
12/10/2024
ট্রোস্টেশনে টয়লেট ব্যবহারে ১০ টাকা 'সার্ভিস চার্জ' প্রত্যাহার চান যাত্রীরা
টিকেট কেটে স্টেশনে ঢোকার পরও টয়লেটের জন্য কেন বাড়তি চার্জ, সেই প্রশ্ন যাত্রীদের
রাজধানীবাসীর স্বস্তির বাহন মেট্রোরেল। যানজটের নগরীতে একস্থান থেকে অন্যস্থানে দ্রুত যেতে মেট্রোরেলই এখন সবার পছন্দের শীর্ষে। তবে মেট্রোরেলের একটি বিষয় নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েই গেছে। সেটি হলো, মেট্রোস্টেশনের টয়লেট ব্যবহার করলেই ১০ টাকা “সার্ভিস চার্জ” দিতে হয় যাত্রীদের। টিকেট কেটে স্টেশনে ঢোকার পরও টয়লেটের জন্য কেন বাড়তি চার্জ, সেই প্রশ্ন যাত্রীদের।
এই সার্ভিস চার্জ পরিশোধের নিয়মটি বিগত সরকারের আমলে চালু করা হলেও সম্প্রতি সেটি নতুন করে ফের আলোচনায় এসেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই সার্ভিস চার্জ প্রথা বাতিলের দাবি যাত্রীদের।
উচ্চাহারে ভাড়া পরিশোধ অন্যদিকে যাত্রীদের টয়লেট ব্যবহারে দশ টাকা করে অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ পরিশোধ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মেট্রোর যাত্রীরা।
তবে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত চার্জ নয়; যাত্রীদের সেবা দিতেই এই সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সচিবালয়, শাহবাগ, ফার্মগেট, আগারগাঁও, কাজীপাড়া, মিরপুর-১১, পল্লবী, উত্তরা উত্তর স্টেশনগুলো ঘুরে মেট্রোরেলে প্রতিদিন যাতায়াত করেন এমন বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
মেট্রোরেলের সেবা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাদের প্রায় প্রত্যেকেই মেট্রোস্টেশনের টয়লেট ব্যবহারে ১০ টাকা চার্জ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভাড়া পরিশোধের পরও কেন অতিরিক্ত চার্জ, এমন প্রশ্ন তুলে শারমিন আক্তার রীমা নামের এক নিয়মিত যাত্রী বলেন, "যানজট এড়াতে দ্বিগুণ ভাড়া গুণে মেট্রোরেলে চড়ছি। এখন আমাকে টয়লেট ব্যবহার করতে গেলে ১০ টাকা আলাদা করে দিতে হচ্ছে, কেন? যাত্রীর জন্য টয়লেট ব্যবহার কেন ফ্রি হবে না?"
ক্ষোভ প্রকাশ করে শারমিন বলেন, “প্রায়ই অফিস শেষ করে বা অফিসে যাওয়ার পূর্বে টয়লেট ব্যবহার করি। সবসময় যে একই কারণ থাকে তা কিন্তু নয়। কিছু সময় শাড়ি, ড্রেসে কোনো সমস্যা হলে, ওড়না, আঁচল ঠিকঠাক করতে টয়লেটের আয়না ব্যবহার করি। কিন্তু প্রতিবারই ১০ টাকা করে দিতে হয়। এমনকি বাচ্চাদের টয়লেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই টাকা গুণতে হচ্ছে। কিন্তু কেন? এমনিতেই তো মেট্রোরেলে ভাড়া বেশি। তারপরও এই চার্জটা কেন? একজন যাত্রী হিসেবে আমি ভাড়া পরিশোধের পরও কেন এ সুবিধাটুকু ভোগ করতে পারছি না?”
