24/07/2025
প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম।
(সায়ান এর আম্মুর পোস্ট)
আমি এবং ইউসুফ স্যার হয়তো এমন কোনো ভুল করে ফেলেছি যার জন্য আমাদের মহান রব এই কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন। হয়তো আমরা জানিও না, কোথায় ভুল করলাম। কিন্তু ফলাফল? আমাদের জীবনের সমস্ত আলো নিভে গেল—আমাদের সায়ান আর নেই।
আমার ছোট্ট, মেধাবী, শান্তশিষ্ট ছেলেটা... যে প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার স্বপ্ন দেখতো, যে একটু পড়লেই সব মনে রাখতে পারতো, যে বয়সে রোজা রাখা কঠিন—সে ক্লাস টু থেকে ৩০ রোজা রাখতো, নিয়মিত নামাজ পড়তো—সেই সোনামানুষটাকেই আমরা হারালাম।
আজ তার ছবি পত্রিকায়, ফেসবুকের প্রতিটি পোস্টে। অথচ আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম—একদিন সে আবিষ্কার করবে কিছু, ছড়াবে আলো। ওর বাবা প্রায়ই বলত, “সীমা, আমাদের ছেলে একদিন বড় কিছু করবে।” সেই ছেলেটাই আজ আক্ষরিক অর্থেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে যেখানে জ্ঞান ও স্বপ্ন গড়ে ওঠার কথা, সেখানে এমন নির্মম পরিণতি! রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছে। ওর বাবার স্বপ্ন ছিল, ছেলেকে আমেরিকায় পড়াতে চাই। নিরাপত্তার জন্যই তো দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আজ মনে হয়, সময়ের আগেই সে আমাদের ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাল—চিরদিনের জন্য।
ঘটনার দিন এক অজানা নাম্বার থেকে ফোন এলো। জানলাম, ইউসুফ স্যারের এক ছাত্র, অমিত, আমাদের ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। সেই ছেলেটির কাছ থেকেই শুনলাম, আমার ছেলেটি নিশ্বাস নিতে পারছিল না, তবু সেই অবস্থাতেও আমার ফোন নাম্বার দিয়ে গেছে—মাকে যেন জানায়।
বাংলাদেশ মেডিকেলে গিয়ে যখন ওর দগ্ধ শরীর চাচ্চু দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে, তখন সায়ান বলে, “চিন্তা কোরো না চাচ্চু, সব ঠিক হয়ে যাবে।” ওর বাবা গেলে মাথা নেড়ে সাড়া দেয়—এই শেষ মেলবন্ধন।
আমি যখন ওকে দেখতে গেলাম আইসিইউতে, চিনতেই পারিনি। বললাম, “মা, বাবা, সোনা পাখি, শুধু পড়ো — লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জোয়ালিমীন।”
সে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল—এটাই আমাদের শেষ আলাপ।
আজ দিন যেন থেমে গেছে। রাত যেন দীর্ঘ এক শূন্যতা। আমি জানি না, কীভাবে ওকে ছাড়া এই জীবন পার করবো। আমার বুক ফেটে যায়—কখন যেতে পারবো আমার সোনা পাখির কাছে!
সোনা, মা যদি কখনো তোমার কোনো চাওয়া পূরণ করতে না পারে, আমাকে ক্ষমা করো।
আমি তোমার ব্যর্থ মা — যে কিছুই করতে পারিনি।
sir,Shammi mam