17/05/2025
এই সেই সান্ডা, ডিজিটাল এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়ায় লুকিয়ে রাখার কোনো বিষয়ই নেই। পৃথিবীর এক প্রান্তের খবর মুহূর্তেই পেশ হয় অন্য প্রান্তের মানুষের সামনে। অজানাকে জানা এখন কোনো ব্যাপারই না। তবে কেবল খবর, জ্ঞান বা বিনোদন বিতরণ নয়, প্রায়ই সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন কোনো বিষয় ভাইরাল হয়। সেটি নিয়ে চলতে থাকে আলোচনা, সমালোচনা। এই যেমন বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সান্ডা’। মরুর দেশের একটি প্রাণী এটি। কিন্তু কেন এই প্রাণীকে নিয়ে এত আলোচনা?
আরবের দেশগুলোতে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘কফিলের জন্য সান্ডা ধরার’ ভিডিও দিচ্ছেন। কেউবা শেয়ার করছেন ছবি। বিষয়টি নিয়ে হাস্যঠাট্টাও কম হচ্ছে না। অনেক মিমও বানাচ্ছেন এই বিষয়টি নিয়ে।
সান্ডা 1
সান্ডা কী:
সান্ডা হলো আগামিডে পরিবারের টিকটিকিদের একটি গণ। অর্থাৎ টিকটিকির মতোই একটি প্রাণী এটি। দেখতে অনেকটা আমাদের পরিচিত গুইসাপের মতো। এর আদি নিবাস আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য (পশ্চিম এশিয়া)।
আরও পড়ুন- গর্ভাবস্থায় অ্যালোভেরার জুস খাওয়া যাবে?
এই প্রাণীটি কাঁটা লেজযুক্ত টিকটিকি, ইউরোমাস্টিকস, মাস্টিগুর বা সান্ডা টিকটিকি নামেও পরিচিত। এদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো মোটা ও শক্তিশালী লেজ, যা কাঁটার মতো খাঁজযুক্ত। আত্মরক্ষার জন্য লেজ ব্যবহার করে প্রাণীটি।
সান্ডা 2
সান্ডা কী খেয়ে বাঁচে:
সান্ডা মূলত তৃণভোজী, তবে কখনো কখনো এরা পোকামাকড় ও অন্যান্য ছোট প্রাণী—বিশেষ করে ছোট আকারের টিকটিকি খেয়ে থাকে। জাগ্রত অবস্থার এই প্রাণী বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে রোদ পোহাতে। আর রাতের বেলা অথবা কোনো বিপদের সময় আশ্রয় নেয় ভূগর্ভস্থ গর্ত বা কক্ষে। সাধারণত পাহাড়ি ও পাথুরে অঞ্চলে বসবাস করতে পছন্দ করে সান্ডা। কারণ এটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং সহজলভ্য উদ্ভিদজাত খাদ্য পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন- গরমে কি কৃমির ওষুধ খাওয়া যায়?
বন্য পরিবেশে তারা সাধারণত আশেপাশে সহজলভ্য যেকোনো গাছপালা খেয়ে থাকে। ডিম থেকে সদ্য ফুটে ওঠা বাচ্চা সান্ডারা প্রথমে মায়ের মল খায়। এই কাজটি করে সঠিক অন্ত্র জীববৈচিত্র্য (gut flora) গঠনের জন্য, যা উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্য হজমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সান্ডা 3
বন্য পরিবেশে, প্রাপ্তবয়স্ক সান্ডার মধ্যে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পোকামাকড় খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষ করে যখন গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া অত্যন্ত গরম হয় এবং গাছপালাভিত্তিক খাদ্য কম সহজলভ্য থাকে। এই সময়টাতে পোকামাকড়ই তাদের একমাত্র বা প্রধান খাদ্য উৎস হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন- উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা কি বিট লবণ খেতে পারবেন?
সান্ডা কি খাওয়া যায়:? :
আরব উপদ্বীপের অভ্যন্তরীণ ও পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী কিছু বেদুইন জনগোষ্ঠীর খাদ্য হিসেবে সান্ডা খেয়ে থাকে। একসময় এটি আরবীয় সুস্বাদু খাবার হিসেবে বিবেচিত ছিল। তবে লিপিবদ্ধ আছে যে, যখন বেদুইনরা মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এর সামনে একটি দব (সান্ডার কাছাকাছি একটি প্রাণী) রান্না করে এনেছিল, তখন তিনি এটি খাননি, কিন্তু অন্যদের খেতেও নিষেধ করেননি। তাই সাহাবি খালিদ বিন ওয়ালিদ এটি খেয়ে ফেলেছিলেন। এই কারণে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাণীটি খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়। অর্থাৎ এটি মাকরুহ ধরা হয়। তবে আরব অঞ্চলে যে সান্ডা খাওয়া হয় তা আসলে দব। অধিকাংশ ইসলামি স্কলারদের মতে এটি হালাল, তবে হানাফি মাজহাবে এটি খাওয়া হারাম।
সান্ডা
ইহুদি ধর্মে, সান্ডাকে ঐতিহ্যগতভাবে বাইবেলের তজাভ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। আটটি প্রাণীর মধ্যে এটি একটি যা খাওয়ার জন্য নিষিদ্ধ। বলা হয় এটি ধর্মীয় অপবিত্রতা প্রদান করে। তৌরাত শরীফে বলা হয়েছে: “পৃথিবীতে ঝাঁকে ঝাঁকে চলা প্রাণীদের মধ্যে তোমাদের জন্য এই জিনিসগুলো অশুচি হবে: উইজল, ইঁদুর, সর্বপ্রকার সান্ডা টিকটিকি; গেকো, স্থল-কুমির, টিকটিকি, স্কিঙ্ক এবং গিরগিটি” (লেবীয় পুস্তক ১১:২৯-৩০)।
সান্ডা তেলের উপকারিতা:
সান্ডা তেল একটি প্রাকৃতিক তেলের মিশ্রণ যা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। মূলত যৌন কর্মহীনতার সমস্যা সমাধানে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বলা হয় এই তেল পুরুষদের মধ্যে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (ED) এবং অন্যান্য যৌন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে। কারো কারো মনে সান্ডা তেল পুরুষের যৌনাঙ্গ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা প্রমাণ নেই।
কালেকশন.
#বোতল #সান্ডা #দেশিসান্ডা #সান্ডা