Hill Voice

Hill Voice Online News for CHT Issues, Indigenous Rights, Minority & Women Issues and Human Rights. Address: 10-96, Churchill Street, Waterloo, ON N2L 2X2, Canada

পিসিপি বিলাইছড়ি থানা শাখার ২১তম শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্নহিল ভয়েস, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম...
12/08/2025

পিসিপি বিলাইছড়ি থানা শাখার ২১তম শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন

হিল ভয়েস, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বিলাইছড়ি থানা শাখার ২১তম শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর ২০২৫) বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত সম্মেলন ও কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য টিপু চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জিকো চাকমা, পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক করুণ জ্যোতি চাকমা প্রমুখ।

এছাড়াও উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকার ছাত্র ও যুব সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এই সময় টিপু চাকমা বলেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক নিপীড়িত জুম্ম জনগণের হাতিয়ার হিসেবে পিসিপিকেই সর্বাগ্রে রুখে দাঁড়াতে হবে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন তথা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের লড়াইকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক জুম্ম ছাত্র ও যুবক বিপথে পরিচালিত হচ্ছে। অনেকেই শাসকগোষ্ঠীর পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছে, কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে নিজেদের ও জাতীয় ভবিষ্যৎ সংকটে ফেলছে। সেই তরুণদের নিকট আলোর দিশারী হয়ে মুক্তি ও প্রগতির বার্তা নিয়ে পিসিপিকেই পৌঁছাতে হবে। পিসিপির প্রত্যেকটা কর্মীকে দায়িত্ববান হয়ে জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।

জিকো চাকমা বলেন, নব্বই দশকের বিপ্লবীপনা ইতিহাস পিসিপির কর্মীদের জন্য পাথেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমান বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে ছাত্র ও যুব সমাজকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল করতে মহান পার্টির বার্তা প্রচার ও প্রসারে পিসিপিকেই গুরু দায়িত্ব নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দূর্বল ছোট ছোট জাতিসমূহ বরাবরই বিজাতীয় শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বলি হয়। কিন্তু যে জাতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোনো বিপ্লবী পার্টি কিংবা চেতনা বিরাজমান থাকে তারা টিকে থাকে। তারা লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে স্বকীয় অস্তিত্ব ও অধিকার সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়।

তিনি আরো বলেন, পার্টির বর্তমান লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বৃহত্তর আন্দোলন সুসংগঠিত করে জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নিশ্চিত করা। কাজেই ছাত্র ও যুব সমাজকে পার্টির আহ্বানকে উপলব্ধি করতে হবে। নব্বই দশকের ঐতিহাসিক বাস্তবতা আরেকবার প্রাসঙ্গিকতায় এসেছে। তাই ছাত্র-যুব সমাজকে লৌহ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

করুণ জ্যোতি চাকমা বলেন, প্রকৃতঅর্থে জুম্ম জনগণকে প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন মহান পার্টি জেএসএস ও জুম্ম ছাত্র সমাজকে প্রতিনিধিত্বকারী পিসিপি’র জন্মলাভ এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা। যুগের পর যুগ বিজাতীয় শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণে নিষ্পেষিত ও পশ্চাদপদ চিন্তায় নিমজ্জিত জুম্ম জনপদে মুক্তি ও প্রগতির বার্তা নিয়ে মহান পার্টির আবির্ভাব। সেসময়কার শিক্ষিত ছাত্র সমাজ এম এন লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের আনাচে-কানাচে মুক্তি ও পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলো।

তিনি আরো বলেন, মহান পার্টির নেতৃত্বে ছাত্র-সমাজ তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্বকে কাঁধে নিয়ে জীবন-যৌবন ত্যাগ করে বিপ্লব সাধনের মহাযজ্ঞে সামিল হয়। এই ইতিহাস নিয়ে বর্তমানে আমরা গর্ববোধ করি। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক বাস্তবতায় আমাদের দায়-দায়িত্ব আরো বেশি হয়ে গেছে। নব্বই দশকের ঐতিহাসিক লড়াই-সংগ্রামের ফসল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। সেই চুক্তির ২৮ টা বছর অবলীলায় চলে গেছে। জুম্মদের জাতীয় জীবন থেকে হারিয়ে গেছে দুই যুগেরও বেশি সময়। আজকে পাহাড়ে আরেকবার সর্বাত্মক প্রতিরোধ পর্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।

পিসিপি বিলাইছড়ি থানা শাখার বিদায়ী কমিটির সভাপতি নিকেল চাকমার সভাপতিত্বে সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন একই কমিটির সহ-সভাপতি খুলা বাবু তঞ্চঙ্গ্যাঁ এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাসেল মারমা।

সম্মেল শেষে নিকেল চাকমাকে সভাপতি ও দ্বীপ উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যাঁকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট বিলাইছড়ি থানা শাখা কমিটি নির্বাচিত করা হয়। নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জিকো চাকমা।

