boikini.com

boikini.com Official page of www.boikini.com All Kinds of Books & Magazine are available here with E-books.
(1)

প্লেনে উঠেছি, দিল্লি যাচ্ছি, প্রায় ছ’ঘন্টার রাস্তা। ভেবেছিলাম—চুপচাপ বসে বই পড়ব একটু, আর মাঝপথে একটুখানি চোখও বুজব।ঠিক...
10/05/2025

প্লেনে উঠেছি, দিল্লি যাচ্ছি, প্রায় ছ’ঘন্টার রাস্তা। ভেবেছিলাম—চুপচাপ বসে বই পড়ব একটু, আর মাঝপথে একটুখানি চোখও বুজব।

ঠিক টেকঅফের আগে দেখি প্লেনের দরজা খোলান হল আর একদল ভারতীয় জওয়ান উঠে এল—দশজন মতো। আমার চারপাশের সিটগুলোয় বসে পড়ল একে একে। মুখগুলো কেমন শান্ত, গম্ভীর।
পাশে বসা এক জওয়ানকে জিগ্যেস করলাম, “কোথায় যাচ্ছেন আপনারা...!”

সে বলল, “আগ্রা। দু’সপ্তাহ ট্রেনিং আছে, তারপর অপারেশন।”

এইটুকু বলেই চুপ। কী অপারেশন, কোথায়, কিছুই বলল না। বুঝলাম, বলার পারমিশন নেই..!

প্রায় এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, অ্যানাউন্সমেন্ট করলেন এয়ারহোস্টেস.... আপনাদের লাঞ্চ সার্ভ করা হবে, যারা চাইবেন, পয়সা দিয়ে লাঞ্চ কিনে নিতে পারেন।

মানিব্যাগে বের করছি, এমন সময় শুনি ওই জওয়ানদের নিজেদের মধ্যে কথা—

“খাবি?”
“ধুর, এখানে দাম বেশি। নিচে নেমে হোটেলে খাব।”

কী যেন হয়ে গেল ভেতরে। চুপচাপ উঠে গিয়ে এয়ারহোস্টেসকে বললাম, “ওদের সবার খাবার আমিই নিচ্ছি। প্লিজ দিয়ে দিন।”

মেয়েটার চোখে জল চলে এল। ফিসফিস করে বলল, “স্যার, আমার ভাই কার্গিলে। মনে হচ্ছে আপনি ভাইকেই খাওয়াচ্ছেন...!”

মনটা কেমন যেন হয়ে গেল। সিটে ফিরে এলাম, আধ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ওদের সবার হাতে খাবার পৌঁছে গেল।কিছুটা অবাক হলেন ওনারা... কি ভাবলেন জানিনা... খাবার বাক্স খুলে খেত শুরু করলেন। দেখে বোঝা যাচ্ছিল ক্ষুধার্ত..!

আমি নিজের লাঞ্চ শেষ করে টয়লেটের দিকে যাচ্ছি, হঠাৎ এক বৃদ্ধ এগিয়ে এলেন।
বললেন, “সব দেখেছি। আপনি সত্যি ভালমানুষ, স্যার।”
তারপর হাতে এক ৫০০ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বললেন, “এই ভালো কাজের একটা অংশ আমিও হতে চাই...!" আমি কিছু বলতে পারার আগেই নিজের সীটে ফিরে গেলেন ভদ্রলোক!

ফিরে এসে ভাবছি এসব কী হচ্ছে.... দেখি—পাইলট নিজে সিটে চলে এলেন! সীটবেল্ট খুলে উঠে দাঁড়ালাম। হেসে বললেন, “আপনার সঙ্গে হাত মেলাতে চাই।”
আমি অবাক। বললাম, “কেন স্যার?”
তিনি বললেন, “আমি নিজে একদিন ফাইটার পাইলট ছিলাম। সেদিন এক অচেনা মানুষ আমার জন্য খাবার কিনে দিয়েছিলেন। আজ আপনি সেই মুহূর্তটা ফিরিয়ে দিলেন.... আমি শুনেছি কেবিন ক্রুর কাছ থেকে..!"

হঠাৎ করে চারপাশে হাততালি পড়ে গেল। আমি একটু লজ্জা পেলাম। কারণ, আদতে কিছুই করিনি। মন চেয়েছিল, তাই করেছিলাম.... হাততালির জন্যে তো করিনি কিছুই...!

কিছুক্ষণ পর, এক আঠারো বছরের মতো ছেলে হেসে এগিয়ে এল। হাত মেলাল, তারপর একটুকরো কাগজ গুঁজে দিল হাতে। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম..!

বিমান নামল।
মাল নামাচ্ছি, এমন সময় এক ভদ্রলোক চুপচাপ আমার পকেটে কিছু একটা ঢুকিয়ে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলেন। আরও একটা নোট।
লাগেজ বেল্টের কাছে দেখলাম ঐ দশজন সৈনিক দাঁড়িয়ে আছে, লাগেজের অপেক্ষায়। দৌড়ে গেলাম ওদের কাছে... বললাম, “এই টাকাগুলো রাখুন। এগুলো কিছু দেশবাসীর ভালবাসা.... ট্রেনিংয়ে যাওয়ার আগে কিছু দরকার হলে খরচ করুন।
আপনারা আমাদের জন্য যা করেন, এই সামান্য টাকা দিয়ে তার দাম চোকানো যায় না। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছি শুধু।”

ওরা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। কারও চোখে জল, কেউ হাসছিল। এক ফ্লাইট দেশবাসীর ভালবাসা নিয়ে ওরা এবার এগিয়ে যাবে...!!

