17/09/2025
রফিক ছোট্ট এক গ্রামে জন্মেছিল। পরিবার ছিল অত্যন্ত দরিদ্র। বাবা দিনমজুর, মা অন্যের বাসায় কাজ করতেন। সংসারে দুই বেলা ভাত জোটানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও রফিক ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভীষণ আগ্রহী ছিল। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তার চোখে একটাই স্বপ্ন—একদিন বড় মানুষ হবে, বাবা-মাকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেবে।
কিন্তু স্বপ্নপূরণের পথ সহজ ছিল না। রফিকের কাছে বই কেনার টাকা থাকত না, তাই পুরোনো খাতা-কলম দিয়েই সে পড়াশোনা চালিয়ে যেত। গ্রামের এক শিক্ষক মাঝে মাঝে তাকে বই ধার দিতেন। ক্লাসে শিক্ষক যখন নতুন পাঠ শেখাতেন, রফিক মনোযোগ দিয়ে শুনত এবং বাসায় গিয়ে বারবার অনুশীলন করত। সে জানত, অর্থের অভাব তার মেধাকে থামাতে পারবে না।
রাতের বেলা যখন অন্যরা আলো জ্বালিয়ে পড়ত, তখন রফিক ম্লান কেরোসিন বাতির নিচে পড়াশোনা করত। অনেক সময় জ্বালানি কেনার টাকাও থাকত না, তখন সে দিন শেষে চায়ের দোকানের ঝুপড়ির বাতির আলোয় বসে পড়াশোনা করত। তার বন্ধুরা অবাক হয়ে বলত—“তুই এত কষ্ট করে কীভাবে এত ভালো ফল করিস?” রফিক শুধু হেসে বলত, “স্বপ্ন দেখলে কষ্ট করতেই হয়।”
অভাবের কারণে রফিক প্রায়ই ক্লাসে খালি পেটে যেত। মাঝেমধ্যে ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে পরীক্ষা দিত। তবুও সে কখনো হার মানেনি। তার ফলাফল সবসময় ভালো আসত, আর প্রতিটি পরীক্ষায় সে প্রথম হতো। শিক্ষকরা তার মেধা দেখে মুগ্ধ হতেন। একদিন প্রধান শিক্ষক তাকে বললেন, “তুই একদিন বড় মানুষ হবিই, শুধু হাল ছাড়িস না।” এই কথাগুলো রফিকের জীবনে সবচেয়ে বড় প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।
সময়ের সাথে সাথে রফিক মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। প্রচণ্ড অভাব, অসংখ্য বাধা থাকা সত্ত্বেও সে জেলায় প্রথম হয়ে বৃত্তি পায়। সেই বৃত্তির টাকায় তার পড়াশোনার খরচ কিছুটা মেটাতে শুরু হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পথও ছিল কঠিন। রফিক টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালাতে লাগল। দিনে কলেজ, রাতে টিউশনি—এভাবেই তার জীবন চলতে থাকে।
সব কষ্ট, দুঃখ আর ত্যাগের পর একদিন রফিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেল। মা-বাবার চোখে তখন আনন্দের অশ্রু। তারা বুঝলেন, তাদের ছেলে শুধু নিজের জন্য নয়, গোটা পরিবারের ভাগ্য বদলাতে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে রফিক আরও কঠিন পরিশ্রম করতে থাকে।
অবশেষে দীর্ঘ সংগ্রামের পর রফিক একদিন স্বপ্ন পূরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। সে একটি ভালো চাকরি পায় এবং নিজের বাবা-মাকে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়।
রফিকের গল্প প্রমাণ করে, কষ্ট কখনো মানুষের পথ রোধ করতে পারে না, যদি সে অধ্যবসায়ী আর স্বপ্নবান হয়। একজন ভালো ছাত্র সবসময়ই জানে—সত্যিকার সাফল্যের পেছনে থাকে ঘাম, অশ্রু আর নিরলস পরিশ্রম।