11/08/2024
“ হুন্ডির দিন শেষ, ১৯ দফায় গড়ব দেশ ”
"বাংলাদেশ" নামক এই রাষ্ট্রটি বেচে থাকতে অথবা স্বাভাবিক নিঃশ্বাস নিতে তার পেছনে যারা দিন রাত শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে উপার্জিত অর্থ দেশে প্রেরণ করে সার্বক্ষনিক সচল রেখেছে তারা প্রবাসী, তারাই-
“ অক্সিজেন অব বাংলাদেশ ”
পৃথিবীর যে, যে দেশেই রয়েছেন সেই সকল দেশের রেমিটেন্স যুদ্ধার পক্ষে ফ্রান্সের পেরিস শহর থেকে-সর্বজন শ্রদ্বেয়, আধুনিক বিশ্বের সিনিয়র সিটিজেন, আমাদের অভিভাবক, অন্তর্বতীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূস স্যার, মাননীয় সকল উপদেষ্ঠাগন, বৈসম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সকল সমন্বয়কগণ, দেশে ও প্রবাসে বিভিন্ন অঙ্গনের বিজ্ঞ এক্টিভিষ্টগণ সর্ব সমীপে: ফ্রান্সে আমার প্রবাস জীবনের এক যুগের অভিজ্ঞতা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয় মানুষ গুলোর উত্থাপিত দাবির আলোকে তৈরি কিছু সুনিদৃষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি।
“ সকল প্রবাসীদের পক্ষ থেকে আমাদের সবার প্রথম দাবী - বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে মিছিল করায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে (UAE) যাবজ্জীবন কারাদন্ড সহ বিভিন্ন মেয়াদে ৫৭ জন সাজা পাওয়া রেমিটেন্স যুদ্ধাকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন সহ দূতাবাসকে অতি দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
একে একে প্রস্তাবপনা গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল :
০১। পৃথিবীর যে কোন দেশে একজন প্রবাসী মারা গেলে তার মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে অতি দ্রুততার সাথে আমাদের দুতাবাস বা মিশন গুলোর মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তির বৈধ নমিনির সাথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রেখে সম্পূর্ণ সরকারি ব্যবস্থাপনা ও ব্যয়ে তাকে দেশে এনে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করতে হবে।
০২। পঙ্গু, প্রতিবন্ধী অথবা কর্মে অক্ষম জটিল রোগে আক্রান্ত বিদেশে অবস্থানরত অসহায় প্রবাসী যারা স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত যেতে চায় অথবা নিজ উদ্যোগেই যারা দেশে ফিরে গিয়েছেন তাদের সার্বিক পূর্নবাসন সম্পূর্ণ সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় করতে হবে। দেশে সকল প্রবাসীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা।
০৩। প্রবাসীদের পাশপোর্ট সংক্রান্ত যে কোন সংশোধন করতে আইডি কার্ডের পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে করার বিধান করে প্রচলিত আমলাতান্ত্রিক ও অফিসিয়াল জটিলতা কমিয়ে অতি দ্রুততার সাথে আমাদের দুতাবাস ও মিশন গুলোতে বর্তমানে জমাকৃত পাশপোর্ট গুলো নবায়ন ও সংশোধন করে সকল প্রবাসীদের বৈধ হতে সহযোগিতা করা।যাতে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ গতিশীল করতে সহায়তা করা।
০৪। বিদেশে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসে গুলোতে প্রবাসীদের পাশপোর্ট নবায়ন ও যে কোন সনদের সত্যায়ন করতে বিদ্যমান অসম্মানজনক ফিস প্রত্যাহার করে দুতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের গ্যাড়াকল থেকে সাধারণ প্রবাসীদের মুক্তি দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