একই কথা জানালেন মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী মো. শাহিন । তিনি বলেন, “ভাড়া পরিশোধ করে এতটুকু সুবিধা আমি প্রাপ্য বলেই মনে করি। আমরা অধিকাংশ যাত্রীই প্রতিদিনকার যানজট এড়াতে বাস, লেগুনায় ১৫-২০ টাকার পরিবর্তে ২৫-৩০ টাকা শখ করে গুণি না। সড়কের যানজট এড়িয়ে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে আমরা এ পরিবহনে উঠতে বাধ্য হই। তারপরও টয়লেট ব্যবহারের জন্যও চার্জ দিতে হচ্ছে।”
ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহা আলম বলেন, "টয়লেটগুলো বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ১০ টাকা করে চার্জ নেওয়ার কারণ হয়ত তারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখছে। তবে এটা কতটা যৌক্তিক, সেটি নিয়ে ভাবা জরুরি। দেশের অনেক কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে সামনেও হবে আশা করছি এ বিষয়গুলোও পরিবর্তন হবে।”
মেট্রোস্টেশনে টয়লেট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সার্ভিস চার্জ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইব্রাহিম মজিদ বলেন, "আমি চেন্নাইতে যখন পড়তাম তখন মেট্রোতে যাতায়াত করতাম। সেখানে ওয়াশরুমের জন্য আলাদা কোনো চার্জ ছিল বলে তো মনে পড়ে না।”
সার্ভিস চার্জ আদায় নিয়ে যা জানা গেল
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশনের ৬৪টি টয়লেটপরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য চারটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। প্রতি স্টেশনে ৪ জন করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী দায়িত্ব পালন করেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বরে মতিঝিল থেকে আগারগাঁও অংশ চালু হওয়ার তিনমাস পর থেকেই সার্ভিস চার্জ পরিশোধের বিষয়টি শুরু হয়।
ডিএমটিসিএল লাইন-১ এর উপ প্রকল্প পরিচালক (জনসংযোগ) কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, “মেট্রোরেল চালু হওয়ার শুরু থেকেই চারটি কোম্পানিকে টয়লেট মেইনটেইনেন্সের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়। স্টেশনের টয়লেটের যাবতীয় কার্যক্রম হ্যান্ডওয়াশ থেকে শুরু করে সবকিছুর দায়িত্ব কোম্পানিগুলোকে দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতি ১০ টাকা করে সার্ভিস চার্জের বিষয়টি অফিসিয়ালি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।”
ভাড়া পরিশোধের পরও কেন টয়লেটে প্রবেশের আলাদা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে-এ প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, “টয়লেটগুলো সার্বক্ষণিক ম্যানেজম্যান্ট যেমন; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া টয়লেটের যাবতীয় উপাদান টিস্যু, হ্যান্ডওয়াশ যা যা লাগে; এমনকি প্রতি শিফটে ২ জন করে ৪ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে টয়লেটগুলো পরিষ্কারের জন্য। এই যে ১০ টাকা করে সার্ভিস চার্জ নেওয়া হচ্ছে; এই টাকা থেকেই কর্মীদের বেতন ও পরিচ্ছন্নতা সামগ্রীর খরচ নির্বাহ করা হয়। এজন্য ভতুর্কিও দিতে হয়। কারণ, যে সংখ্যক মানুষ টয়লেট ব্যবহার করে তা দিয়ে এ খাতের খরচ ওঠে না। তবে ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন পরিকল্পনা করতে হবে।”
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, "একটু খেয়াল করলে দেখবেন ভারতসহ যেসকল দেশে মেট্রোরেল রয়েছে তাদের নির্ধারিত ভাড়ার তুলনায় বাংলাদেশে মেট্রোরেলের ভাড়া উচ্চহারে নির্ধারণ করা হয়েছে। এত উচ্চ হারে ভাড়া চার্জ করেও যদি যাত্রীদের জরুরি প্রয়োজনে টয়লেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ১০ টাকা দিতে হয়, এটা তো জুলুমের শামিল। আমরা আসলে যেটা দেখছি সরকার মূলত সড়কে পরিবহন যানজটকে জিইয়ে রেখে কৌশলে তারা জনগণের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করতে ব্যস্ত। আর এ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, টয়লেট ব্যবহারে সার্ভিস চার্জ আদায় এসব তারই ইঙ্গিত বহন করছে।"
এসব বিষয়ের সমাধান চেয়ে তিনি আরও বলেন, “জাইকা যখন মেট্রোরেলে অর্থায়ন করে তখন বলা হয়েছিল মেট্রোরেল পরিচালনা কমিটিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির একজন প্রতিনিধি রাখা হবে। যাতে যাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণে কথা বলা যায়। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে তা করা হয় নি, আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তাই এই অন্তঃবর্তীকালীন এই সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে মেট্রোরেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, টয়লেটের যাওয়ার জন্য সার্ভিস চার্জ অনতিবিলম্বে বন্ধ করা হোক।”
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ২৯ ডিসেম্বর মতিঝিল থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত জনসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় এমআরটি-৬ লাইনের দ্বিতীয় পর্যায়ের উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটের এখন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলছে । ২০২৫ সাল নাগাদ কমলাপুর পর্যন্ত চালু হতে পারে।
রাজধানীবাসীর স্বস্তির বাহন মেট্রোরেল। যানজটের নগরীতে একস্থান থেকে অন্যস্থানে দ্রুত যেতে মেট্রোরেলই এখন সবার প....