গল্পের ডায়েরি

গল্পের ডায়েরি সত্য কাহিনী (হরর) , রোমান্টিক গল্প, থ্র?
(1)

পাঙ্গাস মাছের তেল ঝোল 😋 শুভ রাত্রি @ #
23/07/2025

পাঙ্গাস মাছের তেল ঝোল 😋 শুভ রাত্রি @ #

 #হঠাৎ____বিয়ে২য় পর্বহঠাৎ  করে খেয়াল করলাম আমার শরীরটা ভীষণ  কাঁপছে।উপরে তাকালাম মনে হচ্ছে ফ্যান আমার উপরে পড়ে যাবে।সবকি...
23/07/2025

#হঠাৎ____বিয়ে
২য় পর্ব

হঠাৎ করে খেয়াল করলাম আমার শরীরটা ভীষণ কাঁপছে।উপরে তাকালাম মনে হচ্ছে ফ্যান আমার উপরে পড়ে যাবে।সবকিছু উল্টা উল্টা লাগছে।আমার এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছি না।তাই একদম চোখটা বন্ধ করে ধপাস করে শুয়ে পড়ি।

আস্তে আস্তে শরীরটা আরও নিস্তেজ হয়ে কাঁপতে লাগল।কষ্ট হতে লাগল খুব।হঠাৎ খেয়াল করলাম কেউ একজন আমার হাতটা ধরেছে।হাতটা ধরে চোখ মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে।কিন্তু চোখ খুলার মত শক্তি আমি পাচ্ছিলাম না।এবার মনে হচ্ছে কেউ আমার প্রেসার মাপছে।তবুও চোখ খুলে দেখার মত শক্তি পাচ্ছিলাম না।আস্তে আস্তে আরও নিস্তেজ হতে লাগলাম।অণুভব করলাম এখন আর আমার পাশে কেউ নেই।খুব অসহায় মনে হতে লাগল নিজেকে।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম কেউ আমার মুখে কিছু একটা দিয়ে বলতেছে

-এই যে আপনি এটা খেয়ে নিন।আপনার প্রেসার খুব নেমে গিয়েছে।একটু কষ্ট করে খান। হা করুন।

কথাগুলো শুনার পরও আমি হা করার শক্তি পাচ্ছিলাম না।কোনভাবে নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে হা করলাম।খেয়াল করলাম মুখে পানি দিচ্ছে।পানিটা মিষ্টি।বুঝতে আর বাকি রইল না এটা চিনির পানি।তাই নিজের মধ্যে শক্তি জুগিয়ে পানিটা কষ্ট করে খেলাম।খাওয়ার পর একটু ঝিম ধরে শুয়ে রইলাম।আস্তে আস্তে মনে হচ্ছে শরীরে শক্তি পাচ্ছি।চোখটা খুলার মত শক্তি পাচ্ছি।কোনরকমে চোখ খুললাম।চোখ খুলার পর খেয়াল করলাম অরন্য আমার পাশে বসে আছে।সাথে কিছু খাবার নিয়ে।আমি একটু তারাহুরা করে বসতে নিলাম।উনি আমাকে বলল

-এত তারাহুরা করার কিছু হয় নি।আপনি আস্তে আস্তে উঠুন।আর উঠে এগুলো খেয়ে নিন।আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে সকাল থেকে কিছু খান নি।তাই প্রেসার কমে গিয়েছিল।আপনি একটু এগুলো খেয়ে নিন।

উনার কথা শুনে মনে মনে বলতে লাগলাম।সকাল থেকে যা গেল আমার উপর এরপর খাওয়া কি গলা দিয়ে নামে নাকি।তবে আমি অনেক খেতে পারা একটা মেয়ে ।সারাদিনেই কিছু না কিছু খেতাম।সত্যি বলতে এ মুহুর্তে আমার পেটে খুব ক্ষুধা লেগেছে।তাই সামনে মুরগীর রোস্ট আর পোলাও টা দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না।সামনে পেয়েই খেতে লাগলাম।গপ গপ করে খেতে লাগলাম।হঠাৎ করে খাবার গলায় বাজল আর হেচকি তুলতে লাগলাম।

কোন ভাবেই যেন হেচকি টা কমছিল না।হঠাৎ করে খেয়াল করলাম উনি আমার সামনে এক গ্লাস পানি ধরল। আমি পানিটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেললাম।উনি আমাকে কি ভাবছে সেটা দেখার দরকার আমি মনে করছি না।এ মুহুর্তে আমার ক্ষুধা লেগেছে আর আমাকে এখন খেতে হবে এটাই জানি।তাই আমি আপন মনে খেতে লাগলাম।অল্পক্ষণের মধ্যেই আমার খাওয়া শেষ হল আর আমি রিলাক্স মোডে শুয়ে পড়লাম।আর উনি খাবার প্লেট টা টেবিলের উপর রাখতে গেলেন।যাক লোকটারে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ না এটা ভেবে মনটা শান্ত হল।

কিন্তু হুট করে উনি বললেন

-আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন নাকি?না ঘুমালে আপনার সাথে একটু কথা ছিল।

আমি নড়ে চড়ে বসে বললাম

-নাহ আমি তো ঘুমায় নি, কেন কি বলবেন? বলুন।

উনি এবার গম্ভীর গলায় বললেন

-সত্যি বলতে সবার চাপে পড়ে আমি আপনাকে বিয়ে করেছি।আমি আপনার বোন অর্পাকে প্রথম দেখায় খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম।ওকে নিয়েই একটা ছোট্র সংসার কল্পনা করে ফেলেছিলাম।সে জায়গায় আপনাকে কেন জানি না, চাইলেও মানতে পারছি না।আপনাকে আমি আঘাত দিয়ে কথাটা বলতে চাই নি তবে আমি খুব সোজা সাপটা স্বভাবের ছেলে যা বলি সরাসরি।না মানার ও একটা কারন আছে।আশা করি আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি আর সে কারনটা বুঝতে পেরেছেন।

উনার কথাগুলো শুনে কেন জানি না তেমন কোন খারাপ লাগল না।কারনটা আর কি হবে কারনটা তো এটাই হবে আপু সুন্দর আর আমি অসুন্দর।আমি তো আগেই বুঝেছিলাম আমার বিয়েটা আট দশটা মেয়ের মত হয় নি।তাই উনাকে জবাব দিলাম

-আপনাকে জোর করে আমাকে মানতে হবে না।আমি নিজেও চাই নি এভাবে আমার বিয়ে হোক।বিয়ের দিন সকালে অর্পা আপুকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না।কোথায় গিয়েছে কেউ বলতে পারল না।আর আপুর কোন রিলেশন ছিল এটাও কারও জানা নেই।এ মুহুর্তে কি করবে কেউ বুঝতে পারছিল না।আর ঐ বাড়িতে আমি ছাড়া আর কোন মেয়ে বিবাহযোগ্য ছিল না।তাই সবার জোরাজোরিতে রাজি না হয়ে পারলাম না।আমি জানি অর্পা আপুর তুলনায় আমি কিছু না।অর্পা আপু অনেক সুন্দর আর আমি অসুন্দর।কিন্তু এটা নিয়ে আমার কখনও আফসোস হয় নি।আমি সবসময় নিজেকে পারফেক্ট ভাবে গড়ে তুলার চেষ্টা করেছি।কিন্তু ভাগ্যের কাছে এভাবে হেরে যাব বুঝতে পারি নি।আপনি চিন্তা করবেন না।আমি কখনও জোর করে কিছু করব না।সময়টা একটু পার হতে দিন আপনি চাইলে আমি নিজেই আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।

আমার কথা গুলো শুনে উনি বেশ চমকে গেলেন।উনি হয়ত আশা করে নি আমি এমন কিছু বলব।কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে উনি উত্তর দিলেন

-সে যাইহোক সময়েই সব বলে দিবে।আপাদত আমি আপনাকে মেনে নিতে পারব না।আপনি এ বাড়িতে এসেছেন মেহমান হিসেবে আপনার যেন, কোন সমস্যা না হয় আমি সে বিষয় টা খেয়াল রাখব।কিন্তু দয়া করে আমার ভালোবাসা পাবার আশা রাখবেন না।কারন আমি আপনার বোনকে প্রথম দেখেই ভালেবেসে ফেলেছি।

আমি কিছুটা চুপ থেকে জাবাব দিলাম

-আপনি দয়া করে আমাকে সিরিয়ালের নায়িকা ভাববেন না।আমি আপনাকে জোর করব না এটা আমি বলেছি।কিন্তু আপনি আপনার স্ত্রী র সামনে অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসি বলবেন সেটা আমি মেনে নিব না।আপাদত ডিভোর্সের আগ পর্যন্ত আমি আপনার স্ত্রী আর আপনি আমার স্বামী।সুতরাং সম্পর্ক টা ঐভাবেই দেখবেন।আর আমার সামনে অন্য নারীকে ভালোবাসার কথা বলার আগে দশবার ভেবে বলবেন।আমি দেখতে অসুন্দর হলেও নিজেকে কখনও ছোট করে দেখি নি।এখনও দেখব না।দয়াকরে আমাকে অবলা নারী ভেবে যা ইচ্ছা বলে যাবেন না।দোষটা তো আমার ছিল না।আমি তো আপনাকে জোর করে বিয়ে করতে চাই নি।ভাগ্য এভাবে সব উলট পালট করে দিয়েছি।কিন্তু ভাগ্যের দোহাই দিয়ে নিজের জীবন বরবাদ করার মত মেয়ে আমি না।

এবার আমি উনার দিকে একটু খেয়াল করলাম দেখলাম উনার মুখটা বেশ চুপসে গিয়েছে।গেলেই বা কি।আমি কেন উনার এসব কথা শুনে নিজেকে ছোট করব।এটা বাংলা সিনেমা না আর আমি বাংলা সিনেমার নায়িকা সাবানা ও না।সুতরাং যতদিন আমি অরন্যের বউ হিসেবে আছি, আমি আমার অধিকার আদায় করে নিব।তবে সেটা ভালোবাসা দিয়ে জোর করে না।উনি আমার কথা গুলো শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে জবাব দিলেন

