16/10/2025
ব্যাংকে তার ঋণের পরিমাণ ২ কোটি টাকার উপরে, অথচ তিনি ১ টাকাও ঋণ নেন নাই…
গত সেপ্টেম্বরের ঘটনা। চেম্বারে বসে কাজ করছি। সকাল সকাল এক ভদ্রলোকের আগমন। নাম দবির আহম্মেদ (ভিন্ন নাম ব্যবহার করা হল)। আজ তার শুনানির দিন ধার্য আছে। জানতে পারলাম, ভদ্রলোকের নামে অর্থঋণ আদালতে মামলা চলমান, তিনি একজন ঋণখেলাপি। তার চেহারার মধ্যে অভিজাত আর শুদ্ধতার ছাপ দেখে মনের মধ্যে খটকা লাগলো। ব্যাপারটা জানতে আগ্রহী হলাম।
খোঁজ নিলাম, সত্যি সত্যিই তিনি একজন ঋণখেলাপি। ব্যাংকে তার ঋণের পরিমাণ ২ কোটি টাকার উপরে, অথচ তিনি ১ টাকাও ঋণ নেন নাই। কিভাবে হলো এমনটা?
একটা ছোট ভুলের এক চরম মাসুল দিতে হচ্ছে দবির আহম্মেদকে। ভুলটি হয়েছিল, একদা তিনি তার এক ব্যবসায়ী বন্ধুর জন্য ব্যাংক ঋণের গ্যারান্টর (জামিনদার) হয়েছিলেন। বন্ধুটি ঋণ নেয়ার কিছুদিন পর মারা যান। স্বাভাবিকভাবেই বন্ধুর ওয়ারিশদের উপর সেই ঋণ পরিশোধের দায় চলে আসে। কিন্তু সেই সকল ওয়ারিশ তাদের বাবার ঋণ পরিশোধ করতে সার্মথ্যবান নন এবং আগ্রহী নন।
এমন প্রেক্ষাপটে, ঋণদাতা ব্যাংক সেই সকল ওয়ারিশকে পক্ষভূক্ত করে এবং অর্থঋণ আদালত আইনে সেই ঋণের গ্যারান্টর অর্থাৎ দবির আহম্মেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই থেকে তাকে নিয়মিতভাবে আদালতে হাজিরা প্রদান করতে হচ্ছে।
ইতিমধ্যে দবির আহম্মেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেজেও একজন ঋণখেলাপি হিসেবে কালো তালিকাভূক্ত হয়েছেন। ফলে তার নিজের প্রয়োজনেরও আর কোন ঋণ নিতে পারবেন না এবং প্রতিনিয়ত অন্যান্য নানাবিধ কাজে বাঁধার সম্মূখীন হবেন। আর চরম সত্যিটা হলো, অন্য আরেকজনের নেয়া সেই ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নিজে এবং তার ওয়ারিশগণও ঋণের দায় থেকে কোনদিন মুক্তি পাবেন না।
ঘটনা ২
দবির আহম্মেদ সাহেবের মতোই ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে বিরামপুরে। পার্থক্য শুধু এখানে যিনি ঋণ নিয়েছিলেন এবং যিনি সেই ঋণের গ্যারান্টর হয়েছিলেন, দু’জনই মারা গিয়েছেন।
ঋণগ্রহীতা মৃত্যুকালে কোন সম্পত্তি রেখে যেতে পারেন নাই। ফলে ঋণদাতা ব্যাংক ঋণগ্রহীতার কোন সম্পদ নিলামে নিতে পারেন নাই। কিন্তু সেই ঋণের গ্যারান্টর মৃত্যুকালে বিরামপুরের প্রাণকেন্দ্রে একটা চারতলা বাড়ি রেখে যান। সম্প্রতি সেই বাড়ির সম্মুখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিলামের নোটিশ দিয়ে গেছেন।
ইতিপূর্বে গ্যারান্টরের ওয়ারিশগণও সেই ঋণ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। বাড়ির সামনে নোটিশ দেখে গ্যারান্টর সাহেবের দুই ছেলে হঠাৎ-ই অথৈ সাগরে পড়ে গেছেন। জামানত হিসেবে সেই বাড়ি ব্যাংকে বন্ধক না হলেও, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ (অন্য আরেকজনের) অর্থ আদায়ের জন্য গ্যারান্টরের বাড়িটি নিলামকেই বিকল্প পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
উপরোক্ত ঘটনা দুটি সত্য। দুটি ঘটনাতেই কেহই নিজে ১ টাকাও ঋণ গ্রহণ করেন নাই বা সেই ঋণ থেকে ১ আনা পরিমাণও সুবিধা পান নাই। অথচ একটা ছোট্ট ভুলের জন্য তাদের নিজেদের ও ওয়ারিশদের জীবন মুহূর্তেই তছনছ হয়ে গিয়েছে। আইন অনুযায়ী উভর ক্ষেত্রেই কারো বিন্দুমাত্রা পরিত্রাণ পাবার কোন সুযোগ নাই।
মনে রাখবেন, ঋণখেলাপি হলে গ্যারান্টরের উপরও একইভাবে দায় বর্তায় ঋণ পরিশোধের। আর সে জন্যই গ্যারান্টরও ঋণখেলাপি হয়ে যান, যদিও তিনি ঋণ নেন নাই। ঋণখেলাপি হলে ঋণ আদায়ের জন্য কেবলমাত্র ঋণগ্রহীতা নয় গ্যারান্টরের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান রয়েছে বিদ্যমান অর্থঋণ আদালত আইনে।
সুতরাং, কারো উপকার করতে গিয়ে নিজে ও নিজের উত্তরাধিকারদের জন্য বিপদ ডেকে আনছেন কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সচেতন থাকুন। পরামর্শের জন্য প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে অতি প্রয়োজনীয় আইনকানুন জানতে ও আরও আইনি পরামর্শ পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।
সম্ভব হলে শেয়ার করে আপনার বন্ধু-স্বজনদেরও এ বিষয়ে সচেতন করুন।
#আইনি_সতর্কতা #গ্যারান্টর_বিপদ