Santiniketan Sahityapath শান্তিনিকেতন সাহিত্যপথ

  • Home
  • India
  • Bolpur
  • Santiniketan Sahityapath শান্তিনিকেতন সাহিত্যপথ

শান্তিনিকেতন সাহিত্যপথ ফেসবুক পেজে রচনাপ্রকাশের নিয়মাবলি:
১। কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনি, ফিচার, প্রবন্ধ, সাহিত্য-সংস্কৃতিক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার ইত্যাদি ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়।
২। অভ্র কীবোর্ডে টাইপ করে লেখা পাঠাতে হবে।
৩। লেখা পাঠাবেন [email protected] এ।
৪। লেখার সঙ্গে নিজের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং পাশপোর্ট ছবি যুক্ত করবেন।
৫। লেখা মনোনীত হলে সর্বাধিক তিন মাস সময়কালের

মধ্যে লেখা প্রকাশ করা হয়।
৬। কোনো প্রকার রাজনৈতিক লেখা অথবা ব্যক্তিগত আক্রমণমূলক লেখা সাহিত্যপথ ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয় না।
৭। ভারতবর্ষের চিরন্তন ঐতিহ্যমূলক রচনাপ্রকাশ করা সাহিত্যপথ ফেসবুক পেজের বৈশিষ্ট্য।
৮। তরুণ সাহিত্যিকদের রচনাপ্রকাশে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
৯। অন্যত্র প্রকাশিত রচনা এই ফেসবুক পেজে পুনরায় প্রকাশ করা হয় না।

কবিতা — 📒  #প্রতিবাদ✍ #গোবিন্দকুমার মণ্ডল      প্রতিবাদ করা যেত   প্রতিবাদ করার কথা ছিল একদিন    সেদিন প্রতিবাদের জায়গা...
14/10/2025

কবিতা —
📒 #প্রতিবাদ
✍ #গোবিন্দকুমার মণ্ডল

প্রতিবাদ করা যেত
প্রতিবাদ করার কথা ছিল একদিন
সেদিন প্রতিবাদের জায়গা ছিল
কিন্তু কোথায়, কার কাছে প্রতিবাদ করি
অস্থির মনে জোর পাই কোথায় ?

কিছু প্রতিবাদী মুখ জোগাড় করতে হবে
তাদের হাতে তুলে দিতে হবে অস্ত্র
কাস্তে হাতুড়ির সাথে কলম চাই, কাস্ত্রো
প্রতিবাদের ভাষা মুখস্ত করাতে হবে তোতাপাখির মতো ,
শিক্ষা বলতে কিছুই নেই ওদের
লোভ, লালসা,আর স্বার্থে জারিত সব
সার দিয়ে দাঁড়াতে জানে না, দলবদ্ধ করতে হবে।

প্রতিবাদ করা যেত
শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী মানুষগুলো সেদিন সাথে ছিল
আজ সব বিক্রিত, হিম ঘরে চলে গেছে ।

কিন্তু তবুও, প্রতিবাদ হবেই
দেওয়ালে পিঠ ঠেকা তরুণের রক্তে আগুন লেগেছে,
সে আগুন দাবানলের মতো ছড়াবে — আপামরে
পুড়ে খাক হয়ে যাবে ক্লেদাক্ত পৃথিবী ।

নবারুণের আলোয়
আবার ধরিত্রীগর্ভে অঙ্কুরিত হবে নতুন বীজ ।
_______________________________________
*পেজটি #ফলো এবং #লাইক করার জন্য পাঠকবন্ধুদের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।

📒 #বিজয়ার চিঠি    ✍ #মৌসুমী দত্তরায়  প্রিয় বন্ধু, প্রথমেই জানাই শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা, ভালোবাসা আর বড়োদের জন্য রইল প্রণা...
12/10/2025

📒 #বিজয়ার চিঠি
✍ #মৌসুমী দত্তরায়

প্রিয় বন্ধু,
প্রথমেই জানাই শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা, ভালোবাসা আর বড়োদের জন্য রইল প্রণাম। ভালো থেক, সুস্থ থেক।

অনেকদিন চিঠি লেখা হয়নি, অথচ চিঠির এক মায়া আছে। রোদ্দুরের চিঠি হাঁপাতে হাঁপাতে ঝড় জলে কাক ভিজে হয়ে পৌঁছায়। বিজয়ার চিঠি, লক্ষী পুজো পেরিয়ে, কালীপুজোর দোরগোড়ায়। তবুও সে চিঠিতে থাকে মায়াভরা ভালোবাসা।
আমার এই চিঠি, শুরু করেছি কদিন আগে, বিজয়ার আগেই, আর এখন সুবিধে মতন দিন বদল করে যাচ্ছি। আশা রাখি আজ ইতি টানতে পারবই।

এখন উৎসবের দিন। দুর্গা পুজো শেষের পর্ব পেরিয়ে আগামী কোজাগরি পূর্ণিমায় লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে আজকের পরেই। সকালে বিসর্জনের শাঁখ বেজেছে, দর্পণ বিসর্জন থেকে শুরু করে, বরণ, সিঁদুর খেলা শেষে, বৃষ্টি মাথায় করেও অনেক মণ্ডপ ও বাড়ির ঠাকুর বিসর্জন হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে অপেক্ষার, আগামী বছরের জন্য। কলকাতা এখনো পুরো দমে মেতে আছে পাগল করা উৎসবে। দিন রাত একাকার, মানুষের ঢল রাজপথে, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। আলোতে আলোকময়, গানে বাজনায়, অনুষ্ঠানে মুখর। মানুষের সুখ, গরম দুধের মতন উথলে পড়ছে। কিন্তু আমি দূরে, অনেক দূরে। অন্য উৎসবে।

আমি এখন আরবানাতে। এই ইউনিভার্সিটি শহরটি আমেরিকার ইলিনয় রাজ্যে। সব থেকে বড়ো শহর শিকাগো থেকে গাড়িতে আড়াই ঘণ্টা দূরে। আমি এখন যে বাড়িতে আছি তার কথা অন্য একদিন বলব।

