01/05/2025
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস আজ ...
আমার পক্ষ থেকে প্রত্যেক শ্রমজীবী মানুষের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আন্তরিক শুভেচ্ছা রইলো।
পৃথিবীজুড়ে গড়ে ওঠা তিলোত্তমা নগরীগুলোর রূপ-লাবণ্যে শ্রমিকের কৃতিত্বই অগ্রগণ্য। কল-কারখানা থেকে নিয়ে সুবিশাল ইমারত, ফসলের মাঠ পর্যন্ত সব কিছুতেই শ্রমিকের মমতার হাত।
কিন্তু শত আক্ষেপ! সভ্যতার কারিগর এ শ্রেণিটি সর্বদা উপেক্ষিত, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিতই থেকেছে। উদয়াস্ত শ্রম অব্যাহত রেখে তিল তিল করে যে শ্রমিক মালিকের অর্থযন্ত্রটি সচল রাখে, সেই মালিকের অবিচারেই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তার জীবন। শ্রমিক কষ্ট করে সুবিশাল অট্টালিকা তৈরি করলেও তাতে নেই তার সামান্য ঠাঁই। তাকে থাকতে হয় গাছতলায়। শ্রমিকদের ওপর হাজার বছর ধরে চলা লাঞ্ছনার অধ্যায়ের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটেছে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাত ধরে। মানবতার পরম বন্ধু হজরত মুহাম্মদ (সা.) শ্রমিক নির্যাতনের সাইক্লোন থামিয়ে দিয়েছেন কঠোর হস্তে। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণেও বাদ পড়েনি শ্রমিক।
বৈধ কোনো পেশাই ছোট নয়—এই বাণীর মাধ্যমে কর্মের প্রতি মানুষের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারোর নিজ পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে এনে বিক্রি করা কারো কাছে হাত পাতার চেয়ে উত্তম। তাকে (প্রার্থীকে) সে কিছু দিক বা না দিক।’ (বুখারি : ২/৭৩০) ভিক্ষার প্রতি নিরুৎসাহিত করে ভিক্ষার হাতগুলোকে শ্রমিকের হাতে রূপান্তর করেছেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে ওয়াদাবদ্ধ হবে যে সে কখনো ভিক্ষা করবে না, তার জান্নাতের ব্যাপারে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করব।’ (আবু দাউদ : ২/৪২৭) উপার্জনের জন্য শ্রমে লিপ্ত থাকাকে তিনি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ বলে উল্লেখ করেছেন। এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ দিয়ে গমন করলে সাহাবায়ে কেরাম লোকটির শক্তি, স্বাস্থ্য ও উদ্দীপনা দেখে বলতে লাগলেন, এই লোকটি যদি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে থাকত! রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘লোকটি যদি তার ছোট ছোট সন্তান অথবা তার বৃদ্ধ মাতা-পিতার জন্য উপার্জন কিংবা নিজেকে পরনির্ভরতা থেকে মুক্ত রাখতে উপার্জনের চেষ্টায় বেরিয়ে থাকে, তাহলে সে আল্লাহর পথেই রয়েছে।’ (হাইসামি : ৪/৩২৫) শ্রমিকের জন্য ক্ষমাপ্রাপ্তির ঘোষণাও করেছেন তিনি। একটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি শ্রমজনিত কারণে ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যা যাপন করে, সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েই তার সন্ধ্যা অতিবাহিত করে।’ (তাবরানি; ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, পৃষ্ঠা-০২) একজন শ্রমিকের জন্য এর চেয়ে আশার বাণী আর কী হতে পারে!
শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যথাযথ মজুরিপ্রাপ্তি। মালিকগোষ্ঠী বরাবরই বিভিন্ন অজুহাতে শ্রমিকদের টাকা মেরে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখে। ইসলামের ঘোষণা হলো, যারা শ্রমিকের পাওনা দিতে টালবাহানা করবে, হাশরের ময়দানে আল্লাহ নিজেই তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের প্রতিপক্ষ। আর আমি যার প্রতিপক্ষ, তাকে পরাজিত করবই। তন্মধ্যে এক শ্রেণি হলো, যে কোনো শ্রমিক নিয়োগ করে, অতঃপর তার থেকে পুরো কাজ আদায় করে নেয় কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করে না।’ (বুখারি : ২/৭৭৬) শ্রমিকের পাওনা যথাসময়ে পরিশোধের ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর মতো এত কঠোর হুঁশিয়ারি আর কেউ উচ্চারণ করেননি। অনতিবিলম্বে মজুরি প্রদান করার ব্যাপারেও তিনি ছিলেন সবচেয়ে আন্তরিক। মজুরির প্রশ্নে মানবসভ্যতার ইতিহাসে শীর্ষে অবস্থান করছে তাঁর বাণী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দাও।’ (ইবনে মাজাহ : ২/৮১৭) মজুরির পক্ষে বিশ্বময় ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হওয়া তাঁর এই বাণী বাস্তবায়িত হলে এক দিনের জন্যও শ্রমিকদের কান্না শুনতে হতো না পৃথিবীবাসীকে।
শ্রমিকের রক্তচোষা কর্তাব্যাক্তি এবং ঘুষ দিয়ে চাকরি জোগাড় করা মানুষ থেকে সৎ পথের ঘাম ঝড়ানো শ্রমিকের সম্মান এবং মূল্য অনেক বেশি।