পিসিপি বিলাইছড়ি থানা শাখার ২১তম শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন

বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ রায়কে সস্ত্রীক হত্যা ঐক্য পরিষদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশহিল ভয়েস, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ঢাকা: গতকাল শনিবা...
12/07/2025

বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ রায়কে সস্ত্রীক হত্যা ঐক্য পরিষদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

হিল ভয়েস, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ঢাকা: গতকাল শনিবার (৬ ডিসেম্বর) গভীর রাতে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের উত্তর রহিমাপুর চাকলা গ্রামের নিজ বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায় (৬০)-কে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় চাকলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এহেন হত্যাকান্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অনতিবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।

ঐক্য পরিষদ প্রদত্ত বিবৃতিতে বলা হয় যে, এরূপ হত্যাকাণ্ড সংখ্যালঘুদের মনে গভীর শঙ্কার জন্ম দিয়েছে যা আগামী নির্বাচনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ রায়কে সস্ত্রীক হত্যা ঐক্য পরিষদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

ঢাকায় কাপেং-এর আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর কর্মশালা অনুষ্ঠিতহিল ভয়েস, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ঢাকা: আজ রবিবার (৭ ডিসে...
12/07/2025

ঢাকায় কাপেং-এর আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর কর্মশালা অনুষ্ঠিত

হিল ভয়েস, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ঢাকা: আজ রবিবার (৭ ডিসেম্বর) মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশন-এর উদ্যোগে বাংলাদেশের আদিবাসীদের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কাপেং ফাউন্ডেশনের এ্যাডভোকেসী অফিসার হ্লাম্রাচিং চৌধুরী রনি’র সঞ্চালনায় কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারপার্সন গোরাঙ্গ পাত্র।

কর্মশালায় ফ্রান্স দূতাবাসের পলিটিক্যাল এ্যাফেয়ার্স কো-অপারেশন বিভাগের মিস এমিলি বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশে না, বিশ্বব্যাপী আদিবাসীরা মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছেন। তারা তাদের ভূমি, সংস্কৃতি ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। একই সাথে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রান্তিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী ভূমি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষভাবে সমস্যার শিকার হচ্ছেন আদিবাসী নারীরা। তিনি বলেন, এ সকল সমস্যাগুলো নিরসনের জন্য রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে জবাবদিহিতা অত্যন্ত জরুরী। তিনি আদিবাসীদের মানবাধিকার সংরক্ষণের জন্য ফ্রান্স দূতাবাসের সহযোগিতা সর্বদা চলমান থাকবে বলেও অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট পার্থ শঙ্কর সাহা বলেন, সারা বাংলাদেশে এখন হত্যা ও ধর্ষণ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সরকারের উপদেষ্টারা মুখে শুধু সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেন না। শুধুমাত্র আইন করা হচ্ছে কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখনো গঠিত হয়নি। তিনি বলেন, আদিবাসীদের উপর সংগঠিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর ডকুমেন্টেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ঘটনাগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রকাশনাসহ ডকুমেন্টেশনের প্রচার ও প্রসার বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এ্যাডভোকেসী বিভাগের পরিচালক জনা গোস্বামী বলেন, সমতলের আদিবাসীরা এখনো সুসংগঠিত না। প্রতিনিয়তই তারা নিপীড়ন নির্যাতনের মুখোমুখি হয়ে বাস্তুভিটা হারাচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রশাসন নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, মানবাধিকারের বোধ কোন সরকারের মধ্যে নেই। শুধুমাত্র আদিবাসী শব্দটি নিয়েই বিভিন্ন ঝামেলা হচ্ছে। মব জাস্টিসের ভয়ে অনেকেই কোন কিছু বলছেন না। ডিজিটাল সিকিউরিটি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়েও কেউ কোন কিছু বলার সাহস করছেন না।

এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া দেশ চলতে পারে না। এ লক্ষ্যে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে হবে। তিনি আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষা ও আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ প্লাটফর্মে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ ও আলাদা নির্বাচনের দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকারের জনশুমারীতে আদিবাসীদের সংখ্যা অনেক কম দেখানো হয়েছে। জনশুমারির সময়ে অনেক প্রান্তিক আদিবাসীদের এলাকা বাদ পড়ে গিয়েছে। আদিবাসীদের জন্য আলাদা করে জনশুমারী করা হোক। তিনি আরও বলেন, বিচারব্যবস্থার কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বিচারব্যবস্থা স্বাধীন হওয়া মানেই আদিবাসীদের উপর সংগঠিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার হবে তা ভাবা ভুল হবে। বিচার বিভাগ আদিবাসী বান্ধব, নারী বান্ধব, দুর্বল, ক্ষমতাহীন মানুষ তথা জনবান্ধব হতে হবে।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আশা ছিলো যে জুলাই অভ্যুত্থানের পরে দেশের আদিবাসী মানুষেরা আরো বেশী অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু আমরা সেদিকে যেতে পারিনি। সাম্য ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশের স্বপ্ন বিনির্মাণ করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ৬৯ টি দেশে শান্তি মিশন পরিচালনা করেছে। বর্তমানে ১০ টি দেশে পরিচালনা করছে। যে বাহিনী সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার কাজ করছে সে বাহিনী কেন দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা করছে না? মূলত সেনাকর্তৃত্বের কারণেই দেশের আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার যদি সেনাকর্তৃত্ব সমাধান না করতে পারে তাহলে জাতিসংঘের কাছে হস্তান্তর করুক। কোন জনগোষ্ঠীকে যুগ যুগ ধরে নির্যাতন চালিয়ে, শাসন করে দমিয়ে রাখা যায় না। পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসী মানুষের অধিকারের আন্দোলন দেশের সমগ্র মানুষের আন্দোলন। সেই আন্দোলনে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন গোরাঙ্গ পাত্র বলেন, ২৪-এর যে বহুত্ববাদের স্বপ্ন সেটি এখন মৌলবাদীদের হাতে চলে যাচ্ছে। খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের মত ঘটনাগুলো এখন প্রতিনিয়ত হচ্ছে। পাহাড়ে সেনাবাহিনী যা ইচ্ছা তাই করছে। রাষ্ট্রের ক্ষমতা নাই সেখানে হস্তক্ষেপ করার। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত আদিবাসীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশায় আঘাত, নারীদের শ্লীলতাহানি এবং সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। মন থেকে আদিবাসীদের অধিকারগুলোকে মেনে নিতে না পারলে, তাদের পরিচয়কে মেনে নিতে না পারলে আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষিত হবে না।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, রাষ্ট্র দেশের আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে সমস্ত চুক্তি ও ঘোষণাপত্রে অনুস্বাক্ষর বা অনুসমর্থন দিয়েছে সেই অঙ্গিকারগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগ্রতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।

মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনটির প্রজেক্ট অফিসার ত্রিজিনাদ চাকমা। মূল বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী জাতিসমূহ এখনও অস্তিত্ব হুমকীর মধ্যে দিন যাপন করছেন। মানবাধিকার লংঘনের শিকার হতে হতে তারা আজ অসহায় ও দিশেহারা। কাপেং ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৪ সালে, বাংলাদেশের আদিবাসীদের উপর মোট ৯৭ টি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে ভূমিকেন্দ্রিক ঘটনা ঘটেছে ১৮টি, যার মধ্যে সমতলে ৪টি ও পাহাড়ে ১৪টি এবং মোট ১০০৭ জন এসব ঘটনার শিকার হয়েছেন। পাশাপাশি, মোট ৬১টি ঘটনায় ৩৪১ জন ব্যক্তি রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন যেখানে ৩টি ও ৫৮টি ঘটনা যথাক্রমে সমতল ও পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত হয়েছে। অপরদিকে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই ২০২৫ রিপোর্ট অনুযায়ী ১৫টি ভূমিকেন্দ্রিক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটেছে। ৩৪টি রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যেখানে মোট ৩৬৮ জন আদিবাসী মানবাধিকার লংঘনের শিকার হয়েছেন। এ সকল ঘটনাগুলোর একটিরও যথাযথ তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচার করা হয়নি।

বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষা ও সমুন্নত করতে ত্রিজিনাদ চাকমা নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
১. পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি আনয়নের জন্য অবিলম্বে রোডম্যাপ প্রণয়নপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা।
২. আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা।
৩. সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা।
৪. বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করা ও আদিবাসীদের বিরুদ্ধে এযাবতকালে সংঘটিত মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
৫. আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচী ও নীতিমালা প্রণয়ন করা।

কর্মশালায় মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের ইউজিন নকরেক, কুবরাজ ইন্টার-পুঞ্জি ডেভেলপম্যান্ট এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং, সিএইচটি জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ এসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক সন্তশিতো চাকমা বকুল, নমিতা চাকমা প্রমুখ।

ঢাকায় কাপেং-এর আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর কর্মশালা অনুষ্ঠিত

পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার ২৫তম বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল-২০২৫ সম্পন্নহিল ভয়েস, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, রাজশাহী: গতকাল ৫ ডিসে...
12/06/2025

পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার ২৫তম বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল-২০২৫ সম্পন্ন

হিল ভয়েস, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, রাজশাহী: গতকাল ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ‘সকল প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে জুম্ম ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হোন’ স্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর শাখার ২৫তম বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল- ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জগদীশ চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হ্লামংচিং মারমা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সম্মেলন ও কাউন্সিলে জগদীশ চাকমা বলেন, বিষয়টি হাস্যকর হলেও সত্যি ইউপিডিএফ পিসিপি নিজেদের এক নাম্বার পিসিপি দাবি করে। জুম্ম জনগণ জানে, কারা সত্যিকার অর্থে জুম্ম জনগণের স্বার্থে কাজ করে। কারা এক নাম্বার আর কারা দুই নাম্বার সেটি জনগণই নির্ধারণ করবে। আসল কি নকল সেটা কাজের মাধ্যমেই প্রমাণিত হবে। তিনি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৮ বছরেও বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণকে সরকারের অনীহা বলে মনে করেন।