-আমার মন যা চাই আমি তাই বলব আপনি না করার কে?আপনাকে সে অধিকার আমি দেই নি।নিজের অধিকারের বাইরে গিয়ে কথা বলবেন না বুঝছেন।দেখে তো মনে হচ্ছে ছেলে ফাসানের ব্যাপারে খুব চালু।

উনার এ কথাটা শুনার পর মাথায় একটু রাগ চড়ে গেল। তবুও নিজেকে শান্ত করে জবাব দিলাম

-আমি কি আপনাকে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট দিতে বলেছি? অথবা আমার ব্যপারে মন্তব্য করার অধিকার দিয়েছি নাকি?আপনি যেহেতু আমার ব্যাপারে বলার দুঃসাহস দেখিয়েছেন আমিও আপনার ব্যপারে বলব।এটাকে বলে লেভেল করা বুঝছেন।আপনি যেমন আমাকে তেমনেই হতে হবে।

-দেখুন আপনি কিন্তু খুব বেশি বকবক করছেন।আপনাকে দেখে তো প্রথমে ভেবেছিলাম আপনি খুব বোকাসোকা কথায় বলতে জানেন না।এখন তো মনে হচ্ছে আপনার মুখ দিয়ে কথার ফুলঝুরি ফুটছে।আমার সাথে লাগতে আসবেন না।

আমিও এবার শান্ত হয়ে জবাব দিলাম

-বকবক আপনি শুরু করেছেন।দেখতে অসুন্দর দেখে কি ভেবেছেন আমি অবলা নারী।সিরিয়ালের মত করে আপনাকে খাটে শুতে দিব আর আমি নীচে শুয়ে পড়ব।তা হবে না মশাই আমার পাশে এসে ঘুমান।

-আপনি তো বেশ ডেন্জারাস মেয়ে।আমি আপনার সাথে ঘুমাব কেন?

আমি ভ্রু টা বেশ কুচকে বললাম

-তাহলে কোথায় ঘুমাবেন?

জাববে উনি বললেন

-পাশের রুমে ঘুমাব।

আমি হাসি দিয়ে বললাম

-তা হবে না মশাই।আপনি এখানেই ঘুমাবেন।

উনি আমার কথা শুনে বেশ অবাক হচ্ছে মনে হচ্ছে।অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাগ রাগ ভাব নিয়ে বললেন

-এই যে শুনেন আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।

-সে যাই করি আমি ঘুমালাম তবে রুম ছেড়ে ঘুমানো যাবে না।রুম ছেড়ে বের হলে আমিও কিন্তু আপনার সাথে চলে যাব।

উনি বেশ চমকিত, পুলকিত হয়ে আমাকে বললেন

-আপনি তো বেশ নাছোরবান্দা। ওকে রুম ছেড়ে যাব না।আমি নীচে ঘুমাচ্ছি।এবার আমায় একটু রেহাই দিন।

আমিও মুচকি হেসে হেসে জবাব দিলাম

-ঠিক আছে ভূতমশাই।

উনি ভ্রূ টা কুচকে বলল

-ভূতমশাইটা কে আবার?

আমি হাসতে হাসতে বললাম

-কেন আপনি?

উনি অবাক হয়ে বলল

-আপনি আমার নাম ও ঠিক করে ফেলেছেন এর মধ্যে?

-হ্যা করেছি।

উনি বিরক্ত হয়ে জাবাব দিলেন

-আপনি সত্যিই পাগল একটা মেয়ে।সেটা কি আপনি জানেন?

আমি আরও একটু হেসে নিলাম। হেসে জবাব দিলাম

-সেটা নতুন করে বলার কিছু না।আমি একটু নাছোরবান্দা সবাই জানে।আপনি ঘুমান।আর ধন্যবাদ এত কিছু খাওয়ানোর জন্য।সবগুলোই আমার প্রিয় খাবার ছিল শুধু চিনির পানিটা ছাড়া।

উনি কিছুটা চুপ হয়ে বলল

-দোহাই লাগে এবার চুপ হন আমাকে ঘুমাতে দিন একটু।

আমি হাত দুটো দিয়ে মুখ চেপে ইশারা করলাম ঘুমান।

(আপনারা হয়ত আমার এরকম আচরণ দেখে অবাক হচ্ছেন আমি এমন কেন করলাম।সত্যি বলতে আমি ছোট বেলা থেকেই খুব নাছোরবান্দা আর পাগলাটে স্বভাবের মেয়ে ছিলাম।পাগলামোর ভাব গুলো এত বড় হওয়ার পরও যায় নি।তাই পাগলামির সুযোগ পেলেই করে ফেলি।এই যে অরন্যের সাথে সবে মাত্র শুরু করেছি এরপর যে কত কি হবে কে জানে।আস্তে আস্তে সব বলব।)

যাইহোক সেদিনেের মত আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।পরদিন সকালে উঠে আমি খেয়াল করলাম উনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।এমন ভাবে নাক ডাকছে মনে হচ্ছে চারদিকে ভূমিকম্প হচ্ছে।আমি কি করব বুঝতে না পেরে একটা....

লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা

আজকে আমার হবু দুলা ভাই এর সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে।শুনতে খুব অবাক লাগলেও এটাই ঘটেছে আমার সাথে।আমার যার সাথে আজকে বিয়ে হতে যা...
23/07/2025

আজকে আমার হবু দুলা ভাই এর সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে।শুনতে খুব অবাক লাগলেও এটাই ঘটেছে আমার সাথে।আমার যার সাথে আজকে বিয়ে হতে যাচ্ছে তার সাথে আজকে আমার বড় বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

আমার বড় বোনের নাম অর্পা।ও আমার আপন বোন না তবে চাচাত বোন।আমাদের চাচাদের মধ্যে আমি আর অর্পা আপুই বড় আর বিবাহযোগ্য।অর্পা আপু আমার ২ বছরের বড়।দেখতে হুর পরীর মত সুন্দর।তার রূপের কাছে সবকিছু হার মানবে।আর অর্পা আপুর যার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিল তিনি শুধু অর্পা আপুকে তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করতেছে।শুনেছি লোকটার নাকি মস্ত বড় ব্যাবস্যা আছে।ঐ লোকটার আর্থিক অবস্থার তুলনায় আমাদের আর্থিক অবস্থা এতটা মানানসই না।আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আর উনি অনেক বড় পরিবারের ছেলে।

আপুকে যেদিন উনি দেখতে এসেছিল আমি সেদিন জানালা দিয়ে হালকা উকি দিয়ে উনাকে দেখেছিলাম।সত্যিই লোকটা ও অনেক সুন্দর আর হ্যান্ডসাম ছিল।আর লোকটা আপুকে দেখে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেলল।পছন্দ হওয়ার সাথে সাথে খুব হই হই,রই রই করে আপুর বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হল।আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম আপুর এত বড় ঘরে বিয়ে হবে দেখে।তাই সবাই খুব মজা করছিলাম।আমি নিজেও খুব মজা করতে লাগলাম।সামনের সপ্তাহে আপুর সাথে অরন্যের বিয়ে।

(ওহ হো তোমাদের তো ঐ লোকটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল না।ঐ লোকটার নাম অরন্য, বয়স ২৮। বাবার বড় ব্যাবস্যা আছে আর সেটাই দেখাশোনা করছে।ঢাকায় অনেক গুলা বাড়ি আছে শুনেছি আর উনাদের টাকা পয়সার নাকি কোন অভাব নেই)

যেহুত সামনের সপ্তাহে অর্পা আপুর সাথে অরন্যের বিয়ে তাই আমি আগে থেকেই সব ঠিক করে রাখলাম হলুদে কি করব, বিয়েতে কি পড়ব, বউ ভাতে কি করব।চিন্তা করেছিলাম আপুর বিয়েতে খুব মজা করব।কত প্ল্যান যে করেছিলাম সব প্ল্যান বিয়ের দিন সকালে মাটি হয়ে গেল।

কারন হঠাৎ করে বড় কাকী বলে উঠল

-কি গো অর্পার মা অর্পা তো ঘরে নেই।কোথাও খুঁজে তো পাচ্ছি না।

বড় কাকীর কথা শুনে আমরা সবাই থমকে গেলাম আর কিছুক্ষণ পর পাত্র আসবে আর এখন অর্পা আপুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।অর্পা আপু কোথায় গেল কেউ বুঝতে পারতেছিল না।কারন অর্পা আপুর কারও সাথে কোন সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না।থাকলে অবশ্যই কেউ না কেউ জানত।তবে আপু কোথায় গেল এ প্রশ্নটা যেন সবার মনে বিদ্ধ করতে লাগল।

অর্পা আপুকে সারা বাড়ি খুঁজা হল কিন্তু অর্পা আপুর কোন হদিশ মিলল না।সবাই ভেবে নিয়েছে অর্পা আপুর হয়ত প্রেমিক ছিল আর অর্পা আপু সে প্রমিকের হাত ধরে পালিয়েছে।কিন্তু এ কথা জানাজানি হলে আর মানসম্মান থাকবে না।তাই কি করবে সবাই বুঝতে পারছিল না।সবাই উপায় খুঁজতে লাগল।হঠাৎ করে কাকা বাবাকে বলে বসল

-অনন্যা তো বিবাহযোগ্য। অনন্যাকে বিয়ে দিলে কেমন হয়।মান সম্মান বাঁচানোর জন্য এছাড়া কোন উপায় নেই।

যেহুত পাত্র যোগ্য ছিল আর আমি দেখতে এতটাও সুন্দর ছিলাম না।আর আমার মত দেখতে খারাপ মেয়ের জন্য এর থেকে ভালো পাত্র আর হবে না।তাই আমার বাবাও কিছুটা লোভে পড়ে কাকার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল।

বাবার এমন অন্যায় সম্মতি দেখে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।কারন আমি আর অর্পা আপু রাত আর দিন।আমি দেখতে এতটা ভালো না।তারা আমাকে মেনে নিবে বলে মনে হয় না।কিন্তু বাবা আর কাকার প্রচন্ড চাপে অর্পা আপুর জায়গায় আমাকে কনে সেজে বসতে হল বিয়ের পিড়িতে।

