স্বকাল - Swakal

স্বকাল - Swakal বাংলাভাষায় প্রকাশিত কবিতা ও শিল্পকলা

" একুশে এপ্রিল রাত এগারোটায় ফোন করে জানালেন একজন: অল্প আগে চলে গেছেন সিদ্ধেশ্বর সেন। সেই সিদ্ধেশ্বর সেন, প্রথম যৌবন থেক...
14/01/2023

" একুশে এপ্রিল রাত এগারোটায় ফোন করে জানালেন একজন: অল্প আগে চলে গেছেন সিদ্ধেশ্বর সেন। সেই সিদ্ধেশ্বর সেন, প্রথম যৌবন থেকে অবিরতই কবিতা লিখেছেন যিনি, কিন্তু পঞ্চাশ বছর বয়স হয়ে যাবার পরও যিনি তাঁর নিজের পছন্দ মতো কোনো বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করে উঠতে পারেননি ,-- কোনো কথাই কখনো সম্পূর্ণ করে উঠতে পারতেন না যিনি, নির্দিষ্ট কোনো সময়ে কোথাও যিনি পৌঁছতে পারতেন না কখনো, কিছু একটা করে ফেলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেবার পর তার অমোঘ ব্যর্থতায় সরল অপ্রতিভ মুখে যিনি বলতে পারতেন, ' এবার আর হয়ে উঠল না, জানেন '-- বিভোর সেই আত্মভোলা কবি-মানুষটির শারীরিক অবসান হলো হাসপাতালের কেবিনে, অন্য কোনো বস্ত্রাভাবে হাসপাতালেরই সবুজ চাদরে মুড়ে দেওয়া।"
শঙ্খ ঘোষ

আজ থেকে পনের বছর আগে শারীরিক অবসান হয় কবি সিদ্ধেশ্বর সেনের। আপাদমস্তক, আত্মভোলা আর আত্মপ্রচার বিমুখ এই কবির জীবনাবসানের পর এই কবিকে নিয়ে লিখেছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। চল্লিশ দশকের এই বিশিষ্ট কবির মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পর ' স্বকাল' পত্রিকা তাকে নিয়ে প্রকাশ করে 'কবি সিদ্ধেশ্বর সংখ্যা'। পাঠক সমাদৃত এই সংখ্যাটি খোঁজ করেছিলেন কেউ কেউ। এবারের লিটিল ম্যাগাজিন মেলায় এই সংখ্যাটি অল্প কয়েকটি পাওয়া যাবে। আগ্রহীরা 'স্বকাল' পত্রিকার ১৯৩ নম্বর টেবিলে খোঁজ করতে পারেন। প্রচ্ছদ ও কবির প্রতিকৃতি:যুধাজিৎ সেনগুপ্ত

আজ ১১ জানুয়ারি ২০২৩ সন্ধ্যায়, শিল্পকলার উপর একাধিক গ্রন্থ ও মননশীল লেখালিখির জন্য কবি ও আমাদের স্বকাল পত্রিকার সম্পাদক...
11/01/2023

আজ ১১ জানুয়ারি ২০২৩ সন্ধ্যায়, শিল্পকলার উপর একাধিক গ্রন্থ ও মননশীল লেখালিখির জন্য কবি ও আমাদের স্বকাল পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশ দাসকে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি আয়োজিত লিটল ম্যাগাজিন মেলায় "মনোজ মোহন বসু" স্মারক পুরস্কারে সম্মানিত করা হচ্ছে। এই আনন্দ ঘন মুহূর্তটি সকল শিল্পকলা রসিক ও স্বকাল বন্ধুদের সাথে ভাগ করে নিতে চাইছি আমরা। আসুন, দেখা হোক কলকাতা নন্দন চত্ত্বরে, লিটল ম‍্যাগাজিন মেলায়।

শিল্পী প্রদীপ প্রধানের সাথে স্বকালের স্টলে। তারকেশ্বর লিটিল ম‍্যাগাজিন মেলা।
12/11/2022

শিল্পী প্রদীপ প্রধানের সাথে স্বকালের স্টলে। তারকেশ্বর লিটিল ম‍্যাগাজিন মেলা।

তারকেশ্বর লিটিল ম‍্যাগাজিন মেলায় স্বকাল পত্রিকার কবি আলোক সরকার সংখ‍্যা সহ অন‍্যান‍্য সংখ‍্যাগুলি পাওয় যাচ্ছে।মেলাটি থাক...
12/11/2022

