30/06/2025
একজন বাবার দায়িত্ব কখনো ই শেষ হয় না। অনেক বাবা ই মনে করে, কষ্ট করে বাচ্চাদের বড় করলাম, পড়াশোনা করলো, বড় চাকরি করে, এখন আমার দায়িত্ব শেষ। না, বাবার দায়িত্ব কখনো ই শেষ হয় না। সন্তানের বয়স যদি ৬০ ও হয়, বাবা যতদিন বেচে থাকবে, ততদিন দায়িত্ব থাকবে। কি দায়িত্ব?
একজন বাবাকে সন্তানরা কোন রুপে দেখে? উপরে থাকা স্রষ্টার পরে, বাবাকে ই যে কোন সন্তান ছায়া হিসাবে দেখে , ভরসার একমাত্র ( one and only ) অবলম্বন হিসাবে দেখে। সন্তান হতে পারে মিলনিয়ার, বাবা হয়তো দরিদ্র অশিক্ষিত কৃষক। তবুও বাবা ভরসার স্হল, উষ্ণতার প্রতিচ্ছবি।
বাবাদের ছোটবেলা হতে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত, যাতে সন্তান যে কোন কিছু তার সাথে শেয়ার করতে পারে।
কিছুদিন আগে একটা হলিউড মুভি দেখছিলাম। মেয়ে বাবার উপরে অনেক অভিমান নিয়ে বড় হয়েছে। Broken family র একমাত্র কন্যা সন্তান।বাবা পুলিশে চাকরী করে। মেয়েকে ছোটবেলায় পাঠিয়ে দিযেছিল অন্য শহরে কারন তার নিজের শহরটা ক্রাইমে পরিপুর্ন ছিল। কিন্তু মেয়ে অনেক কষ্টে বড় হয়েছে একা একা। বর্তমানে সে পাবলিক প্রসিকিউটার লয়্যার। বাবা অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করার পরে ও মেয়ে কথা বলতে চাচ্ছেনা।মেয়েকে সরি বলার পরে, এমন একটি কথা বলেছে, তা খুব গুরুত্বপুর্ন:
"যতদিন তোমার বয়স, ততদিন ই আমি বাবা"।
অর্থাৎ তার আগে বাবা হওয়ার অভিঙ্গতা ছিল না। থাকলে হয়তো অনেককিছু অন্যরকম করতো।
বাবা এবং ছেলে সন্তানের মধ্যে যে দুরত্ব, এটি কি শুধু বাংলাদেশীদের মধ্যে ঘটে? নাকি, এ বিষয়টা Universal- দেশ, জাতি, ধর্ম যা আ হোক বেশীরভাগ সমাজে বাবা আর ছেলের মধ্যে সব সময় দুরত্ব হয়। এ দুরত্বটা কি শুধু বাবা-ছেলের সাথে হয় নাকি বাবা- মেয়ের মধ্যে ও হয়?
একজন মায়ের মন, আর একজন বাবার মন- সম্পুর্ন আলাদা। মায়েরা আবেগ কন্ট্রোল করতে পারে ছেলের ব্যাপারে। যত রাগ ই হোক, সন্তানকে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে দয়াশীল হয়। কিন্তু একজন বাবা, ছেলের বিভিন্ন কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে আবেগের বিস্ফোরন ঘটায়। হয় মারধর করে নতুবা ঘর থেকে বের করে দেয়। ঐ জায়গায় মা ঢাল হিসাবে দাড়ায়। একজনের শাসন, আরেকজনের মায়ায় সন্তান গড়ে উঠে। এজন্যই একজন সন্তানের মানসিক বিকাশে মা- বাবা দুজনেরই প্রয়োজন। গে কাপল বা লেসবি কাপলরা কিছুদিন একসাথে থাকার পরে অনেক সময় সন্তান দত্তক নেয়। কিন্তু মানুষ করতে পারে না। কারন, তারা দুজনেই সেইম জেন্ডার।
এ কারনেই সে মায়ের ঢাল যখন একজন সন্তানের উপর হতে সরে যায়, তখন একজন সন্তান, এতিম না হয়েও এতিম হয়ে যায়। বরং, আরো বেশী খারাপ অবস্হায় পড়ে যায়। এতিম তো মনকে সান্তনা দেয়, আমার বাবা মা নেই দেখে, পৃথিবী আমার প্রতি নিষ্ঠুর। কিন্তু, মা বাবা ডিভোর্স হবার পরে, মা একদিকে , বাবা একদিকে , দুজনে ই বেচে আছে, কিন্তু কেউ নেই এ সন্তানের পাশে।
কোন সংসার ভেঙে গেলে, ঘরে যখন সৎ মা আসে, ঠিক তখনই নেমে আসে ঐ সন্তানের উপর অত্যাচারের অমানিশা। কারন, তখন
" বাবার রাগ ডাবল হয়ে যায়। "
প্রথম রাগ স্বাভাবিক পুরুষ হিসাবে, দ্বিতীয় রাগ, তার নতুন বউকে খুশি করা।
বাবা যখন, দিনে সন্তানকে প্রহার করে, রাতে সৎ মা, তার জামাইকে সম পরিমান আদর বাড়িয়ে দেয়। ঠিক এ জায়গায় একজন বাবার পরীক্ষা। প্রথম সংসার ভেঙে যাবার পরে, প্রথম ঘরের সন্তানকে বাবা এবং মা - দুজনেরই ভালবাসা দিতে জানা। একইসাথে শাসন আর মায়ের আদর দিতে পারা। এ দুটি না দিয়ে শুধু শাসন করলে, ঐ সন্তানের ভেতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ঐ সন্তানের মনস্তাত্বিক জগতে তোলপাড় হয়ে যায়। ঐ শিশু/কিশোর অন্য দশটা বাচ্চার মতো করে বড় হয় না।
