ঐতিহ্যবাহী শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় নারী শিক্ষা মন্দির ঢাকা মহানগরীর একটি অন্যতম প্রাচীন এবং আর্দশ মেয়েদের / আপগ্রেডেড শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । মহানগরীর বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত এই শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় কল-কোলহলের মাঝেও যেন নির্মল শান্তি সুখ আর সবুজের আবাসভূমি। প্রাতিষ্ঠানের উত্তর দিকে রয়েছে ঐতিহাসিক বঙ্গভবন । দক্ষিণে রয়েছে রাজধানী সুপার মার্কেট এককালে যেখানে হরদেত্ত গ্লাস ফ্যাক্টরী ছিল । পশ্চিমে ওয়ারী থানা আর মেযর মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাই্ওভার পুর্বে রয়েছে, অতীতের বিখ্যাত সেই ইলিশিয়াম হোটেল যে ভবনটি এখন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের আবাসিক কোয়ার্টার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ইত্তেফাক মোড় ।
লীলা রায় নাগ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন নেত্রী ছিলেন । লীলাবতী নাগ ছিলেন শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় এর (১৯০০-১৯৭০) প্রতিষ্ঠাতা। ১৯২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল়য়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ভর্তি হন। ১৯২৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রীধারী। তখনকার পরিবেশে সহশিক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলে লীলা রায়ের মেধা ও আকাঙ্খা বিচার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চান্সেলর ডঃ হার্টস তাকে পড়ার বিশেষ অনুমতি প্রদান করেন। বাঙালি নারীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে তিনি বিশেষ ভুমিকা পালন করেছেন। তিনি ঢাকার আরমানীটোলা বালিকা বিদ্যালয়, কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল এবং শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় (তৎকালীন নারীশিক্ষা মন্দির) প্রতিষ্ঠা করেন।
আপন মহিমায় মহিমান্বিত ঐতিহ্যমন্দিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কে জি শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পযর্ন্ত একটি একক প্রতিষ্ঠান । প্রতিষ্ঠানে মূলত তিনটি শাখা রয়েছে – প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক । মাধ্যমিক শাখার নবম ও দশম শ্রেণীতে এবং উচ্চ মাধ্যমিক শাখার একাদশ শ্রেণীতে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষায় এই তিনটি বিভাগেই চালু রয়েছে ।
কে জি শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রী সংখ্যা অনুযায়ী শাখা ভাগ করা হয়েছে । কে জি শ্রেণীতে একটি শাখা যার নাম শাপলা প্রথম শ্রেণীতে দুটি শাখা যাদের নাম শাপলা এবং জবা দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম পর্যন্ত তিনটি করে শাখা আছে যাদের নাম শাপলা , জবা, বেলী । যষ্ট শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঁচটি করে শাখা যাদের নাম যথাক্রমে শাপলা, জবা , বেলী, টগর ও জুঁই । নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত তিনটি করে শাখা বিদ্যমান যাদের নাম শাপণা , জবা, বেলী ।
বিদ্যালয় এর এই যুগে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন এবং শিক্ষা পদ্ধতিকে আধুনিক এবং ডিজিটালাইজ করা হয়েছে । কঠোর শৃংখলা নিয়মানুবর্তিতা ও নৈতিক শিক্ষা দানের মার্ধ্যমে ছাত্রীদের সৎযোগ্য ও আদশ নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে শিক্ষকবৃন্দ আন্তরিক ও সচেষ্ট । নটোল পরিবেশে শিক্ষা লাভের পাশাপাশি ছাত্রীরা সাংস্কৃতিক সঙ্গনেও বিভিন্ন সময়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে ।
বেতার ও টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছাত্রীরা প্রায়ই অংশ গ্রহণে করে এবং এরই মধ্যে যথেষ্ট সুনামত্ত তারা অর্জন করেছে । খেলাধুলার জগতেত্ত প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের দৃপ্ত পদচারনা ছাত্রীরা মানা পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় অবাধ বিভিন্ন খেলাধুলা যেমন দাবা ব্যবয়ম , ব্যাডমিন্টন , হ্যান্ডবল, টেনিস , তায়কোয়ানডো এবং এ্যাথলেটিকসের বিভিন্ন ইভেন্ট যেমন হাইজাম্প , লংজাম্প, দৌড় ইত্যাদিতে কৃতিত্বের স্বাস্থ্যর রেখেছে । বছরে একবার ঐতিহাসিক অথবা ভৌগলিক গুরুত্বপূর্ণ কোন স্থানে শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা করা হয় ছাত্রীদের জ্ঞানভান্ডার কে সমৃদ্ধ করে এবং একঘেয়েঁ ক্লাসের ক্লান্তি দুরকরে।
প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ শিক্ষকই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত , শিক্ষার্থীদের মেধার স্ফূরণ, প্রতিভা ও মানবিক গুনাবলীর বিকাশ ঘটিয়ে সুন্দর ভবিষ্যেতে উপহার দেয়ার জন্য শিক্ষকবৃন্দ তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছেন ।
শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের উন্নতির পথ সুগম করে গেছেন অনেকেই। সবার অশেষ পরিশ্রমেই গড়ে উঠেছে আজকের এই বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ হোসনে আরা শাহেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। উনার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের এই মহাবিদ্যালয়।
পি ই সি , জে এস সি , এস এস সি এবং এইচ এস সি পরীক্ষায় GPA -৫ অর্জনের লক্ষ্যে এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছাত্রীদের ভাল ফলাফল অর্জন করানোর জন্য অতিবিত্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয় আর এসব কিছুর নির্দেশনায় যিনি আছেন তিনি প্রতিষ্ঠানের সুযোগ্য ও দক্ষ্য সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জনাব মোঃ রাসুরুল হক শাহীন । অভিজ্ঞ অধ্যক্ষ জনাব মোঃ মনোয়ার হোসেনের এবং শিক্ষকদের কর্মপ্রচেষ্টায় ও ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে কাংখিত নামে ।
একথা আজ কারও অবিদিত নয় যে, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এ প্রতিষ্ঠানেরই উজ্জলতম প্রাক্তন ছাত্রী , মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিষ্ঠানের গর্ব, প্রৃতিষ্ঠানের অহংকার, নারী শিক্ষা মন্দিরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন ।
সভাপতি মহাদয়ের উদ্যোগে আজ আবার নতুন করে এ প্রতিষ্ঠানটি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে । প্রতিষ্ঠানের উন্নতিকল্পে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন , ভবিষ্যতেও করবেন । এবং অচিরেই শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় দেশের শ্রেষ্ঠতম নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রুপ পরিচিতি লাভ করবে এ আশাবাদ সবার ।
ছাত্রী শিক্ষক অভিভাবক এবং গর্ভনিংবডির সদস্যবৃন্দ প্রতিষ্ঠানটি সরকারী করনের যে মহতী উদ্যোগ গ্রহন করেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুগ্রহ করে সে উদ্যোগকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য সর্বান্তকরনে সাহায্যেও হাত বাড়িয়ে দেবেন এবং পুরানো ঢাকার দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকৃত এবং নিম্নবিত্ত মা বাবার মেয়ে সন্তান , যারা অর্থাভাবে লেখাপড়া করতে পারে না অথবা মাঝপথে ঝড়ে পড়ে, তাদের লেখাপড়ার সুযোগ সম্প্রসারিত করে দেশে নারীদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করবেন।
স্বর্গত লীলা রায়ের “নারী শিক্ষা মন্দির”।