লাল টুকটুক শাড়ি, ভারী গহনা পড়ে আমি কনে সেজে বসে আছি।কিছুক্ষণের মধ্যেই বর পক্ষ আসবে।জানি না তারা এসে কি করবে।কি হবে এর পরিণতি।ভিতরে অসহ্য যন্ত্রণা হতে লাগল।কিছুই ভাবতে পারছিলাম না।মাথাটা যেন ঘুরতে লাগল।তবুও নিজেকে সামলে স্থির হয়ে বসে রইলাম।হঠাৎ কানে বাজতে লাগল সবাই বর এসেছে বর এসেছে বলে চিল্লাতে লাগল।

বরকে বরণ করা হল।পাত্র পক্ষের সবাই কনে দেখার জন্য রুমে প্রবেশ করল।পাত্র পক্ষ এসে আমাকে দেখে কনে পাল্টানো হয়েছে বলে হৈ চৈ শুরু করে দিল।কিন্তু আমার বাবা আর কাকারা বলল কনে ঠিকেই আছে।পাত্র পক্ষকে চাপ দিল বিয়ে করার জন্য না হয় ঝামেলা হবে।পাত্র পক্ষ ও চাপের মুখে পড়ে আমাকে বিয়ে করিয়ে নিতে রাজি হল।

নানা ঝামেলা পার হয়ে আমার বিয়েটা সম্পন্ন হল।আজকে অর্পা আপুর জায়গায় অরন্যের বউ হল অনন্যা।জানি না তাদের মনে আমার প্রতি কোন ক্ষোভ জন্মে আছে কি না।জমলেই বা কি যা হবার তা তো হয়েছেই।আমি তো চাই নি এমন কিছু হোক।আমার তো অরন্য ভাইয়ার জন্য খুব খারাপ লাগছে কারন উনি এসেছিল হুর পরী বিয়ে করে নিতে কিন্তু বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে একটা শ্যাওরা গাছের পেত্নী।নিজের জন্য ও বেশ খারাপ লাগছে কারন আমি তো চাই নি আমার বিয়েটা এভাবে জোর পূর্বক দেওয়া হোক।দেখতে খারাপ হলেও কখনও এটা নিয়ে আফসোস করে নি।নিজেকে সব দিক দিয়ে পারফেক্ট করে তুলার চেষ্টা করেছি।বিয়ে নিয়ে তো আট দশটা মেয়ের মত আমার ও স্বপ্ন ছিল।আর আজকে চোখের সামনে আমার সব স্বপ্নগুলো ভেঙে গেল।নিজের অজান্তেই বুকের ভিতর টা হুহু করে উঠল আর চোখ দিয়ে বৃষ্টি জড়তে লাগল।

আশে পাশে তো সবাই বলাবলি করতে লাগল বাহ বাহ অনন্যার ভাগ্য তো অর্পা খুলে দিয়ে গিয়েছে।তা না হলে অনন্যা এমন ছেলে বিয়ে করতে পারত নাকি।এসব শুনে যেন মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল।ভাগ্যের কাছে যে এভাবে হেরে যাব বুঝতে পারি নি।অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হল।

বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর এখন কনে বিদায় দেওয়ার পালা আমার বাবা আমাকে অরন্যের হাতে তুলে দিল।অরন্যের হাতে তুলে দেওয়ার সময় অরন্যের দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না।লজ্জায় নীচের দিকে মুখ করে রাখলাম।মনের ভিতর শুধু এ মুহুর্তে একটা প্রশ্নই জাগছে অর্পা আপু কোথায় আছে।কোথায় গেল কার সাথে গেল।এসব ভেবে মনের ভিতরটা খুব আনচান করতে লাগল।

অরন্যের হাতে আমাকে তুলে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমাকে যাওয়ার জন্য সবাই গাড়িতে তুলে দিল।হুম আমি বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি।কিন্তু আট দশটা মেয়ের মত হাজার টা স্বপ্ন নিয়ে যাচ্ছি না হাজারটা স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছি।ভাগ্যের পরিহাস যে এমন হবে বুঝতে পারি নি।

ব্যাস্ত শহরের পথ পাড়িয়ে আমি শ্বশুর বাড়ি পৌঁছালাম।শ্বশুর বাড়ির বাকি সবাই আমাকে দেখে কানাকানি করতে লাগল এ কি সর্বনাশ করেছে অরন্য এক তো মধ্যবিত্ত ঘরে বিয়ে করেছে তার উপর অসুন্দর মেয়ে। মেয়ে দেখার সময় সবার কি চোখ কপালে ছিল নাকি।অরন্যের সাথে এ মেয়েকে মানায় নাকি।এমন সর্বনাশ অরন্য নিজের হাতে কেন করল।

এসব কথা শুনে মনটা আরও ভাঙ্গতে লাগল।কোন রকমে সবাই আমায় তুলে ঘরে নিল।খেয়াল করলাম ঘরটা ভীষণ সাজানো গুছানো।চারদিকে অনেক ফুলের সুভাস ছড়াচ্ছে। আজকে এ ঘরে অর্পা আপুর আসার কথা ছিল কিন্তু ভাগ্যের লিলাখেলায় এ ঘরে আমি আসলাম।

ঘরের নিভু নিভু আলোতে চুপ করে বসে রইলাম।হয়ত অন্যসব মেয়েরা এসময় বসে থাকে স্বামীর অপেক্ষায় আর আমি বসে আছি এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর অপেক্ষায়।বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ খেয়াল করলাম অরন্য রুমে ঢুকেছে।

উনাকে দেখে আমার সারা শরীর ভয়ে কাঁপছিল।জানি না কি কথার সম্মুখীন আমাকে আবার হতে হবে।এসব ভেবে যেন ভয়ে আরও কুকরে যেতে লাগলাম।খেয়াল করলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ করে...........

হঠাৎ_বিয়ে
১ম পর্ব
লেখিকা-শারমিন আচঁল নিপা

এই নিয়ে দশজনকে দেখালাম ।কেউ বলতে পারল না, কোয়াগুলো কিসের?
23/07/2025

এই নিয়ে দশজনকে দেখালাম ।
কেউ বলতে পারল না, কোয়াগুলো কিসের?

 #নাগ____কন্যা লেখিকা-শারমিন আঁচল  নিপা।পর্ব -৮ + শেষ পর্বজাবাবে নাগপিতা যা বললেন তা শুনে একটু ভয় পেয়ে গেলাম।কারন নাগপিত...
23/07/2025

#নাগ____কন্যা
লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা।
পর্ব -৮ + শেষ পর্ব

জাবাবে নাগপিতা যা বললেন তা শুনে একটু ভয় পেয়ে গেলাম।কারন নাগপিতা বললেন

-নাগমণি পুনর্জীবিত করার জন্য তোকে পিশাচ রাজ্য থেকে নীল পদ্ম আনতে হবে।আর নীল পদ্ম আনা এত সহজ কাজ না।এজন্য তোকে কতগুলো পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।সবগুলে পরীক্ষা কৌশলে উত্তীর্ণ হতে হবে।বুদ্ধির প্রয়োগ বেশি করতে হবে আর শক্তির প্রয়োগ কম করতে হবে।

আলো নিজেকে স্থির রেখে জিজ্ঞেস করল

-কিন্তু নাগপিতা আমি পিশাচ রাজ্যে যাব কি করে?কারন এর আগে যখন গিয়েছিলাম তখন পিশাচ রাজ্যের কোথায় নিয়ে গিয়েছিল আর সে রাস্তা আমার জানা নেই,মনেও পড়ছে না।আসার সময় ও যে কোন পথে এসেছিলার প্রবল মায়ার কারনে তা ও ভুলে যায়।আপনি আমাকে পিশাচ রাজ্যে যাওয়ার পথটা বলুন।

নাগপিতা গম্ভীর গলায় বললেন

-এর আগে তোকে একটা পরীক্ষা দিতে হবে।আমাকে তো জানতে হবে তুই কাজটা করতে পারবি কিনা।তাই আমার পরীক্ষায় আগে উত্তীর্ণ হয়ে দেখা তারপর তোকে সে পথের ঠিকানা দেওয়া হবে।

পরীক্ষার কথা শুনে আলো ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে যথেষ্ট ধীর রেখে বলল

-আপনি বলুন কি সে পরীক্ষা আমি সব পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত।

জবাবে নাগপিতা বললেন

-তোকে প্রথমে সাপ রূপে আসতে হবে।তারপর...

আলো অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল

-তাপর কি নাগপিতা?

নাগপিতা তখন তার চোখের ইশারায় একটা কাটার বেড়ি তৈরী করল।আর বলল

-তোকে সাপ রূপে এসে এ কটার বেড়ি পার হয়ে যেতে হবে।তবে এটা সাবধান থাকতে হবে যে এখানে সবুজ কাটার আশেপাশে অনেক গোলাপি কাটাও রয়েছে।তোকে গোলাপি কাটাগুলো স্পর্শ না করে সবুজ কাটার উপর দিয়ে যেতে হবে।আর যদি তুই ভুলক্রমে গোলাপি কাটার উপর দিয়ে চলে যাস তাহলে তোর মৃত্যু ঘটবে।সুতরাং শক্তি না বরং বুদ্ধি দিয়ে পার হয়ে দেখা।

আলো কাটার বেড়িটা দেখে একটু চুপ হয়ে গেল।আলোর মুখের মধ্যে একটা ভয়ের ছাপ লক্ষ্য করা গেল।তবুও আলো নিজেকে বেশ সামলে নিল।নিজের মধ্যে শক্তি জুগিয়ে নিল।নিজের মনোবল দৃঢ় করে বলল

-নাগপিতা এটা আমি পার করে দেখাব তবে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার ছিল আমাকে আপনি সে উত্তর গুলো দিন।

নাগপিতা আলোর কথা শুনে একটু চুপ করে রইল।মনে হল কিছু একটা ভাবছে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল

- বল কি জানতে চাস।তবে আমার মধ্যেও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে সবকিছুর উত্তর দেওয়া সম্ভব না।বল আমাকে কি জানতে চাস?

জাবাবে আলো বলল

-আপনি এটা বলুন আমার মায়ের যে ছেলে সন্তান হয়েছিল।সে ছেলে সন্তান কোথায়।আমার বাবা কোথায়?