গাড়িতে উঠলাম।
চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করলাম.... “ভগবান, এদের যেন ভালো রেখো....এরা তো প্রাণ হাতে করে মৃত্যুর দিকে হেঁটে যায় দেশের জন্য।”

একজন জওয়ান মানে, যেন দেশের নামে লিখে দেওয়া এক খালি চেক..... যখন চাইবে তাই দিয়ে দেশের নামে জীবন অবধি তুলে নিতে পারবে দেশবাসী....
যেটা ওরা জীবন দিয়েও পূরণ করতে রাজি।

আর আমাদের অনেকেই সেটা বুঝতেই চায় না।

-- সংগৃহীত

এই গল্পটা শেয়ার করবেন কি না সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু আমি জানি, যতবার পড়বেন—চোখটা ভিজে যাবে।

#উত্তমকুমার #স্মিতা_পাতিল
#বাংলা_ছবি

#কলকাতা #কলকাতারডায়েরি

You can also follow on Instagram to see more.
18/03/2025

You can also follow on Instagram to see more.

17/03/2025

Hi everyone! 🌟 You can support me by sending Stars - they help me earn money to keep making content you love.

Whenever you see the Stars icon, you can send me Stars!

বত্রিশ নাম্বার রোডের প্রায় শেষ মাথায় গাছপালায় ঘেরা ‘সাঁঝের মায়া’ নামের একটা বাড়িতে বসবাস করতেন কবি সুফিয়া কামাল। রোজ ভোর...
14/03/2025

বত্রিশ নাম্বার রোডের প্রায় শেষ মাথায় গাছপালায় ঘেরা ‘সাঁঝের মায়া’ নামের একটা বাড়িতে বসবাস করতেন কবি সুফিয়া কামাল। রোজ ভোরে নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ কোরান পাঠ করতেন কবি । তারপর বাগানে হাঁটাহাঁটি আরও কিছুক্ষণ। এই সময় পোষা বিড়ালগুলো কবির পায়ে পায়ে ঘুরতো। তুলার বলের মতো ধবধবে সাদা বিড়ালগুলোকে সাথে নিয়েই কবি এসে তারপর বারান্দায় বসে একের পর এক রবীন্দ্র সংগীত শুনতেন। কখনও কখনও অতুল প্রসাদ কিংবা রজনীকান্তের গান।

অনেক অনেক দিন আগে কবির এই রুটিন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো। বলা ভালো ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিলো। নিত্যদিনের রুটিন ভুলে একটু বেলা হলে পরে একগাদা রেশনকার্ড হাতে নিয়ে কবি বাগানে অস্থির হয়ে পায়চারি করতেন। একগাদা রেশন কার্ডের মধ্যে কবির কার্ড একটাই। বাকিগুলো প্রতিবেশীদের, আত্মীয়দের আর স্বজনের। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঢাকা ছেড়ে তারা চলে যাবার আগে কবির কাছে এইসব কার্ড তারা রেখে গেছেন। কবি একেক দিন একেকজনকে দিয়ে সেইসব রেশন কার্ড দিয়ে চাল, চিনি, ডালডা তুলে এনে বাড়ির এক নিরিবিলি রুমে এইসব জমা করতেন। আর অপেক্ষা করতেন একজন রিকশা ড্রাইভারের জন্য। কবির বাড়ির পাশের বাড়িতে ছিলো পাকিস্তানি মিলিটারির ঘাঁটি। সব চোখ ফাঁকি দিয়ে কবির বাড়ির পেছনের দেয়াল টপকে জীবন বাজি রেখে রিকশা ড্রাইভার এসে চালের বস্তা, চিনির পোটলা, ডালডার টিন নিয়ে যেতো।

আগস্ট মাসের পর থেকে শহর আরও থমথমে হয়ে গেলে রিকশা ড্রাইভারের চলাচল খুব কঠিন হয়ে গেল।এই নিয়ে কবির দুশ্চিন্তার শেষ নাই। কবির বাড়ির পেছনেই ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের কালচারাল সেন্টার। একদিন সোভিয়েত কনসাল মি. নভিকভ নিজে কবির বাড়ি এসে কবিকে আশ্বস্ত করে গেলেন। এরপর সোভিয়েত কালচারাল সেন্টারের গেট ব্যবহার করে রিকশা ড্রাইভার মালামাল নিয়ে যেতো।

তারপর হিমালয়ের জমাট বাঁধা বরফ গলে গলে আমাদের পদ্মা মেঘনা যমুনা নরসুন্দা ঘোড়াউত্রা বলেশ্বর আর ধানসিঁড়ি নদীগুলো জলে জলে পূর্ণ হয়ে উঠলো। আর জলের সাথে একজন না দুইজন না, এক লাখ না দুই লাখ না, তিরিশ লাখ মানুষের রক্ত এসে আমাদের জলের রঙ বদলে দিতে দিতে ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ এসে উপস্থিত হলো। লিস্ট ধরে ধরে রাজাকারেরা শহীদুল্লাহ্ কায়সার, মুনীর চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক শিক্ষক সহ দেশের অনেক বুদ্ধিজীবীদের কাদা মাখানো বিশেষ এক গাড়িতে করে প্রথমে নিয়ে গেল ফিজিক্যাল কলেজের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। তারপর তারপর তারপর তাঁদেরকে আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম রায়ের বাজারে!!!

চৌদ্দ তারিখে কবির সেই রিকশা ড্রাইভারকেও তুলে নেয়া হয়েছিলো কাদা ল্যাপ্টানো গাড়িতে!!! রিকশা ড্রাইভারের নাম গিয়াসউদ্দিন আহমদ। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং মুহসিন হলের আবাসিক শিক্ষক। পুরো নয় মাস ধরে তিনি মাথায় গামছা বাঁধা লুঙ্গি পরা রিকশা ড্রাইভারের ছদ্মবেশে রিকশা চালিয়ে কবির বাড়ির রেশনের মালামাল পৌঁছে দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের নানান গোপন ইউনিটে।

কী বলবো?
কীভাবে বলবো? কীভাবে এক জীবনে আমরা তাঁদের ঋণ শোধ করবো?
মাথা নত করে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জানাই ‘জননী সাহসিকা’ কবি সুফিয়া কামালের প্রতি।