তিনি আরো বলেন, ভূমি কমিশনের সভা বসলেই পিসিসিপি নামক সেটেলারদের সাম্প্রদায়িক একটি সংগঠন থেকে সভায় বাধা প্রদান করে এবং চুক্তি বাতিলের দাবি জানায়। জুম্ম জনগণ এবং ছাত্র সমাজকে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হতে হবে। যার জন্য দক্ষ, প্রায়োগিক, আদর্শিক কর্মী গড়ে তোলা প্রয়োজন।

অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পিসিপি পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র লড়াকু সংগঠন ছিল, এখনো আছে। জুম্ম জনগণের বৃহত্তর স্বার্থেই পিসিপি কাজ করে।

তিনি বলেন, আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক দর্শন, সংগঠনকে জানা, অধ্যয়নে সংগঠনের প্রতি টান বেড়ে যায়। সংগঠনকে ধারণ করতে পারলে কেউ সংগঠন ত্যাগ করার মানসিকতা লালন করবেনা।

হ্লামংচিং মারমা বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ লংগদুর গণহত‍্যার প্রতিবাদের মধ‍্য দিয়ে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠন হয়েছিলো। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নয়, এটি একটি পাঠশালাও বটে। গণঅভ‍্যুত্থানের পরে আমরা ভেবেছিলাম পাহাড়ে পরিবর্তন আসবে, পাহাড়ীদের ভাগ‍্যের পরিবর্তন হবে। কিন্তু আমরা তার বিপরীত দেখতে পাই শাসকগোষ্ঠী আমাদের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করছে, সেটেলার ও মৌলবাদীদের তৎপরতা বেড়েছে। আমাদের আত্ননিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামে মুক্তির সঠিক পথ, দর্শন চিহ্নিত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ইউপিডিএফ চুক্তির পরপরই শান্তিবাহিনীর প্রত‍্যাগত সদস‍্যদের হত্যার মধ‍্য দিয়ে সংঘাতের পরিস্তিতি তৈরি করে দিয়েছিলো। তারা জুম্ম জাতির আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। চুক্তির বিরোধিতা করে জুম্ম স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে থাকে। সুতরাং ইউপিডিএফ এবং চুক্তি বিরোধীদের সাথে জনসংহতি সমিতির দ্বন্দ্ব ভাতৃঘাতি সংঘাত নয়, বরং আদর্শিক দ্বন্দ্ব বলতে পারি। আর আমরা সেটাই করছি যেটা জুম্ম জাতির জন্য কল্যাণকর।

পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি বিজয় চাকমার সভাপতিত্বে উক্ত সম্মেলন ও কাউন্সিলে সঞ্চলনা করে একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমা এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার অর্থ সম্পাদক ময়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্মেলন শেষে সুমন চাকমাকে সভাপতি, ময়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যাকে সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাচুর্য্য চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার ২৫তম শাখা কাউন্সিল সম্পন্ন হয়।

পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার ২৫তম বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল-২০২৫ সম্পন্ন

12/05/2025

‘ক্যাম্পেইন ফর হিউম্যানিটি প্রোটেকশন (সিএইচপি)’ এর উদ্যোগে আগরতলার প্রেসক্লাবে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি আলোকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সিএইচপির সভাপতি, বিশিষ্ট লেখক ও সাহিত্যিক নিরঞ্জন চাকমা....
Hill Voice




12/04/2025

Dr. Shyamal Bikash Chakma, a researcher at the Tata Institute of Social Sciences, spoke at a discussion titled 'Human Rights Situation of Minorities in Bangladesh in the Light of the Chittagong Hill Tracts (CHT) Agreement' organized at the Agartala Press Club......

Hill Voice




ঐক্য পরিষদ নেতা এ্যাড. প্রদীপ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার ও পরে মুক্তি: ঐক্য পরিষদের উদ্বেগহিল ভয়েস, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, চট্টগ্রাম: ...
12/04/2025

ঐক্য পরিষদ নেতা এ্যাড. প্রদীপ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার ও পরে মুক্তি: ঐক্য পরিষদের উদ্বেগ

হিল ভয়েস, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা এ্যাড. প্রদীপ চৌধুরীকে কোন কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গ্রেপ্তারের পরদিন তিনি জামিনে মুক্তি পান বলে জানা যায়। তিনি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