০৫। আমাদের দেশে এখনও অনেক উন্নত দেশের দূতাবাস নাই এবং কিছু দূতাবাস আগে আমাদের দেশে ছিল যা এখন প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রে যেয়ে সার্ভিস নিতে হয়। যা আমাদের জন্য ব্যয় ও কষ্ট সাধ্য। আমরা সবাই জানি যে, আমাদের এখনই সময় যারা আমাদের দায়িত্ব নিয়েছেন তারা ঐ দেশ গুলোর সাথে কথা বলে পূনরায় ফিরিয়ে আনার ও নূতন দেশের দূতাবাস খোলার উদ্যোগ নিবেন।
০৬। বিদেশগামী একজন প্রবাসীর জন্য একটি "প্রবাস ঋণ" চালু করা যাতে করে সে যেন বিমানের টিকেট, যাতায়াত খরচ ও প্রবাসে গিয়ে প্রাথমিক ব্যয় সামাল দিয়ে সাচ্ছন্দ্যে কর্মস্থলে যোগদান করতে পারে। সেই ঋন রেমিট্যান্স থেকে কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ রেখে ঝুকিপূর্ণ প্রবাস ঋনের বিপরিতে রেমিট্যান্স বিমার ব্যবস্থা করা।
০৭। প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের পাশপোর্ট বিশেষ কোন রঙে করা অথবা প্রচলিত পাশপোর্টেই বিশেষ কোন ট্যাগ ব্যবহার করে দেশে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি সকল কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের নিশ্চিত করা। সরকারী উদ্যোগে রেমিটেন্স যুদ্ধাদের সন্তানদের দেশে অথবা বিদেশে পড়ালেখার পথকে সুগম করতে মেধার ভিত্তিতে তাদের সন্তানদের জন্য সহজ শর্তে একটি সুদমুক্ত দীর্ঘ মেয়াদি "শিক্ষা ঋণ" চালু করা।
০৮। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের যে দূতাবাস ও মিশন গুলো রয়েছে তাদের বাধ্যতামূলক একটি রাষ্ট্রীয় ওয়েবসাইট ও একটি অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ রাখা। যেখানে ঐদেশের সকল প্রবাসীদের পূর্ণাঙ্গ একটি ডাটা ব্যাজ সংরক্ষণ করা এবং অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের মাধ্যমে যুক্ত প্রবাসীদের সকল সেবার তথ্য ও যোগাযোগের মাধ্যমে একটি সার্বক্ষণিক অনলাইন কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করা।
০৯। আমাদের দুতাবাস ও মিশন গুলোকে সম্পুর্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত রেখে নিয়ম শৃঙ্খলা ও পরিস্কার পরিছন্নতার দিকে সর্বোচ্চ নজর দিয়ে শুধু রাষ্ট্রীয় সেবা, অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ প্রবাসী বান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিনত করতে হবে। দূতাবাসের ঘুষ, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ধরা পড়লে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
১১। দেশে বিমান বন্দরে প্রবাসীদের বিশেষ মর্যাদায় আসা-যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এয়ারপোর্টে অসম্মান, অহেতুক হয়রানি, ল্যাগেজ ও মালামাল চোরি কঠোর ভাবে দমন ও নির্মূল করতে হবে। দেশে অবস্থান কালে মর্যাদাপূর্ন নাগরিক নিরাপত্তা ও সুবিধা সুনিশ্চিত করতে হবে।
১২। যারা বিদেশে থাকে, যাদের বাংলাদেশী পাশপোর্ট আছে। যারা দেশে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠায়, তারাই প্রবাসী। এখানে উল্লেখ্য যে, বৈধ অথবা অবৈধ সেটা নিজ দেশে মেটার করে না এবং বিষয়টি যে দেশে সে থাকে, সে দেশের ইমিগ্রেশন পলিসির উপর নির্ভর করে তাই আমরা কাউকে আর কোন দিনও অবৈধ প্রবাসী বলে অবিহিত করব না। সেবার সুবিধার্থে শ্রেণী অথবা ক্যাটাগরি করতে তাদের নিয়মিত ও অনিয়মিত ধরে নিতে পারি।
