
18/05/2025
এক বন্ধুত্বের হাসি-জলমেশানো গল্প: সুচিত্রা, উত্তম ও সুপ্রিয়া
বাংলা চলচ্চিত্রের তিন উজ্জ্বল নক্ষত্র—উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন ও সুপ্রিয়া দেবীর জীবনে ছিল এক অদ্ভুত মাধুর্যপূর্ণ সম্পর্কের রসায়ন। পর্দায় তাদের রসায়ন যতটা দর্শককে মোহিত করেছে, বাস্তব জীবনেও ছিল ঠিক ততটাই আন্তরিক, সরল এবং রসিকতায় ভরা এক বন্ধুত্ব।
সুচিত্রা সেন—চিরকালই গম্ভীর, নির্লিপ্ত এক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। তাঁকে ‘রাশভারি ম্যাডাম সেন’ নামে ডাকাও হতো। কিন্তু এই চেহারার আড়ালেও ছিলেন এক প্রাণবন্ত, হাস্যরসপ্রিয় মানুষ। এই অজানা সুচিত্রাকে জানার সুযোগ পেয়েছিলেন কেবল গুটিকয়েক কাছের মানুষ—তাঁদের মধ্যেই অন্যতম ছিলেন সুপ্রিয়া দেবী।
সুপ্রিয়া দেবী তাঁর আত্মজীবনীতে এক মজার ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন। একদিন সকাল সকাল ফোন বাজল তাঁদের ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে। ফোন ধরতেই ওপার থেকে চেনা কণ্ঠ—“উতু আছে?” সুচিত্রার গলায় মিষ্টি অধৈর্য। উত্তম কুমার তখন বাড়িতে ছিলেন না, সেটা জানাতেই সুচিত্রা হঠাৎ বললেন, “উত্তমকে পাঠিয়ে দাও তো, খুব চুমু খেতে ইচ্ছা করছে!”
হঠাৎ এই সরল, সরস বাক্যে প্রথমে খানিক থমকে যান সুপ্রিয়া। তারপর হেসে বলেন, “বেশ তো! আমি এখনই ফোন করে শুটিং ফ্লোরে বলে দিচ্ছি, শ্যুটিং শেষে তোমার বাড়ি যাবে। তুমি তখন যত খুশি চুমু খেয়ো!”
এই কথায় সুচিত্রা এতটাই অবাক হয়ে যান যে রীতিমতো হেসে বলেন, “তোর হিংসে হচ্ছে না বুঝি?” সুপ্রিয়া উত্তর দেন, “না রমাদি, কারণ তোমাকে আমি চিনি—তোমার রসিকতা তো সবসময়ই সাবলীল।”
এই বন্ধুত্বটা ছিল গুঞ্জনের বাইরে, গ্ল্যামারের আলোকছায়া থেকে দূরে। শুটিং ফ্লোরে তিনজনেই পেশাদার, কিন্তু ব্যক্তিগত মুহূর্তে তাঁদের আড্ডা, রান্নাবান্না, হাসাহাসি—সবই ছিল একেবারে নিখাদ, নির্মল। সুচিত্রা সেন বহুবার সুপ্রিয়ার বাড়িতে এসে আড্ডা দিয়েছেন। প্রিয় খাবারের পদ রান্না করতেন সুপ্রিয়া, আর উত্তম থাকতেন গল্পের কেন্দ্রে।
তাঁদের এই সম্পর্ক কখনও পত্রিকায় মুখর হয়নি, কারণ সুচিত্রা বিশ্বাস করতেন, তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন যত গোপন থাকবে, তাঁদের প্রতি দর্শকের মুগ্ধতাও ততটাই অটুট থাকবে। এই কারণেই হয়তো উত্তম-সুচিত্রা-সুপ্রিয়ার বন্ধুত্বের গল্পটা থেকে গেছে শুধুই তাঁদের আপন গণ্ডির মধ্যেই—সেইসব দিনগুলোর মতোই স্বতঃস্ফূর্ত ও সময়ের পরীক্ষায় উজ্জ্বল।
tv9বাংলা থেকে পাওয়া।