(সংগৃহীত)

#বাংলা_ছবি

 #উত্তমকুমার প্রসঙ্গে  #স্মিতা_পাতিলকলকাতার সাথে আমার সম্পর্কটা এমনিতেই একটু নিবিড়, তবে তা শুধু ছবির কারণেই নয় । এর এক...
03/03/2025

#উত্তমকুমার প্রসঙ্গে #স্মিতা_পাতিল

কলকাতার সাথে আমার সম্পর্কটা এমনিতেই একটু নিবিড়, তবে তা শুধু ছবির কারণেই নয় । এর একটা বড় কারণ হচ্ছে রবীন্দ্রসঙ্গীত, ব্রহ্মসঙ্গীত, রামপ্রসাদ গীতি, টপ্পা এবং বাংলার কৃষ্ণকীর্তন । ভোরের দিকে বা যখন খুব মন খারাপ করে বাংলার এই মনিমুক্তখচিত সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হওয়া আমার একপ্রকার অভ্যেস বলতে পারেন । হয়তো অনেক শব্দই বুঝতে পারিনা, কিন্তু এসবের সুরেলা ধ্বনি আমার মনকে যেন প্রশান্তিতে ভরে তোলে । হ্যাঁ আর কলকাতা বলতে আরেকজনকেও অস্বীকার করা যায় না, তিনি হলেন উত্তমবাবু । কলকাতার মানুষ ওনাকে আলাদা চোখে দেখেন । আজ পর্যন্ত চিত্রতারকার এমন জনপ্রিয়তা আমি খুব কম দেখেছি । হ্যাঁ বোম্বেতে রাজেশজী, দেবসাহেবের একটা অসম্ভব ভালো ক্রেজ তো ছিলই কিন্তু সেটা অনেকটাই গ্ল্যামারকেন্দ্রিক । ওনাদের রূপ, ওনাদের হাসির প্রতি কেউ আকর্ষিত না হয়ে থাকতে পারবেন না, বিশেষ করে মহিলারা । যদিও নায়ক মানেই গ্ল্যামার সর্বস্ব, চিত্রনাট্যের দাবীতে অনেকসময় অবাস্তব কিছুও করতে হয়ে থাকে । কিন্তু উত্তমবাবুর ক্ষেত্রে বিশেষ করে আমি লক্ষ্য করেছি গ্ল্যামারকে নিখুঁতভাবে মেইনটেইন করেও তুরীয় স্তরের অভিনয়শৈলীর নিদর্শন রাখেন । জানি না এই অসম্ভবকে উনি কিভাবে সম্ভব করেন । যেমন 'সপ্লপদী', 'নায়ক' ছবি দুটোয় ওঁর গ্ল্যামার ও অভিনয়রস মিশে গিয়ে একটা মাস্টারপিস তৈরি হয়েছে । আবার যেখানে শুধু অভিনয়রসটাই আসল যেমন 'অগ্নিশ্বর' আর 'সন্ন্যাসী রাজা' ছবিতে ও যে অভিনয়রসে আমাদের সিক্ত করেছিলেন ওরকমভাবে গোটা ব্যাপারটাকে তুলে ধরা ভূভারতে কোনো অভিনেতারই নেই । ছবিতে এধরণের একজন অভিনেতা থাকলে পরিচালকেরও খোলা মাইন্ডে কাজ করতে সুবিধে হয়, আমি অনেকসময় দেখেছি পরিচালক যেটা চাইছেন সেটা অভিনেতা বা অভিনেত্রীরা কিছুতেই আনতে পারছেন না । এতে বাধ্য হয়ে পরিচালককে আবার বিকল্প কিছু ভাবতে হয়, ফলে ছবিতেও একটা ইম্প্যাক্ট পড়তে বাধ্য । অথচ পরিচালকেরও কিছু করার নেই এক্ষেত্রে । অভিনেতা অভিনেত্রীদেরও নিজস্ব কিছু দায়িত্ব থেকে থাকে নিজেদের ক্ষমতার গণ্ডিটাকে বারেবারে অতিক্রম করে যাওয়া, আমার মনে হয় উত্তমবাবুও সে ধারার অভিনেতা ।

অনুলিখন :- শুভঙ্কর মুখার্জি

#বাংলা_ছবি

ট্রেনের একটা কামরায় কয়েকজন ইংরেজের সাথে এক ভারতীয়ও বসেছিলেন। কামরাটা পুরো ইংরেজদের দখলে। তারা সবাই মিলে ভারতীয় লোকটাকে ন...
03/03/2025

ট্রেনের একটা কামরায় কয়েকজন ইংরেজের সাথে এক ভারতীয়ও বসেছিলেন। কামরাটা পুরো ইংরেজদের দখলে। তারা সবাই মিলে ভারতীয় লোকটাকে নিয়ে খুব ঠাট্টা-তামাশা করছিল। কেউ বলছিল, "দেখো তো, কেমন লোক ট্রেনে উঠেছে," আবার কেউ তার পোশাক দেখে হাসাহাসি করছিল, বলছিল, "গ্রাম্য ভূত!" কেউ কেউ এতটাই রেগে গিয়েছিল যে, ট্রেনটাকে অভিশাপ দিচ্ছিল আর চিৎকার করছিল, "কেন ওরা একটা ভারতীয়কে ট্রেনে উঠতে দিল? ওকে কামরা থেকে বের করে দাও!"

