Video and Content Creator
স্কুলে ত্রিকোণ, চতুষ্কোণ, সমকোণ সবকিছুই পড়ানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের জীবনে সবচেয়ে উপযোগী যেটা সেটাই কখনো পড়ানো হয়নি,
সেটা হোলো "দৃষ্টিকোণ" *ShantiDan Foundation*
মদ, গাঁজা ,হেরোইন অন্যান নেশার সহয়তা কেন্দ্র এছাড়া মানসিক রোগীর চিকিৎসা করা হয় ৷
1•/ নেশার আসক্তি কি ? --------
আসক্তি একটি রোগ ৷ দীর্ঘস্থায়ী মস্তিষ্কের অসুস্থতা, যার কারণে যারা ভুক্তভোগী তারা ভয়াবহ পরিণতি হচ্
ছে তা সত্ত্বেও মাদক বা মদ গ্রহণ করে।
2•/নেশা আসক্তির চিকিৎসা---
ডায়বেটিস আর উচ্চ রক্তচাপের মতো আসক্তি এমন একটি রোগ পরিস্থিতি যা বারবার ফিরে আসে এবং এতে রোগীকে চিকিৎসা করাতে হয় এবং এমন ভাবে জীবনযাপন করতে হয় যাতে তার চিন্তা মাদক দ্রব্য থেকে সরে যায়।
বেশীরভাগ মানুষ ভাবেন যে চিকিৎসা শুরু করার কিছু দিনের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠা অতটা সহজ না যেহেতু নেশা ছাড়ার পরে “উইথড্রয়াল সিম্পটমস” (নেশা না করা ফলে বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণ) হতে পারে, নেশার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনুভব করতে পারেন এবং ব্যক্তি আবার নেশা করতে শুরু করতে পারেন। মনে রাখবেন, এটা শুধু ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করে না, আরও অনেকগুলো কারন রয়েছে যা আসক্তি মুক্ত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত, চিকিৎসা শুরু করা হয় “ডিটক্স” (বিষক্রিয়া নাশ) পদ্ধতি দিয়ে, যখন রোগী নেশা করা বন্ধ করে। এই সময় রোগী উইথড্রয়াল সিম্পটমস অনুভব করে। এই লক্ষণগুলো কম করার জন্য ডাক্তার ওষুধ দেন, যার কারনে রোগী লক্ষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আবার নেশা করার ইচ্ছে অনুভব করে না।
ডাক্তার নানা ধরনের পরীক্ষা করেন, যেমন রোগী শারীরিক ভাবে কতটা সুস্থ? তার কোনও আঘাত আছে কি? অন্যান্য পরীক্ষা যেমন ইলেক্ট্রোএন্সেফালোগ্রাফি (ইইজি) বা ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাফি (ইসিজি) করা হতে পারে।
ডিটক্স আর পরীক্ষার পরে ব্যক্তির কাউন্সেলিং বা থেরাপি করা হয় যার মূল উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিকে নিজের স্বভাব পরিবর্তন করার প্রতি উৎসাহিত করা। কাউন্সেলার বোঝার চেষ্টা করেন যে ব্যক্তি কেন নেশা করেন, নেশা করার খারাপ ফলের বিষয়ে জানান এবং উনি নেশা করা বন্ধ করতে চান কি না, সেই বিষয়ে ওনাকে মনঃস্থির করতে সাহায্য করেন। যদি ব্যক্তি নেশা ছাড়তে চান, তাহলে কাউন্সেলার জানার চেষ্টা করেন যে উনি কি কি ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা করছেন, যেমন উইথড্রয়াল সিম্পটমস, সেগুলোর সাথে কীভাবে মোকাবিলা করবেন, যদি কেউ ওনাকে মাদক বা মদ খাওয়ার জন্য আমন্ত্রন জানায় তাহলে উনি কি করবেন। কাউন্সেলর রোগীকে তার আবেগ জনিত তাড়না বুঝতে সাহায্য করেন, যেমন হয়ত রোগী কিছু আবেগ জনিত সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নেশা করছেন।
রোগীকে তারপরে জানানো হয় তিনি কীভাবে নেশা করার ইচ্ছেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন – সেই সময় প্রতিকারের ধরন, আর পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সাহায্য চাওয়ার বিষয়ে। রোগীকে বলা হয় তিনি যেন পরের এপোয়েন্টমেন্টগুলিতে উপস্থিত থাকেন যা পরিবারের সাথে এবং দলভিত্তিক ভাবে হয়, এবং আবার নেশা শুরু করার ইচ্ছেকে দমন করার জন্য দেওয়া ওষুধগুলো নিয়মিতভাবে খেতে থাকেন।
3• / লক্ষণগুলি চিনতে শিখুন...