নাগপিতার জবাবটা শুনে আমি একটু ভেঙ্গে পড়লাম।মনের গহীনে একটা চাপা কষ্ট যেন ফাঁপা হয়ে ফেটে গেল।ভিতরে চিনচিন করে ব্যাথা করছে।তবুও নিজের কষ্টটা দমিয়ে রাখলাম।কারন বিশ্বাস করে নিলাম যা হয় ভালোর জন্য।কারন নাগপিতা বললেন আমার ছেলে সন্তান হয়েছিল আর হওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা যায় আর আমার সন্তানকে নাগরাজ্যে মাটি দেওয়া হয়।মায়ের কাছে সন্তান মৃত্যুর কথাটা অনেক বেদনা দায়ক।আমারও খুব কষ্ট হতে লাগল।কষ্টটাকে দমিয়ে রেখে পাশ থেকে আমি বলে উঠলাম

-তাহলে শাদাফ কোথায় আছে?

নাগপিতা আমাকে যা বললেন তাতে আমার অবাক হওয়ার পরিমাণটা যেন আরও বেড়ে গেল।ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগল।মনের মধ্যে কষ্টটা যেন আত্ন চিৎকার দিতে লাগল।কারন নাগ পিতা বললেন

-শাদাফ পিশাচ রাজ্যে বন্ধি।কারন পিশাচ মূর্তি জিবীত করতে নর বলি দিতে হয়।তাই তারা শাদাফকে বন্ধি করে রেখেছে।আলোকেই উদ্ধার করতে হবে সব।তবে এর আগে এই ছোট্র পরীক্ষাটা দিতে হবে।আলো কি প্রস্তুত এ পরীক্ষা দিতে।

আলো বলিষ্ঠ কন্ঠে বলে উঠল

-আমার পিতা আর আমার বংশধর এবং নাগকূলকে বাঁচাতে যদি এর থেকে কঠিন পরীক্ষাও দেওয়া লাগে তবুও আমি প্রস্তুত।নাগপিতা আমি পরীক্ষাটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।

এ বলে আলো কাটার বেড়িটার কাছে যেতেই নাগপিতা বলে উঠলেন

-আলো এখন পরীক্ষা দেওয়ার সঠিক সময় নয়।

আলো অবাক কন্ঠে বলল

-তাহলে কখন দিতে হবে?

নাগপিতা আলোকে বললেন

-তোকে পরীক্ষা দিতে হবে সূর্য অস্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে আর সূর্য পুরোপুরি ডুবার আগেই পুরো কাজটা করতে হবে।সাবধান থাকিস কারন কোনভাবেই গোলাপি কাটায় স্পর্শ করা যাবে না।

পরীক্ষাটা আলোর জন্য আরও কঠিন হয়ে পড়ল।তবুও আলো নিজের মনকে শক্ত করে সূূর্য অস্ত শুরুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটল। সূর্য অস্ত শুরু হল।আর আলো সাপ রূপে আসল।সাপ রূপে এসে কাটার বেড়িটার উপর দিয়ে যেতে লাগল।প্রথম দিকে আলো বেশ তাড়াতাড়ি অনেকটা বেড়ি পার হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু মাঝপথে দুদিকে দুটো গোলাপি কাটার মাঝখানে পড়ে যায়।এখন আলো যদি দুটো গোলাপি কাটা উপেক্ষা করতে চাই তাহলে আলোর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে।এ অবস্থায় আলো কি করবে বুঝতে পারছে না কোনভাবে।অপরদিকে সূর্য পুরোপুরি অস্ত যেতেও বেশি সময় নেই।খানিকক্ষণ আলো চুপ হয়ে গুটি মেরে বসে রইল।হুট করে আলোএকঝাপে বেড়িটা সজোরে পার হল গোলাপি কাটা স্পর্শ না করেই।তবে এতে আলোর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল।বেড়িটা পার হওয়ার পর আলো মানুষ রূপ ধারণ করল।খেয়াল করলাম আলোর সারাটা শরীর কেটে রক্তাক্ত হয়ে আছে।আর আলো সে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।

নাগপিতা আলোকে দেখে খুশি হয়ে বলল

-তুই এখন পিশাচ রাজ্যে যাওয়ার জন্য যোগ্য।

এ বলে হাতে থাকা একটা বেলি ফুল দিয়ে আলোর শরীর স্পর্শ করে দিল।সাথে সাথে আলোর শরীরের সকল যন্ত্রণার ছাপ চলে গেল।আলো একদম স্বাভাবিক হয়ে গেল।আলো এবার নাগপিতাকে বলল

-নাগপিতা আমি নিশ্চয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।আমাকে আপনি এবার বলে দিন সে রাস্তাটা।আমাকে বলুন আমি কিভাবে পিশাচ রাজ্যে যাব।কিভাবে নীল পদ্মটা আনব।কিভাবে পিশাচ মায়া কাটাতে পারব।আর আমার কত সময়ের মধ্যে এটা আনতে হবে।আমাকে সবটা বলুন।

নাগপিতা হাসতে হাসতে একটা চকচকে পাথরের আংকটি বাড়িয়ে দিয়ে বললেন

-এই নে এ আংটিটা নে।আর এই দেয়ালের দিকে তাকা।পরবর্তী দিনে তুই এ আংটিটা সূর্য উদয়ের সময় দেয়ালে নির্দেশ করলে দেয়ালে একটা দরজার সৃষ্টি হবে আর সে দরজাটা দিয়েই তোকে পিশাচ রাজ্যে প্রবেশ করতে হবে।তবে সাবধান সকল মায়া কৌশলে কাটাতে হবে।সেখানে তোকে অনেকেই বিভ্রান্তিতে ফেলতে চেষ্টা করবে তুই বুদ্ধি দিয়ে সবটা জয় করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবি।তারপর তুই ঠিক ঐ আগের খুপরিটায় দিকে যাবি।আর সে খুপরিটায় যে মূর্তি আছে সেটার পিছনে দেখবি একটা দরজা আছে সে দরজায় প্রবেশ করলে একটা নদী পাবি আর নদীটাতে ঐ পদ্মটা আছে।তবে পদ্মটা তোকে চিনে আনতে হবে।আর মূর্তির পিছনের দরজা দিয়ে এমনভাবে প্রবেশ করতে হবে যেন পিশাচ নাগ এর ঘুম না ভাঙ্গে।আর সেখানে কাউকে আপন ভাববি না যতক্ষণ না পদ্মটা তোর কাছে আসে।সবকিছুই সেখানে মায়া।মায়ায় হারিয়ে যাবি না।যদি হারিয়ে যাস তাহলে চিরকালের জন্য নাগকূল ধ্বংস হয়ে যাবে।

আর শুন পদ্মটা উদ্ধার করার সাথে সাথে তোর বাবাও সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে।সুতরাং যা করবি ভেবে চিন্তায় করবি।

আলো কথা গুলো মন দিয়ে শুনল।আর অপরদিকে নাগপিতা এ কথাগুলো বলে চলে গেল।সারা রাত আলো নির্ঘূম রাত কাটাল।পরদিন সকালে আলো খেয়াল করল সূর্য উদিত হচ্ছে।আলো সাথে সাথে হাতের আংটিটা দরজায় নির্দেশ করল আর আংটিটা দেয়ালে নির্দেশ করার সাথে সাথে একটা দরজা তৈরী হল।আলো আমাদের বিদায় জানিয়ে দরজায় প্রবেশ করল।দরজার প্রবেশ করার পর একটা সুরঙ্গ দেখল আলো।আলো সুরঙ্গ বেয়ে সামনে যেতে লাগল।হুট করে আলো খেয়াল করল

চলবে

৯ম পর্ব/শেষ পর্ব

আলো সুরঙ্গ বেয়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগল।হুট করে আলো খেয়াল করল একটা প্রাকান্ড সাপ আলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আলোকে হা করে খাওয়ার জন্য তেড়ে আসছে।আলো বেশ ঘাবড়ে গেল।কিন্তু কি করবে বুঝতে পারছিল না।নিজেকে সামলাবে কিভাবে সেটাও আলোর মাথায় কাজ করছিল না।হুট করে আলোর মনে হল নাগপিতা তাকে সবসময় স্থির থাকতে বলেছিল।আর বিপদে কৌশলের প্রয়োগ বেশি করতে বলেছিল।আলো নাগপিতার কথাটা মনে করে সাথে সাথে নিজেকে স্থির করে নিল।তারপর মনে মনে চুপ হয়ে ভাবতে লাগল কি করবে।অপরদিকে সাপটা আলোর দিকে তেড়েই আসছে।আলো পিছু পা না হয়ে সাপের মাথা বরাবর একটা আঘাত বসিয়ে দিল।কারন আলো জানত মাথায় আঘাত করলে সাপটা মরে যাবে।আর আলো সে কাজটাই করল।সাথে সাথে সাপটা মরে গেল।

সুরঙ্গ শেষে একটা নদী দেখতে পেল।কিন্তু নদীটা কি করে পার হবে বুঝতে পারছিল না।হঠাৎ করে আলোর মাথার কাছে কেউ যেন এসে বলল নদীটা সামনের ভেলাটা দিয়ে পার হতে।আলো সামনে একটা ভেলা দেখতে পেয়ে খুব খুশি হয়ে গেল।সে ভেলাটায় পা দিতে গিয়েও পা টা সরিয়ে ফেলল।কারন এটা মায়ার রাজ্য কারও মায়ায় বা কথা শুনে এমন ভুল কাজ করা বোকামি।আলো বুদ্ধি বের করতে লাগল কিভাবে নদীটা পার হবে।নিজের হাতের আংকটিটা হুঠাৎ করে আলো নদীতে ধরল আর সাথে সাথে ম্যাজিকের মত একটা রাস্তা তৈরী হয়ে গেল।আলো সে রাস্তা ধরে এগুতে এগুতে খেয়াল করল ভেলাটা অর্ধেক নদীতে এসে পুড়ে গিয়েছে।আলো বেশ সজোরে নিঃশ্বাস নিয়ে ভাবতে লাগল বেশ বাঁচা বেঁচে গিয়েছি।