কিন্তু ধুতি-পাঞ্জাবি, কালো কোট আর মাথায় পাগড়ি পরা লোকটার ওপর এর কোনো প্রভাব পড়ছিল না। তিনি শান্ত আর গম্ভীর মুখে বসেছিলেন, যেন গভীর কিছু ভাবছেন।

ট্রেনটা দ্রুত গতিতে ছুটছিল, আর ইংরেজরাও সমান তালে লোকটাকে উপহাস আর অপমান করছিল। হঠাৎ সেই লোকটি নিজের আসন থেকে উঠে জোরে চিৎকার করে বললেন, "ট্রেন থামান!" কেউ কিছু বোঝার আগেই তিনি চেন টেনে দিলেন। ট্রেন থেমে গেল।

এবার মনে হলো, ইংরেজরা যেন রাগে ফেটে পড়ছে। সবাই তাকে গালিগালাজ করতে শুরু করল। অভিধানে যত খারাপ শব্দ ছিল, সবই যেন তারা ব্যবহার করছিল, "অশিক্ষিত, অজ্ঞ" ইত্যাদি। কিন্তু সেই লোকটি চুপ করে গম্ভীর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যেন কারো কথায় তার কিছু যায় আসে না। তার নীরবতা ইংরেজদের রাগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল।

ট্রেনের গার্ড ছুটে এসে কর্কশ স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, "কে ট্রেন থামিয়েছে?"

কোনো ইংরেজ কিছু বলার আগেই লোকটি বললেন, "আমি থামিয়েছি, স্যার।"

"তুমি কি পাগল? তুমি কি প্রথমবার ট্রেনে উঠছ? জানো, কোনো কারণ ছাড়া ট্রেন থামানো অপরাধ?" গার্ড রাগের সাথে বললেন।

"হ্যাঁ, স্যার! আমি জানি, কিন্তু আমি যদি ট্রেনটা না থামাতাম, তাহলে শত শত লোকের প্রাণ যেত।"

লোকটির কথা শুনে সবাই জোরে হাসতে শুরু করল। কিন্তু তিনি অবিচলিত থেকে আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন, "এখান থেকে প্রায় এক ফার্লং দূরে রেললাইন ভাঙা। আপনারা চাইলে গিয়ে দেখতে পারেন।"

সেই লোকটি আর কয়েকজন ইংরেজ যাত্রী গার্ডের সাথে গেলেন। পুরো পথটা ইংরেজরা তাকে নানা রকম কটু কথা বলে যাচ্ছিল।

কিন্তু যখন তারা দেখল যে, লোকটি যে দূরত্ব বলেছিলেন, ঠিক সেখানেই রেললাইন ভাঙা, নাট-বল্টু খোলা, তখন সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। যে মুখগুলো ভারতীয় লোকটাকে অশিক্ষিত, অজ্ঞ আর পাগল বলছিল, তারা সবাই কৌতূহলী হয়ে তার দিকে তাকাতে লাগল, যেন জানতে চাইছে, এত দূর থেকে তিনি এটা কীভাবে বুঝলেন?

গার্ড জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি কীভাবে জানলেন যে, রেললাইন ভাঙা?"

তিনি বললেন, "স্যার, ট্রেনে সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত ছিল। সেই সময় আমার মনোযোগ ছিল ট্রেনের গতির দিকে। ট্রেনটা স্বাভাবিক গতিতে চলছিল। কিন্তু হঠাৎ আমি রেললাইনের কম্পনের কারণে গতির পরিবর্তন অনুভব করি। এটা তখনই হয়, যখন কিছু দূরে রেললাইন ভাঙা থাকে। তাই এক মুহূর্তও দেরি না করে আমি চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে দিই।"

গার্ড আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ইংরেজরা হতবাক হয়ে গেলেন। গার্ড জিজ্ঞেস করলেন, "এত বিশদ কারিগরি জ্ঞান! আপনাকে তো সাধারণ মানুষ মনে হচ্ছে না। নিজের পরিচয় দিন।"

লোকটি খুব বিনীতভাবে উত্তর দিলেন, "স্যার, আমি ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার মোক্ষগুণ্ডম বিশ্বেশ্বরাইয়া..."

হ্যাঁ! সেই অসাধারণ মানুষটি আর কেউ নন, "ডঃ বিশ্বেশ্বরাইয়া"।
© NIOS NEWS

‘আনন্দের সাথে শিখি’ স্লোগান ধারণ করে আমাদের যাত্রা শুরু। শিশুর কোমল মন বিনোদনের সাথে শিখতে আগ্রহী। ‘মাই ফাস্টর্ আর্লি—রা...
26/02/2025

‘আনন্দের সাথে শিখি’ স্লোগান ধারণ করে আমাদের যাত্রা শুরু। শিশুর কোমল মন বিনোদনের সাথে শিখতে আগ্রহী। ‘মাই ফাস্টর্ আর্লি—রাইটিং’ সিরিজের এই হ্যান্ডরাইটিং বা লিখতে শিখি বইগুলোতে আমরা শিশুদেরকে সহজভাবে অক্ষর লিখতে শেখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। নির্দেশিত প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করে তারা সহজেই অক্ষর লেখা আয়ত্ব করতে পারবে।

ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়... েব্রুয়ারী_১৯৩৩!পলাতক সূর্য সেনকে গৈরালা গ্রামে নিয়ে এসেছেন বিপ্লবী ব্রজেন সেন। মাষ্টারদার...
22/02/2025

ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়...

েব্রুয়ারী_১৯৩৩!
পলাতক সূর্য সেনকে গৈরালা গ্রামে নিয়ে এসেছেন বিপ্লবী ব্রজেন সেন। মাষ্টারদার সাথে রয়েছেন তার একান্ত অনুগত শান্তি, কল্পনা দত্ত, সুশীল ও মণি দত্ত। তাঁরা ছিলেন গ্রামের বিশ্বাস বাড়িতে, পরম যত্নে আগলে রেখেছিলেন সে বাড়ির বড়বধূ ক্ষিরোদপ্রভা।

বেশ ছিলেন কিন্ত বিপদ এলো অন্য দিক দিয়ে। প্রতিবেশী নেত্র সেনের সন্দেহ হলো কারা যেন আছে বিশ্বাস বাড়িতে? কিসের এত ফিসফাস গুঞ্জন। খবর লাগাতে বললেন নিজের গিন্নিকে।

গ্রাম্য বধূটি সরল মনে এসে বললো ও বাড়িতে সূর্য সেন লুকিয়ে আছে গো, অমন লোককে খাওয়ালেও যে পূণ্যি লাভ! একদিন বলোনা গো ওনাকে খেতে...।

শুনেই লাফ দিয়ে উঠলো নেত্র। খবর দিলেই যে কড়কড়ে দশ হাজার টাকা! বউকে আশ্বস্ত করে
ব্যাগ হাতে তখনই বেরিয়ে পড়লো। বাজারে যাবার নাম করে সোজা গিয়ে উঠলো থানায়!

