09/03/2025
শ্রদ্ধেয় আব্বু,
সবাই যে বলে বাবা মারা গেলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়
চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায়, সমস্যা বেড়ে যায়
একা একা লাগে, বটবৃক্ষের ছায়া থাকেনা
প্রিয়জনের মায়া থাকেনা, আত্নীয়ের খবর থাকেনা
কষ্ট - বেদনার অন্ত থাকেনা
কই! আমার বেলায় তো তেমন কিছু হলোনা!
আমার জীবনের কোনো কিছুই এলোমেলো হয়নি,
সকাল বেলা খড়খড়ে রোদ আমার উঠোনজুড়ে খেলা করে
রাতে আমার প্রিয় ছাদ জুড়ে জোৎস্নার আলো ঠিকরে পড়ে
আমার নিঃসঙ্গতায় সঙ্গী হয় আকাশের অজস্র তারারা
আমার অনাত্নীয় আত্মীয়ের সংখ্যা বেড়েই চলছে দিনদিন
আব্বা, আমার কষ্ট - বেদনা বলতে কিছুই নাই
দুমড়ে মুচরে যাওয়া বেদনাহত অন্তরে কষ্ট অনুভব করার অনুভূতিটাও নাই।
আব্বা, আপনার গড়া ভিটে, মাটি, ইমারত
আপনার পছন্দের আলনা, আলমারী, খাট
শক্ত তুলার শক্তপোক্ত তোষক
বাছাই করা শিমুল তুলার বালিশ
আপনার যত্নের হাতে ফলানো শখের সবজি বাগান
নিয়ন্ত্রিত সব নিরাপত্তা, নিরাপদ বেড়াজাল
আমার আকাশসম দুশ্চিন্তার কারন দূর করে দিয়েছে।
আব্বা কোনো অপূর্ণতা রেখে যাননি আপনি।
আপনি আমাদের চার ভাই বোনের আদর্শ পিতা
তেমনি আমার মায়ের প্রতি ছিলেন দায়িত্বশীল।
আজ দুই মাস পূর্ণ হলো আপনার বিদায়ের
মুয়াজ্জিন আযান দেয়, সূর্য ওঠে নিয়মিত
দিনের আলোর সাথে সাথে আমাদের
কর্মব্যস্ততাও বাড়ে
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, সন্ধ্যার পর রাত
যখন চিরায়ত নিয়মে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেই
আপনার পছন্দে বানানো শক্ত তুলার বিছানায়
আব্বা, শুরু হয় বিষন্নতা, একাকীত্ব, ব্যাথা।
হৃদয় নিংড়ে বিচ্ছেদ বেদনা চোখ দিয়ে উপচায়
বুকপাঁজরে আটকে পড়া দীর্ঘশ্বাস যেনো প্রাণ ওষ্ঠাগত করে দেয়
আপনাকে শক্ত মাটির বিছানায় শুইয়ে রেখে আপনার বানানো নরম শিমুল তুলার বালিশে
আমার ঘুম আসেনা সারারাত।
আব্বা মনে হয় যদি সব এলোমেলো থাকতো
মাথার উপর ছাদ না থাকতো,
না থাকতো শক্ত তোষক, শিমুল তুলার নরম বালিশ
আমার উঠোনজুড়ে যদি থাকতো মেঘের আশীর্বাদ
জোৎস্না মিলিয়ে যদি নেমে আসতো অমাবশ্যা
জীবনজুড়ে থাকতো দুঃখ, কষ্ট, বেদনা
তাও ভালো হতো- হ্যা তাও সুখকর হতো
সবকিছুর বিনিময়ে যদি আপনি বেঁচে থাকতেন
তাহলেই আমার সব পাওয়া হতো আব্বা।
আপনার প্রশস্ত বুকে মাথা রাখতে পারলে আমার ঘুম হতো
আপনার ফোন কল পেলে গলা পরিস্কার করে সালাম দিয়ে কথা বলতে পারলে
বুকে আটকে পড়া তীব্র গরম বাতাসটা বের হয়ে যেত নিঃশ্বাস হয়ে- আমি স্বস্তি পেতাম।
আজ যে স্বাধীনচেতা অনুভূতিটা আমার হয়
তার চেয়ে যদি আপনি ফোন করে জিজ্ঞেস করতেন-
তুমি কোথায় আব্বু? এখন রাত কয়টা বাজে?
তাহলেই ভালো হতো।
ভালো হতো যদি মশারি না টানানো নিয়ে দারাজ কন্ঠে একটু বকে দিতেন।
ভালো হতো খুউব ভালো হতো আব্বা।
ভালো হতো যদি সময়মত না খাওয়া নিয়ে নছিহত করতেন হালাল রিজিকের, সুস্থ্য শরীরের, অসুস্থ্যতার গ্লানীর
আব্বা আমি অবুঝ শিশুর মতো আপনার কথা শুনতাম।
শুনতাম আপনার স্নেহভরা মুখ থেকে নিঃসৃত প্রত্যেকটি কথা।
আব্বা আপনি বলতেন, জীবন নিয়ে কখনো দুশ্চিন্তা করবেনা,
তোমার- আমার জীবনের সূচিপত্র লেখা হয়ে গিয়েছে।
মনে রাখবে, প্রাপ্তিতে কৃতজ্ঞতা আল্লাহকে খুশি করে।
অপ্রাপ্তিতে কৃতজ্ঞতা আল্লাহকে আরো করুনাময় করে।
তোমার প্রাপ্য একটা ফোটাও অকার্যকর হবেনা
যুক্ত হবেনা কোনো অপ্রাপ্য অংশও
তবে সবসময় কল্যাণকর সবকিছুর জন্য দোয়া করবে
আল্লাহর কাছে।
মনে রাখবে, একমাত্র দোয়া তোমার প্রাপ্যকে প্রাচুর্যতায় পরিবর্তন করতে পারে।
আব্বা, পবিত্র রমজান মাস চলছে
আপনি বলতেন, সাহরী না খেয়ে রোজা রাখতে পারবানা
সাহরী খাওয়া সওয়াবের আব্বু, তাড়াতাড়ি ওঠ।
আমার কানে যেনো কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হয়
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আপনি নয়, আম্মু
আমার আরেক জান্নাত আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে নেমে আসে নোনা জলের স্রোতধারা।
আব্বা, আপনার ছেলেটা এখনও নিজে নিজে ওঠার মতো বড় হয়নি।
আব্বা আপনি সবকিছুই পূর্ণ করেছেন জীবনের
কোনো অপ্রাপ্তি, অপূর্ণতা আমার নাই
শুধু আপনি ছাড়া আব্বা।
আব্বা, বিধাতার নিয়মে আপনি চলে গিয়েছেন
আপনার স্নেহ ও দোয়া আমি পেয়েছি,
এবার আপনার প্রাপ্তির হিসেবের পালা-
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।