তারকেশ্বর লিটিল ম‍্যাগাজিন মেলায় স্বকাল পত্রিকার কবি আলোক সরকার সংখ‍্যা সহ অন‍্যান‍্য সংখ‍্যাগুলি পাওয় যাচ্ছে।মেলাটি থাকবে আগামীকাল ১৩.১১.২০২২ পর্যন্ত। (সময় : বিকাল ৩টা থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত)

02/09/2020

আজ সূত্রপাতের স্বগতোক্তি বিভাগে কবি ও সম্পাদক #প্রকাশদাসের লেখা।

"

জীবন কতদিকেই না কতভাবেই গড়িয়ে যায়। দেশভাগের ধাক্কায় ভাসতে ভাসতে এপার বাংলার ঘাটে এসে ঠেকেছিলেন নারায়ণ দাস অধিকারী, নীলমণি বিশ্বাস, বেঁটেখাটো হরি বিশ্বাস আর ধীরেন মালাকার-এর মতো সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলি। এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন এক-একজন জাতশিল্পী। সর্বস্ব ফেলে এপার বাংলায় চলে এলেও শিল্পীসত্তা আর তাঁদের মধুর কণ্ঠটি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। এঁদের কেউ ছিলেন চমৎকার বংশীবাদক, কেউ-বা দোতারা বাদক, কেউ-বা লোকসংগীত শিল্পী। গ্রামের আনাচে-কানাচে শহুরে ছোঁয়া স্পর্শ করেনি তখনও। চারিদিকে খড়ের চাল আর মাটির কাঁচা বাড়ি। আমাদের এইরকম একটি বাড়ির পাশেই ছিল বিশাল একটি বিড়ি তৈরির কারখানা। এপারে এসে এইসব মানুষগুলি পেশায় হয়ে উঠেছিলেন বিড়ি শ্রমিক। দেখতাম এইসব জাতশিল্পীগুলি বিড়ি বাঁধছেন আর জীবনযুদ্ধের ক্লান্তির পাশে, কাজের ফাঁকে-ফাঁকে দোতারা-বাঁশি সহযোগে গাইছেন লোকসংগীত। জীবনের থেকে উঠে আসা আনন্দ ও বিষাদের সংগীত ছড়িয়ে পড়ছে জীবনেরই চারিদিকে। বিড়ি বাঁধার কুলো পাশে সরিয়ে রেখে, দোতারা বাজিয়ে নারায়ণ দাস অধিকারী গাইছেন : এমন মন-ব্যবসা ছেড়ো না সুখের ধান ভানা। কালের স্রোতে এঁদের অনেকেই ভেসে গেলেও অনেক ঘাটের জল খেয়ে নারায়ণ অধিকারী হয়ে ওঠেন বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাউল। বাউল নারায়ণ দাস অধিকারী-র নামের সঙ্গে ‘দোতারার জাদুকর’ অভিধাটিও জুড়ে দেন বাংলার শিল্পরসিক মানুষজন। বহু বিখ্যাত বাউল গানের পদকর্তা, গানের সূত্রে বহু দেশ ভ্রমণ করা, এই মানুষটির সঙ্গে তাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত একটি নিবিড় আত্মীয়-বন্ধন গড়ে উঠেছিল আমার। জীবন-প্রভাতে, এই মানুষটিই, শিল্পরসের শিকড়বাকড় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আমার মধ্যে। কোনোভাবেই এই মানুষটিকে ভুলতে পারি না আজও।