নদীটা পার হয়ে আলো একটা চেনা মুখ দেখে থমকে গেল।আলো দেখল তার বাবা শাদাফ দাঁড়ানো আর তাকে দেখে বলছে

-আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।এখানের সবাই আমাকে আটকে রেখেছে।

আলো তার বাবাকে দেখে নিজের আবেগ সামলাতে পারল না।তাই আলো তার বাবাকে ধরতে নিল।যখনেই আলো তার বাবাকে ধরতে নিল ঠিক তখনেই খেয়াল করল চারদিক ফেটে যাচ্ছে।আর তার বাবা হাসছে।আলো ব্যাপারটা ভালোই বুঝতে পেরেছিল যে এটা মায়া শক্তি ছিল।আলো ফাটল গুলো খেয়াল করতে লাগল মনোযোগ দিয়ে।খেয়াল করে দেখল একটা ফাটল একটু ভিন্ন রকম।আলো সাহস করে সে ফাটলটাই পা দিল।কারন আলোর কাছে মনে হল এ ফাটলটা যেহুত একটু ভিন্নরকম এ ফাটলটা দিয়েই বের হয়ে যাওয়া যাবে।

আলোর ধারণাটা সত্যি হল।ফাটলটা বেয়ে আলো একদম নীচে পড়ে গেল।খেয়াল করে দেখল আলো ঠিক ঐ ঘরটার সামনে যে ঘরটায় মূর্তি রাখা আছে।এবারের মত আলো বেশ বাঁচা বেঁচে গেল।আলো আর কোন মায়ায় যেন না পড়ে সেজন্য নিজেকে প্রস্তুত করল।

তারপর আলো রুমটার ভিতরে প্রবেশ করল।রুমটার ভিতরে প্রবেশ করে আলো বেশ চমকে গেল।এবার আলো নিশ্চিত যে এটাই তার বাবা।আলো তার বাবার দিকে এগিয়ে যেতে নিয়েও পিছিয়ে পড়ল।কারন এখন তার বাবার সাথে কথা বলতে গেলেই পিশাচ নাগের ধ্যান ভেঙ্গে যাবে।তাই আলো নিজেকে সামলে নিয়ে মূর্তির পিছনের দরজাটার সামনে গেল।খেয়াল করল সে দরজাটায় খুব ছোট একটা কাঠের ঠিকি দেওয়া।আলো যখনেই কাঠের ঠিকিটা সরাতে নিল।তখন বিকট একটা শব্দ হল।সাথে সাথে আলোকে পিশাচ নাগ ধরে ফেলল।আলো শক্তি খাটাতে লাগল পিশাচ নাগের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে কিন্তু পারছিল না।আলো আরও শক্তি খাটাতে লাগল তবুও পারছিল না।আলোর হঠাৎ মনে পড়ল নাগপিতা বলেছিল শক্তি প্রয়োগ না করে বুদ্ধির প্রয়োগ করতে।আলো পিশাচ নাগকে ভালো করে খেয়াল করে দেখল যে মাথায় একটা তিলক আঁকা।আলো মাথার তিলকটায় হাত দিল সাথে সাথে পিশাচ নাগ স্থির হয়ে গেল।অপরদিকে আলো দরজাটার ভিতরে প্রবেশ করল।আলো দেখল সেখানে অনেক সাপ। আলো সাথে সাথে সাপরুপ নিল।আর দূরে খেয়াল করল একটা পদ্ম আছে।আলোর বুঝতে বাকি রইল না এটাই সে পদ্ম।আলো দ্রূত পদ্মটার কাছে গেল।কিন্তু পদ্মটা তুলতে পারছিল না।পদ্মটার কাছ থেকে আওয়াজ আসতে লাগল।এক ফোটা রক্তবিন্দু লাগবে।আলো পদ্মটাকে উদ্দেশ্য করে বলল

-কিন্তু কেন?

পদ্মটা থেকে আওয়াজ আসল

- কারন এছাড়া আমাকে তুলা যাবে।আর রক্ত বিন্দুটা বের করতে হবে এ শিলায় মাথায় ঠুকরিয়ে।তারপর সে রক্তবিন্দু আমার বোটায় লাগালে আমি উঠে যাব।তাড়াতাড়ি কর।না হয় ঐদিকে তোমার বাবাকে তারা বলি দেওয়ার জন্য রেডি করতেছে।

আলো বুঝতে পারছিল না কি করবে।এটা কি কোন মায়া নাকি সত্যি।বেশ দুটানায় পড়ে গেল।তবুও বিষয়টা আলোর কাছে কেন জানি সত্যি মনে হতে লাগল।তাই আলোর পাশে অবস্থান করা শিলাটায় সজোরে আলোর মাথা আঘাত করল আর রক্তবিন্দুটা পদ্মের বোটায় দিল।আর পদ্মটা তুলে ফেলতে এবার সক্ষম হল।আলো পদ্মটা নিয়ে রুমে প্রবেশ করে খেয়াল করল।পিশাচ নাগ তার বাবাকে বলি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।আলো পদ্মটা পিশাচ মূর্তির সামনে ধরতেই পিশাচ মূর্তি ভেঙ্গে ঘুরিয়ে গেল।আর স্বপ্নের মত করে আলো মিস শিলার বাড়িতে চলে আসল সাথে শাদাফকে নিয়ে।

আমি শাদাফকে দেখে আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেলাম।শাদাফকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।অপরদিকে নাগপিতা আলোর কাছে হাজির হল আলোকে বললেন

-তুমি তোমার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।বল তুমি কি চাও?

জবাবে আলো বলল

-আমি আমার বাবা মায়ের কাছেই থাকতে চাই।

নাগপিতা জবাব দিয়ে বললেন

-তুমি থাকতে পারবি তবে পুরোপুরি মানুষ তোকে বানানো সম্ভব না।কারন তোর জন্ম হয়েছে দুজন নাগ আর নাগিনীর কাছে।

আলো বলে উঠল

-তাতে আমার সমস্যা নেই পিতা।আমি এভাবেই ওদের কাছে থাকতে চাই।

জবাবে নাগপিতা বললেন

-থাক। তবে তুই কোন মানুষ বিয়ে করতে পারবি না।সে খেয়াল রাখিস।

এ বলে নাগপিতা চলে গেল।এরপর থেকে আলো আমাদের কাছেই রয়ে গেল।আলোর বয়স এখন ১৮ আলো বিয়ের বয়সে পা দিয়েছে।কার সাথে যে আলোকে বিয়ে দেওয়া যায় বুঝতে পারছিলাম না।অবশেষে নাগপিতার কথামতে নাগরাজ্যের নাগরাজের সাথে আলোর বিয়ে ঠিক হয়।আর আলো বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়িতে চলে যায়। আর মাঝে মাঝে নাগরাজ্য থেকে আমাদের কাছে বেড়াতে আসে।

আলোর ঘরেও একটা কন্যা সন্তান জন্ম নেয়।নাম রাখা হয় অর্শা।

বাকিটা সময় সুখেই কাটাতে লাগলাম।কত বিচিত্র সময় পার করে আসলাম।এখনও মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হই।

পৃথিবীটায় বৈচিত্র্য দিয়ে ঘেরা।

Section - SKY,  Application for leave in advance.🤲কয়েকদিনের ছুটি চেয়েছিলো মেয়েটা। কিন্তু ছুটিটা হয়ে গেলো পার্মানেন্ট।  💔...
22/07/2025

Section - SKY, Application for leave in advance.🤲

কয়েকদিনের ছুটি চেয়েছিলো মেয়েটা। কিন্তু ছুটিটা হয়ে গেলো পার্মানেন্ট। 💔💔

ধীরে ধীরে সবার জীবন স্বাভাবিক হয়ে যাবে শুধু মায়ের খালি কোলে আর কেউ ফিরবে নামাকে জড়িয়ে ধরে খিল খিল করে হাসবে না বিকেলে কা...
22/07/2025

ধীরে ধীরে সবার জীবন স্বাভাবিক হয়ে যাবে
শুধু মায়ের খালি কোলে আর কেউ ফিরবে না
মাকে জড়িয়ে ধরে খিল খিল করে হাসবে না
বিকেলে কারো অপেক্ষায় তার স্ত্রী প্রহর গুনবে না
কত না বলা কথা অব্যক্তই থাকবে
শূন্যস্থান গুলো আর কখনও পূর্ণ হবে না
অনেক তো অপেক্ষা হলো
এবার যে তবে জিরোনোর পালা
আর যে কেউ ঘরে ফেরার নেই.......

 #নাগ_____কন্যাপর্ব-৬ +৭ কারন বৃদ্ধা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন-আলো নাগ কন্যা আশা করি এটা ক্লিয়ার হয়েছে আপনার।এখন আপনার মন...
22/07/2025

#নাগ_____কন্যা

পর্ব-৬ +৭

কারন বৃদ্ধা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন

-আলো নাগ কন্যা আশা করি এটা ক্লিয়ার হয়েছে আপনার।এখন আপনার মনে হতে পারে আলো কেন এ দুনিয়ায় এসেছে।সে প্রশ্নের উত্তরেই তো জানতে চাচ্ছেন তাই নয় কি?