আজ ২ অক্টোবর, শরৎ বিষুব (Autumnal Equinox), পেরিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে সূর্যের অবস্থান যেখানে, সেই অনুযায়ী এখন দিনের আয়ু কমতে শুরু করেছে, আর রাতের ভাগ বেড়েছে। আবার ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে দিন বাড়বে। আমার বাড়ির সামনের রাস্তাটি কোবেল স্টোনের (cobble stone) আর দুধারে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন গাছের সারি, সময়ের সঙ্গে ফিসফিস করে, শরৎ এসে পড়েছে একটি জীবন্ত পোস্টকার্ডের মতো। যেন কোনো পুরোনো বইয়ের পাতা বা ইম্প্রেশনিস্ট এর পেইন্টিং থেকে উঠে এসেছে। সবে রং ধরতে শুরু করেছে। আলতো রঙেরই ছোঁয়া এদিকে ওদিকে ছিটিয়ে। কদিন বাদেই লাল, হলুদ, কমলা, আর সোনালি পাতার মেলা, ওক, ম্যাপল, আর বার্চ গাছের শাখায় শাখায় নেচে উঠবে। এমিলি ডিকিনসনের কথায় কবিতায়,
“The morns are meeker than they were, / The nuts are getting brown; / The berry’s cheek is plumper, / The rose is out of town.”

গতকাল আমার ছোট্টো বন্ধু তাইতাইয়ের সঙ্গে ফোনে গল্প করছিলা। তখন সে বলল, "আমার তো স্কুল কাল ছুটি, কাল ইয়োম কিপুর, কাল সবাই ফরগিভনেস চাইবে!"

ম্যানহাটানে, আমি যে পাড়াতে থাকি লিংকন স্কোয়ার, সেখানে ইহুদিরা (Jews) সংখ্যা গরিষ্ঠই বলা যায়, তাই তাদের নানান অনুষ্ঠানের সাথে কিছুটা আলাপ পরিচয় আছে। আজ, ২ অক্টোবর ২০২৫, ইহুদি উৎসবের 'ডেজ অফ অ' (Days of Awe) এর সমাপ্তি ঘটছে ইয়োম কিপুরে (A Day of Atonement), যার শুরু হয়েছিল, রোশ হাশানাহ থেকে। রোশ হাশানাহ, ইহুদিদের নতুন বছরের উৎসব, ২০২৫ সালে ২২ সেপ্টেম্বর সূর্যাস্ত থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর রাত্রি পর্যন্ত পালন করা হয়েছে। আমাদের নতুন বছরের উৎসবের মতন এদেরও একইরকম। পুরোনো বছরকে পিছু ফিরে দেখা আর নতুন বছরের জন্য প্রার্থনা, শুভ কামনা, নতুন আশা ভাবনা শুরু। নতুন শুরুর প্রতীক হিসেবে শোফার (Shofar horn) (রাম ছাগলের শিং দিয়ে বানানো শিঙা) বাজানো হয়। ঠিক যেন আমাদের শাঁখ বাজানোর মতন। ওরা আপেল-মধু খেয়ে এবং তাশলিখ (Tashlich) অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে। হিব্রু শব্দ "তাশলিখ' এর অর্থ 'নিক্ষেপ করা' বা 'ছুঁড়ে ফেলা', জীবনযাপনের যা কিছু অশুভ, খারাপ, পাপ বা অপরাধগুলিকে জীবন থেকে সরিয়ে ফেলার অঙ্গীকার। প্রতীক হিসেবে ছোটো ছোটো রুটির টুকরো, "মন্ত্র" উচ্চারণের সঙ্গে সমুদ্রে, নদীতে বা কোনো জলাশয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হয়। রুটির টুকরোগুলোই পাপ বা অশুভর প্রতীক। নিজের মনেই নিজের প্রতিফলনকে অনুভব করতে হয়। এই আচার নিয়ম রোশ হাশানাহর প্রথম দিনের দুপুরে পালন করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো তেশুবাহ (Teshubah) (প্রায়শ্চিত্ত) এবং নতুন বছরের জন্য আত্মশুদ্ধির প্রস্তুতি।
এখানে কোথাও যেন আমাদের মহালয়ার তর্পণের সঙ্গে এক সুরে মিলে যায় এই রোশ হাশানাহ, তাশলিখ আর তেশুবাহ। শাঁখের আওয়াজে শোফার এর সুর। আমাদের মহালয়া এবারে ছিল ২১ সেপ্টেম্বর, আর রোশ হাশানাহ ২২-২৪ সেপ্টেম্বর পালন করা হয়েছে। তার সঙ্গে তাশলিখও সেই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, ইয়োম কিপুরের (২ অক্টোবর) আগের 'আশ্চর্যের দশ দিন', The Days of Awe। আর মহালয়া থেকে বিজয়া দশমী, আক্ষরিক অর্থেই আমাদের "The Days of Awe"। এসব ভাবতে ভাবতেই Whatsappএ ভেসে আসে অবাঙালি বন্ধুর দশেরার শুভ কামনা।

নভরাত্রির শেষে, দশ দিনের দিন দশেরা। দশেরায় রাবণের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর মধ্যে দিয়ে যে দশটি খারাপ গুণকে ধ্বংস করা হয়, তা হলো: কাম (Lust): কামনা বা অতিরিক্ত বাসনা। ক্রোধ (Anger): রাগ বা হিংসা। লোভ (Greed): কোনো কিছুর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত লোভ মোহ, (Delusion): মায়া বা বিভ্রম।মদ (Pride): অহংকার বা গর্ব। মাৎসর্য (Envy): ঈর্ষা বা পরশ্রীকাতরতা, মনস (Mind): মনের অস্থিরতা। বুদ্ধি (Intellect): জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তা খারাপ কাজে ব্যবহার করা, চিত্ত (Will): খারাপ ইচ্ছাশক্তি, আর অহংকার (Ego): আত্মগর্ব বা নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা। এখানেও রাবণের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোটাও পুরোপুরি প্রতীকী। আমাদের যা কিছু খারাপ, তা পুড়ে ছাই হয়ে যাক আর সেই আগুনের মধ্যে দিয়েই যেন আমাদের আত্মশুদ্ধি হয়।