ষাটের দশকের শেষাশেষি, পিতার সঙ্গে পরিচয় সূত্রে, আমাদের বাড়িতে এসে উঠলেন ছিপছিপে লম্বা, সস্তা চারমিনারের চেনস্ স্মোকার, ধুতি-পাঞ্জাবি পরা, বুদ্ধিদীপ্ত এক ভদ্রলোক। জানালেন, তিনি অধ্যাপক। অধ্যাপনার সূত্রে খড়গপুর আই-আই-টি-র সঙ্গে যুক্ত তিনি। তখন নবম কী দশম শ্রেণির ছাত্র আমি। তিনি হয়ে উঠলেন আমাদের পারিবারিক বন্ধু-গাইড। আমরাও হয়ে উঠলাম তাঁর নিকটজন। তাঁর কাছাকাছি এসে বুঝলাম মানুষটি সাহিত্যরসিক একটি গ্রন্থভূক প্রাণী। বহু গ্রন্থেরই খবর রাখেন। একদিন উপহার দিলেন সেই সময়ের সাড়া জাগানো গ্রন্থ ‘পাপুর ছবি সঙ্গে ছড়া’। পাপু হলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক-সাংবাদিক শ্রীপান্থের (নিখিল সরকার) শিশুপুত্র। বাড়ির সামনে খেলায় মগ্ন, অত্যন্ত প্রতিভাবান এই শিশুটি একটি গাড়ির ধাক্কায় মারা যায়। পাপুর আঁকা ছবি-ছড়ার সঙ্গে বাংলাভাষার বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের ছড়া-কবিতা-গদ্য নিয়ে প্রকাশিত ‘পাপুর ছবি সঙ্গে ছড়া’ গ্রন্থটি সেই সময়ে কিশোর মনকে নাড়া দিয়ে যায়। মনে আছে পাপুর আঁকা ছবি মকসো করে কাটিয়ে দিয়েছি গ্রীষ্মের কত অলস দুপুর। এই অধ্যাপক মানুষটি, তারপর, একদিন নিয়ে এলেন তাঁর কবি-বন্ধু কুশল মিত্রের তাঁকে উপহার দেওয়া একটি কাব্যগ্রন্থ। পরবর্তী সময়ে বহুবার গ্রন্থটি পাঠ করে বুঝতে পেরেছি, সেই সময়ের একটি উৎকৃষ্ট কাব্যগ্রন্থ ছিল সেটি। বইটিতে কুশল মিত্রের লেখা কবিতাই ছিল না শুধু, তাঁর করা পশ্চিমী কিছু বিখ্যাত কবির কবিতার উৎকৃষ্ট তর্জমাও ছিল কাব্যগ্রন্থটিতে। কাব্যগ্রন্থটির প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে ছাপাছাপি, সমস্ত কিছুই ছিল অত্যন্ত রুচিশীল। তো সেই ষাটের দশকের শেষাশেষি সময়ে, বলা যায়, আমার ঘাড়ে চেপে বসে কবিতা লেখার ভূত। বাড়িতে আসত সেই সময়ের বিখ্যাত সাহিত্য-সংস্কৃতির সাপ্তাহিক ‘অমৃত’ পত্রিকা। আমাদের গৃহশিক্ষক লিখতেন কবিতা। সেই অতিথি অধ্যাপক, গৃহশিক্ষক আর তাঁর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বাড়িতে বসত সাহিত্যের সান্ধ্য আড্ডা। বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যুবক গৃহশিক্ষক ও তাঁর বন্ধুরা। সাহিত্যের সঙ্গে উঠে আসত সমকালীন রাজনৈতিক প্রসঙ্গ। পরে বুঝেছিলাম তৎকালীন নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন সেই অতিথি অধ্যাপক। ঘুরতে ঘুরতে একদিন তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের পরিবারের একজন। যেমনভাবে এসেছিলেন তেমনভাবে উধাও হয়ে গেলেন একদিন। আমাদের মননজুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে গেলেন কবিতার একটি দীপ্ত শিখা।