১৩। প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের উপর নূন্যতম ৫% নগদ প্রনোদনা দিতে হবে এবং সরকারি ভাবে প্রতিটি রেমিট্যান্স যুদ্ধার জন্য ৫% হারে রাষ্ট্রীয় রেমিট্যান্স সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যান বোর্ডকে শক্তিশালী করে প্রতিটি প্রবাসীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১৪। বিদেশে যে সকল প্রতিষ্টিত প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বা বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ রয়েছেন তারা যদি তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানে কাজ দিয়ে বা পেপার দিয়ে একজন অনিয়মিত প্রবাসীকে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দেয়, তাদেরকে অবদান মাফিক রাষ্ট্রীয় ভাবে বিশেষ সম্মাননার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৫। বিদেশগামী প্রত্যেক শ্রমিককে প্রবাসে যাওয়ার আগেই নূন্যতম ৩-৬ মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে একজন দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দিতে ম্যানপাওয়ার এজেন্সী গুলোকে বাধ্য করতে হবে।
১৬। প্রতিটি এজেন্সি তার পাঠানো শ্রমিকের সম্পূর্ণ দ্বায় ভার নিতে হবে। এজেন্সি মূখে বলবে একটা, শ্রমিক প্রবাসে গিয়ে দেখবে আরেকটা। এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে উক্ত এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলসহ, কঠোর জেল ও জড়িমানা বিধান করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের দাবির ভিত্তিতে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
১৭।বিশেষ করে যে সব দেশে নারী শ্রমিক রয়েছে, তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেখভাল করতে দূতাবাস গুলোতে একটি সার্বক্ষণিক হেল্পলাইন চালু করতে হবে। এই ক্ষেত্র কোন রকম অবহেলা বরদাস্ত করা যাবে না।
১৮। প্রবাসে কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন বা কোন ব্যক্তি যাতে করে বিনোদন বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে দেশ থেকে মানব পাচার করে প্রবাসীদের অর্জিত সুনাম ক্ষুন্ন করতে না পারে, সেই দিকে নজরদারী বাড়াতে হবে।
১৯। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত আমাদের দুতাবাস ও মিশন গুলো একটা মাসিক "অনলাইন মিটআপের" মাধ্যমে সরাসরি সাধারণ প্রবাসীদের যুক্ত করে তাদের সবার চাওয়া-পাওয়া, দু:খ কষ্ট, আনন্দ ও অর্জনের কথা গুলো যেন শেয়ার করতে পারার ব্যবস্থা করা। তাহলেই গড়ে উঠতে পারে "প্রবাসী বান্ধব দুতাবাস সেবা" এবং জটিলতা দূর হয়ে রেমিট্যান্স যুদ্ধাদের দেশের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
পরিশেষে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার যে মহান ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ যে, স্বাধীনতা পেয়েছি তার মূল লক্ষ্যকে পুরোপুরি বাস্তবে রুপ দিতে একটি বাসযোগ্য, সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও সামজিক ন্যায় বিচার ভিত্তিক সুখী, সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী প্রিয় মাতৃভূমিকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারলেই সার্থক হবে আমাদের প্রচেষ্টা তৈরি হবে "একটি নূতন বাংলাদেশ" ।
তারিখ: ১১ই আগষ্ট ২০২৮ইং রবিবার, ২৭শে শ্রাবণ ১৪৩১ বাংলা,
৫ ই সফর ১৪৪৬ হি.
ধন্যবাদান্তে,
খায়রুল আমীন কবির, পেরিস, ফ্রান্স
বৈষম্য বিরোধী প্রবাসী আনন্দোলন
E-mail : [email protected]
Web : www.facebook.com/probashian
বি. দ্র. : প্রস্তাবনাটি খসড়া আকাড়ে প্রস্তত করে সকলের মতামতের জন্য উন্মোক্ত রাখা হল, আপনি যদি মনে করেন আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করা প্রয়োজন তাহলে প্রবাসীদের পক্ষে উক্ত বিষয়টি সন্নিবেশিত করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আওয়াজ তুলবেন, প্লিজ।