আমরা রাজনীতির বেড়া তৈরি করে মানুষে মানুষে যতই বৈরিতা তৈরি করি না কেন, আসলে দুর্গা পুজো আর নবরাত্রি একই গল্প বলে, যা কিছু অশুভ, যা কিছু পাপ, যা কিছু ক্ষতিকর, মাতৃশক্তির দ্বারা বিনাশ করা। এই উৎসব বিজয় উৎসব, আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে জীবনকে সুন্দর করে তোলার আয়োজন।

দশেরার মহত্ত্ব কী? শেখায়, জীবনে যদি কোনো রাবণ-মহিষাসুর আসে, যেমন অহংকার, ভয় বা অন্যায় – তাহলে ধৈর্য, সত্য আর শক্তি দিয়ে তাকে জয় করো। বাংলায় দুর্গাপূজা, গুজরাতে বা উত্তর ভারতে নবরাত্রি থেকে দশেরা, দক্ষিণে গোলু বা কোলু, দশেরা, আয়ুধা (আমাদের বাঙালির বিশ্বকর্মা পুজো), উত্তরপূর্বে বিহু, সব জায়গায় এই নানান উৎসব আলো ছড়ায়। নতুন ফসলও ঘরে ওঠার সময়, তাই চাই নতুন জামা, নানারকমের খাবার, নতুন সাজে ঘরদোর সাজিয়ে তোলা, আর আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে কিছু সুন্দর সময় কাটানো।

আর আমার কাছে এখানের শরৎ কাল একটি কবিতার পোস্টকার্ড। প্রকৃতি আর মানুষের জীবনে রং মাখানো নরম রোদের পশম।

প্রিয় লেখক Ray Bradbury র Farewell Summer এ সেই সন্ধিক্ষণের কথা বলেছেন, "Learning to let go should be learned before learning to get. Life should be touched, not strangled."

শরতের দিন আর রাতের মাঝে এক অন্য উৎসব। সূর্যের আলো আর পৃথিবীর অক্ষ দূরে দূরে সরে যায়, এ জীবনে সবকিছুই এই পরিবর্তনের পথে, তবু এই মুহূর্তটুকুই ধরে রাখার প্রয়াস। পাথরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে শুকনো পাতার মচমচে শব্দ কানে আসছে। বাতাসে ভেসে আসে চড়ুই, রবিন, আর কার্ডিনালের কিচিরমিচির।

এই শহরে, ইউনিভার্সিটির পুরোনো ইটের বাড়িগুলোর মাঝে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের স্বপ্ন নিয়ে ব্যস্ত। মাটিতে ছোটো ছোটো মাশরুম মাথা তুলছে, যেন রাতের নীরবতায় তারা গোপনে জেগে উঠেছে। পিঁপড়ের সারি, তাদের ছোট্ট ছোট্ট পায়ে পায়ে অদম্য শৃঙ্খলতা বজায় রেখে শুকনো পাতা আর ঝরে পড়া ফুলের পাপড়ির মাঝে খাবারের সন্ধানে চলেছে। মৌমাছি আর প্রজাপতির দল, তাদের গুঞ্জনে শরতের শেষ ফুলগুলোর মধু সংগ্রহ করে নিচ্ছে ভায়োলেট কোনফ্লাওয়ার আর ব্ল্যাক-আইড সুসানের মাঝে ঘুরে ঘুরে। ড্যান্ডেলিয়নের হলুদ ফুল, যেগুলো কিছুদিন আগে সূর্যের মতো জ্বলজ্বল করছিল, এখন স্নোফ্লেকের মতো সাদা হয়ে বাতাসে ভেসে যাচ্ছে। একটি মোনার্ক প্রজাপতি, তার কমলা-কালো ডানায় শরতের রোদের ছোঁয়া নিয়ে, ফুলের উপর নাচছে। গোলাপের পাপড়ি মাটিতে ঝরে পড়েছে, একটি বিষণ্ণ সুন্দর মৌনমুখরতা।
নদীর ধারে রিভার ওটস-এর {River Oats) সারির পাশে, ঝোপের আড়ালে তিনখানা হরিণ লুকোচুরি খেলছে।

অল্প কিছু দূরে, গাছের ফাঁক দিয়ে যেখানে রোদ্দুর চিকিমিকি, কাঠবিড়ালিরা, তাদের লেজ নাচিয়ে, অ্যাকর্ন আর শুকনো ফল দুহাতে ধরে লেজ তুলে কুড়মড় করে খেয়ে চলেছে।

ঘরের কোণে একটা পুরোনো কাঠের টেবিলে রাখা আছে আপেল, নাশপাতি, আর কয়েকটা কুড়িয়ে আনা অ্যাকর্ন, ঠিক যেন কোনো পুরোনো ইম্প্রেশনিস্ট এর মডেল। কিছুক্ষণ পরে এসে তুলিতে রঙ নিয়ে শুরু করবে তাঁর আঁকার কাজ। টেবিলের পাশে জানালা দিয়ে কিচেন থেকে ভেসে আসছে ওভেনে বেক হওয়া আপেল পাইয়ের মিষ্টি গন্ধ। শরতের নরম ঠাণ্ডা হাওয়া আর শুকনো পাতার গন্ধ সঙ্গে মিশে এই অযত্নময় জীবনেও একটি নিখুঁত ছবি তৈরি করছে।

জন কিটস থাকলে বলে উঠতেন, “Season of mists and mellow fruitfulness, / Close bosom-friend of the maturing sun,”

শরতের এই সময় ঠিক একখানা বিজয়ার চিঠি, যেখানে সবাই নিজেদের একটা করে গল্প বুনে চলেছে। ছোটো, বড়ো, মাঝারি। আসলে তো, সবই আপেক্ষিক।

শরৎকাল, প্রকৃতির এক অপূর্ব রূপান্তরের সময়। শরৎ হয়ে ওঠে বিশ্বের সকল সংস্কৃতির উৎসবের ঋতু। যে ফসল ফলিয়েছে কৃষক, সেই শ্রমের পুরস্কার পাওয়ার সময় এই শরৎকাল। সেই কবেকার প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ফসল কাটার পর ধন্যবাদ জানিয়েছে দেবতা বা প্রকৃতিকে। আমাদের দুর্গা পূজাও এই উৎসবগুলোতে খাবার, নাচ-গান, আলোকসজ্জা এবং পরিবারের সবার সাথে এক সাথে আনন্দ ভাগ করে নেবার মতো সময়।

অথচ এই নিস্তব্ধ নিসর্গ সৌন্দর্যের পেছনে, দূরে, একটি অস্থির পৃথিবী জেগে আছে। যুদ্ধের আগুন চারদিকে জ্বলছে, খেতে না পেয়ে শিশুরা মারা যাচ্ছে, সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। চারপাশে চলেছে আনন্দ, দান, ত্যাগের উৎসব কিন্তু সেই উৎসবের যা মোক্ষ তা হারিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে গেছে। আলোর পেছনের অন্ধকার, হাহাকার কষ্ট, দুঃখ, খিদে, অসুখ বেড়েই চলে।
আলোর সামনের উন্মাদনায় তাদের চোখে পড়ে না স্বাস্থ্যসেবার ব্যর্থতা, রুগ্ন শিক্ষা ব্যবস্থা, আর দু'বেলা খাবার জোগাড়ের লড়াই। — এই সবই যেন এই পোস্টকার্ডের পিছনের অদেখা দিক।

তবু, এই শরতের গড়ানো দিনে, পাথরের রাস্তার পাশে বেঞ্চে বসে একজন ছাত্র বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। তার পাশে একটি প্রাচীন ম্যাপল গাছ, যার পাতাগুলো ধীরে ধীরে মাটিতে ঝরে পড়ছে। দূরে, ক্যাম্পাসের ঘণ্টা বেজে উঠল। সকালের কুয়াশা গাছের ডালে এখন অলস ভাবে ঝুলে আছে। আর আশা আর ভরসা হাত ধরে এখানে মনে কিছুটা আরাম আনে।

এই শহরে, যেখানে প্রকৃতি আর মানুষের জীবন পাশাপাশি মিলে আছে সেখানে টুপ করে, শরৎ এসেছে, বিজয়ার দিনে মন কেমন, অদ্ভুত স্মৃতি মেদুরতা।

উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতায়, “To me the meanest flower that blows can give / Thoughts that do often lie too deep for tears.”

সুন্দরের মাঝে, উৎসবের দিনে হাজারো লুকিয়ে চোখের জল, অসহায়তা — যারা এই শরতের নীরবতায়, জীবনের লড়াইয়ে, তবু বেঁচে থাকার গান গায়।

সবাই ভালো থেকো। আনন্দে থেকো। পাশের মানুষটির খোঁজ রেখো।
ভালোবাসা আর ভালো আশা সব সময়।

ইতি
শুভেচ্ছান্তে মৌসুমী
______________________________________
*মৌসুমী দত্তরায় গত তিন দশক ধরে নিউ ইয়র্কবাসী। ভালোবাসেন বই পড়তে, ছবি আঁকতে, রান্না করতে, আড্ডা দিতে আর ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে। তবে সবচেয়ে ভালোবাসেন সক্কলকে নিয়ে জমিয়ে বাঁচতে!
**পেজটি #ফলো এবং #লাইক করার জন্য পাঠকবন্ধুদের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।

দুটি কবিতা —📒  #পূর্বপুরুষ     ✍ #সুশীল মণ্ডল   পূর্বপুরুষের পায়ের ছাপ গায়ের গন্ধ খুঁজে পেতে আজ আমি বেলুড় মঠে ধ্যানে ...
11/10/2025

দুটি কবিতা —
📒 #পূর্বপুরুষ
✍ #সুশীল মণ্ডল

পূর্বপুরুষের পায়ের ছাপ
গায়ের গন্ধ খুঁজে পেতে
আজ আমি বেলুড় মঠে ধ্যানে বসেছি। এসেছি দক্ষিণেশ্বরেও।

আমার নিজের পূর্বপুরুষ বলতে
আমি মুক্তমন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে বুঝি
যিনি ভাত কাপড়ের সঙ্গে মুণ্ডমালার মাহাত্ম্য বোঝাতেন।
আর এবড়ো খেবড়ো রাস্তার খানাখন্দে খুঁজে দিতেন একটা আলো ভর্তি আকাশ।

আমার সর্বদা পতনের দিকে পলায়মান মনটাকে
লম্বা একটি রজ্জু দিয়ে বেঁধে
রামপ্রসাদের বেড়ার কাছে নিয়ে যায়
আমি দূরে দেখতে পাই সারাক্ষণ প্রোজ্বল যত মত তত পথ।
_______________________________________
📒 #অবিকল তুমি
✍ #সুশীল মণ্ডল

আজ জানলায় ঝলমল করছে
মোহময়ী সর্ষে খেত অমলতাসের উঁকিঝুঁকি
এবং তোমার একলা দুপুর।

আজ সহাস্য নিমগাছ পাতা ঝরাচ্ছে যমুনায়
তোমার অভিমানের মধ্যে লুকিয়ে থাকা হাসি
ঝলকাচ্ছে বারান্দায়।

এত বছর পরেও তোমার মরালী গ্রীবা
আয়ত নয়ন দৃষ্টির অহঙ্কার
ছুটোছুটি করছে প্রজাপতির বাগানে।

আজ অবিকল তুমি, আর কেউ নয়
আর কেউ হতে পারে না
এসে দাঁড়িয়েছে দুপুরের জানলায়,
আজ আমি ভুল দেখছি না, ভুল দেখব না।
___________________________________________
*পেজটি #ফলো এবং #লাইক করার জন্য পাঠকবন্ধুদের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।

অণুগল্প — 📒  #মায়ের মুখ ✍ #শ্যামলকুমার মিশ্র  শরতের নীল আকাশ। নীলাকাশে সাদা মেঘের সঞ্চরণ।  রাস্তার দুদিকে কাশবন মৃদু সম...
09/10/2025