নাটকীয় বা হিংসাত্মক আচরণ করা অবধি অপেক্ষা করবেন না,
•>> কখনো একা একা অধিক সময় কাটানো এবং বন্ধু পরিবর্তন
•>> পড়াশুনায়,খেলাধুলায় ও কাজে অমনোযোগী হওয়া, ক্লাস ও কাজে ফাঁকি দেওয়া ও কিছু নতুন বন্ধুর সাথে বেশী মেলামেশা করা।
•>> সর্বদা ঘুম ঘুম ভাব, ঝিমুনী, নিস্তেজ ভাব।
•>> রাত জাগা, গভীর রাতে ঘুমাতে যাওয়া, দিনের বেলা দেরীতে ঘুম থেকে ওঠা।
•>> চেহারার লাবণ্য নষ্ট হওয়া বা চোখের নিচে কালি পড়া।
•>> কথা বার্তা জড়িয়ে যাওয়া।
•>> খিটখিটে মেজাজ, হঠাৎ আক্রমনাত্মক বা বেপরোয়া হওয়া ও অল্পতে রেগে যাওয়া।
•>> হঠাৎ খরচ বেড়ে যাওয়া, টাকার জন্য অরাজকতা সৃষ্টি করা/ঘরের জিনিস পত্র ভাংচুর করা, যখন তখন টাকা ধার চাওয়া, অতি বিনয় দেখানো, ক্রমাগত মিথ্যা বলা ও চুরি করা।
•>> সারাক্ষণ ছটফটানি, চরম অস্থিরতা প্রকাশ করা।
•>> পোষাক পরিচ্ছেদ অমনযোগী, নোংরা অপরিস্কার থাকা এবং চরম নিয়ামানুবর্তিতার অভাব।
•>> বাড়ীর বিভিন্ন জায়গায় পোড়া কাগজ, ব্লেড, সিরিঞ্জ, মোমবাতি ও ম্যাচের কাঠি পাওয়া।
•>> হঠাৎ নাক চোখ দিয়ে পানি ঝড়া, ঘনঘন নাক চুলকানো, একা একা থাকার প্রবণতা এবং জ্বর জ্বর ভাব।
4•/পুনর্বাসন জরুরী কেন?-------
আসক্তি একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং বারবার ফিরে আসা সমস্যা। যখন একজন ব্যক্তি নেশা করেন, মাদক দ্রব্যের প্রভাবে তার ব্রেনের সেই অংশগুলো প্রভাবিত হয় যা নির্ণয় ক্ষমতাকে সঞ্চালন করে। ওষুধের ব্যবহারে ব্যক্তি নেশা করার প্রবল ইচ্ছে আর উইথড্রয়াল সিম্পটমসকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে। তবে, শুধু নেশা করা সাময়িকভাবে ছেড়ে দেওয়া যথেষ্ট নয়, ব্যক্তি যেন আর সারাজীবন নেশা না করেন সেই জন্য পুনর্বাসন খুবই জরুরী।
পুনর্বাসনের মাধ্যমে ব্যক্তি সেইসব পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করতে শেখেন যার কারনে তিনি নেশার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রিত করতে শেখানো হয়। এই চাপ আন্তরিক হতে পারে, যেমন আবেগ জনিত সমস্যা জাত জন্য ব্যক্তি মদ, সিগারেট বা ড্রাগ্স নিতে শুরু করেন, বা পারিপার্শ্বিক হতে পারে, যেমন অন্যদের সাথে, সামাজিক বা কাজ সংক্রান্ত সমস্যা।
নেশার জন্য অন্য অনেক ধরনের সমস্যা হয় যেমন নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া, পড়াশুনা বা কাজে ফাঁকি দেওয়া, মানসিক চাপ, কলঙ্কবোধ এবং চিন্তা। তাছাড়া, নিজের টাকা-পয়সা ঠিকভাবে সামলাতে না পারা, জুয়া খেলা, একঘেয়ে লাগা, জীবনে দিশা খুঁজে না পাওয়ার কারনেও ব্যক্তি আবার নেশা করতে শুরু করতে পারে।
পুনর্বাসনের উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিকে এমন কিছু অস্ত্র দেওয়া যাতে সে এইধরনের সমস্যা আর পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করতে পারে এবং একটি নতুন জীবনশৈলীর সূচনা করতে পারে যেখানে নেশা করা কোনও সমস্যার সমাধান নয়।
5•/আসক্তিকে ঘিরে ভুল ধারণা আর বাস্তব-----
ভুল ধারণা – নেশা ছেড়ে দেওয়া আর এমন কি বড় ব্যাপার। না করলেই তো হল।
বাঃ ছেড়ে দেওয়া তো খুব সহজ, কিন্তু ওর মধ্যে সেই মনের জোরটাই নেই।
বাস্তব – অনেকেই মনে করেন যে ইচ্ছে করলেই নেশা করা বন্ধ করে দেওয়া যায়। কিন্তু আসক্তি শুধু ইচ্ছাশক্তির জোরে ছেড়ে দেওয়া যায় না। যখন একজন ব্যক্তি নেশা করতে শুরু করেন, তার ব্রেনের সেই অংশটি প্রভাবিত হয় যা আমাদের নির্ণয় নেওয়ার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর তাই নেশা করব না, এই কথাটা বলা সহজ হয় না। হয়ত নেশা করবেন না এমন ভাবছেন কিন্তু যেই নেশা করার ইচ্ছে প্রবল হতে শুরু করবে বা উইথড্রয়াল সিম্পটমস দেখা দেবে, তখনই আবার নেশা করে ফেলবেন। নেশা ছাড়ার জন্য ব্যক্তির অনেক বেশী সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই জন্যই সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি হল পুনবাসন পদ্ধতি ৷