13/10/2024
কেয়া মুখার্জি এশীয় ও বৈশ্বিক বিষয়াবলীর উপর বিশেষজ্ঞ একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। ৪ অক্টোবর Gatestone(www.gatestoneinstitute.org) -এ তার লিখা এই প্রবন্ধটি ছাপা হয়।
বাংলাদেশের তালেবানীকরণ: বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন এবং 'মানবাধিকার' গোষ্ঠীগুলির নীরবতা
ইসলামপন্থী ও জিহাদি ছাত্র আন্দোলনকারীরা মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে দেশের ভেতরে একটি বিকল্প সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে, যা ইরানের প্রাইভেট মিলিশিয়া ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) মতো মনে হচ্ছে। হিন্দুসহ অসংখ্য মানুষ গণ-লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন, এবং এসব ভয়াবহ অপরাধের অপরাধীরা কোনো শাস্তি ছাড়াই রেহাই পাচ্ছেন।
উল্লেখযোগ্য যে, মুহাম্মদ ইউনুস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রধান দাতা। উইকিলিক্সের ফাঁস হওয়া একটি কেবলের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন যাতে তাঁর বন্ধু ইউনুসকে তখনকার সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হয়।
যেহেতু ইউনুস বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারা, যেমন বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটনের পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন, তাই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বা হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ কোনো মানবাধিকার গোষ্ঠীই বাংলাদেশে হামলা, ধর্ষণ ও হত্যার নিন্দা জানায়নি।
বাংলাদেশ কি এই উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হতে থাকবে? নাকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলার বাড়তে থাকা তালেবানি শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াবে? শেখ হাসিনার দেশত্যাগের(৫ আগস্ট) কয়েক দিন পর, জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, হিজবুত তাহরীর(হিজবুত তাহরীর একটি জঙ্গি ইসলামী সংগঠন, যারা খিলাফত প্রতিষ্ঠার পক্ষে। এটি বাংলাদেশসহ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ), হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামপন্থী শক্তির নেতৃত্বে আন্দোলন চলাকালীন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি, যা পরবর্তীতে আনসার আল ইসলাম নামে পরিচিত) প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন রহমানীর বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। রহমানীসহ বহু বন্দি ইসলামপন্থী ও জিহাদিকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পরপরই, রহমানী একটি ভিডিওতে উপস্থিত হন, যেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আহ্বান জানান "মোদির শাসন থেকে বাংলা মুক্ত করার জন্য।"
ডিসেম্বর ২০২১-এ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কূটনৈতিক সুরক্ষা পরিষেবা তাদের "রিওয়ার্ডস ফর জাস্টিস" (আরএফজে) অফিসের মাধ্যমে ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলার তথ্যের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। ওই হামলায় মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ রায় নিহত হন এবং তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদ গুরুতরভাবে আহত হন। জসিমউদ্দিন রহমানীর নেতৃত্বাধীন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এই হামলার দায় স্বীকার করে। তবে এই সন্ত্রাসী নেতা মুক্তি পাওয়ার পর মার্কিন কর্তৃপক্ষ কোনো বিবৃতি দেয়নি।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও তথাকথিত আন্দোলনকারীদের সহিংস কর্মকাণ্ডের পরপরই মুহাম্মদ ইউনুসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নির্বাচন করা হয়, যার বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন ও ক্লিনটন পরিবারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, সন্ত্রাসী দল জামাত ইসলামি পুলিশ, আওয়ামিলীগ কর্মী ও হিন্দু-বৌদ্ধদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালায়, যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, মন্দির ধ্বংস ও মূর্তি ভাঙচুর। অনেকের মতেই ইউনুস প্রশাসন বাকস্বাধীনতা কঠোরভাবে দমন করছে। কিন্তু স্থানীয় সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি নীরব। সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে তাদেরকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, হিজবুত তাহরীর এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এর মতো নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সাংবাদিকদের ওপর ক্রমাগত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসলামপন্থীরা ঢাকায় প্রকাশ্য বিক্ষোভের মাধ্যমে হিন্দুদের আসন্ন দুর্গাপূজা উদযাপন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রযন্ত্র, বিশেষত নিরাপত্তা সংস্থাগুলি, এই ধরনের হিন্দুবিরোধী কার্যকলাপকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।
২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে মুহাম্মদ ইউনুস ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত হন, যেখানে বিল ক্লিনটনও উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে বিল ক্লিনটন হিজবুত তাহরীরের নেতা মাহফুজ আলমকে প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশে ইসলামপন্থী শক্তির উত্থান এবং মুহাম্মদ ইউনুসের মতো ব্যক্তিত্বদের আন্তর্জাতিক শক্তির নীরব সমর্থন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে একটি বিপজ্জনক পরিবর্তন নির্দেশ করছে। চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি আরও সাহসী হয়ে উঠছে, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। ভয়ের ব্যাপার হোল; বিশ্ব-শক্তি অদ্ভুতভাবে নীরব।
বাইডেন প্রশাসন এবং ক্লিনটন পরিবারের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নীরবতা দেখে প্রশ্ন জাগে: বাংলাদেশ কি এই উগ্রবাদী পথে তার নতুন যাত্রা অব্যাহত রাখবে, নাকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলার বাড়তে থাকা তালেবানি শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াবে?