
16/07/2025
কলকাতার ব্যস্ত শহরের এক কোণে, পার্ক স্ট্রিটের একটি পুরনো বাড়িতে, বিখ্যাত শিল্পপতি অরুণাভ সেন হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যান। তার স্ত্রী, অনন্যা সেন, পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন, কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট সূত্র না থাকায় তদন্তে অগ্রগতি হয় না।
এই সময়ে, প্রখ্যাত গোয়েন্দা অরিন্দম বসু ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তদন্ত শুরু করেন। তিনি প্রথমে অরুণাভের অফিস এবং বাড়ি পরিদর্শন করেন। অফিসে অরিন্দম লক্ষ্য করেন যে, অরুণাভের ডেস্কে একটি চিঠি রয়েছে, সেখানে লেখা: "সময় শেষ, প্রস্তুত হও।"
অরিন্দম এরপর অরুণাভের ব্যক্তিগত সহকারী, রোহিতের সঙ্গে কথা বলেন। রোহিত জানান, অরুণাভ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অদ্ভুত আচরণ করছিলেন এবং প্রায়ই একা সময় কাটাতেন। তিনি আরও বলেন, অরুন নব লাগাতার কিছুদিন ধরে প্রায়শই একটি অচেনা নাম্বার থেকে ফোন পেতেন এবং ফোনটি রিসিভ করার পর অরুণাভ খুব চিন্তিত হয়ে পড়তেন।
অরিন্দম সেই নাম্বারটির ট্রেস করে জানতে পারেন যে, এটি একটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার। তিনি সংস্থাটির অফিসে যান এবং জানতে পারেন যে, অরুণাভ তাদের মাধ্যমে তার স্ত্রী অনন্যার উপর নজরদারি করাচ্ছিলেন। এটি শুনে অরিন্দমের মনে সন্দেহ জাগে, অনন্যার সঙ্গে অরুণাভের সম্পর্ক হয়তো তেমন একটা মধুর ছিল না।
অরিন্দম এর পরে অনন্যার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। অনন্যা প্রথমে কিছু বলতে চান না, কিন্তু পরে স্বীকার করেন যে, তাদের মধ্যে কিছুদিন ধরে মতবিরোধ চলছিল। অনন্যা আরো বলেন যে, অরুণাভ একটি বড় ব্যবসায়িক চুক্তি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন।
অরিন্দম এরপর অরুণাভের ব্যবসায়িক অংশীদার,বিক্রম সিংহের সঙ্গে দেখা করেন। বিক্রম জানান, তারা সম্প্রতি একটি বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছিলেন, কিন্তু অরুণাভ হঠাৎ করে সেই প্রকল্প থেকে সরে আসতে চেয়েছিলেন। এটি নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক হয়েছিল।
গোয়েন্দা অরিন্দম এখন বুঝতে পারেন যে,অরুণাভের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উভয় কারণই থাকতে পারে। অরিন্দম সিদ্ধান্ত নেন যে, এই রহস্যের সমাধান করতে হলে তাকে আরো গভীরে অনুসন্ধান করতে হবে।
*******
কলকাতার আকাশটা আজ যেন আরো ধোয়াটে, যেন এই শহর নিজেই একটা রহস্যকে ঢেকে রাখছে। গোয়েন্দা অরিন্দম বসু ঠিক সেই ধোয়ার মাঝেই হাঁটছেন, একটা কঠিন ধাঁধার সন্ধানে।
নিখোঁজ শিল্পপতি অরুণাভ সেন, যার হঠাৎ অন্তর্ধান আজ গোটা শহরের মিডিয়ার হেডলাইন। কিন্তু এই কেসটা অরিন্দম এর কাছে কেবল নিখোঁজ ব্যাক্তির তদন্ত নয়-- এটা যেন অরিন্দম এর কাছে তার নিজের অতীতের অদৃশ্য কোনো ছায়াকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
অরিন্দমের নিজের একটি ব্যক্তিগত নোটবুক আছে। রাতের ঘর নিঃশব্দ হলে অরিন্দম তার নোটবুক নিয়ে বসে। অরিন্দম তার পুরনো ডায়েরির পাতায় লিখছে--
"প্রতিটি কেস একটা গল্প বলে, কিন্তু এই কেসটা যেন নিজেকে লুকোতে চায়।
মিসেস অনন্যা কিছু লুকাচ্ছে, সে শুধু সত্যের অর্ধেক বলছে।
রোহিত ভয় পাচ্ছে-- কিন্তু ভয়টা কার জন্য?
বিক্রম... বিশ্বাসঘাতকতা লুকিয়ে আছে তার চোখের পেছনে।
কিন্তু সব থেকে অদ্ভুত সেই চিঠি:' সময় শেষ, প্রস্তুত হও।'
কে পাঠালো এবং কেন?"
******
সকাল ৩টা।
অরিন্দম ঘুমিয়ে পড়ার ঠিক আগেই ফোন বেজে ওঠে। অরিন্দম ফোনটা তোলে।
অরিন্দম- "হ্যালো।"
আগুন্তিক-" আপনার যদি সত্যিটা খুঁজতে ইচ্ছা হয়, তাহলে কালীঘাট শ্মশানে আসুন-- আজ রাত ৩:৪৫। একা।"
অরিন্দম- " কে আপনি?"