অণুগল্প —
📒 #মায়ের মুখ
✍ #শ্যামলকুমার মিশ্র

শরতের নীল আকাশ। নীলাকাশে সাদা মেঘের সঞ্চরণ। রাস্তার দুদিকে কাশবন মৃদু সমীরণে আহ্লাদিত। সমস্ত প্রকৃতি জুড়ে যেন আনন্দের উদ্ভাস। ঘাসে ঢাকা পথে বিশু কাকা পলাশদাদাদের কাঁধে চেপে মায়ের আগমন। কাহারপাড়ার রাস্তা দিয়ে আসছেন মা। দূর থেকে দেখছে ছোট্ট রবি। ওর খুব ইচ্ছে করছে মায়ের কাছে যেতে, মাকে ছুঁতে। কেউ যদি কিছু বলে তাই ও দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। শরৎ জেঠু হঠাৎ দেখতে পান রবিকে। হাত নেড়ে কাছে ডেকে বলেন — আয় কাছে আয় রবি। পা ছুঁয়ে প্রণাম কর। মায়ের কোনো জাত হয়না। মা মা-ই। প্রণাম কর। গড় হয়ে প্রণাম করে রবি। দু'চোখ ভরে দেখতে থাকে মাকে। ধীরে ধীরে মা দুর্গার মুখ কখন যেন মায়ের মুখের সঙ্গে মিলে যায়। দৌড়ে এসে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে রবি।
_____________________________________
*পেজটি #ফলো এবং #লাইক করার জন্য পাঠকবন্ধুদের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।

কবিতা — 📒  #কোজাগরী✍ #শম্পা সামন্ত  নিরন্ন মাটিতে গোবর ছড়ায় এঁকে নেয় কেউ দুধ সাদা আলপনা।যুদ্ধ শেষে এসে দাঁড়াবেন তিনিদুয়া...
07/10/2025

কবিতা —
📒 #কোজাগরী
✍ #শম্পা সামন্ত

নিরন্ন মাটিতে গোবর ছড়ায় এঁকে নেয় কেউ দুধ সাদা আলপনা।
যুদ্ধ শেষে এসে দাঁড়াবেন তিনি
দুয়ারের আটনে নির্ভার ধন আর ধান্যে ভরে উঠবে গোলাভাণ্ড
কেউ অপেক্ষায় জাগে রাত
কেউ জ্যোৎস্না মেখে নেয় গায়
সাজো রবে দুন্দুভি বাজে, শিঙা শঙ্খ
ওই তিনি আসছেন
সোনার রথে সোনার বাহনে তিনি আসছেন বরাভয় হাতে
হলুদ বসনে জেগে আছে রাত
আশ্বিনের ক্লান্ত প্রহরে হেঁকে যায় কে জেগে আছো
দুয়ারে জ্যোৎস্না জাগে
আর জাগে রুপার পরাত
জেগে আছে আশ্বিনের রাত
পা রেখেছেন হেমন্তের শিশিরে।
সে পা রাখি নত নম্র শিরে।
____________________________________
*পেজটি #ফলো এবং #লাইক করার জন্য পাঠকবন্ধুদের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।

লক্ষ্মীপুজোর কবিতা —📒  #লক্ষ্মীপুজো     ✍ #আবির ভট্টাচার্য চক্রবর্তী  "ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সৰ্...
07/10/2025

লক্ষ্মীপুজোর কবিতা —
📒 #লক্ষ্মীপুজো
✍ #আবির ভট্টাচার্য চক্রবর্তী

"ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সৰ্ব্বতো পাহিমাং দেবী মহালক্ষ্মী নমহস্তুতে "
_____________________________________
যে মেয়েটা মানুষ গড়ে, অথবা গড়ার চেষ্টা করে
হাটে মাঠে লড়াই করে, স্লোগান তোলে, জোরগলায়
নারীমুক্তির? না। পুরুষ নারী উভয়েরই মুক্তি কামনায়।
এবার পুজোর বিল্বপত্র, কমল-উপচার।
তারজন্য থাক।
ঘটাপটা, উপোষ লক্ষ্মীপুজো, এবার না'হয় যাক।

কেবলমাত্র লক্ষ্মী হয়ে বেঁচে থাকা, আত্ম-প্রবঞ্চনা
সাধ্যাতীত আত্মদানেও নিছক মুল্যহীনা, সধবা-সান্ত্বনা!

তারচে বরং কাজের শেষে, তৃপ্ত-স্নান সেরে এসে
একা যখন বসে,
তার দু'চোখের স্বপ্নপাতে
চাঁদ ভাঙা এই হিমানী রাতে, সুখের গন্ধ ভাসে …
দূর সে গাঁয়ের ধান্যক্ষেত্র গর্ভিনী আজ শিশির-ঔরসে
শেয়াল ডাকে বাঁশবাগানের চাঁদের মাথাটিতে
নিকোনো উঠোন, চালপিটুলীর লক্ষ্মীছাপ-পায়ে
মাটির প্রদীপ সোনার আলোয় জ্বলে …

কোন এয়োতির ঘর ভরাতে মা- লক্ষ্মী চলে ...
কর্মক্লান্ত শ্রান্তমুখ, রুপহীনা সে। তবু শাকম্ভরী
প্রিয়জনের শুভ চেয়ে নিত্যদিনের সাধনা তার
করজোড়ে নিয়ত প্রার্থনায়, 'প্রিয়েরে দেবতা' করি
আজকে রাতে তার দুহাতে ভরুক ধনের ভার
মাগো!জাগাও ওকে, বল, 'কোজাগরী কোজাগরী'
___________________________________
পেজটি #ফলো এবং #লাইক করার জন্য পাঠকবন্ধুদের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।

Thanks for being a top engager and making it on to my weekly engagement list! 🎉Shyamal Kumar Mishra, Kakali Bhattacharje...
05/10/2025