গত ২ ডিসেম্বর ২০২৫ সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে গভীর উদ্বেগ ও মুক্তির দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের জে এম সেন হলে বিকেলে অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তিতে যেগদানশেষে ফেরার পথে জে এম সেন হল ফটক অতিক্রম করতেই একদল পুলিশ জোর করে গাড়িতে তুলে স্থানীয় কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়।

ঠিক কী কারণে এ্যাড প্রদীপ চৌধুরীকে ধরে নেওয়া হয়েছে তার কারণ থানায় নেয়ার পাঁচ ঘণ্টা পর রাত ১১টা পর্যন্ত পুলিশ জানাতে পারেনি বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষের কেন্দ্রীয় কমিটি এহেন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অনতিবিলম্বে এ্যাডভোকেট প্রদীপ চৌধুরীর মুক্তির দাবি জানায়।

সংগঠনটির বিবৃতির পরদিন বুধবার (৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মনিরুল ইসলামের আদালত তাকে জামিন দেয় বলে জানা যায়।

প্রদীপ চৌধুরীর আইনজীবী শামসুল ইসলাম জানান, মামলার এজাহারে প্রদীপ চৌধুরীর নাম নেই। একজন আইনজীবী হিসেবে আদালত ওনার জামিন মঞ্জুর করেছেন। আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জিম্মায় ওনাকে জামিন দেওয়া হয়েছে।

আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা বলেন, প্রদীপ চৌধুরীর জামিন শুনানিতে শতাধিক আইনজীবী অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে পুলিশের তরফে বলা হয়, তিনি সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন। গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হওয়া কোতোয়ালী থানার একটি মামলায় প্রদীপ চৌধুরী তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।

ঐক্য পরিষদ নেতা এ্যাড. প্রদীপ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার ও পরে মুক্তি: ঐক্য পরিষদের উদ্বেগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে র‍্যালি, গণসঙ্গীত ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিতহিল ভয়েস, ৩ ডিসেম...
12/03/2025

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে র‍্যালি, গণসঙ্গীত ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

হিল ভয়েস, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫, চট্টগ্রাম: গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) “জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সামিল হোন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করুন” এই আহ্বানে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে র‍্যালি, গণসঙ্গীত ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামস্থ নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার চত্বরে গতকাল দুপুর ২:৩০ ঘটিকায় উদ্বোধনী পর্বের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এবং উদ্বোধনী পর্বের পরে র‍্যালি সহকারে এসে জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা শুরু হয়।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু মহোদয়। এছাড়াও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি শাহ আলম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহিউদ্দিন মাহিম, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য শরৎ জ্যোতি চাকমা, কবি ও সাংবাদিক হাফিজ রশিদ খান, ঐক্য ন্যাপ, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অজিত দাশ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী প্রমুখ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি, চট্টগ্রামের আহ্বায়ক তাপস হোড়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ-সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব হ্লামিউ মারমা। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার স্কুল ও পাঠাগার সম্পাদক অপূর্ব চাকমা।

আলোচনা সভার শুরুতে গণসঙ্গীত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ।

উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, দেশের অভ্যন্তরে একটি নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীকে কেন চুক্তিতে উপনীত হতে হবে যদি সরকার তাদেরকে নিজ নিজ নায্য অধিকার নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করার সুযোগ দেয়। সংখ্যালঘুরা যদি রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্তিত্ব নিয়ে বসবাস করতে না পারি তাহলে যারা শান্তির স্লোগান দিচ্ছে তাদের কথার সাথে কাজের মিল আছে কিনা সন্দেহ আছে। পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যাকে সমাধানের জন্য প্রধান সমস্যা ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে। আপনারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছেন বিধায় ক্ষমতার জোরে আমাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। আজকে আমরা যে প্রতিবাদ মিছিলে নিজেদের একাত্ম করতে বাধ্য হয়েছি এগুলো আমাদের কাঙ্ক্ষিত নয়। আপনারা আমাদের যে শান্তনার বাণী শুনান, আশার বাণী দেন কিন্তু বাস্তবে গেলে দেখা যায় আপনাদের সেই অন্তরের কুবুদ্ধিই আছে। আমরা সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী, দেশের সকল নাগরিক সমঅধিকার, সমবন্টন নিয়ে সহাবস্থান করতে চাই। আপনারা যদি সত্যি মানবিক, উদার হন তাহলে দেশের আদিবাসীদের অধিকার ফিরিয়ে দিন।

আলোচনা সভায় অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার দে বলেন, সরকারের ইচ্ছাতেই পাহাড়ে আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন সংগঠিত হচ্ছে। চুক্তি নিয়ে অবাঞ্চিত বক্তব্য যেকোন সরকার থেকে কাম্য নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরও নির্যাতন নিপীড়ন চলমান রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী সংখ্যালঘু সমস্যা বুঝতে অক্ষম যার কারণে দেশে দীর্ঘসময় ধরে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ হয়না। আদিবাসীরা ন্যায়ের এবং মৌলিক অধিকার আদায়ের দাবি তুললে তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা দেওয়া হয়। তাদের প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে রোধ করার চেষ্টা করা হয়। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক লড়াই-সংগ্রামের ফল হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। চুক্তি স্বাক্ষরের পর আজ পর্যন্ত পাঁচটি নির্বাচিত দলীয় সরকার ও দুইটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা এলেও চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় তারা আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসেনি। পাহাড়ের তাই আমরা এখনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেখতে পাইনা।