আগুন্তিক-" অরুণাভ সেন বেঁচে আছেন। কিন্তু আপনি যদি তাকে পেতে চান, তাহলে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। ছায়ার পেছনে হাটতে হলে আলো নিভিয়ে চলতে হয়।"
কল কেটে যায়।
*****
৩:৪৫-এ অরিন্দম পৌঁছায় কালীঘাট শ্মশানে। চারপাশে নিস্তব্ধতা। অন্ধকার, একটা মৃদু চিতার আগুন জ্বলছে। আর সেই আগুনের কাছাকাছি হঠাৎ সাদা শাড়ি পড়া এক বৃদ্ধা-- মুখটা ঢাকা, চোখ দুটো নিষ্পলক।
"অরুণাভ কোথায়?" অরিন্দম প্রশ্ন করেন।
বৃদ্ধা নিচু গলায় বলেন--
" অরুণাভ নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে এমন জায়গায় যেখানে আলো নেই, শুধু ছায়া আর ছায়া। সে পালিয়ে যায়নি, তাকে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে। আর যে বাধ্য করেছে, সে আপনার খুব চেনা একজন।"
অরিন্দম বলেন-- "কে?"
বৃদ্ধা কিছু বলে না। বৃদ্ধা শুধু একটা কাগজের টুকরো এগিয়ে দেয়--
কাগজে লেখা:
"স্বপ্ন যদি সত্য হয়, তবে বাস্তব হয়ত মিথ্যে। উত্তর খোঁজো সেই ছবির ফ্রেমে যা সব সময় দেয়ালে ছিল, কিন্তু কেউ দেখেনি।"
হঠাৎ একটা ঝড়ো বাতাসে মোমবাতি নিভে যায়। বৃদ্ধা নেই। এক মুহূর্তে অদৃশ্য।
********
অরিন্দম পরদিন সকালে আবার অরুণাভ সেন এর পার্ক স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে ফিরে যান। সেখানে অনন্যা তখন চা খাচ্ছিলেন।
অরিন্দম--" আপনি কি মনে করতে পারেন, অরুণাভ কোনো পুরনো ছবি সম্পর্কে বিশেষ যত্ন নিতেন?"
অনন্যা-- "ছবি? হ্যাঁ একটা পুরনো সাদা কালো ছবি ছিল, অরুণাভের বাবার-- কিন্তু ওটা তো বহুদিন আগেই নামিয়ে ফেলা হয়েছিল।"
অরিন্দম--"ছবিটা কোথায়?"
অনন্যা বাধ্য হয়ে একটা পুরনো ট্রাঙ্ক থেকে ছবিটা বার করে দেয়।
অরিন্দম প্রেম খুলে দেখেন-- ভিতরের কাগজের পিছনে সেলোটেপ দিয়ে আটকে রাখা ছোট একটি পেনড্রাইভ।
এটা যেন ফ্রেমের ভিতরে লুকানো ছিল বহু বছর।
পেনড্রাইভ খুলে দেখা যায়--
একটি ভিডিও ফাইল।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে:
অরুণাভ একটি গোপন কনফারেন্স রুমে, মুখে আতঙ্ক, এবং তার বিপরীতে বসে আছে তিনজন পুরুষ-- তাদের মধ্যে একজন বিক্রম সিংহ।
অরুণাভ--- " আমি এটা করবো না বিক্রম। আমি এই বেআইনি অস্ত্র চুক্তির অংশ হবো না। যেটা হচ্ছে সেটা খুনের চক্রান্ত!"
বিক্রম---" তাহলে তুমি নিজেই নিরুদ্দেশ হবে, অরুণাভ। কারণ কেউ তোমার কথা বিশ্বাস করবে না। আমরা তো বন্ধু ছিলাম, এখন গল্পের শেষ পাতা আমরা লিখবো। তুমি যদি থাকতে চাও থাকতে পারো যদি না থাকো, আমরা যদি বিপদে পড়ি। তাহলে তুমি হারিয়ে যাবে..... আজ রাতেই।"
ভিডিও বন্ধ।
অরিন্দম চোখ বন্ধ করেন। এবার তিনি জানেন, কাকে খুঁজতে হবে।
**********
সন্ধ্যায় অরিন্দম নিজের গাড়িতে বসে বাড়ি ফিরছিলেন। গাড়ির রিয়ার ভিউ মিররে হঠাৎ তিনি দেখতে পান----
একটি ছায়া, এক জোড়া চোখ-- তাকে দেখছে।
রহস্য এখনই শেষ নয়।
#চলবে.......
#অন্তর্ধান_রহস্য
#মধুমিতা_অধিকারী
#পর্ব_১
[পরবর্তী পর্বে:
বিক্রম কি সত্যিই মূল অপরাধী? অরুণাভ কোথায় বন্দী?
অনন্যা কী নির্দোষ?
আপনাদের গল্পটা কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন-- দ্বিতীয় পর্ব আরো বড়, আরো রহস্য নিয়ে হাজির হব। এই গল্পটা আপনাকে ধীরে ধীরে এক জটিল কিন্তু ভয়াবহ সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাবে। আপনাদের সবার প্রতিক্রিয়া পেলে পরের পর্ব শুরু করব। প্রথম পর্ব কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন আপনাদের সকলের প্রতিক্রিয়া আমাকে আরো অনুপ্রাণিত করে। ধন্যবাদ। ]