03/08/2024
আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস! বিপ্লবের ইতিহাস 🙏🏻
জানি প্রচুর পোস্টের ভীড়ে হয়তো আমার এই লেখা কারোর চোখে পরবেনা কিন্তু মনে হলো আমাদের এই ইতিহাস জানা ভীষণভাবে প্রয়োজন এবং দায়িত্ব!! আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে একটু ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে প্রথমেই হোঁচট খেতে হলো যখন দেখলাম উইকিপেডিয়ার শুরুতেই পড়তে হলো, "International Women's Day (IWD) is a holiday celebrated annually on March 8th .." যদিও তারপরে কি কারণে এবং দিনটির গুরুত্ব নিয়ে লেখা ছিল কিন্তু প্রথমেই "ছুটির দিন " কথাটা শুনে মনের মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ,তাহলে কি নারী শ্রমিকদের সংগ্রামের ইতিহাস এবং অধিকার আদায়ের বিপ্লব শুধুমাত্র একটি "ছুটির দিন" হিসেবেই আমরা ভাবতে শুরু করিনি তো? দিনটিকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার প্রয়াসে গা ভাসাই নি তো??
এই সাম্রাজ্যবাদীদের ভীড়ে মানুষ যেন ভুলে না যায় সেই শোষণ ও বঞ্চনার ইতিহাস !
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা, সোচ্চার হয়েছিলেন শোষণ ও নিপীড়ণের বিরুদ্ধে। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়নের প্রতিবাদে, এরপর ১৯০৯ সালের নিউইয়র্ক শার্টওয়াইস্ট ধর্মঘট , যা "20,000 এর বিদ্রোহ" নামেও পরিচিত , এইটি একটি শ্রম ধর্মঘট যা ছিল প্রাথমিকভাবে নিউইয়র্কের "শার্টওয়াইস্ট" কারখানায় কাজ করা ইহুদি মহিলাদের একটি আন্দোলন তারপর সমস্ত নারী শ্রমিকেরা ধীরেধীরে এই আন্দোলনে সামিল হন । এটি ছিল সেই সময়ের মহিলা আমেরিকান কর্মীদের সবচেয়ে বড় ধর্মঘট। ক্লারা লেমলিচ এবং ইন্টারন্যাশনাল লেডিস গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতৃত্বে এবং ন্যাশনাল উইমেনস ট্রেড ইউনিয়ন লীগ অফ আমেরিকা (NWTUL) দ্বারা সমর্থিত, ১৯০৯ সালের নভেম্বরে এই ধর্মঘটটি শুরু হয়।
ফেব্রুয়ারী ১৯১০ সালে, NWTUL কারখানার মালিকদের সাথে মীমাংসা করে, নারী শ্রমিক আন্দোলনের কিছু দাবি মেনে নিয়ে উন্নত মজুরি, কাজের অবস্থা এবং ঘন্টা অর্জন করে।
শনিবার, ২৫সে মার্চ , ১৯১১ তারিখে নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনের গ্রিনউইচ ভিলেজ এলাকায় "ত্রিভুজ শার্টওয়াইস্ট" কারখানার ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে যেটা শহরের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক শিল্প বিপর্যযের একটি এবং মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ছিল। এই অগ্নিকাণ্ডে ১৪৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় যার মধ্যে ১২৩ জন ছিলেন মহিলা ও মেয়ে এবং ২৩ জন পুরুষ - যারা আগুনে পুড়ে, ধোঁয়ায় এবং বাঁচার জন্য লাফিয়ে মারা যান!
কারণ অন্বেষণে জানা যায়, সিঁড়ি ও প্রস্থানের দরজা বন্ধ ছিল – শ্রমিকদের অনুমোদিত বিরতি থেকে বিরত রাখা এবং চুরি না করার জন্য এটি একটি সাধারণ অভ্যাস ছিল!
অনেক শ্রমিক জ্বলন্ত ভবন থেকে পালাতে পারেনি এবং উঁচু জানালা থেকে লাফিয়ে পরে মরে যেতে দেখা যায়, প্রতক্ষদর্শীরা বলেন!
এই অগ্নিকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন কিছু ঘটনা জানতে পারি যা শুনে শিহরিত হয়েছি বারবার!!
নারীশ্রমের স্বীকৃতি ও অধিকারের দাবি নিয়ে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয় । ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ই মার্চ পালিত হতে লাগল এই বিশ্ব নারী দিবস । অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি, নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে।
বছরের পর বছর ধরে, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের উদযাপন, মূল রাজনৈতিক শিকড় থেকে ধীরেধীরে বহু দূরে সরে যাচ্ছে । যেভাবে ফুল, উপহার এইগুলো দিয়ে এই ইতিহাস কে লুকিয়ে রেখে এর বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে এবং ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে এই বিপ্লবের দিন গুলোকে, আসুন সবাই মিলে আমরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হই!!
লিখলো : সৌভিক
তথ্য সংগ্রহ : বই, ইন্টারনেট