আমি নিজের অস্থিরতাকে দমিয়ে রেখে শান্ত হয়ে জবাব দিলাম

-হ্যা এটাই জানতে চাচ্ছি।কি সে উদ্দেশ্য হতে পারে।আর কেনই বা আলোর মধ্যে এসব বিচিত্র আচরণ প্রকাশিত হয়েছে।আর আলোর উদ্দেশ্য সফলের জন্য কি করতে হবে?আমাকে সবটা খুলে বলুন।আমি সবটা জানতে চাই।

বৃদ্ধা টা গম্ভীর গলায় জাবাব দিয়ে বললেন

-আপনি নিজেকে আগে স্থির করুন।আর সুন্দর করে বসুন।চুপ হয়ে শান্ত হন।নিজেকে স্থির না রাখলে আপনি তো কোনকিছুই বুঝবেন না।আর শরবতটা পান করে একটু শাক্তি সঞ্চয় করুন।

পাশ থেকে মিস শিলা আমাকে শরবতটা এগিয়ে দিল।আমি মনে মনে নিশ্চিত হলাম যে এবার শরবতটা পান করলে আমার ক্ষতি হবে না।কিন্তু যখনেই শরবতটা পান করতে যাব ঠিক তখনেই আলোর আগের চেহারাটা ভেসে উঠতে লাগল।বুঝতে পারলাম না কেন এমন হচ্ছে।আমি আবার পান করতে গিয়ে ভালোভাবে আলোর চেহারাটা লক্ষ্য করলাম কোথায় থেকে ভেসে উঠছে।খেয়াল করলাম উপরের কোন একটা জায়গা থেকে।অপরদিকে সবাই আমাকে শরবতটা খাওয়ার জন্য বেশ অস্থির করে তুলছে।সবাই এমন কেন করছে সেটাও বোধগম্য হচ্ছিল না।তবুও কারও কথায় পাত্তা না দিয়ে আমি আড় চোখে উপরে তাকিয়ে চমকে গেলাম।কারন আলো উপরে দাঁড়ানো।কিছু একটা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে।আমি আড়চোখে তাকিয়ে রইলাম।আর এদিকে আমাকে শরবতটা খাওয়ার জন্য বেশ জোড় দেওয়া হল।খানিক্ষণ এর মধ্যে ঘড়ির কাটায় টুংটুং করে সময় বেজে উঠল।আর সাথে সাথে সব কেমন জানি নিস্তব আর বিলীন হয়ে যেতে লাগল।সামনে আলোর আগের চেহারায় একটা মেয়ে আর আলোর নতুন চেহারায় একটা মেয়ে দাঁড়ানো।আগের আলো আমাকে বলল

-মা শরবতটা মায়া শরবত তুমি পান কর না।আর এ মিস শিলাও মায়ায় ডুবে আছে।বৃ্দ্ধার কথা অণুযায়ী কাজ করছে।আর এ মেয়েটাকে আলো সাজানো হয়েছে।আর তোমাকে গল্প বানিয়ে বিশ্বাস করানো হয়েছে যে এই মেয়েটায় আলো আর আলোর রূপ বদল হয়ে গিয়েছে।মা আমার দিকে তাকাও আমি তোমার আলো আর আমার রুপ বদল হয় নি।তুমি এদের দেওয়া শরবত খেও না।তা না হলে সব আমার হাতের বাইরে চলে যাবে।

খুব কনফিউশনে পড়ে গেলাম কোনটা আমার আলো বুঝতে পারছিলাম না।দুজনের চোখে তাকালেই মনে হচ্ছিল দুজনেই আমার মেয়ে।মা হয়ে এত বড় কনফিউশনে কেউ কখনও পড়েছে বলে মনে হয় না।এতটা দুটানায় বারবার পড়তে হচ্ছে।কি করব আমি?এ কোন পরীক্ষায় আমি পড়লাম।চুপ হয়ে স্থির হয়ে গেলাম।

আলোর চেহারার মেয়েটা বলে উঠল

-মা আমিই তোমার মেয়ে আলে। সেখানে দুইটা মিস শিলার একজন মালাটা ধরার সাথে সাথে মরে গিয়েছিল।যে শিলাটা আমাদের খুপরিতে নিতে চেয়েছিল সে শিলাটায় নকল শিলা ছিল।নকল শিলা মরে যাওয়ার পর আসল শিলা আর আমি তোমাকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভুলক্রমে আমাদের পা ঐ সুরঙ্গে ঢুকে পড়ে।এরপর এ বৃদ্ধা যাকে দেখছ উনি হচ্ছেন পিশাচ নাগপিতা উনি শিলাকে মায়ায় বশ করে ফেলে আর আমাকে আটকে রাখে।তোমার হাতে যে শরবতটা সেটা যদি ঘরির টুংটাং আওয়াজের আগে খেতে তাহলে হয়ত এ মায়া জাল থেকে বের হতে পারতাম না।তুমি শরবতটা ঠিক সময়ে খাও নি আর ওরাও খাওয়াতে পারে নি বলে এ মায়া যাদু থেকে বের হতে পেরেছি।তুমি আমাকে বিশ্বাস কর মা।আমিই তোমার আলো।

পাশ থেকে অন্য আলো বলে উঠল

-মা তুমি তো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলে আমি তোমাকে কিভাবে এখানে এনেছি আর ঐখানে কি ঘটেছে।মা এতকিছু প্রমাণ পাওয়ার পরও তুমি ঐ আলোর কথা বিশ্বাস করবে?আমিই তোমার আলো।

এবার আলোর চেহারার মেয়েটা বলে উঠল

-মা তুমি তোমার মনকে প্রশ্ন কর।যদি আমি মায়া শক্তি হই তাহলে এখানে কিভাবে আসলাম।আর ঐ এই যদি আসল আলো হয় আর এটা যদি ঐ বাড়িটায় হয় আর বৃদ্ধা যদি ঐ বৃদ্ধায় হয় তাহলে উনি কেন বলছে না কে আসল আর কে নকল।তুমি একদম মূর্তির মত বসে আছে কেন জান?

আমি অবাক হয়ে বৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই তো বৃদ্ধা একদম চুপ হয়ে বসে আছে।কিছুটা অবাক হয়ে বৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে ঐ মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম

-কেন?

উত্তরে মেয়েটা বলল

-কারন উনার শক্তি সব স্থির হয়ে আছে।ঘড়ির কাটার আওয়াজের সাথে সাথে উনার শরীরের শক্তি ২ ঘন্টার জন্য স্তবির হয়ে গিয়েছে।তুমি যদি শরবতটা খেতে তাহলে উনি আরও কিছুক্ষণ শক্তি খাটাতে পারত আর আমাকে আটকে রাখতে পার।মা আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে।তুমি নিজের মনকে প্রশ্ন কর একজন সাধারণ বৃদ্ধা কেন হুট করে এভাবে স্থির হয়ে যাবে।বৃদ্ধা তো কোন শক্তিশালী কেউ না উনি একজন মানুষ।মা আমাকে বিশ্বাস কর।আমার সাথে চল।

এবার আমি সত্যিই মহাবিপদে পড়েছি বলে মনে হচ্ছে।কি করব সব যেন চিন্তার বাইরে চলে গেল।হুট করে আমার মনে হল আমি দুজনকে একটু ছুয়ে দেখি।যদি স্পর্শ করে তাদের চিনতে পারি।তাই দুজনকে বললাম

-তোমরা দুজন আমার কাছে এস।আমি তোমাদের স্পর্শ করে দেখতে চাই।

দুজনেই আমার কাছে আসল আর আমি স্পর্শ করে দেখলাম। স্পর্শ করার সাথে সাথে আমার বুঝতে বাকি রইল না কোনটা আমার আলো।কারন ছোট বেলা থেকেই আলোর শরীরে ধরার সাথে সাথে আলোর শরীর নীল হয়ে যেত।আর আলোর চেহারা নিয়ে যে আছে তার শরীরেই নীল হয়েছে।তাহলে আমার আলোর রূপ পাল্টায় নি।আমি আলোকে জড়িয়ে ধরে বললাম

-এখন কি করতে হবে বল?

-মা এ বানানো আলোর এখন কোন শক্তি নেই।আমরা ২ ঘন্টা পার হওয়ার আগেই এখান থেকে বের হয়ে যাব।আমার সাথে চল তুমি।আর মিস শিলাকে স্পর্শ কর।তাহলে উনি মায়া শক্তি থেকে মুক্তি পাবে।

আমি আলোর কথায় মিস শিলাকে স্পর্শ করার সাথে সাথে মিস শিলা নড়েড়ে বসে বলল

-তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের হন।হাতে সময় খুব অল্প।দেড়ি করলেই আবার মায়ার জালে ফেঁসে যাব আর নতুন বিপদে পড়ব।এমনিতেই অনেক সময় পার করে ফেলেছি।

আমিও জোরে জোরে দম নিয়ে বললাম

-কিভাবে যাব বলুন।

মিস শিলা শান্ত হয়ে বললেন

-আমার সাথে চলুন।

আমি আর আলো মিস শিলা সাথে সাথে চললাম।সবাই মিলে অনেক বাধা পার করে অনেক কষ্ট করে ঐ মায়া পুরি থেকে বের হলাম।এ কোন রাজ্যে এসেছিলাম জানি না।তবে পথ ধরে হেঁটেই চলেছি।মনে হচ্ছে এ পথ বহুবছরের পথ।কেন জানি না মনে হল অনেকটা সময় পার করে ফেলেছি এ পথ দিয়ে আসার সময়।আলোর শরীরের গড়ন ও বেশ বড় মনে হতে লাগল।মনে হল আলোর বয়স ১০-১২ হবে।পথের প্রান্ত শেষ করে এক দরজা দিয়ে বের হলাম।মনে হল অদৃশ্য হয়ে কোথাও এক জায়গায় পড়ে গিয়েছি।চারপাশের শহরটার দিকে নজর দিয়ে দেখলাম।চেনা শহরটা বেশ অচেনা লাগছে।মিস শিলা বললেন

-মিসেস অধরা আমার ঐখানে নিজেদের ছয় টা বছর হারিয়ে ফেলেছি।এত মায়ার মধ্যে ছিলাম যে আমরা ছয় বছর পার করে ফেলেছি সেটা বুঝতেই পারে নি।সামনে এমন আরও অনেক বিপদ আসতে পারে।সবটা সামলাতে হবে।একবার যেহেতু যুদ্ধে নেমেছি সেটা শেষ না করে থামব না।বিপদে সবাইকে স্থির থাকতে হবে।আলোর রহস্য ভেদ করতে হবে।সামনে আলোর ও অনেক কাজ আর পথচলা বাকি।সবকিছু বুদ্ধি আর কৌশলে সামলাতে হবে।ঘাবড়ে গেলে হবে।আশা করি বুঝতে পারছেন।

শান্ত গলায় জাবাব দিলাম

-হ্যা বুঝেছি।

তবে ছয় বছর পার হওয়ার কথা শুনেই বুকের ভিতর বেশ মোচর দিয়ে উঠল আলোর বাবার জন্য।না জানি আলোর বাবার কি খবর?আমাদের খুঁজ না পেয়ে উনি কি হালে আছেন কে জানে।জানি না উনার অবস্থা ঠিক আছে কি না।আমি বেশ অস্থির হয়ে বললাম

-আমি আগে আলোর বাবার খুঁজ নিতে চাই।আমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যান।

মিস শিলা শান্ত হয়ে জাবাব দিয়ে বললেন

-চলুন।

আমি আলো আর মিস শিলা আমার বাড়ির পথে হাঁটতে লাগলাম।চেনা শহরা কয়েকটা বছরের ব্যাবধানে কতটা পাল্টে গিয়েছে।খুব অচেনা লাগছে।চারপাশ বেশ পাল্টে গিয়েছে।দোকানের এক আয়নার নিজের চেহারা দিকে নজর গেল।দেখেই বুঝা যাচ্চে ছয়টা বছরে আমি বেশ বুড়ি হয়ে গিয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতে আমি যখন নিজ বাড়ির সামনে আসলাম বেশ চমকে গেলাম কারন আমার বাড়িটা আর আমার বাড়ি নেই বেশ পাল্টে গিয়েছে।দরজায় নক করলাম খেয়াল করলাম অন্য কেউ বাড়ির দরজাটা খুলেছে।বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম

-এ বাড়িতে আপনারা কেন? এটা তো শাদাফ সাহেবের বাড়ি।তাহলে আপনারা কে?

