় বা নির্ভরশীল সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব নয়। বন্ধুত্বের নিবিড়তা নির্ভর করে এর সংখ্যার উপর। তিনি প্রকৃত বন্ধুত্ব স্থাপনের নিমিত্ত বন্ধুদের সংখ্যা সম্পর্কেও নিম্নরুপ ধারণা দিয়েছেনঃ
— Five “intimate” friends. This is your support group — the people who know you best.
— 15 “sympathetic” friends whom you can confide in.
— 50 “close” friends. You may not see them all the time, but if you were having a milestone birthday party, they’d be on your guest list.
— Now we have the 150 “friends.” If you ran into them on the street, you’d probably suggest a cup of coffee (or, in my case, a beer) for a chance to catch up.
— The next circle out is 500 “acquaintances.” You probably know just the briefest of back stories about them like how you know them.
— Finally, we have 1,500 as our cognitive limit. On a good day, we may remember their name if we see them.
অর্থাৎ বন্ধু সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বন্ধুত্বের গভীরতা/নিবিড়তা হ্রাস পায়।
Science Museum Group এর গবেষক Roger Highfield এক নিবন্ধে গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখিয়েছেন সোস্যাল মিডিয়ার বন্ধু কোনভাবেই বাস্তব জীবনের বন্ধুর ন্যায় উপকারী নয়। সহযোগিতার Benefit to cost ratio বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায় পারস্পরিক বন্ধনের দৃঢ়তার উপর সহযোগিতার মাত্রা নির্ভরশীল। অর্থাৎ স্থায়ী পারিবারিক বন্ধন, স্থায়ী অংশীদারিত্ব কিংবা স্থায়ী বন্ধুত্বের মাধ্যমে সহযোগিতা জোড়ালো হয়। গবেষণায় দেখা যায় মানুষের বাস্তব জীবনের সামাজিক বন্ধন , এমনকি পশু-পাখিদের সামাজিক বন্ধনের স্কোর Facebook বন্ধুদের সামাজিক বন্ধনের স্কোরের চেয়েও বেশী। অর্থাৎ Facebook বন্ধুদের পারস্পরিক বন্ধন বাস্তব জীবনের পশু-পাখিদের বন্ধনের চেয়েও দূর্বল। তাই অগণিত Facebook বন্ধু থাকার পরও নির্ভর করার মত বন্ধুর সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য হয়ে থাকে। সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক স্থাপন দুষণীয় কিছু নয়। তবে মনে রাখা উচিত সোস্যাল মিডিয়ার বিপুল সংখ্যাক বন্ধুকূল কখনো বাস্তবের স্বল্প সংখ্যক বন্ধু-গ্রুপের বিকল্প হতে পারে না।
পরিশেষে একটি বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবাদের সাহায্য নিয়ে বলা যায় Facebook Friend হলো কাজীর গরুর মত, কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই।