04/07/2025
"চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা!" – এই গল্পটা শুধু এক যুবকের নয়, এটা একটা সময়ের আয়না
ভাবুন তো—আপনার পাড়ার সেই ছেলেটা, যাকে ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছেন।
যার বাড়ির ছাদে স্বাধীনতা দিবসে পতাকা ওড়ে, যার মা বাজারে গিয়ে গর্ব করে বলেন, “আমার ছেলে এখন পুলিশ!”
সে রোজ সকালে চকচকে বুট পায়ে, কলাপাতার মতো ইস্ত্রি করা ইউনিফর্ম পরে বেরিয়ে পড়ে ডিউটিতে।
আর আমরা?
আমরা তাকিয়ে দেখি, ফোনে ক্যামেরা জুম করে ছবি তুলি, ইনস্টাগ্রামে ফলো দিই, কমেন্টে লিখি “Proud of you bro”।
কিন্তু সিনেমার মতো টুইস্ট আসতে তো একটুও দেরি হয় না...
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার শিমুলপুর চৌরঙ্গী গ্রামের সেই হিরো, অঙ্কিত ঘোষ—যাকে সকলে জানত ‘সল্টলেক বিকাশ ভবনের কনস্টেবল’ হিসেবে,
সে আদৌ পুলিশই না!
ভুল শুনছেন না।
সে ‘চাকরি পেয়েছে’ গল্পটা বানিয়ে গিয়েছিল, শুধু সমাজের মুখে লজ্জা এড়াতে।
আর সেই এক মিথ্যেকে ঢাকতে ঢাকতেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল এক আস্ত নাটক—কস্টিউম, সেট, স্ক্রিপ্ট—সব রেডি!
প্রথমে গাঁটের কড়ি খরচ করে বানিয়েছিল পুলিশের পোশাক।
তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় উর্দি পরা ছবি, বুক ফুলিয়ে দাঁড়ানো পোজ, ব্যাকগ্রাউন্ডে সরকারি দপ্তরের বিল্ডিং...
কে বলবে সে ‘নকল’?
আমরাও তো তাকেই ‘হিরো’ বানিয়ে ফেলি!
তবে বাস্তবের পুলিশ তো সিনেমার পুলিশ না—সোজাসাপটা মাথা নোয়ায় না।
তারা তদন্ত শুরু করতেই, খুলে গেল সব কাঁচের দেওয়াল।
‘বিকাশ ভবনে তার পোস্টিং’?
নথিপত্রে এমন কোনো কনস্টেবল নেই!
সেই মঙ্গলবার সকালে
যখন সে প্রস্তুত হচ্ছিল নিজের তৈরি করা জাল চাকরির “আরেকটা দিন” কাটাতে,
ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ল আসল পুলিশ।
“আপনার আইডি কার্ড?”
সেই একটা প্রশ্নেই যেন সব ছিন্নভিন্ন।
মুখে ঘাম, চোখে ভয়।
সেই বুক চিতানো আত্মবিশ্বাস তখন ছাই হয়ে উড়ে যায় হাওয়ায়।
বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় সারি সারি নকল পোশাক, ব্যাজ, নামপ্লেট, এমনকি পুলিশি নোটবইও!
এ যেন এক আস্ত থিয়েটার, যার হিরো নিজেই ভুলে গিয়েছিল সে অভিনয় করছে।
অঙ্কিত পুলিশের পরীক্ষায় ফেল করেছিল।
তবু সমাজের চোখে নিজেকে সফল প্রমাণ করতে গিয়ে বেছে নিয়েছিল অভিনয়।
একটা "সত্যির মুখোশ" পরে, সে বাঁচছিল—শুধু চোখে চোখ রাখতে না পারার ভয়ে।
---
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে,
এই অভিনয় কি শুধু তার একার ছিল?
না।
আজকের সমাজ নিজেই তো চায় “দেখাতে হবে”, “লাইক চাই”, “প্রতিবেশীর থেকে ভালো কিছু করতে হবে।”
পেছনে পরিশ্রম না থাকলে কি এসে যায়?
ছবি তোল, ক্যাপশন দাও, হিরো হয়ে যাও।
আর ধরা পড়ে গেলে?
তুমি আর মানুষ নও, ভাইরাল কন্টেন্ট!
তোমাকে নিয়ে মিম হবে, শেয়ার হবে, হাসাহাসি হবে।
---
ভাবুন,
যদি অঙ্কিত সেই সাহসটা নিজের ভুল থেকে না পালিয়ে,
নিজেকে গড়ে তোলার পিছনে দিত,
তাহলে হয়তো আজ অসীম শ্রদ্ধা পেত ‘অভিনয়’ করে নয়, নিজের লড়াই জিতে।
এ গল্পটা শুধু অঙ্কিতের নয়,
এটা আমাদের সবার জন্য আয়না—
যেখানে মুখোশ পরে দাঁড়ালে একদিন চেহারাটাই হারিয়ে যায়।
👉 তাই যারা এখনো যুদ্ধ করছেন জীবনের সঙ্গে—
মিথ্যে নয়, নিজের পরিশ্রমের উপরে বিশ্বাস রাখুন।
লাইকের জগত আপনাকে নয়, আপনার সাফল্যকে চায়।
আর আপনি আসল হলে, দেরি হলেও জয় একদিন হবেই।
📢 এই গল্প সবাইকে শোনান, জানুন—সমাজে হিরো হওয়া যতটা সহজ,
মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা তার চেয়েও বেশি কঠিন!
---
তুমি অভিনয় করলে ভাইরাল হবে,
কিন্তু সত্যি হয়ে উঠলে ইতিহাস হবে।
💔👮🏻♂️