Thanks for being a top engager and making it on to my weekly engagement list! 🎉

Shyamal Kumar Mishra, Kakali Bhattacharjee Maitra, Debadarshini Padhi, Sibajee Basu, Amritendu Roy, Chandrani Mukherjee, Meenakshi Banerjee, Sampa Samanta, Suchitra Karar, Chandana Tewary, আবীর ভট্টাচার্য্য চক্রবর্তী, Chandan Kumar Kundu, Kanti Ranjan De, Subhra Sanyal

Big shout out to my newest top fans! 💎Romio Sarkar, আশরাফুল মণ্ডল, Badal Paul, Chandan Kumar Kundu, Shambhunath Karmakar...
05/10/2025

Big shout out to my newest top fans! 💎

Romio Sarkar, আশরাফুল মণ্ডল, Badal Paul, Chandan Kumar Kundu, Shambhunath Karmakar, Amiti Das, Suchitra Karar, Sibajee Basu, Gouranga Patra, Kakali Bhattacharjee Maitra, Shyamal Kumar Mishra, Meenakshi Banerjee, Amritendu Roy, Sampa Samanta, SK Samim Ali, Tarik Raja

Drop a comment to welcome them to our community, fans

28/09/2025

দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগামী ৬ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত শান্তিনিকেতন সাহিত্যপথ ফেসবুক পেজে কোনো লেখা প্রকাশিত হবে না।

পুজোর গল্প — 📒  #পুজোর পকেটমানি ✍ #সুমন্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়    "দাদু, ‘পকেটমানি' কী?” স্কুলের গেট থেকে বেরিয়েই নীল প্র...
28/09/2025

পুজোর গল্প —
📒 #পুজোর পকেটমানি
✍ #সুমন্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

"দাদু, ‘পকেটমানি' কী?” স্কুলের গেট থেকে বেরিয়েই নীল প্রশ্ন করল, "বন্ধুরা বলছিল এবার পুজোয় কে কত পকেটমানি নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরুবে। ও দাদু, পকেটমানি কী ? বলো না"

নীল মানে নীলাঞ্জন থামতেই ওর দাদু বলে ওঠে, "পকেটমানি হচ্ছে হাত খরচের টাকা। পুজোর সময় ঘুরতে ঘুরতে যখন পা ব্যথা করে, তখন একটু রেস্ট নেবার জন্যে আর ওই রোল, কচুরী, আইসক্রিম, ফুচকা, কোল্ডড্রিংক্স, ভেলপুরি এইসব খাবার জন্যে টাকা-পয়সা লাগবে না? তো তখন ওই পকেটমানি খরচা করে পা ব্যথা আর খিদে দুটোই কমাতে হয়, দাদুভাই।"

— “ও, তাই বলো, কিন্তু সেসব খরচা তো বাবাই করে দেখি। কারতাসগড় থেকে ধানবাদ, ঝরিয়া, সিন্ধ্রিতে যখন আমরা সবাই মিলে ঠাকুর দেখতে যেতাম, তখন যে যা খেতে চাইত, কিনতো, বাবাই তো কিনে দিত, পকেট থেকে মানিব্যাগ বার করে। হ্যাঁগো ছোটোদাদু, কলকাতায় বুঝি বাবারা ছেলেমেয়েদের পুজোর সময় কিছু কিনে দেয় না? তাই ছোটোদেরও পকেটমানি লাগে!”

নীলের প্রশ্নের জবাব খুঁজতে খুঁজতে রাস্তাটা পার হয়ে নেন দাদু। বড়ো জটিল প্রশ্ন করে বসেছে যে নাতি।

— “ব্যাপারটা ঠিক তা নয়, অবশ্যই দেয়, তবে অন্য যেকোনো জায়গার তুলনায় কলকাতা একটু অন্যরকম কিনা”

সেটা অবশ্য কলকাতায় আসার পর থেকে একটু একটু করে বেশ ভালই বুঝে গেছে নীল। লোকজন, রাস্তাঘাট, দোকানপাট, গাড়িঘোড়া এমনকি ওর স্কুলের বন্ধুগুলো অবধি। সবাই আর সবকিছু বেশ আলাদা। মাস দুয়েক আগে নীল যখন বাবার ট্রান্সফারের কথা শুনলো, তখন কলকাতায় যাবার আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করেছিল। কিন্তু কলকাতায় আসার পর থেকে স্কুলে কী পাড়ায় ওর অশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, সবকিছুতে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা, ধীরেসুস্থে হাঁটাচলা, ভিড় দেখে ভয় পাওয়া, এইসব দেখে সকলের হাসাহাসি, ঠাট্টা-তামাসা শুনতে শুনতে ওর একছুটে আবার কারতাসগড় ফিরে যেতে ইচ্ছে করত।

তো এভাবেই মাস তিনেক কেটে গেছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা গা-সওয়া। দেখতে দেখতে দুর্গাপুজোও এসে গেছে প্রায়। আর এর মধ্যেই আর একটা নতুন জিনিস — ‘পকেটমানি’ নীলের মাথায় এসে ঢুকল। সত্যি একটা নতুন জিনিস বটে! ওর মতো ক্লাস ফোরে পড়া একটা ছেলের কাছে এ এক আশ্চর্য জিনিস। যখন যা ইচ্ছে কিনবে, খাবে, খরচা করবে? কারোর থেকে চাইতে হবে না? মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে কেমন বড়ো বড়ো মনে হয় নীলের। কলকাতায় পুজোর চারদিন ছোটোরাও যে বড়োদের মতো বড়ো হয়ে যায়, সেটা তো ওর জানা ছিল না!