শাহ আলম বলেন, পাহাড়ি জনগণকে তাদের অধিকার প্রদান না করলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আরো বিপদগ্রস্ত হবে। স্বাধীনতা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে অনেকেই রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছে কিন্তু দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি হয়নি। একইভাবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতেও আমরা দেখি জুলাই আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে কতকিছুই হচ্ছে অথচ জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ছিল দেশ থেকে বৈষম্য দূর করা। বৈষম্য দূর হওয়া দূরের কথা আমরা নাগরিক অধিকারও হারাতে বসেছি এখন। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ আদিবাসীদের লড়াই-সংগ্রামে নীতিগতভাবে পাশে থেকেছি আগামীতেও থাকবো। ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার কোন বিকল্প নেই।

প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী বলেন, পাহাড়ের সংকট সমাধানে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অতিদ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার যথাযথ সমাধান না হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরো জটিলতার দিকে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কয়েক বছর অন্তর অন্তর সরকার পরিবর্তন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়না। ২৮ বছর আগে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও সরকার সেই চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়ন করেনি উপরন্তু আদিবাসীদের উপর নিপীড়ন জারি রেখেছে।

ড. মুহাম্মদ মহিউদ্দিন মাহিম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আকাঙ্ক্ষা ছিল পাহাড়ের রাজনৈতিক সমস্যাকে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি স্থাপন করা। কিন্তু পার্বত্য চুক্তির মৌলিক ধারাসমুহ এখনও অবধি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ে সেই প্রত্যাশিত শান্তি ফিরে আসেনি। এই চুক্তি দিয়ে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও তা আজ বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে। এমন বাস্তবতায় পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি দিনদিন কঠোরতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

শরৎজ্যোতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে এখনও ২৫টি ধারা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলো কিছু আংশিক ও কিছু পুরোপুরি অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। অবাস্তবায়িত ধারাগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোই চুক্তির মৌলিক ধারা। এই মৌলিক ধারাসমূহ বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য অঞ্চলে এখনও অস্থিতিশীল পরিবেশ জিইয়ে আছে। এই অস্থিতিশীল পরিবেশ একইসাথে পুরো বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একটা ক্ষতিকর দিক। পার্বত্য চুক্তি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক সমস্যাকে সমাধানের উদ্দেশ্যে করা হয়, তাই এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে না এবং সম্ভবও নয়।

হাফিজ রশিদ খান বলেন, দেশে-বিদেশে স্বীকৃত একটি চুক্তির ২৮ বছর পরেও পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য দেশের নাগরিক সমাজের অন্যতম একটি অংশ বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা এখনও আন্দোলন সমাবেশ করে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেখানকার নাগরিক সমাজ চেয়েছিল চুক্তির মাধ্যমে তাদের ভূমির অধিকারসহ অন্যান্য নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হবে। তারা জনসংহতি সমিতির দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের সাথে সমবেত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকারও তাদের যে দাবিদাওয়া ছিল সেগুলোর সাথে একমত হয়ে চুক্তিতে উপনীত হয়। কিন্তু যখন চুক্তি স্বাক্ষরের ২৮ বছর পরও সেই অঙ্গীকার পূর্ণতা না পায় তখন আমাদের ভাবতে বাধ্য করে এখানে সরকারের দায়বদ্ধতার দুর্বলতা আছে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজের কথা শুনতে পাচ্ছি। অন্তর্ভূক্তিমূলক বাংলাদেশ গঠনের জন্য পাহাড়িরা বঞ্চিত থাকবে কেন? পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নায্য অধিকার চুক্তির মাধ্যমে সরকার যেহেতু মেনে নিয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়নের দায়িত্বও সরকারের।

অজিত দাশ বলেন, স্বাধীনতার আজ ৫৪ বছর পেরোতে যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত আমাদের সামাজিক মুক্তি, রাজনৈতিক মুকিত, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য লড়াই-সংগ্রাম করতে হচ্ছে। দেশে এখন যেভাবে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থান হচ্ছে এই পরিবেশে বাংলাদেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ টিকে থাকা মুশকিল। এই বাস্তবতায় দেশের সকল প্রগতিশীল ও দেশপ্রেমী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লড়াই-সংগ্রামে আমাদের সকলের পাশে থাকতে হবে।

