
01/08/2025
🌺 বিপত্তারিণীর ব্রতকথা 🌺
একবার দেবশ্রী নারদ কৈলাসে উপস্থিত হয়ে হর-পার্বতীর দর্শন করেন। সাক্ষাৎ পেয়ে দেবশ্রী বিনয়ে জানালেন এক প্রশ্ন—
“হে মহাদেব, মর্ত্যবাসীরা এমন কোনও ব্রত পালন করতে পারে কি, যাতে সমস্ত জীবনের বিপদ-আপদ, ক্লেশ ও দুঃখ দূর হয়?”
মহাদেব মৃদু হেসে বললেন—
“হ্যাঁ দেবশ্রী, এক ব্রত আছে, যার মাহাত্ম্য অসীম। সেই ব্রতের নাম মা বিপত্তারিণী ব্রত। যে নারী নিষ্ঠাভরে এই ব্রত পালন করেন, দেবী তাঁকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করেন। তিনি সঙ্কটের কালেও রক্ষা করেন নিজের ভক্তকে।”
মহাদেব জানালেন---
🏵️ পুরাকালে বিধর্ম নামে এক নগর ছিল।
সেই নগরে রাজত্ব করতেন এক ধর্মপরায়ণ, সত্যনিষ্ঠ রাজা—সত্যক্রম। তিনি ছিলেন মিথ্যার শত্রু এবং ন্যায়ের পূজারী। তাঁর রাজ্য ছিল শান্তিতে ও সমৃদ্ধিতে ভরপুর। তাঁর রানী ছিলেন গুণবতী —যথার্থই গুণে গুণান্বিতা। ধর্মপরায়ণা, দয়ালু, ভক্তিবান ও সতী নারী।
একদিন দৈববশে রানীর সঙ্গে এক নিম্নবর্ণের চামারিণীর সখ্যতা গড়ে ওঠে। রানী তাঁর সঙ্গে মনের কথা ভাগ করে নিতে শুরু করেন। গোপন এক দুর্বোধ বাসনা জন্ম নেয় গুণবতীর মনে—তিনি চামারিণীকে বলেন যে তিনি গরুর মাংস দেখতে চান।
চামারিণী তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করে, কিন্তু রানী অনড়। অবশেষে, রানীর চাপেই একদিন রানীর ইচ্ছা পূরণে রাজি হয় চামারিণী। সব কিছু গোপনে হলেও, ঘটনাটি অজানায় থাকে না। রাজদরবারের এক সুশৃঙ্খল রক্ষী এই সংবাদ শুনে রাজার কাছে তা জানিয়ে দেয়।
রাজা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেন না।
“আমার সতী, ধর্মপরায়ণা রানী এ কাজ করতে পারেন?”
কিন্তু সন্দেহ ক্রমে ঘনিয়ে আসে। তিনি রানীর কাছে জানতে চান, সেই পাত্রে কী আছে।
রানী তখন ভয়ে জানায়,
“সেখানে তো পুজোর মিষ্টি ও ফল রাখা রয়েছে, রাজন।”
রাজা বলেন,
“তবে রাজদরবারে আনো সেই পাত্র। যদি সত্যি পুজোর ফল হয়, তবে প্রমাণ হবে তোমার নিষ্কলঙ্কতা। আর যদি মিথ্যা বলো, তবে তা হবে প্রাণদণ্ডযোগ্য অপরাধ।”
সেই মুহূর্তে রানী আতঙ্কে কেঁপে ওঠেন।
তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে মনে মনে ডাকেন—
“হে মা বিপত্তারিণী! আমার অসতর্ক ভুলের জন্য আপনি আমায় রক্ষা করুন। আপনি মা, আপনি ত্রাতা, আমি আপনার শরণাগত।”
সেই মুহূর্তে দেবী বিপত্তারিণী সাড়া দেন।
রানী যখন থালাটি রাজদরবারে নিয়ে যান, তখন তার ভিতরে থাকা অখাদ্য নিজেই রূপান্তরিত হয়ে যায়—তাতে দেখা যায় ১৩টি ফল, ১৩ রকম মিষ্টি ও লাল ডোর, যা দেবী বিপত্তারিণীর পূজায় উৎসর্গ করা হয়।
রাজা নিজের চোখে সব দেখে অভিভূত হন।
“ আমি তোমায় ভুল বুঝেছিলাম গুণবতী! আমি ক্ষমাপ্রার্থী, মহারানী ৷”
রাজা রানীর কাছে ক্ষমা চান।
রানীও আনন্দাশ্রুতে জানান, তিনি আজীবন মা বিপত্তারিণীর ব্রত পালন করবেন।
সেদিন থেকেই শুরু হয় এই মহাব্রতের প্রচলন।
রানী গুণবতীর নিষ্ঠা, ভক্তি ও ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরমাত্মার আশ্রয়ে ফেরা আমাদের শেখায়— এই ব্রত ৷
“জীবনে কখনো ভুল হলেও, তা শোধরানোর পথ খুলে রাখেন মা। কেবল তাঁকে ডাকার জন্য ভক্তি থাকতে হবে।"
🙏 জয় মা বিপত্তারিণী
— যিনি সত্যের পক্ষে দাঁড়ান, এবং ভক্তের প্রাণ রক্ষা করেন দয়াময়ী মাতৃরূপে।
#ক্যালিগ্রাফি
The Crayons
Typo আড়াল প্রেমী
Bg pic