উত্তেজনায় টগবগ করতে করতে বাড়ি ফিরল নীল। মনে মনে ঠিক করল মা-কে বলে কিছু লাভ নেই, সব কিছুর মতো এটাতেও মা না বলে দেবে। বারান্দায় চেয়ারে বসে পাঁজির পাতা ওলটাতে থাকা ঠাকুমাকে কথাটা বলতেই ঠাকুমা হেসে বলল, "বাবাকে বলে দেখো, তবে তুমি ছেলেমানুষ তো… ”

ঠাকুমার কথাটা পুরো না শুনেই ও সরে গেল। কলকাতায় ছোটোরা পুজোর সময় যে আসলে কত্তো বড়ো হয়ে যায়, ঠাম্মার কোনো আইডিয়াই নেই।

সন্ধেবেলা নীলের বাবা দেবাঞ্জন অফিস থেকে বাড়ি ফিরতেই দৌড়ে গেল নীল, "পুজোয় পকেটমানি চাই বাবা, সব বন্ধুরাই পাবে।"

— “তাই নাকি! পকেটমানি? আচ্ছা!” একগাল হেসে বাবা দেবাঞ্জন বলে, "শুধু পকেটমানি? আমি তো ভাবছিলাম পুজোর ক'দিন আমার মানিব্যাগটাই তোকে দিয়ে দেব। তোর পকেটেই রাখবি। সারা বছর নিয়ে ঘুরি তো। আর ভাল্লাগে না।"

নীল লাফিয়ে ওঠে, "হুররে! গোটা মানিব্যাগটাই?"

— "হ্যাঁ রে হ্যাঁ, না হলে পকেটমানি রাখবি কোথায়? মানিব্যাগ চাই না? আচ্ছা তাহলে এখন পড়তে যাও।"

তারপর নীল পড়তে গেল, কিন্তু পড়ায় মন বসলো না। রাত্রে নীল খেতে বসল, কিন্তু ঠিক করে খেতে পারল না। নীল ঘুমোতে গেল, কিন্তু কিছুতেই ঘুম এলো না।
পরের দিন দাদু বাজার থেকে ফিরে চুপিচুপি নীলকে ডেকে নিলেন নিজের ঘরে। ওর হাতে দিলেন একটা টিনের চকচকে চৌকো বক্স। একদিকে চাবি-তালা মারা।
নীল তো কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।
অবাক হয়ে, আনন্দে লাফিয়ে উঠল নীল, “বলো কি দাদু! আমার পুজোর পকেটমানি আমিই জমাবো? এর মধ্যে? এখন থেকে?” জমাবে এতে। রাখো তোমার কাছে দাদুভাই।"

অবাক হয়ে, আনন্দে লাফিয়ে উঠল নীল, “বলো কি দাদু! আমার পুজোর পকেটমানি আমিই জমাবো? এর মধ্যে? এখন থেকে?”

— “হ্যাঁ রে দাদুভাই, রোজ একটু একটু করে জমাতে হবে। আর সেই জমানো পকেটমানি নিয়ে পুজোর সময় খরচ করার মজাই আলাদা। কারুর থেকে চাইতে হবে না।“

সেদিন থেকে ছোটোদাদুর পরামর্শ মতো নীল সকলের থেকে সংগ্রহ করতে লাগল একটাকা, দুটাকা, পাঁচটাকা, দশটাকার কয়েন। ধীরে ধীরে ভরে উঠতে লাগল বক্সটা।
কিছুদিন পরে এসে গেল টার্ম-টেস্ট। এগজামের চাপে নীল ভুলেই গেল পিগি-ব্যাঙ্কের কথাটা। মা তুলে রাখল আলমারির মাথায়।

এদিকে পুজো এসে গেছে। আজ রবিবার, ষষ্ঠী। সন্ধেবেলায় নীলের মা অপর্ণার সাজগোজ চলছে। দেবাঞ্জন আর নীল অনেকক্ষণ রেডি।

এমন সময় নীলের হঠাৎ মনে পড়ল বাবার কথাটা। বাবাকে বলতেই বাবা হাসি হাসি মুখে ছেলের হাতে তুলে দিল নিজের মানিব্যাগটা।

নীল উত্তেজনায় প্রায় কাঁপছে। প্রথমে প্যান্টের পিছনের ডান পকেটে ঢোকাতে চেষ্টা করল, ঢুকলো না। তারপর বাঁ পকেটে, হলো না। বড্ড ছোটো পকেটগুলো। তারপর একে একে সাইডের ডান আর বাঁ, দু হাঁটুর কাছের দুটো পকেট। নাঃ, মানিব্যগটা বড্ড মোটা আর বড়ো। ছটা পকেটের একটাতেও ঢুকলো না। নীলের মনটা খারাপ হয়ে গেল। মুখ তুলে দেখলো বাবা মিটিমিটি হাসছে। মানিব্যাগটা বাবার হাতে ফেরৎ দিয়ে এক ছুটে বারান্দায় চলে গেল। সামনের মাঠে পুজো প্যান্ডেলে ঢাক-ঢোল বাজছে, চারদিক আলোয় আলো, লোকে লোকারণ্য। নীল কিন্তু সবকিছুই কেমন ঝাপসা দেখছে।

হঠাৎ ওর কাঁধে একটা হাত। চমকে উঠে মুখ ঘোরায় নীল। দাদু। ডানহাতে উঁচু করে ধরা সেই পিগি ব্যাঙ্কটা! যেটার কথা নীলের মনেই ছিল না। লাফিয়ে ওঠে নীল।
— “আরে আমি তো এটার কথা ভুলেই গেছিলাম দাদু” আনন্দে লাফিয়ে ওঠে নীল। জড়িয়ে ধরে দাদুকে। দাদু নীলের হাতে দেয় সেটা। বেশ ভারী। খুলতেই দেখতে পেল নানা সাইজের কয়েন কী সুন্দর মিলেমিশে আছে ছোট্ট কৌটোটার মধ্যে।

মুহূর্তের মধ্যে নীলের সবকিছু পাল্টে যেতে থাকে চোখের সামনে। বাইরেটা আবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একটা একটা করে এতদিনের জমানো কয়েনগুলো এখন ওর হাতের মধ্যে! কেমন যেন বিশ্বাস হয় না। আর ঠিক তখনই নীলের কানের কাছে মুখটা এনে দাদু বলল, "একেই বলে পুজোর পকেটমানি, বুঝলি? আর শোন, একটা কথা… ” কানে কানে বলা দাদুর কথাটা শুনে নীল খুব খুশি হলো আর দাদুও চোখ টিপে হেসে নিজের ঘরে চলে গেল।