স্রষ্টার পরেই একজন মানুষের কাছে সবচেয়ে সম্মান এবং সেবা পাবার হক, তার বাবা মায়ের। ধর্মগ্রন্হের পাতায় পাতায় আমরা দেখি, একজন মানুষকে উদ্বুদ্ব করা হয়, তার বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে। বৃদ্ব বয়সে সেবা করতে, ভাল ব্যবহার করতে, কর্কশ স্বরে কথা না বলতে, ভরন পোষন, চিকিৎসা করাতে।
ইসলাম ধর্মে সাধারনত এমন বিষয়ের ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করে পুরস্কার ঘোষনা করা হয়েছে, যা মানুষের স্বাভাবিকভাবে করতে ইচ্ছা করে না। যেমন, একজন মাকে কখনো বলা হয় নি, তুমি তোমার সন্তানকে দুধ পান করালে, মুখে খাবার তুলে দিলে, লালন পালন করলে ই জান্নাত পেয়ে যাবে। যদিও এ কাজ পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ, কিন্তু মায়ের মনে এ ভালবাসা দিয়েই তৈরী করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সে এ কাজ করবে, তাই এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করে বড় কোন পুরস্কার বা না করার জন্য শাস্তি ঘোষনা করা হয় নি।
কিন্তু মা - বাবা বৃদ্ব হয়ে যাবার পরে যখন দুর্বল/অসহায় হয়ে পড়ে, সন্তানদের স্বাভাবিকভাবেই কষ্ট হয়ে যায় , তাদের দেখাশুনা করা। মা বাবা সাধারনত ছেলের ঘরেই থাকে। ছেলের বাবা মা, বউ মার তো আর বাবা - মা না। তখন, ছেলে বড় পরীক্ষায় পড়ে যায়। একদিকে বউয়ের চাপ, অন্যদিকে মা বাবার প্রতি দায়িত্ব। ঠিক এ জায়গায় একজন সন্তানের পরীক্ষা।
ভাল বাবা হবার আগে, একজন ভাল মানুষ হতে হবে। বাচ্চারা সব observe করে। একজন ঘোষখুর/ দুর্নিতীবাজ, বাবাকে তার সন্তান / স্ত্রী সম্মান করে না। যদি ও সে সব কিছু তাদের জন্য করে।
আরেকটা হলিউড মুভির শেষ দৃশ্যে,
CIA agent এক বাবা ( যিনি সব সময় দুরে দুরে থেকেছেন) তার মেয়েকে Sorry বলে, বলছে,
"I am sorry. I thought, I am doing everything for you. But , I did not realize, I should have been there for you".
"আমি দুঃখিত। আমি মনে করেছিলাম, আমি তো সবকিছু তোমার জন্য করছি। কিন্তু এটা বুঝতে পারেনি, আমার উচিত ছিল, তোমার জীবনের প্রতিটি ধাপে , তোমার সাথে থাকা।"
আপনার ছেলের প্রথম সন্তান হবে বিদেশের মাটিতে। যেখানে আত্নীয় স্বজন বলে কেউ নেই। এটা তার জীবনের অনেক অনেক বড় দিন। আতন্ক আর ভয়ের দিন। সন্তান হবার পরে, সে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে অপরিচিত মানুষকে দিতে দিতে ভেবেছে,
" আজকে এমন একটা দিনে , বাবা আমার খোজ খবর নিল না!!!"।
স্কুলের প্যারেন্টস মিটিং, কনভোকেসন ডে, বিয়ের দিন, চাকরির ইন্টারভিউ- জীবনের এ রকম প্রতিটি বাকে বাকে মনের গহীনে,
প্রতিটি ছেলে সন্তান, মেয়ে সন্তান, শিক্ষিক সন্তান, অশিক্ষিত সন্তান, ধনী সন্তান, গরীব সন্তান,
একটা জিনিস ই চায়,
বাবা!!! তুমি কাছে থেকো। যদি কিছু করতে না ও পারো, তবু ও বলবে,
" ভেবো না, বাবা। ভয় পেয়ো না। আমি তো আছি। আমি দোআ করেছি তোমার জন্য। তুমি সফল হবে। "
কোন সন্তান যেন ঘুমড়ে ঘুমড়ে কেন্দে চাপা কষ্ট বুকে চেপে আর না বলে,
" বাবা! তোমার তো অনেক সন্তান,
কিন্তু
আমার তো বাবা একটাই"।
লেখক:
Bashir Jaman Babu,
CSC, APDMS, MA
Certified Business Mentor,
British Bangladeshi entrepreneur
#বাংলাদেশ #ইসলামিক #সমাজ #পরিবার #বাবামা #বাবা, #মা