সেদিন রাতে ঘুম ভাঙতে চমকে উঠলো ব্রজেন, জানলা দিয়ে লণ্ঠন দেখিয়ে কি করছে দাদা নেত্র সেন? এক মিনিটও লাগলো না বুঝতে, ছুট লাগালেন বিশ্বাস বাড়ির দিকে।

দেরী হয়ে গেছে ততক্ষনে, ক্যাপ্টেন ওয়ামসলের নেতৃত্বে গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলেছে গোর্খা সেনার দল। রকেট বোমার আলোতে সবকিছু দিনের মতো স্পষ্ট ।

সূর্য সেন গ্রেপ্তার হবার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন সম্পর্কে ফেরারী সূর্য সেনকে গত রাতে পটিয়া হইতে ৫ মাইল দূরে গৈরলা নামক স্থানে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে।

সূর্য সেনকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের মামলায় প্রধান আসামি বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে। গত ১৯৩০ সাল হইতে সূর্য সেন পলাতক ছিলেন এবং তাঁহাকে ধরাইয়া দিবার জন্য গভর্নমেন্ট দশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করিয়াছিলেন” (আনন্দবাজার পত্রিকা ১৭/২/৩৩)!

তিনদিন পর...
সন্ধে বেলায় জলখাবার খেতে বসেছে নেত্র সেন,পাশে স্ত্রী। দরজায় শব্দ হতে উঠে গিয়ে খুলে দিলেন।

পাড়ারই চেনা ছেলে দেখা করতে এসেছে স্বামীর সঙ্গে। সবে উনি ভাবছেন সেখান থেকে সরে যাবেন কিনা, আচমকা পাড়ার সেই ছেলের হাতের ভোজালির কোপে স্বামীর মুণ্ডু ছিটকে পড়লো!

থরথর কাঁপছেন গ্রাম্য বধূ। ঘাতক যাওয়ার আগে বলে গেলেন, মাস্টার দার সঙ্গে বেইমানি করার উপযুক্ত শাস্তি !

বৃটিশ পুলিশ কতবার কতভাবে জেরা করেছে সাধারণ আটপৌরে ঐ বধূটিকে। একবার তিনি বলুন স্বামীর ঘাতকের নাম। মুখ খোলেননি নেত্র সেনের বিধবা।

শুধু বলেছিলেন চোখের সামনে তিনি স্বামীকে লুটিয়ে পড়তে দেখে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। স্বামী হারানোর যন্ত্রণায় এখন কষ্ট পাচ্ছেন, আর কিছুই বলার নেই।

কিন্তু যে মানসিক যন্ত্রণায় তিনি সবথেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন তা হল এই জেনে যে তাঁর স্বামী নেত্র সেন একজন বিশ্বাসঘাতক, যিনি পুলিশের পুরস্কারের লোভে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন মাস্টার দার মতো মানুষের সাথে!

তাকে হত্যা করে ঠিকই করেছেন মাস্টার দার সহযোগী ঐ তরুণ। মেরে ফেললেও তিনি ওই বিপ্লবীর নাম ফাঁস করবেন না। হয়রানির বেশি আর কিছু নেত্র সেনের স্ত্রীকে করেনি সেদিন বৃটিশ পুলিশ। তাদের উদ্দেশ্য তো তখন সিদ্ধ হয়ে গেছে। কারাগারে নির্মম অত্যাচার করা হচ্ছে মাস্টার দার উপরে।

অনেকদিন পর জানা গেছিল হত্যাকারী আর কেউ নয়, সেন বংশের কলঙ্কিত ইতিহাসকে গর্বের ইতিহাসে বদলে দেবার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল ঐ বাড়িরই ছোট ছেলে কিরণ সেন । মাষ্টারদা প্রয়াণের আগে জেনে গেছিলেন দেশদ্রোহীকে চরম শাস্তি দিতে তাঁর মন্ত্রশিষ্যরা এতটুকু দয়া দেখায়নি।

মুক্তির মন্দিরের সোপান তলে এরকম কত কিরণ নিঃশব্দে দিয়েছে বলিদান...আমরা মনে রাখিনি।🌹

তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস 'চৌরঙ্গী ' ধারাবাহিক ভাবে শুরু হল ১৯৬১ সালে তবে সম্পাদক সাগরময় ঘোষের কড়া শর্ত লেখার সময় চ...
24/12/2024

তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস 'চৌরঙ্গী ' ধারাবাহিক ভাবে শুরু হল ১৯৬১ সালে তবে সম্পাদক সাগরময় ঘোষের কড়া শর্ত লেখার সময় চঞ্চলমতি হওয়া চলবে না। অগত্যা শংকরের বিয়ে আটকে গেল। যেদিন লেখা শেষ সেদিন তিনি বিয়ে করতে চললেন। প্রথম উপন্যাস ' কত অজানারে ' লিখে পেয়েছিলেন ২৮৫ টাকা। সেই টাকায় বাড়িতে বিদ্যুৎ আসে। কালক্রমে বনগাঁর ইছামতি ও হাওড়ার গঙ্গা দিয়ে অনেক জল প্রবাহিত হয়েছে। বনগাঁর ছেলে শংকর হয়ে উঠলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা লেখক। ।