উনারা ভ্রূটা কু্ঁচকে বললেন

-শাদাফ সাহেব কে জানি না।বাড়িটা আমারা কিনেছি।চার বছর যাবত থাকছি।আগের মালিক কোথায় জানি না।

কথাটা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।তাহলে আমার শাদাফ কোথায়?ভিতরে ভূমিকম্পের চেয়েও তীব্র কম্পন দিতে লাগল।মিস শিলাকে বললাম

-আমাকে একটু শাদাফের অফিসে নিয়ে যান।

উনি আমাকে বললেন

-আচ্ছা ঠিকানা বলুন

ঠিকান অনুযায়ী মিস শিলা আমাকে শাদাফের অফিসে নিয়ে গেল।কিন্তু সে অফিসের ও মালিক পরিবর্তন হয়েছে ফলে শাদাফের খবর কেউ দিতে পারে নি।আমি আমার আবেগ আটকাতে পারলাম না আর।হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম।আলো আর মিস শিলা আমাকে শাত্বণা দিলেও কান্না বন্ধ করতে পারছিলাম না।মিস শিলা আমাকে বললেন

-অস্থির হবেন না।আমার বাসার পরিণতি এরচেয়েও করুণ হতে পারে।আমার সাথে চলুন।আমাদের একসাথে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।আমার বাসায় চলুন আগে।এর মধ্যে হুট করে আলো বেশ ছটফট করতে লাগল।আলোকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে চাইলে মিস শিলা আমার হাতটা ধরে বললেন

-হাসপাতালে নিয়ে যাবেন না প্লিজ।লোকালয়ের বাইরে নিয়ে চলুন।আলো আজকে প্রথম সাপ রূপ ধারণ করবে কারন আলোর বয়স ১২ তে পড়েছে।এখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে সূর্য এক তৃতীয়াংশ অস্ত যেতেই আলের সাপ রূপে আসবে।তাড়াতাড়ি লেকালয়ের বাইরে চলুন।

অপরদিকে আলোর ছটফটানির পরিমাণ বেড়ে যেতে লাগল।আলোকে কোনরকমকে দুজন ধরে লোকালয়ে বাইরে নিয়ে গেলা।সূর্য অস্তের সাথে সাথে আলের শরীররে চামরা ফাটতে লাগল।যখন সূর্য এক তৃতীয়াংশ ডুবল তখন আলোর শরীর ফেটে চোচির হয়ে গেল।মুহুর্তের মধ্যে একটা প্রকান্ড সাপে পরিনত হল।

আস্তে আস্তে আলোর আকৃতি কমতে লাগল।সাপটা ছোট হয়ে আসল।একদম ছোট হয়ে জড়সড় হয়ে গুটি মেরে বসে পড়ল।১২ মিনিট পর আলো তার মানুষ রূপে আসল আর আমাদের বলল

-আমি কি তাহলে সাপ রূপ পেয়েছিলাম।তেমন কিছু মনে করতে কেন পারছি না।

মিস শিলা মুচকি হাসি দিয়ে বলল

-এত চাপ নিতে হবে না সোনা।আস্তে আস্তে সবটা ঠিক হয়ে যাবে।এখন চল আমার সাথে।

আলোর এ অবস্থা দেখার পরও নিজেকে স্থির আর শক্ত করে শিলার বাসার দিকে গেলাম।শিলার বাসায় গিয়েও শিলা দেখল তার মা,বাবা দু বছর আগে এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে।আর কাজের লোক ও চলে গিয়েছে।বৃদ্ধার রুমে গিয়ে দেখল।বৃদ্ধা জীর্ণশীর্ণ হয়ে বসে আছে।মিস শিলা নিজেকে শক্ত করে পুরো বাড়ি একা হাতে গুছাল।আমার আর আলোর থাকার ব্যবস্থা করল।খাওয়ার ব্যাবস্থা করল।বৃদ্ধাকে পরিপাটি করল।তারপর এক কোণে অনমনে বসে কিছুক্ষণ চোখের জল ফেলে নিজেকে হালকা করল।তাপর রাতের খাবার শেষ করে বৃদ্ধার কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল।বৃদ্ধা একটা বাক্স থেকে একটা বই বের করে যা বললেন তা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।কারন উনি বললে

পর্ব-৭

কারন উনি বললেন

-মিসেস অধরা আপনার মেয়ে আলো একজন নাগকন্যা।তাকে পাঠানো হয়েছে যাতে করে সে নাগমণি পুনর্জীবিত করতে পারে।কারন নাগমণি পিশাচ নাগের মায়ায় মৃত এবং অচঁল অবস্থায় পড়ে আছে।ফলে এটার শক্তি বিলীন হয়ে গিয়েছে।যার কারনে পিশাচ নাগরা বেশি শক্তিশালি হয়ে পড়েছে আর নাগকূলকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে।আর নাগকূলকে রক্ষা করার জন্য নাগমণি পনর্জীবিত করতে হবে।আর এটা পুনর্জীবিত করার জন্য পিশাচ রাজ্য থেকে নীল পদ্ম এনে তা নাগমণিতে স্পর্শ করাতে হবে।তবে কাজটা খুব সহজ না।কাজটা অনেক কঠিন।কিছুদিনের মায়ায় বুঝতে পেরেছেন হয়ত পিশাচ মায়া কতটা ভয়ানক।এ মায়া কাটিয়ে পদ্ম আনা এত সহজ ব্যাপার না।শক্তির চেয়েও সবচেয়ে বেশি দরকার মনোবল আর কৌশল।

আমি কিছুটা অবাক হয়ে মনের ভিতরে থাকা প্রশ্নগুলো করতে লাগলাম।

-আচ্ছা আলোর শরীরে হাত দিলে আলোর শরীর এমন নীল কেন হয়ে যায়।এটার কারন কি?আমার হাতে কি এমন আছে যা আলোর শরীরকে নীল করে দেয়।আলোর শরীর তো আর কারও হাতের স্পর্শে নীল হয় না।আমাকে কি এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন?

বৃদ্ধা আলতো হাসি দিয়ে বললেন

-আপনি তো রাফানি বংশের মেয়ে।আর রাফানি বংশের হাতের স্পর্শেই নাগকন্যারা নীল বর্ণ ধারণ করে।আপনি নিজেও হয়ত জানেন না আপনি কোন বংশের?তাই আপনার মনে এত প্রশ্ন।তবে এটা নিশ্চিত যে আপনি রাফানি রাজবংশের মেয়ে।সে অনেক বড় কাহিনী।এগুলো এখন বলতে গেলে সময় শেষ হবে কিন্তু কথা ফুরাবে না।আশা করি আপনি নীল কেন হয় এর কারনটা বুঝতে পেরেছেন?

আমি যে কোন বংশের বংশধর সত্যিই এটা জানতাম না।ছোটবেলায় মা,বাবাকে হারিয়েছে।তারপর ইয়াতিমখানায় বড় হয়েছি।আলোর বাবার সাথে প্রেমের অভিষেক ঘটে আর প্রেমের অভিষেক প্রণয়ে রুপান্তর হয়।যাক জানতে তো পারলাম আমি কোন রাজ বংশের মেয়ে ছিলাম।তবে আমার বংশধররা কোথায় এ প্রশ্নটা মনে জাগতে লাগল।তাই অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলাম

-আপনি কি বলতে পারবেন আমার বংশধররা কোথায়?

বৃদ্ধা শান্ত গলায় জাবাব দিলেন

-সেটা তো আমি বলতে পারব না।ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আপনার বংশধররা।কে কোথায় আছে আমার পক্ষে বলা সম্ভব না।

আমি আরও অস্থির গলা আর উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম

-আলোর বাবা কোথায়?আমার যে ছেলে হয়েছিল সে ছেলে কোথায়?প্লিজ জানলে বলুন।

বৃদ্ধা দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন

-এগুলা বলা আমার পক্ষে সম্ভব না।এগুলো আমার সাধ্যের বাহিরে।তবে নাগপিতাকে আহ্বান করলে এসমস্ত উত্তর পাওয়া সম্ভব ।আর নীল পদ্মটা কিভাবে উদ্ধার করবে তাও জানা সম্ভব ।সুতরাং আমাদের এখন নাগপিতাকে আহ্বান করতে হবে।

অবাক আর বিস্ময় নিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম

-কিন্তু কিভাবে?

