10/04/2025
শাশুড়িরা যেদিন আন্তরিক হবেন, সেদিন বউদের সুখের দিন আসবে।
অনেক শাশুড়ি মনে করেন, ছেলের প্রতি তার ভালোবাসা যেন বউমার কারণে কমে যাচ্ছে। তাই তিনি অবচেতনে প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব পোষণ করেন। কিন্তু এই চিন্তা পুরোপুরি ভুল। বাস্তবে, ছেলের জীবনসঙ্গিনী আসার পর তার প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়, কারণ তখন সে কেবল একজন সন্তানই নয়, একজন স্বামীও বটে। যদি শাশুড়ি তার বউমাকে নিজের মেয়ে মনে করেন, তার প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা দেখান, তাহলে সম্পর্কের মধ্যে যে দূরত্ব, যে শীতলতা তৈরি হয়, তা দূর হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, সংসারের মধ্যে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে তিক্ততা সৃষ্টি হয়। যেমন, রান্নার ধরন, পোশাক পরার ধরন, সংসার সামলানোর কৌশল—এসব নিয়েও অনেক শাশুড়ি বউমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান। কিন্তু তিনি যদি একটু ধৈর্য ধরেন, বউমার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করেন, তার স্বাধীনতাকে সম্মান করেন, তাহলে দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।
আমাদের সমাজে এখনো প্রচলিত আছে, বউমাকে কষ্ট দিলে কিংবা তাকে কঠোর নিয়মের মধ্যে রাখলে সংসার ভালো চলে। কিন্তু এটি একেবারেই ভুল ধারণা। বাস্তবে, শাশুড়িরা যদি আন্তরিক হন, বউমাকে বোঝেন, তার প্রতি যত্নশীল হন, তাহলে বউমাও তাকে শাশুড়ি নয়, বরং মায়ের জায়গায় বসাবে। অনেক সময় বউমারাও প্রথম থেকেই শাশুড়ির প্রতি একপ্রকার ভীতি নিয়ে সংসারে প্রবেশ করেন। তাদের ধারণা, শাশুড়ি হয়তো তাকে সহজভাবে নেবেন না, কিংবা তাকে শুধুমাত্র কাজের মানুষ হিসেবেই দেখবেন। এই শঙ্কা দূর করার দায়িত্বও শাশুড়ির ওপরই বর্তায়। যদি তিনি প্রথম দিন থেকেই বউমার প্রতি আন্তরিক হন, তাকে নতুন পরিবারের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন, তবে বউমার মনে কোনো ভয় বা দ্বিধা থাকবে না।
বউমা সুখে থাকলে সংসারও সুখে থাকে। কারণ একজন সুখী নারীই পারেন পরিবারের অন্যদের সুখী করতে। যখন বউমা শান্তি ও ভালোবাসা পায়, তখন সে তার স্বামীকে বেশি ভালোবাসে, তার শ্বশুরবাড়ির সবাইকে নিজের পরিবার মনে করে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে সংসার সামলায়। অন্যদিকে, যদি তাকে অবহেলা করা হয়, কটূক্তি করা হয়, তার নামপ মিথ্যা সমালোচনায় মেতে উঠে, অহেতুক অপমান কিংবা তার প্রতিটি কাজে ভুল ধরা হয়, তাহলে তার মন বিষিয়ে ওঠে, যা সংসারের আবহাওয়াকেও বিষাক্ত করে তোলে।
আমাদের সমাজে এমন অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে শাশুড়ি-বউমার সম্পর্ক বন্ধুর মতো গড়ে ওঠে এবং সে পরিবারে কখনো কলহ হয় না। সেসব পরিবারে শাশুড়ির আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও বোঝাপড়ার মানসিকতা এতটাই প্রবল যে, বউমারাও তাকে নিজের মায়ের মতো শ্রদ্ধা করেন। সংসারটা সুখের পরশে সতেজ নির্মল হয়ে উঠপ। আর যেসব পরিবারে শাশুড়ি সবসময় কঠোর, খারাপ আচরন, মিথ্যাচার, কড়া নিয়মকানুন আর শাসনের মধ্যে বউমাকে রাখেন, সেসব পরিবারেই বেশি সমস্যা দেখা দেয়।
এমনকি ইসলাম ধর্মেও বলা হয়েছে, নতুন বউকে সম্মান ও ভালোবাসার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে, যেন সে নতুন পরিবেশে নিজেকে একা অনুভব না করে। নবী করিম (সা.) নিজেও পরিবারে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। শুধুমাত্র শাশুড়ি যদি আন্তরিক হন, তাহলে বউমাদের জীবন সহজ হয়, সংসারে সুখের পরশ আসে। শুধু শাশুড়িরাই নন, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও যদি নতুন সদস্যকে ভালোবাসা ও আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেন, তাহলে সেই পরিবার স্বর্গের মতো হয়ে ওঠে।