ডালহৌসি পাড়ায়‌ একদিন এক বন্ধুর সাথে
হঠাৎ দেখা,জানতে চাইলেন 'দেশ' পত্রিকার লেখাটা সে লিখেছে কিনা! লজ্জা একেবারে লাগেনি তা নয়, কিন্তু স্বীকার করতে হল। বন্ধুটিও আচমকা একটা কাগজ বের করে বলল " অটোগ্ৰাফ' দে। মনে হয়েছিল সে ব্যাঙ্গ করছে! অচিরেই ভুল ভাঙল, নিজের মুখে সে বলল তুই কোথায় উঠে যাচ্ছিস তা তুই নিজেই জানিস না। দে একটা সই, একদিন বলতে পারব 'শংকর' এর প্রথম অটোগ্ৰাফটা আমার কাছে আছে। কিন্তু সাহিত্যের অঙ্গনে কিভাবে প্রবেশ করলেন তিনি, কিভাবে হয়ে উঠলেন বাংলা সাহিত্যের বেস্টসেলার লেখক।

১৯৫৩ সালের অগস্ট মাসে বারওয়েল সায়েব মাদ্রাজে মামলা করতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকের বলি হলেন। নিজের প্রিয় কর্মীর জন্য ছোট্ট একটা চাকরি জুটিয়ে দিয়েছিলেন । কয়েক মাস দু’টো কাজই করতেন। কিন্তু নতুন জায়গায় পদে পদে কনিষ্ঠ কেরানির অবহেলা ও অবমাননা। মনের দুঃখ মুছে ফেলার জন্যে চুপিচুপি লেখক হওয়ার মুসাবিদা শুরু হল। উৎসাহ দিতেন সহকর্মী আর এক কেরানি ভবানী ঘোষ। তিনিই এক দিন তাঁর বন্ধু ও লেখক রূপদর্শীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের টেবিলে বসে। বললেন, এই ছোকরার যে সব ঘটনা রয়েছে, তা এক দিন পাঠকদের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারে। শংকরের কয়েকটি কথা শুনে গৌরকিশোর বলেছিলেন " আপনার লেখাগুলো নিয়ে একদিন আসুন,আমি আপনাকে দেশ পত্রিকার সাগরময়বাবুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবো"।

সাগরময় ঘোষ বলেছিলেন লেখাটা রেখে যেতে কিন্তু তিনটি সপ্তাহ যেন কোনও ভাবে তাঁকে জ্বালাতন না করা হয়। মনে মনে প্রবল উত্তেজনা অনুভব করেছেন আবার প্রশমিত করার চেষ্টা করেছেন । একদিন চলে এলেন বর্মন স্ট্রিটে,সাগরময় বললেন এতদিন কোথায় ছিলেন? আমরা খোঁজ করছি,অথচ আপনি পাণ্ডুলিপিতে নিজের ঠিকানাটুকু লেখেন নি। 'দেশ' পত্রিকার সম্পাদক বসতে বললেন, চায়ের প্রস্তাব করলেন। স্বয়ং সম্পাদক মহাশয়ের দপ্তরে বসে সসম্মানে চা পান একজন নতুন লেখকের জীবনে কতবড় প্রাপ্তি অনুধাবন করতে ভুল হয়নি শংকরের। তাই তিনি লিখেছেন " হে ঈশ্বর,আমার কপালে এতো সুখের সম্ভাবনা ছিল"!

মনিশংকর মুখোপাধ্যায়ের পিতা হাওড়ার বাড়িতে তাদের অনাথ করে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আটটি নাবালক সন্তানের মা জননী শান্তভাবেই পুত্র মনিশংকরকে বলেছিলেন তোমাকে এবার কিছু রোজগার করতে হবে। এই শহরে আমি কাউকে চিনি না তোমাকে নিজের পথ খুঁজে নিতে হবে। জীবনের যুদ্ধে লড়াই করতে রাস্তায় কাপড়কাচা সাবানের বিক্রিওয়ালা হয়েছেন। পিতৃদেব হরিদেব বনগ্ৰাম মহকুমা আদালতের আইনজীবী, মফস্বলের দাঁড়িপাল্লায় নিঃসন্দেহে কৃতী আইনজীবী, কিন্তু সাহিত্যের প্রতি তাঁর ঝোঁক নেহাত কম ছিল না। বনগ্ৰামে বা বনগঁয় জন্ম শংকরের। দীর্ঘদিন ভাড়াবাড়িতে বসবাস করার পরে পিতৃদেব হরিপদ মুখার্জি নিজে একটা বাড়ি করতে চাইলেন। কিন্তু চাইলেই তো হয় না, পোস্ট অফিসে আছে মাত্র কয়েকশো টাকা। জাহান আলি বিশ্বাস বলে এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী লিচুতলার আড্ডায় আসতেন। তিনি জানালেন দাম পরে দিলে হবে, ইঁট,সুরকি, সিমেন্ট তিনি দেবেন। বাড়ির কাজ শুরু হল। ওই বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে দেশছাড়া হতে হত হরিপদ উকিলকে। শিয়ালদহ স্টেশনে হরিপদ বাবুর সাথে দেখা এক মুন্সেফ সাহেবের। তিনি বললেন আপনি মহকুমা থেকে বড় জায়গায় চলে আসুন আপনার যথেষ্ট প্রতিভা আছে। বিচারক জানালেন তিনি এখন হাওড়ায় জজ, হরিপদ বাবুকে তিনি সাহায্য করতে পারবেন যাতে তাঁর মাসে দুশো- আড়াইশো রোজগার হয়। তাঁর হাতে একটা জমিদারি মামলা আছে রিসিভার নিয়োগ করা হবে। তিনি যেন দিন দুই- তিনের মধ্যে হাওড়া কোর্টে নিজের নাম লেখান এবং তাঁকে খবর দেন। শংকরের বয়স তখন মাত্র পাঁচ তিনি হাওড়ামুখী হলেন ভায়া শিয়ালদহ। তখন যারা শিয়ালদহ স্টেশনে যারা নামতেন তাদের কে বাঙাল বলা হত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি আক্রমণের ভয়ে পরিবারের সবাই বনগাঁ ফিরে গেলেও শংকর তাঁর বাবার সঙ্গে থেকে যান হাওড়াতেই। কিন্তু স্বাধীনতার বছরে পিতৃবিয়োগ হয় মণিশংকরের। তিনি লিখেছেন তাঁর যে লেখক হয়ে ওঠা তার আদিতে শিক্ষক সুধাংশুশেখর। তিনি দেখেছেন পিতার মৃত্যুর পরে ছাত্র শংকরের দুঃখ। তাঁর স্কুলের বেতন মুকুব করে দেন। আরও একজন আছেন লেখকের জীবনে তিনি বিভূতিদা। তাঁর অন্ধবিশ্বাস বারওয়েল সাহেবের সংস্পর্শে যিনি আসবেন তাঁর জীবনে সোনা ফলবে। রিপন কলেজে পড়েছেন শংকর। বারওয়েল সাহেবের চেম্বারে শংকরের নতুন জন্ম হয়। একটু বেপরোয়া হয়ে পাকা চাকরি ছেড়ে সত্তর বছরের বৃদ্ধ ব্যারিস্টার এর বাবুগিরি করতে চলে এলেন কলকাতা হাইকোর্টের আদালতী কর্মক্ষেত্রে। বারওয়েল সাহেবকে যেমন ভালবেসে ফেললেন তেমন শ্রদ্ধা করতেন।তাঁকে নিয়েই লিখে ফেলেন আস্ত একটি উপন্যাস, ‘কত অজানারে’।