জাবাবে বৃদ্ধা বললেন

-এজন্য আলোর সাহায্যের প্রয়োজন।আলোকেই নাগপিতাকে আহ্বান করতে হবে।এর আগে আলোকে একটা পরীক্ষা দিতে হবে।তবে এতে তার প্রাণ নাশ হতে পারে।সেটাতে উত্তর্ণ হলেই আলো নাগপিতাকে আহ্বান করতে পারবে।

পাশ থেকে আলো জোরালো কন্ঠে বলে উঠল

-বলুন কি কাজ?আমি সব কাজ করতে প্রস্তুত।একজন নাগকন্যা হিসেবে নাগকূলকে রক্ষা করার জন্য নিজের প্রাণ দেওয়া লাগলে দিব।আপনি আমাকে বলুন কি করতে হবে।

আলোর বলিষ্ঠ গলার প্রতিজ্ঞা শুনে বৃদ্ধা বেশ খুশি হয়ে বললেন

-তেমন কঠিন কোন পরীক্ষা দিতে হবে না।আমি শুধু তোমার মনের জোরটা দেখতে চেয়েছিলাম।এ মনের জোরটাই আসল।শুন তোমাকে শুধু তোমার হাতের এক অংশ একটু কেটে সেটা থেকে এক ফোটা রক্তবিন্দু নিয়ে গলায় রেখা টানতে হবে।গলায় রেখা টানার সাথে সাথে তোমার গলায় মিলিয়ে যাওয়া মালাটা আরও শক্তিশালী হয়ে সেটা দৃশ্যমান হবে।সেটা দৃশ্যমান হওয়ার সাথে সাথে সেটা থেকে একটা মালার পুতি হাতে নিয়ে মন থেকে নাগপিতাকে আহ্বান করতে হবে।মনের মধ্যে কোন বিভ্রান্তি আনা যাবে না।এক মনে ডাকতে হবে।তুমি কি পারবে?

খেয়াল করলাম আলো চোখগুলো বড় বড় করে বেশ আনন্দের ছলে বলল

-এ কি এমন কাজ।আমাকে একটা ছুরি দিন আমি এখনেই হাতটা কেটে নিচ্ছি।

বৃদ্ধা মনমরা হয়ে বললেন

-ছুরি দিয়ে কাটলে হবে না।অন্যভাবে কাটতে হবে।সেটা একটু কষ্টদায়ক ও।

আলো একটু শান্ত হয়ে জাবাব দিল

-বলুন কি সেই উপায় আমি সবকিছু করতে রাজি।আমার যত কষ্টই হোক আমি সহ্য করতে পারব।কষ্ট সহ্য করার যথেষ্ট বয়স আমার হয়েছে।আমাকে শুধু বলুন কি করতে হবে।

আলোর কথা শুনে বৃদ্ধা বেশ খুশি হয়ে একটা তমার বাক্স থেকে সূতা বের করল।সূতাটা বের করে আলোর হাতে দিয়ে বললেন

-এ সূতাটা দিয়ে আচঁড় টেনে হাত কাটতে হবে।তবে একটা কথা...

এ বলে বৃদ্ধা থেমে গেল।আলো বৃদ্ধাকে বলল

-বলুন কি কথা।আমি তো প্রস্তুত সব কথা শুনার জন্য।

বৃদ্ধা চোখ মুখ কালো করে জবাব দিলেন

-সূতটা দিয়ে হাতে একটা আঁচড় টেনেই হাতটা কাটতে হবে।তা না হলে নাগপিতাকে আহ্বান করা যাবে না।এমনভাবেই আচঁড় কাটতে হবে যেন একটানেই হাতটা কেটে যায়।এটা বেশ কষ্টকর।

আলো একটা হাসি দিয়ে বলল

-এ আর কেমন কষ্ট?আমাকে সুতটা দিন আমি হাত কাটতেছি।এ কষ্টে আমার কিছু হবে না।আপনি ভয় পাবেন না।

আলোর কথা শুনে বৃদ্ধা সূতাটা এগিয়ে দিল।আর আলো সূতটা হাতে নিয়ে সুতাটাকে হাতে বেড়ির মত পড়ল।তারপর দম নিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে একটা আঁচড় দিল।আচঁড়টা এতই জোরে দিয়েছিল যে আলোর হাত থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছিল।মা হয়ে এমন দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না।তাই আলোর হাতটা ধরতে নিতে চাইলাম।ঠিক এ মুহুর্তে বৃদ্ধা আমাকে বলে বসলেন

-মিসেস অধরা আলোকে এখন স্পর্শ করবেন না।আলোকে আলোর কাজ করতে দিন।আলোকে স্পর্শ করলে তার সকল আত্নশক্তি চলে যাবে।আপনি স্থির হয়ে বসুন।এমন কিছুই করবেন না যেটা আলোর জন্য কষ্টকর।সুতরাং নিজেকে স্থির রাখুন।আর চুপ করে বুসন।অযথা কষ্ট পাবেন না।

বৃদ্ধার কথা শুনে আমি স্থির হয়ে বসে আলোকে দেখতে লাগলাম।আলো হাতের থেকে রক্তবিন্দু আঙ্গুলের ডগায় নিল।আর সেটা বৃদ্ধার কথা অণুযায়ী নিজের গলায় রেখা টানল।রেখা টানার সাথে সাথে আলের গলায় একটা মালা দৃশ্যমান হল।আলো মালাটায় স্পর্শ করার সাথে সাথে আলোর হাতের ক্ষত ভালো হয়ে গেল।আলো মালাটা হাতে নিয়ে সেটা থেকে একটা পুতি আলাদা করার চেষ্টা করল।কিন্তু পারছে না।বারবার চেষ্টার পর ও ব্যর্থ হচ্ছিল।পাশ থেকে বৃদ্ধা বললেন

-আলো মালাটা ধরে কিছুক্ষণ স্থির থাক।তারপর মনের সবটা জোর দিয়ে মালাটা থেকে পুতিটা আলাদা করার চেষ্টা কর।আমি আগেই বলেছি শরীরের জোর কম খাটিয়ে মনের জোর বেশি খাটাও।এখানে মনের জোরটা প্রয়োজন বেশি শরীরের জোরটা না।সুতরাং মনকে প্রসস্ত কর।শরীরের জোর খাটিও না।

বৃদ্ধার কথা শুনে আলো জোরে একটা নিঃশ্বাস নিল।কিছুক্ষণ চুপ হয়ে বসে থাকল।আর মালাটাকে সজোরে টান দিল।এবার আলো একটা পুতি আলাদা করতে বেশ সক্ষম হয়েছে।এবার বৃদ্ধা বললেন

-আলো পুতিটা হাতে নিয়ে নাগপিতাকে আহ্বান কর।

আলো পুতিটা হাতের মুঠেয় নিয়ে বিড়বিড় করে কিছু বলতে লাগল।মিনিট খানিক পর সমস্ত ঘর অন্ধকার হতে লাগল।বাইরের সূর্য ডুবে চাঁদ উঠতে লাগল।এ কোন মায়া এ কোন দৃশ্য।কত কিছুই হয় এ দুনিয়ায়।সব মায়ার খেলা।বেশ উত্তেজিত হয়ে গেলেও নিজেকে স্থির রাখার চেষ্টা করলাম।আলোর শরীর নীলবর্ণ হয়ে গেল।ঘরটায় হালকা ধূলিমেঘ ভাসতে লাগল।চারদিকে এবার কম্পিত হতে লাগল।আমি বেশ ভয় পেয়ে গেলাম।ভয় পেয়ে ঘাপটি মেরে বসে রইলাম।নিজের অস্থিরতা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলাম।কি যে অস্থির লাগছে এ মুহুর্তে বলে বুঝানো সম্ভব না।আধ ঘন্টা এমন হওয়ার পর সবকিছু শীতল হতে লাগল।আস্তে আস্তে অন্ধকার গুচিয়ে আলো প্রবেশ করতে লাগল ঘরে।আর সামনেই খেয়াল করলাম একজন দাঁড়িয়ে আছে।আর আলোকে উদ্দেশ্য করে বলছে

-আমি নাগকূলের নাগপিতা।আমাকে কেন ডেকেছিস বল।কি জানতে চাস?

আলো চোখটা খুলে স্তম্ভিত গলায় জাবাব দিল

-আপনি আমাকে বলুন আমাকে কেন এখানে পাঠানো হয়েছে?আর কিরতে হবে?

নাগপিতা গম্ভীর গলায় জবাব দিলেন

-তোকে পাঠানো হয়েছে পিশাচ রাজ্য থেকে পদ্ম আনার জন্য।আর সে পদ্মের স্পর্শেই নাগমণি পুনর্জীবিত হবে।সুতরাং তোর পাঠানোর উদ্দেশ্য হল নাগমণি পুনর্জীবিত করা।

আলো নিজের গলার আওয়াজ নামিয়ে ভীত গলায় জাবাব দিল

-আমি সেটা কিভাবে আনব?আমাকে উপায়টা বলে দিন।উপায় না জানলে যে আমি বেশ অসহায় হয়ে পড়ব।এমনিতে ছয়টা বছর পার করে ফেলেছি পিশাচ,রাজ্যে।সময় যে কিভাবে কেটে গিয়েছে কেউ বুঝতে পারি নি।নিজের বাবা কোথায় আছে সেটার ও হদিশ জানি না।আপনি আমাকে বলুন না আমার বাবা কোথায় আছে।উনি কি বেঁচে আছে নাকি মরে গিয়েছে।

এ কথা বলে আলো কাঁদতে লাগল।শাদাফের কথা মনে হয়ে আমিও কেঁদে দিলাম।আমিও জিজ্ঞেস করলাম

-আপনি প্লিজ বলুন আমার শাদাফ কোথায় আছে।সে কি বেঁচে আছে।

উত্তরে নাগপিতা বললেন

-উনি বেঁচে আছেন।তবে...

শাদাফ বেঁচে আছে কথাটা শুনে এতটাই খুশি হয়েছি আমি বলে বুঝাতে পারব না।তবে শাদাফ কোথায় আছে বিস্মিত হয়ে জিঙ্গেস করলাম

-তবে কি?শাদাফ কোথায় আছে বলুন।

উত্তরে নাগপিতা বললেন

-শাদাফ পিশাচ রাজ্যে বন্ধি

পাশ থেকে আলো বলল

-কিভাবে আমি আমার বাবা এবং নীল পদ্মটা উদ্ধার করব আমাকে উপায় বলে দিন।

জবাবে নাগপিতা যা বললেন তা শুনে একটু ভয় পেয়ে গেলাম কারন...

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when গল্পের ডায়েরি posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to গল্পের ডায়েরি:

Share