24/07/2025
আমি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছি। যখন আমি এরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপের জন্য আবেদন করি, তখন আমার সিজিপিএ ছিল ২.৫৭। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন – ২.৫৭! অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, এই সিজিপিএ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আমার গল্পটা এখানেই শেষ নয়, বরং এখান থেকেই শুরু।
আমার যাত্রার শুরুতে, আমার হাতে কোনো IELTS স্কোর ছিল না, এমনকি কোনো পাবলিশড রিসার্চ পেপারও ছিল না। আমার সম্বল ছিল শুধুমাত্র দুটো ইন সিলিকো রিসার্চ ল্যাবের সাথে অনানুষ্ঠানিক সংযুক্তি, যেখানে আমি প্রায় এক বছর করে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করি। এই ল্যাবগুলোতে আমি নিজের উদ্যোগেই বিভিন্ন কম্পিউটেশনাল টুলস শিখেছিলাম এবং ৩-৪টি ব্যক্তিগত গবেষণা প্রকল্প তৈরি করেছিলাম।
আমার এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্যাচেলরের দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই। আমি জানতাম, আন্তর্জাতিক সুযোগ পেতে হলে আমাকে ব্যতিক্রমী কিছু করতে হবে। তাই আমি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ২০০ জনেরও বেশি অধ্যাপককে ইমেইল করা শুরু করি। নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যাখ্যা করে তাদের ল্যাবে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করতাম। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, বেশ কয়েকজন অধ্যাপক আমার সাথে কথা বলতে এবং ইন্টারভিউ নিতে আগ্রহী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজন তো আমাকে মাস্টারের জন্য হোস্ট করতে রাজিও হয়েছিলেন এবং আমাকে ইউনিভার্সিটি-রেকমেন্ডেড MEXT স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে উৎসাহিত করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, তীব্র প্রতিযোগিতা বা সীমিত আসনের কারণে সেই সুযোগটি আমার হাতছাড়া হয়ে যায়।
MEXT না পেলেও আমি দমে যাইনি। আমার লক্ষ্য ছিল স্থির। এরপরই আমি আবেদন করি এরাসমাস মুন্ডুস জয়েন্ট মাস্টার্স ডিগ্রি ইন কেমিক্যাল ইনোভেশন অ্যান্ড রেগুলেশন (ChIR) প্রোগ্রামে। আমার ব্যাচ (২০২৪-২০২৬) ছিল এই প্রোগ্রামের নবম এবং শেষ ফান্ডেড ব্যাচ। স্বাভাবিকভাবেই, শেষ ব্যাচ হওয়ায় রেকর্ড সংখ্যক আবেদন পড়েছিল। এমন কঠিন প্রতিযোগিতার মাঝেও, আমি বিশ্বের সকল আবেদনকারীর মধ্যে ১৩তম স্থান অর্জন করি!
কীভাবে এটা সম্ভব হলো? 😮
👉সাক্ষাৎকারে আমার সেরাটা দিয়েছিলাম: আমি সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা, সততা এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম।
👉আমার ব্যক্তিগত গবেষণা প্রকল্পগুলো: এই প্রকল্পগুলো সত্যিই অন্যদের মুগ্ধ করেছিল এবং আমার উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছিল।
👉কখনো হাল না ছাড়া মানসিকতা: MEXT এর মতো বড় একটি সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পরও আমি আমার প্রচেষ্টা থামাইনি। এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।
এছাড়াও, আমি আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি (ACS), BPS এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সোসাইটিগুলোর সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলাম। এই সদস্যপদগুলো আমাকে নিয়মিতভাবে অত্যাধুনিক গবেষণাপত্র, নিউজলেটার এবং বৈশ্বিক ট্রেন্ড সম্পর্কে জানতে সাহায্য করত। এর ফলে আন্তর্জাতিক গবেষকদের চিন্তাভাবনা এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়েছিল, যা একজন বিজ্ঞানী হিসেবে আমার চিন্তাভাবনাকে নতুন রূপ দিয়েছে।
আমার এই অভিজ্ঞতা থেকে যদি আপনাদের একটি পরামর্শ দিতে হয়, তবে তা হলো– আপনার ব্যাচেলর জীবনের শুরু থেকেই প্রস্তুতি নিন, একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেই লক্ষ্য থেকে কখনোই বিচ্যুত হবেন না। মনে রাখবেন, পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো বাধাই আপনাকে আটকাতে পারবে না!
আপনারা যারা আন্তর্জাতিক স্কলারশিপের স্বপ্ন দেখছেন, তাদের জন্য আমার এই গল্পটি যদি একটুও অনুপ্রেরণা যোগায়, তবে সেটাই হবে আমার সার্থকতা। স্বপ্ন দেখুন, কঠোর পরিশ্রম করুন এবং কখনোই হাল ছাড়বেন না! ✨
-Md. Saad Hossain