24/07/2025
সন্তান হারানোর বেদনায় রয়েছে আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার
একজন মা যখন শেষবারের মতো সন্তানের নিথর দেহটা বুকে জড়িয়ে ধরেন, অথবা একজন বাবা যখন নিজের কাধে প্রিয় সন্তানের খাটিয়া বহন করেন—তখন আকাশও যেন নির্বাক হয়ে যায়। বাতাসও যেন তার প্রাণ হারায়। ফিকে হয়ে যায় দুনিয়ার সব স্বাদ আহ্লাদ।
আর হৃদয়ের গভীর থেকে বেরিয়ে আসে এক চাপা কান্না, যা কোনো শব্দে প্রকাশযোগ্য নয়। সন্তানের নিঃশ্বাসহীন মুখের দিকে তাকানোর চেয়ে অধিক কষ্টদায়ক কিছু বোধহয় বাবা-মায়ের জন্য পৃথিবীতে নেই।
এই বেদনার মাঝেই ইসলাম আমাদের দেখায় এক অপার্থিব আশা, এক আসমানী শান্তনা। আল্লাহ তা’আলা এই অসহনীয় বেদনার গভীরে লুকিয়ে রেখেছেন এক বিশেষ পুরস্কার—জান্নাত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তির তিনটি সন্তান মারা যায়, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।” সাহাবিরা বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, যদি দুটি হয়?” তিনি বললেন, “দুটি হলেও।” (সহিহ বুখারি: ১২৪৯)
অন্য এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যখন আল্লাহ কোনো মুমিনের সন্তানের জান কবজ করেন, আর সে বলে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’, তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, ‘আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ আমি নিয়ে নিলাম, অথচ সে ধৈর্য ধরেছে?’ এরপর আল্লাহ বলেন, ‘তাহলে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করে দাও, যার নাম হবে বাইতুল হামদ (প্রশংসালয়)।’(তিরমিজি: ১০২১) (এ ঘরটি জান্নাতে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন স্থানে থাকবে।)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন:
“ছোট শিশুরা জান্নাতের প্রজাপতির মতো। তাদের মধ্যে কেউ তার পিতার সঙ্গে মিলিত হবে—অথবা তিনি বলেছেন, বাবা-মা উভয়ের সঙ্গেই মিলিত হবে। অতঃপর সে তাদের কারো কাপড়ের আঁচল ধরবে, যেমন আমি তোমার কাপড়ের আঁচল ধরছি। এরপর সে আর তাদের ছাড়বে না।” (সহিহ মুসলিম: ৬৫৯৫)
সন্তান হারানোর দুঃখ কখনোই শেষ হয় না। তবে সেই দুঃখ যদি ধৈর্যের ঘ্রাণে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়, তাহলে সেই কষ্টই হয়ে ওঠে জান্নাতের সিঁড়ি। শোকের নিচে লুকিয়ে থাকে সওয়াবের ঝর্ণা, অশ্রুর আড়ালে জমে থাকে জান্নাতের আলো।
আল্লাহ সেই মায়েদের কষ্ট জানেন। জানেন সেই পিতার কবরের মাটি ভেজা চোখ। তাই তিনি তাদের জন্য রেখে দিয়েছেন এক চিরন্তন প্রতিদান—জান্নাতে মিলন।
©wafilife.com