30/06/2025
সুলতানা পারভীনের মৃত্যু: প্রেমের নামে প্রতারণা, পিতৃতন্ত্রের বিজয়, এবং আমাদের লজ্জার গল্প
সুলতানা পারভীন। নামটি এখন কেবল একটা লাশের সাথে জড়িয়ে আছে। পূর্ব বর্ধমানের কুরমুনা চন্দনপুরের মেয়েটি, যে স্বপ্ন দেখেছিল স্বাধীনভাবে ভালোবাসার। যে মেয়েটি পরিবারকে না জানিয়ে ভিন্ন ধর্মের প্রীতম নন্দীর সাথে বিয়ে করেছিল। মাত্র ৮ মাস! এত অল্প সময়েই বুঝতে পেরেছিলেন, এই ‘ভালোবাসা’ ছিল আসলে এক নিছক ফাঁদ।
যখন সুলতানা বুঝলেন, শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার তাকে শেষ করে দিচ্ছে, তখন ফোন করেছিলেন —
“বাবা, আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে চলো!”
কিন্তু যখন তার বাবা-মা ছুটে গেলেন, তাদের গাড়ি ভাঙা হলো, তাদের পিটিয়ে বের করে দেওয়া হলো। এবং পরের দিনই — সুলতানা ঝুলন্ত অবস্থায়, এক ‘আত্মহত্যার’ নাটকে পরিণত।
না, এটা আত্মহত্যা নয়। এটা ঠান্ডা মাথার হত্যা। নারীর স্বাধীন ইচ্ছাকে, তার জীবনকে, তার অধিকারকে হত্যা। এটা সেই সমাজের নগ্ন চেহারা, যেখানে মেয়েদের ভালোবাসা, জীবন, আত্মমর্যাদা — সবই পিতৃতান্ত্রিক প্রভাব এবং ধর্মীয় আধিপত্যের কাছে তুচ্ছ।
👉 প্রশ্ন তুলুন — যদি ছেলেটি মুসলিম হতো, মেয়েটি হিন্দু হতো, তখন?
তখন মিডিয়া চিৎকার করত, “লাভ জিহাদ! ইসলামিক ষড়যন্ত্র!”
দিনরাত চলে ‘ডিবেট শো’, জ্বলে উঠত সোশ্যাল মিডিয়া, ব্রেকিং নিউজ চলত অবিরাম।
কিন্তু সুলতানা? সুলতানার জন্য কোনও প্রতিবাদ নেই। কোনও মানবাধিকার মঞ্চে শোরগোল নেই। কেন?
কারণ সে মুসলিম মেয়ে, হত্যাকারীরা ‘সংখ্যালঘু’র বিপরীতে ‘প্রধানধারার’ প্রতিনিধি। তাই সব চুপ। তাই সব নিস্তব্ধ।
⚖️ এই নীরবতা কি কম অপরাধ? এই চুপ করে থাকা কি হত্যাকারীদের পক্ষ নেওয়ার নামান্তর নয়?
কীভাবে সমাজে এখনও এমন ‘প্রেমের ফাঁদ’ চলে, যেখানে একটি মেয়েকে শুধু ‘জিতের টোকেন’ হিসেবে দেখা হয়? কীভাবে ‘মুক্তি’ চাওয়ার অপরাধে তাকে প্রাণ দিতে হয়?
যারা প্রতিদিন “ফ্রিজ”, “লাভ জিহাদ” বলে চিৎকার করেন — এবার কি বলবেন?
যারা নারী স্বাধীনতার বড় বড় বুলি আওড়ান, তাদের কণ্ঠ কোথায়?
যারা “সেইফ ইন্ডিয়া” লিখে মিছিল করেন, তারা এবার কোথায়?
আমরা চাই —
🔥 সুলতানার খুনের পূর্ণ তদন্ত।
🔥 অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি।
🔥 মিডিয়ার নীরবতার বিরুদ্ধে আন্দোলন।
🔥 মেয়েদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে গণআন্দোলন।
এই লড়াই শুধু সুলতানার জন্য নয়। এটা প্রতিটি মেয়ের জন্য, যারা ‘ভালোবাসা’ নামে ফাঁদে পড়ছে, যারা এখনও প্রতিদিন পিতৃতন্ত্রের কাছে হেরে যাচ্ছে।
আজ আমরা যদি চুপ থাকি, আগামীকাল আরও সুলতানা পারভীন মরবে।
আমাদের চুপ থাকা মানে হত্যাকারীদের উৎসাহ দেওয়া।
যদি সত্যিই আমরা ন্যায়বিচার চাই, যদি সত্যিই আমরা নারী স্বাধীনতা চাই — আজই সোচ্চার হতে হবে।
কোন ধর্মের পক্ষপাতিত্ব করতেছি না মানুষ হয়ে মানুষের বিচার চাচ্ছি!