18/12/2025
লন্ডনে এক অন্ধকার রাতের অভিজ্ঞতা
সেদিনের লন্ডনের রাতটা শুধু বাইরে অন্ধকার ছিল না অন্ধকারটা আসলে ছিল আমার ভেতরেও।
ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি ক্লান্ত, দেরিতে পৌঁছানো, আর ভিনদেশে একা পড়ে গিয়ে ভীষণ অনিশ্চয়তায় ছিলাম। রাত বাড়ছিল, চারপাশ নিস্তব্ধ। তখন জানতে পারলাম রেল রিপ্লেসমেন্ট বাস চলছে ,সেই খবরটা যেন অন্ধকারে একটা ক্ষীণ আলো হয়ে এল।
বাস স্টপে গিয়ে দেখলাম একজন লেডি ওয়ার্কার দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি শুধু একজন কর্মী নন, সেই মুহূর্তে তিনি আমার জন্য এক ধরনের ভরসা ছিলেন। যখন শান্তভাবে বললেন, প্রায় ২০ মিনিট লাগতে পারে, তার কণ্ঠে একটা নিশ্চিন্ত ভাব ছিল , যা আমার ভয়কে একটু হলেও কমিয়ে দিয়েছিল। সময় যেন থমকে থমকে যাচ্ছিল।
হঠাৎ করেই ১৫ মিনিটের মধ্যেই বাস চলে এল। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, “এই যে, তোমার বাস চলে এসেছে।” কিন্তু বাসের ভেতর তাকিয়ে দেখি একটাও যাত্রী নেই। একদম ফাঁকা।
তিনি মজা করে বললেন, “নাও, পুরো বাসটাই তোমার। যে কোনো সিটে বসো।” আমি হেসে ফেললাম, মজা করেও উত্তর দিলাম। কিন্তু সেই হাসির আড়ালে ছিল অদ্ভুত একটা শঙ্কা। বুকের ভেতর কেমন যেন কেঁপে উঠছিল।
বাসে উঠেও মনটা শান্ত হলো না। মাথার ভেতর হঠাৎ ভেসে উঠল বাংলাদেশ আর ভারতের সেই ভয়ংকর রাতগুলোর কথা যেখানে ফাঁকা বাসেই নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে, পালাক্রমে, নিষ্ঠুরভাবে। সেই স্মৃতিগুলো খবরের কাগজে পড়া হলেও মনের ভেতর গভীর দাগ কেটে রেখেছে।
কিন্তু তারপর হঠাৎ আমি খেয়াল করলাম আমি যে সিটে বসে আছি, তার সামনেই তিনটা ক্যামেরা। চারপাশে ক্যামেরা, আলো, নিয়ম নিরাপত্তা যেন চারদিক থেকে আমাকে ঘিরে ধরেছে। তখনই প্রথমবার গভীর শ্বাস নিতে পারলাম।
সেই মুহূর্তে বুঝলাম ভয়টা শুধু অন্ধকারের জন্য ছিল না, ছিল স্মৃতির জন্য, ছিল অভিজ্ঞতার জন্য। আর সেই রাতটা আমাকে শিখিয়েছিল, নিরাপত্তা শুধু ব্যবস্থা নয় মানসিক শান্তিরও একটা নাম।