প্রদীপ কুমার চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চুক্তির মধ্য দিয়ে কথা ছিল পাহাড়ি জুম্ম জনগোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ অধিকার নিয়ে দেশের অন্যান্য নাগরিকের মত বেঁচে থাকবে। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের আজ ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর তাদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হতে হচ্ছে, তাদের জীবনের নিরাপত্তার শঙ্কায় থাকতে হচ্ছে। আমরা চাইনা পাহাড়ে অশান্তি থাকুক, স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চুক্তির বাস্তবায়ন অতীব জরুরি।

এছাড়াও আলোচনা সভায় সংহতি বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সভাপতি জগৎ জ্যোতি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা ও ত্রিপুরা কল্যাণ ফোরামের সাবেক সভাপতি সুরেশ বরণ ত্রিপুরা প্রমুখ। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি, চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ও আলোচনা সভার সভাপতি তাপস হোড়ের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে র‍্যালি, গণসঙ্গীত ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের আন্দোলনে তরুণ সমাজকে যুক্ত হতে হবে: সাধুরাম ত্রিপুরাহিল ভয়েস, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫, রাঙ্গামাটি...
12/03/2025

জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের আন্দোলনে তরুণ সমাজকে যুক্ত হতে হবে: সাধুরাম ত্রিপুরা

হিল ভয়েস, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য আমরা আন্দোলন করছি, এই আন্দোলনে তরুণ সমাজসহ আমাদের সবাইকে যুক্ত হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০ ঘটিকায় বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের একুজ্যাছড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন এইসব কথা বলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ফারুয়া ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবিন তঞ্চঙ্গ্যার সঞ্চালনায় গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, এগুজ্যাছড়ির হেডম্যান সমূল্য তঞ্চঙ্গ্যা এবং বিলুপ্ত ঘোষিত শান্তিবাহিনীর সাবেক গেরিলা টনি বম।

গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি ২০২৫, ফারুয়া, বিলাইছড়ি এর আহ্বায়ক জীবন বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সহ-সভাপতি নির্মল তঞ্চঙ্গ্যা। উক্ত গণসমাবেশে ফারুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত জুম্ম অংশগ্রহণ করেছেন বলেও জানা গেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস অত্যন্ত করুণ। সেই লড়াই সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেকে নিজেদের মূল্যবান জীবন হারিয়েছে, অনেকে জেলে গিয়েছে, অনেকে নিজের আদরের সন্তানকে হারিয়েছে, অনেকে উদ্বাস্তু হয়েছে। এইসব কিছুর বিনিময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো হস্তান্তর করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়নি। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের ভবিষ্যত এখন এক অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক চুক্তি বিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন সৃষ্টি করে দিয়ে চলেছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই অপতৎপরতা ও অপচেষ্টা কখনোই শুভফল বয়ে আনবে না। ছাত্র ও যুব সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা হবো নিপীড়িত মানুষের বন্ধু, আমরা হবো নিপীড়িত মানুষের মুক্তি সংগ্রামের একেকজন লড়াকু সৈনিক। জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য আমরা আন্দোলন করছি, এই আন্দোলনে আমাদের সবাইকে যুক্ত হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মধ্যে দিয়ে সমস্ত ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে সবাইকে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, যখন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, আমরা সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। আমরা অনেক আশা ভরসা নিয়ে চুক্তিতে উপনীত হয়েছিলাম। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো সরকারই সদিচ্ছা আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসেনি।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের অস্তিত্ব যদি না থাকে, তাহলে আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকবে না, আমাদের সংস্কৃতি টিকে থাকবে না, আমাদের ভাষাগুলো থাকবে না। আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলব। সেগুলো না হারানোর জন্যই আমাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পতাকাতলে এসে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে।

যুবনেতা সুমিত্র চাকমা বলেন, চুক্তি মোতাবেক যদি সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে সংরক্ষণের জন্য আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতো, তাহলে আজকে পাহাড়ে বহিরাগত সেটেলার বাঙালিদের সংখ্যা বেড়ে যেতো না। আজ সেটা না হওয়ার কারণেই কতিপয় সেটেলার বাঙালিদের প্রতিবাদের কারণে পার্বত্য জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত হয়।

তিনি আরো বলেন, ফারুয়া থেকে বিলাইছড়ি, বিলাইছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি, রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি থেকে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে জুম্ম জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এলাকায় এলাকায় গণসংগঠন গড়ে তুলতে হবে, সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে জুম্ম ছাত্র যুব সমাজ তথা সমগ্র জুম্ম জনগণকে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হতে হবে।

জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণের আন্দোলনে তরুণ সমাজকে যুক্ত হতে হবে: সাধুরাম ত্রিপুরা

বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপনহিল ভয়েস, ২ ডিসেম্বর ২০২৫, রাঙ্গামাটি: রাঙামাটি জেলাধীন বাঘা...
12/02/2025

বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপন

হিল ভয়েস, ২ ডিসেম্বর ২০২৫, রাঙ্গামাটি: রাঙামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলায় আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘২রা ডিসেম্বর উদযাপন কমিটি বাঘাইছড়ির’ উদ্যোগে এক গণসমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গণসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাবেক প্রত্যাগত সদস্য ত্রিদীপ চাকমা(দীপ বাবু), পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কার্বারী প্রতিনিধি সমাপ্তি দেওয়ান, চেয়ারম্যান প্রতিনিধি বিল্টু চাকমা, হেডম্যান প্রতিনিধি এন্ড্রো খীসা প্রমুখ।

সভায় জুয়েল চাকমা বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে আমরা বলতে চাই, জুম্ম জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার উপর যদি প্রতারণা হয়, যে জুম্ম জনগণের ২৪ বছরের রক্ত পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিয়ে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তির উপর যদি আঘাত করা হয়, তাহলে এই জুম্ম জনগণ তার প্রতিশোধ রক্ত দেয়া-নেয়ার মধ্যে দিয়ে তার সমাধান করবে।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক যে অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে, ঠিক তার পরক্ষণে ২০২২ সালে বাংলাদেশ আর্মড পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে একটা নির্দেশনা আসে, যে অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে সেখানে এপিবিএন ক্যাম্প বসবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারের একটি পক্ষ চায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ তাঁদের অধিকার না পাক। তারা চায় আমরা এখানে দাস হয়ে থাকি। তারা চায় আমরা এখান থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়, নয়তো আমরা এই পার্বত্য চট্টগ্রাম, আমাদের এই মাটি-জন্মভূমি ফেলে অন্যত্র চলে যায়। এইটা তারা ভোগ করবে। এজন্য সেই অংশটি এই চুক্তি বাস্তবায়ন চায়না বলে ভিতরে ভিতরে চুক্তি বিরোধী একটি অংশকে সে দাঁড় করিয়েছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা মনে করি পার্টি এখনো পর্যন্ত তার নীতি-আদর্শ এবং তার সঠিক নেতৃত্বের জায়গায় রয়েছে। এবং চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে আমরা এখনো পর্যন্ত সর্বস্তরের জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যে বৃহত্তর আন্দোলন, সেটা শুরু করার।

ত্রিদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর আমাদের আশা ছিল এভাবে দুঃখ বেদনা নিয়ে আর আমাদের মিছিল-সমাবেশ করতে হবে না, কিন্তু আজ চুক্তিটি ১দিন, ২দিন, একমাস, দুই মাস যেতে যেতে এভাবে ২৮ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু আজকে ২৮ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এভাবে মিছিল-সমাবেশ করতে হচ্ছে। আমাদের জীবনে এর থেকে দুঃখের আর শোকের আর কিছু হতে পারে না।

তিনি বলেন, আজকে চুক্তি স্বাক্ষরের ২৮ বছরে এসেও আমরা দেখি সরকারগুলো সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাচ্ছে। আজকে চুক্তি বাস্তবায়ন চাইলে আমাদের সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, রাষ্ট্রদ্রোহী ট্যাগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো সন্ত্রাসী হতে চাই না, আমাদেরকে বানানো হচ্ছে সন্ত্রাসী। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যারা নবীন, তারা উদ্যোগী হোন। নবীন-প্রবীনের সমাবেশের মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করবো।

বিল্টু চাকমা বলেন, বাংলাদেশ সরকার শুভবুদ্ধি উদয় করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক দশমাংশ অঞ্চল হলেও, এই পার্বত্য চট্টগ্রামে যখন আগুন লাগবে সেটি বাংলাদেশের জন্য কখনো শুভকর হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের আগুন বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, আমরা জুম্ম জনগণ বিশ্বাস করে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আমরা বিশ্বাস করে কোন অপরাধী হইনি, কিন্তু বিশ্বাস যারা ভঙ্গ করে তারাই প্রকৃত অপরাধী। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ এখনো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে লড়াইয়ের জন্য সংগ্রাম ছাড়েনি। সংগ্রাম ত্যাগ করেনি। শু

তিনি আরও বলেন, যদি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হয়, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের পথকে বাধাগ্রস্ত করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আবারও সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে যা যা করা দরকার তার প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। এবং এই আন্দোলনের সম্মুখভাগে থাকে থাকবে পার্বত্য চট্টগ্রামের উদীয়মান তরুণ সমাজ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মন্টু বিকাশ চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ২রা ডিসেম্বর উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ৩৩ নং মারিশ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আপন চাকমা।

গণসমাবেশ ও আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সদস্য জ্যোতিষ্মান চাকমা এবং গণসমাবেশের শুরুতে গণসংগীত পরিবেশনা করেন কাজলং মুরল্যে শিল্পীগোষ্ঠী ও বাঘাইছড়ি সাংস্কৃতিক একাডেমি।

বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপন

Address

PO Box 48052, Kitchener RPO Williamsburg
Kitchener, ON
N2E4K6

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Hill Voice posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Hill Voice:

Share