একটু পরেই ওরা তিনজন বেরিয়ে পড়ল। পুজোর সময় কলকাতা আলোক-নগরী। এত চেনা, তবু যেন অচেনা। অসম্ভব ভিড়ে থেকে থেকেই ওরা তিনজন আগে-পিছে হয়ে যাচ্ছিল। নীল বাবার হাত ধরেই হাঁটছিল কাঁধের ব্যাগটাকে সামলে। দেশপ্রিয় পার্কের ক্রসিংটা পেরুনোর আগে নীল বলল, "বাবা, কোল্ডড্রিঙ্কস খাব"

কোল্ডড্রিঙ্কস খাবার পর, দেবাঞ্জন পিছনের পকেটে হাত দিয়েই চেঁচিয়ে উঠল, "আরে, আমার মানি ব্যাগ! কোথায় গেল?" ওর চেঁচামেচিতে লোক জমে গেল বেশ কিছু। এক পুলিশ অফিসার এগিয়ে এসে বলল, "এই ভিড়ের মধ্যে ব্যাক পকেটে পার্স রাখে কেউ?"

অপর্ণার মুখ চুন। দেবাঞ্জন ফোন বের করল কোল্ড ড্রিঙ্কসের দাম মেটাবে বলে। কিন্তু দোকানদার একশো টাকার নিচে অন লাইন পেমেন্ট নিতে নারাজ। অপর্ণা ভ্যানিটি ব্যাগ আনেনি। এ এক লজ্জাজনক পরিস্থিতি। কী হবে এখন? অপর্ণা দেবাঞ্জন মুখ চাওয়া-চায়ি করছে।

ঠিক তখনই নীল স্মার্টলি জলের ব্যাগ থেকে কয়েনের বক্সটা বের করে উঁচু করে দেখালো বাবা-মাকে। ভাগ্যিস ওর দাদুর কথা শুনে লুকিয়ে এনেছিল কয়েন-বক্সটা! ওর পুজোর পকেটমানি যে এত তাড়াতাড়ি কাজে লেগে যাবে কে জানত?
________________________________________
*পেজটি #ফলো এবং #লাইক করার জন্য পাঠকবন্ধুদের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।

কবিতা —📒  #পিছলে যায় যখন ভয়     ✍ #তাপস ওঝাসময় বদলে গেলে ধ্বজাও বদলে যায় রঙ বদলে যায় দেওয়ালের               শহর আর গ্রাম...
27/09/2025

কবিতা —
📒 #পিছলে যায় যখন ভয়
✍ #তাপস ওঝা

সময় বদলে গেলে ধ্বজাও বদলে যায়
রঙ বদলে যায় দেওয়ালের
শহর আর গ্রামের।
জীবন বদলে গেল যার
বর্ষার দুপুরে
তার স্মৃতিঘরের দেওয়াল
আঁকড়ে ধরে, ভিজে যাওয়া ঘটতে থাকে
অনেকগুলো দিন।

চোখের জল কোনো আলো দেখতে
দেয় না,
পাথরের অন্ধকার ভয়কে পিছলে যেতে
বড়ো সাহায্য করে সেই সময়।

গতকালগুলো সম্পর্ক ছিন্ন করে
আমার মতো একা হয়ে যায়।
____________________________________
*পেজটি #ফলো এবং #লাইক করার জন্য পাঠকবন্ধুদের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।

দুটি কবিতা —📒  #ডাক     ✍ #সুশীল মণ্ডল  এখন টেলিফোনে কেউ ডাকলে এবং ডাকটা যদি কোনো  অচেনা নারীর গভীর থেকে উঠে আসে বুকের ভ...
25/09/2025

দুটি কবিতা —
📒 #ডাক
✍ #সুশীল মণ্ডল

এখন টেলিফোনে কেউ ডাকলে
এবং ডাকটা যদি কোনো অচেনা নারীর গভীর থেকে উঠে আসে
বুকের ভেতরে একটা দুরু দুরু প্রেম
বুনো ঝাউ পাতার মতো বাতাসে দুলতে থাকে।

ডাকের মধ্যে কখনো স্বর্ণালী সন্ধ্যা থাকে
প্রিন্সেপ ঘাটের নৌকা, ভিক্টোরিয়া নন্দন
আবার কখনো গোটা কলকাতা।

ডাকে মেঘলা আকাশের গন্ধ পাই
ঝিরঝির বৃষ্টি
আঁখিপল্লবে ঢেউ ছড়ানো হাসি এবং উপোসী ঠোঁটের অনাস্বাদিত স্বাদ।

ডাকের মধ্যে ঠাহর হয়
হাজার কথার বর্ণমালা, রবীন্দ্রনাথের মায়াবী বৌঠান
এবং বুনো গন্ধ নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়
বিভূতিভূষণের বুনো প্রেম ভানুমতি।
__________________________________________
📒 #মনখারাপ
✍ #সুশীল মণ্ডল

মাঝে মাঝে মনখারাপ রক্তে মিশলে
জীবনের একটা চালচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়।

মনখারাপের লাবণ্যে তুমি হয়ে ওঠো আরো লাবণ্যময়ী
ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথের কালো হরিণ চোখের মেয়ে।

মনখারাপের পৃথিবীতে কোজাগরীর চাঁদ নেমে এলে
আর কারো জন্য অপেক্ষা প্রতিক্ষার দরকার হয় না।

মনখারাপ পাঁজরে আঘাত পায় যখন শুনতে পায়
রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি ভাঙার হাতুড়ির বুকফাটা আর্তনাদ।

মাঝে মাঝে দেখি মনখারাপের মন ভালো নেই
তখন তাকে আহ্বানে রাখি বুকের বর্ম করে রাখতে।
___________________________________________
*পেজটি #ফলো এবং #লাইক করার জন্য পাঠকবন্ধুদের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।

Address

শান্তিনিকেতন
Bolpur
৭৩১২৩৫

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Santiniketan Sahityapath শান্তিনিকেতন সাহিত্যপথ posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Santiniketan Sahityapath শান্তিনিকেতন সাহিত্যপথ:

Share

Category