লেখক শংকরের জীবনের সুখস্মৃতি দেশের পাতায় এক সঙ্গে ধারাবাহিক লিখেছেন বিমল মিত্রের সঙ্গে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ শংকরের ' চৌরঙ্গী' বিমল মিত্রের ' কড়ি দিয়ে কিনলাম '। অনেক সময় এক টেবিলে কিস্তি লেখা হয়েছে ন্যাশনাল লাইব্রেরির রিডিং রুমে। শংকরের জীবনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘চৌরঙ্গী’। ১৯৬২ সালে এটি প্রকাশের পর অভাবনীয় সাড়া ফেলে দেয়। পাঠক তাঁকে চিনতে শুরু করে তখন থেকেই। উপন্যাসটি এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন ভাষাতেও তা অনূদিত হতে থাকে।

শংকরের প্রথম উপন্যাসের নামকরণ করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র। অন্নদাশঙ্কর রায় কে প্রথম উপন্যাসের একটি কপি পাঠিয়ে ছিলেন। আশীর্বাদের সঙ্গে তিনি লিখেছিলেন " আপনার প্রথম সাফল্য যেন জীবনের শেষ সাফল্য না হয়"। তবু অনেকেই তাঁর বিরূপ সমালোচনা করেছেন। বিশেষত সাহিত্যিক মহল থেকে ধেয়ে আসে ব্যাঙ্গাত্মক কুৎসা উকিলের মুহুরী একখানা গল্প ভগবান তৈরি করে দিয়েছিলেন,লিখে ফেলেছে। জীবন সংগ্রামের সৈনিক শংকর তখন ' কত অজানারে ' লিখে ২৮৫ টাকা পেলেন সেই টাকায় বাড়িতে বিদ্যুৎ এল। এমনকি চৌরঙ্গী’-র সাফল্যের পরেও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছে, এ সবই বানানো। হাওড়ার কানাগলিতে বিদ্যুৎবিহীন বাড়িতে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে ফাইভ স্টার গল্প কী করে লেখা হয়? নিশ্চয়ই কোনও বিখ্যাত সায়েবের অখ্যাত ইংরিজি বই থেকে চুরি করা! এরপর বনগাঁর ইছামতি ও হাওড়ার গঙ্গা দিয়ে অনেক জল প্রবাহিত হয়েছে। কালক্রমে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর ছেলে শংকর হয়ে উঠলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা লেখক। শুধু লেখক বললে ভুল হবে তিনি সবসময় বেস্টসেলার লেখক। আজকের মত এক ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখে মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের সেবা করেছেন দীর্ঘদিন, দীর্ঘ অনেকগুলো বছর। নিশ্চিত ভাবে কালজয়ী তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি। লেখক শংকরের জন্মদিন চলে গেল ৭ ডিসেম্বর তাঁর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও জন্মদিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
Highlights News #অনুপ্রেরণারগল্প #কলকাতা #কিংবদন্তীরগল্প

দুজনের বয়সের ব্যবধান উনত্রিশ৷ বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল রমা'র থেকে, সময় চেয়েছিলেন 'পথের পাঁচালী'র স্রষ্টা বিভূতিভূষণ। রমা কে...
08/11/2024

দুজনের বয়সের ব্যবধান উনত্রিশ৷ বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল রমা'র থেকে, সময় চেয়েছিলেন 'পথের পাঁচালী'র স্রষ্টা বিভূতিভূষণ। রমা কে বুঝিয়েছিলেন নানা ভাবে। বয়সের অসম্ভব তফাত কে একেবারে গুরুত্বই দিলেন না রমা..🌷

রমা'র বাবা ছিলেন আবগারি দপ্তরের আধিকারিক,১৯৩৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি বনঁগা শহরে বদলি হয়ে আসলেন৷ ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেজ মেয়ে রমা'র হৃদয়ে তখন থেকে সাহিত্য প্রেম৷ একজন প্রতিবেশীর কাছে খবর পেয়েছিলেন 'পথের পাঁচালী'র স্রষ্টা বিভূতিভূষণ এই শহরে থাকেন৷ প্রিয় লেখকের সঙ্গে পরিচয় করার ইচ্ছা মনের কোনে,অতএব আর বিলম্ব কেন, সোজা চলে এসেছিলেন লেখকের বাড়ি৷

