
10/05/2025
প্লেনে উঠেছি, দিল্লি যাচ্ছি, প্রায় ছ’ঘন্টার রাস্তা। ভেবেছিলাম—চুপচাপ বসে বই পড়ব একটু, আর মাঝপথে একটুখানি চোখও বুজব।
ঠিক টেকঅফের আগে দেখি প্লেনের দরজা খোলান হল আর একদল ভারতীয় জওয়ান উঠে এল—দশজন মতো। আমার চারপাশের সিটগুলোয় বসে পড়ল একে একে। মুখগুলো কেমন শান্ত, গম্ভীর।
পাশে বসা এক জওয়ানকে জিগ্যেস করলাম, “কোথায় যাচ্ছেন আপনারা...!”
সে বলল, “আগ্রা। দু’সপ্তাহ ট্রেনিং আছে, তারপর অপারেশন।”
এইটুকু বলেই চুপ। কী অপারেশন, কোথায়, কিছুই বলল না। বুঝলাম, বলার পারমিশন নেই..!
প্রায় এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, অ্যানাউন্সমেন্ট করলেন এয়ারহোস্টেস.... আপনাদের লাঞ্চ সার্ভ করা হবে, যারা চাইবেন, পয়সা দিয়ে লাঞ্চ কিনে নিতে পারেন।
মানিব্যাগে বের করছি, এমন সময় শুনি ওই জওয়ানদের নিজেদের মধ্যে কথা—
“খাবি?”
“ধুর, এখানে দাম বেশি। নিচে নেমে হোটেলে খাব।”
কী যেন হয়ে গেল ভেতরে। চুপচাপ উঠে গিয়ে এয়ারহোস্টেসকে বললাম, “ওদের সবার খাবার আমিই নিচ্ছি। প্লিজ দিয়ে দিন।”
মেয়েটার চোখে জল চলে এল। ফিসফিস করে বলল, “স্যার, আমার ভাই কার্গিলে। মনে হচ্ছে আপনি ভাইকেই খাওয়াচ্ছেন...!”
মনটা কেমন যেন হয়ে গেল। সিটে ফিরে এলাম, আধ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ওদের সবার হাতে খাবার পৌঁছে গেল।কিছুটা অবাক হলেন ওনারা... কি ভাবলেন জানিনা... খাবার বাক্স খুলে খেত শুরু করলেন। দেখে বোঝা যাচ্ছিল ক্ষুধার্ত..!
আমি নিজের লাঞ্চ শেষ করে টয়লেটের দিকে যাচ্ছি, হঠাৎ এক বৃদ্ধ এগিয়ে এলেন।
বললেন, “সব দেখেছি। আপনি সত্যি ভালমানুষ, স্যার।”
তারপর হাতে এক ৫০০ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বললেন, “এই ভালো কাজের একটা অংশ আমিও হতে চাই...!" আমি কিছু বলতে পারার আগেই নিজের সীটে ফিরে গেলেন ভদ্রলোক!
ফিরে এসে ভাবছি এসব কী হচ্ছে.... দেখি—পাইলট নিজে সিটে চলে এলেন! সীটবেল্ট খুলে উঠে দাঁড়ালাম। হেসে বললেন, “আপনার সঙ্গে হাত মেলাতে চাই।”
আমি অবাক। বললাম, “কেন স্যার?”
তিনি বললেন, “আমি নিজে একদিন ফাইটার পাইলট ছিলাম। সেদিন এক অচেনা মানুষ আমার জন্য খাবার কিনে দিয়েছিলেন। আজ আপনি সেই মুহূর্তটা ফিরিয়ে দিলেন.... আমি শুনেছি কেবিন ক্রুর কাছ থেকে..!"
হঠাৎ করে চারপাশে হাততালি পড়ে গেল। আমি একটু লজ্জা পেলাম। কারণ, আদতে কিছুই করিনি। মন চেয়েছিল, তাই করেছিলাম.... হাততালির জন্যে তো করিনি কিছুই...!
কিছুক্ষণ পর, এক আঠারো বছরের মতো ছেলে হেসে এগিয়ে এল। হাত মেলাল, তারপর একটুকরো কাগজ গুঁজে দিল হাতে। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম..!
বিমান নামল।
মাল নামাচ্ছি, এমন সময় এক ভদ্রলোক চুপচাপ আমার পকেটে কিছু একটা ঢুকিয়ে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলেন। আরও একটা নোট।
লাগেজ বেল্টের কাছে দেখলাম ঐ দশজন সৈনিক দাঁড়িয়ে আছে, লাগেজের অপেক্ষায়। দৌড়ে গেলাম ওদের কাছে... বললাম, “এই টাকাগুলো রাখুন। এগুলো কিছু দেশবাসীর ভালবাসা.... ট্রেনিংয়ে যাওয়ার আগে কিছু দরকার হলে খরচ করুন।
আপনারা আমাদের জন্য যা করেন, এই সামান্য টাকা দিয়ে তার দাম চোকানো যায় না। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছি শুধু।”
ওরা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। কারও চোখে জল, কেউ হাসছিল। এক ফ্লাইট দেশবাসীর ভালবাসা নিয়ে ওরা এবার এগিয়ে যাবে...!!
গাড়িতে উঠলাম।
চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করলাম.... “ভগবান, এদের যেন ভালো রেখো....এরা তো প্রাণ হাতে করে মৃত্যুর দিকে হেঁটে যায় দেশের জন্য।”
একজন জওয়ান মানে, যেন দেশের নামে লিখে দেওয়া এক খালি চেক..... যখন চাইবে তাই দিয়ে দেশের নামে জীবন অবধি তুলে নিতে পারবে দেশবাসী....
যেটা ওরা জীবন দিয়েও পূরণ করতে রাজি।
আর আমাদের অনেকেই সেটা বুঝতেই চায় না।
-- সংগৃহীত
এই গল্পটা শেয়ার করবেন কি না সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু আমি জানি, যতবার পড়বেন—চোখটা ভিজে যাবে।
#উত্তমকুমার #স্মিতা_পাতিল
#বাংলা_ছবি
#কলকাতা #কলকাতারডায়েরি