28/06/2025
একদা বাজশ্রবা নামে এক ঋষি এক যজ্ঞের আয়োজন করেন, যেখানে তিনি তার সমস্ত সম্পদ দান করছিলেন। কিন্তু নচিকেতা, যিনি ছিলেন তার পুত্র, লক্ষ্য করলেন যে তার বাবা যেসব গরু দান করছেন, সেগুলো ছিলো বুড়ো, দুধ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং দুর্বল। নচিকেতা বুঝতে পারলেন যে এই ধরনের দান প্রকৃত দান নয়, কারণ এগুলো দাতার কোনো কাজে আসছে না। তিনি তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "বাবা, আমাকে কাকে দান করবে?" বাবা প্রথমবার উত্তর দিলেন না। নচিকেতা বারবার একই প্রশ্ন করতে লাগলেন। বিরক্ত হয়ে বাজশ্রবা বলে উঠলেন, "তোমাকে আমি যমের হাতে দান করব!"
বাবার কথা শুনে নচিকেতা বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না। তিনি জানতেন যে বাবার কথা রক্ষা করা তার কর্তব্য। তাই তিনি যমরাজের বাড়িতে গেলেন। কিন্তু যমরাজ তখন বাড়িতে ছিলেন না। নচিকেতা তিন দিন তিন রাত যমরাজের দরজায় অপেক্ষা করলেন, কিছু খেলেন না, পানও করলেন না।
যমরাজ ফিরে এসে দেখলেন তার দরজায় একজন বালক অপেক্ষা করছে। তিনি জানতে পারলেন যে নচিকেতা একজন শ্রদ্ধেয় অতিথি এবং তিন দিন ধরে অভুক্ত আছেন। একজন অতিথির প্রতি এমন আচরণ অশুভ, তাই যমরাজ লজ্জিত হয়ে নচিকেতাকে তিনটি বর দিতে চাইলেন।
নচিকেতা একে একে তার তিনটি বর চাইলেন:
১. প্রথম বর: তিনি চাইলেন, তার বাবা যেন তার উপর থেকে রাগ ভুলে যান এবং তাকে যেন চিনতে পারেন, যখন তিনি বাড়ি ফিরবেন। যমরাজ এই বর মঞ্জুর করলেন।
২. দ্বিতীয় বর: তিনি চাইলেন, স্বর্গে যাওয়ার পথ এবং সেই পথে যে অগ্নিবিদ্যা (নচিকেতাগ্নি) রয়েছে, তা যেন যমরাজ তাকে শেখান। যমরাজ সানন্দে এই বরও দিলেন এবং তাকে অগ্নিবিদ্যা শেখালেন।
৩. তৃতীয় বর: এই বরটিই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নচিকেতা জিজ্ঞাসা করলেন, "মানুষের মৃত্যুর পর আত্মা বলে কিছু থাকে কিনা, কেউ কেউ বলেন থাকে, আবার কেউ কেউ বলেন থাকে না। আমি এই বিষয়ে আপনার কাছ থেকে সত্য জানতে চাই।"
এই প্রশ্ন শুনে যমরাজ কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেন। তিনি নচিকেতাকে এই প্রশ্নের পরিবর্তে ধন-সম্পদ, দীর্ঘ জীবন, পার্থিব সুখ, এমনকি স্বর্গীয় অপ্সরাদেরও প্রস্তাব দিলেন। তিনি বোঝাতে চাইলেন যে এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গভীর এবং দেবতারাও এর সম্পূর্ণ উত্তর জানেন না। কিন্তু নচিকেতা ছিলেন অটল। তিনি বললেন, এই ক্ষণস্থায়ী জিনিসগুলো তাকে সুখ দিতে পারবে না। তিনি কেবল মৃত্যুর পরের রহস্য জানতে চান।
নচিকেতার দৃঢ়তা, একাগ্রতা এবং প্রকৃত জ্ঞান লাভের আকাঙ্ক্ষা দেখে যমরাজ মুগ্ধ হলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে নচিকেতা এই গভীর জ্ঞান লাভের যোগ্য। তখন যমরাজ নচিকেতাকে আত্মা, ব্রহ্ম এবং মোক্ষের জ্ঞান দান করলেন। তিনি বোঝালেন যে আত্মা অমর এবং অবিনশ্বর। দেহ নশ্বর হলেও আত্মা শাশ্বত এবং মৃত্যুর পর তা নতুন রূপে প্রকাশ পায় অথবা মুক্তি লাভ করে। এই জ্ঞানই হলো ব্রহ্মজ্ঞান।
এই কাহিনীর মূল বার্তা হলো, নচিকেতার মতো একজন প্রকৃত জিজ্ঞাসু ব্যক্তিই চরম সত্যের সন্ধান পেতে পারেন। পার্থিব ভোগ-বিলাস বা ক্ষণস্থায়ী সুখের চেয়ে আত্মজ্ঞান এবং ব্রহ্মজ্ঞানই প্রকৃত ও শাশ্বত। এটি ধৈর্য, দৃঢ়তা, এবং সঠিক গুরুর (যমরাজ এক্ষেত্রে গুরু) অধীনে গভীর জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরে।
SB Bubai