বাড়ির অন্দরে খবর গেল,মাদুর এনে বারান্দায় পেতে বসতে দিয়েছিলেন লেখকের ভাগনি উমা৷ একটু পরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন স্বয়ং বিভূতিভূষণ,রমার হাতে তখন অটোগ্রাফের খাতা,চোখে—মুখে খুশির ঝিলিক৷ লেখকের মুখ অবশ্য বেশ গম্ভীর, অভিব্যক্তিতে বেদনার ছাপ,সৌজন্যমূলক কিছু কথার পরে রমা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অটোগ্রাফের খাতা,সেই খাতায় বিভূতিভূষণ লিখে দিলেন— গতিই জীবন,গতির দৈন্যই মৃত্যু৷

এবার বাড়ি ফেরার পালা,তবে লেখককে আন্তরিক ভাবে অনুরোধ করেছিলেন তাদের বাড়ি একদিন আসার জন্য৷ উত্তরে বিভূতিভূষণ বলেছিলেন নিশ্চয়ই তিনি একদিন তাদের বাড়ি যাবেন কিন্তু সঠিক দিন তিনি বলতে পারছেন না,কারণ তাঁর বোন জাহ্নবি নদীতে স্নান করতে গিয়ে আর ফেরেনি, খোঁজাখুঁজি চলছে হয়ত সে জলে ডুবে মারা গিয়েছে! সঠিক ভাবে অভ্যর্থনা না করতে পারার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখপ্রকাশ করলেন৷

২৯ বছর ব্যবধানের দুই নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব, চিঠি চালাচালি। রমার বাবা ষোড়শীকান্ত একদিন এসেছিলেন তাঁর কন্যার প্রিয় লেখকের বাড়ি,ক্রমেই দুই পরিবারের কাছাকাছি আসা,বন্ধন আরও নিবিড় হয়। বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল রমা'র থেকে, সময় চেয়েছিলেন বিভূতিভূষণ। বোঝালেন নানা ভাবে। বয়সের অসম্ভব তফাত কে একদম গুরুত্ব দিলেন না রমা৷ ১৯৪০সালের ৪ ডিসেম্বর (অনেকের লেখায় ৩ডিসেম্বর) রমার বিয়ে হয়ে গেল অমর কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে,বয়স যেমন সেই বিয়েতে বাধা হয়নি, ঠিক তেমন দুজনের স্বামী-স্ত্রী'র দাম্পত্য জীবনে বয়সের ব্যবধান কোনওদিন প্রতিকূলতা তৈরি করতে পারেনি৷

পুত্রবধূ-পুত্র কে রমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন মরতে তিনি ভয় পান না কারণ ওপারের ঘাটে তাঁর জন্য অপেক্ষা করবেন স্বামী বাংলা সাহিত্যের অমর কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গৌরীদেবী যিনি বিভূতিভূষণের প্রথম পত্নী তাঁর প্রয়াণের পর লেখক আর নতুন করে বিবাহের কথা ভাবেন নি,কিন্তু মানুষ যে ভাবে এক কখনও-কখনও হয় অন্য কিছু৷ শেষপর্যন্ত কন্যাসম রমা কে বিবাহ করেছিলেন এবং সেই সম্পর্কে ভালবাসার বাঁধন ছিল অটুট৷ এর একটি প্রতিচ্ছবি যেন আমরা দেখি ১৯৪০এর পর বিভূতিভূষণের দিনলিপিতে কল্যানীদেবী (রমা'র ডাক নাম)৷ উল্লেখ সর্বত্র৷

নিজের জীবনে স্বামী কে রমা পেয়েছেন মাত্র দশ বছর৷ ১৯৫০-এর নভেম্বরে ঘাটশিলা শহরে বিভূতিভূষণ পাড়ি দিয়েছিলেন নাম না জানা দেশের উদ্দেশ্যে,তিন বছরের শিশু পুত্র কে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে এলেন,খুব সত্যি বলতে এরপর তিনি উজ্জ্বল হয়ে আছেন স্বামীর প্রচারে,স্মৃতি রক্ষায়৷

'কাছে থেকে দেখা' নামে জীবনী উচ্চ প্রশংসিত এবং জনপ্রিয়৷ কেবলমাত্র ভারতবর্ষ নয় সমগ্র পৃথিবী একটি বিশেষ কারণে রমা দেবীর কাছে কৃতজ্ঞ,শত প্রলোভনে আর্থিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও অনেক কে 'পথের পাঁচালি' চলচ্চিত্র রূপায়িত করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তিনি তুলে দিয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম সত্যজিৎ রায়ের হাতে৷ তারপরের ইতিহাস আমাদের কারও অজানা নয়৷
মৃত্যুর আগে রমা বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রান্ত হয়েছিলেন আলঝেইমার্স রোগে,প্রিয়জন কে চিনতে পারতেন না কিন্তু তাঁর রচিত বিভূতিজীবনীর প্রচ্ছদ দেখে ছেলে কে বলেছিলেন তোর বাবার ছবিটা খুব ভালো এঁকেছে৷

আজ বিভূতিভূষণের প্রয়াণ দিবস.. আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি..🌸🌿

কলমে ✒️ অরুণাভ সেন

📸 ছবি ~ সহধর্মিণী রমা দেবীর সঙ্গে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

গ্রন্থঋণ : বরণীয় বাঙালির বউয়েরা, সম্পাদনা মানস চক্রবর্তী, তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিবন্ধ

সনাতন ধর্মাবলম্বী সকল বন্ধুদের প্রতি শারদ শুভেচ্ছা। উৎসবের দিনগুলো রঙিন হয়ে উঠুক।
10/10/2024

সনাতন ধর্মাবলম্বী সকল বন্ধুদের প্রতি শারদ শুভেচ্ছা। উৎসবের দিনগুলো রঙিন হয়ে উঠুক।

Address


Alerts

Be the first to know and let us send you an email when boikini.com posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to boikini.com:

  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share