সত্তর দশকের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে পড়াশোনার সূত্রে গ্রাম থেকে যাই শহর বর্ধমানে। রসায়ণ শাস্ত্রে সাম্মানিক বিভাগে ভর্তি হই জেলার অন্যতম নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজ কলেজে। প্রবেশ করি এক নক্ষত্র সমাবেশে। এখানেই পদার্থ বিদ্যার শিক্ষক হিসেবে পেয়ে যাই ষাট দশকের বিশিষ্ট কবি সুব্রত চক্রবর্তীকে। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘বালক জানে না’ বেরিয়ে গিয়েছে তখন। অর্থনীতির ছাত্র, সতীর্থ বিভাস সাহা সম্পাদনা করছে কলেজের বাৎসরিক পত্রিকা ও দেয়াল পত্রিকাটি। যোগ্য হাতে পড়লে কলেজ পত্রিকা যে কী হতে পারে রাজ কলেজের ওই দুটি পত্রিকা হয়ে আছে তার দৃষ্টান্ত। সাগ্রহে আমার কবিতা চেয়ে নিয়ে সেখানে প্রকাশ করেছে বিভাস। লন্ডন প্রবাসী বিভাস এখন সেখানকার অর্থনীতির একজন নামী ও ব্যস্ত অধ্যাপক। কবিতা এখনও ছেড়ে যায় নি তাঁকে। সত্তর দশক থেকে আশির গোটা পর্বটিকে শহর বর্ধমানের কবিতাচর্চার আধুনিকতার এক নিঃশব্দ স্বর্ণযুগ বলব কি? হ্যাঁ, তাই বলব আমি। কমলকুমার-শিষ্য কবি সুব্রত চক্রবর্তী-কে ঘিরে তখন বয়ে যাচ্ছে কবিতাচর্চার আধুনিকতার এক নিঃশব্দ স্রোত। কবিতার তরুণ তুর্কীরা যেমন জড়ো হচ্ছে তাঁকে ঘিরে, তেমনি বাঁকা ব্রিজ পেরিয়ে তাঁর শিষ্যের বাড়ির উদ্দেশে হেঁটে যাচ্ছেন সাহিত্যগুরু কমলকুমার। শহরের প্রাণকেন্দ্র কার্জন গেটের পাশে সঙ্গম রেঁস্তোরায় আড্ডা দিতে এখানে পা রাখছেন কবি-বন্ধু ভাস্কর চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, শামসের আনোয়ার, অরণি বসু থেকে শক্তি চট্টোপাধ্যায়। স্বর্গভ্রষ্ট দেবদূত কবি-গদ্যকার স্বরাজ সিংহ সম্পাদিত ‘অক্ষর’, ‘ম্যাজিক লণ্ঠন’ কিংবা আদ্যোপান্ত নিউজ প্রিন্টে ছাপা কবি ও গদ্যকার রূপক মিত্র সম্পাদিত ‘চয়ন’ পত্রিকাটি যদি কারো সংগ্রহে থাকে তবে উল্টেপাল্টে দেখে নিতে পারেন এইসব তরুণ তুর্কীরা বর্ধমানের সাবেকি সাহিত্যধারাটিকে কিভাবে সজোরে ধাক্কা দিয়েছিল।

আদ্যোপান্ত সাহিত্যের আধুনিকতার এক ঘুর্ণিঝড়ের মাঝখানে শহর বর্ধমানে যখন পা রাখি, কিছুকাল পর, আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে ওঠে শ্যামলবরণ সাহা। শ্যামল তখন সম্পাদনা করছে তাঁর পত্রিকা ‘বাল্মীকি’। কবিতার পাশাপাশি আঁকছে ছবি। চল্লিশ বছর পার করেও সে বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি। কবি রাজকুমার রায়চৌধুরী তখন প্রকাশ করছে পাতলা ছিপছিপে রাগী কবিতার কাগজ ‘মনসিজ’। আমি প্রকাশ করছি ‘স্বকাল’। লোকসংস্কৃতি এবং কবিতা ও কবিতা বিষয়ক গদ্য নিয়ে স্বকাল-এর একটি সংখ্যা বেরল সেই সময়। অকাল প্রয়াত কবি সুব্রত চক্রবর্তী-র প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতা ও গদ্য ছাড়াও এই সংখ্যায় দারু ভাস্কর্যের উপর একটি মূল্যবান প্রবন্ধ লিখেছিলেন তারাপদ সাঁতরা। অগ্রন্থভুক্ত, তাঁর এই মূল্যবান লেখাটি এখনও সংগ্রহে আছে আমার। কবিতা ও পত্রিকা প্রকাশের সেই উন্মাদনার আবহেই ১৯৮৩ সালে, পাঁচ কবি-বন্ধু শ্যামলবরণ সাহা, রাজকুমার রায়চৌধুরী, স্বপন সরকার, অকাল প্রয়াত শান্তনু বসু এবং আমার কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয় অত্যন্ত সুদৃশ্য-ঝকঝকে যৌথ কাব্য সংকলন ‘বাতাসে পুরুষ হরিণ’। ‘পুরুষ হরিণ’ উপমাটির মধ্যেই কবিতা নিয়ে আমাদের উন্মাদনার কালটি চিহ্নিত হয়ে আছে। এই কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদের ছবিটি এঁকে দিয়েছিলেন দিব্যোন্মাদ চিত্রী-কবি প্রকাশ কর্মকার। দেশ পত্রিকায় এই কাব্য সংকলনের একটি মূল্যবান আলোচনা করেছিলেন কবি প্রমোদ বসু।

সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকের প্রায় গোটাটাই আমার বাড়িঘর হয়ে ওঠে শহর বর্ধমান। শ্যামলবরণের ৩৭ কালনা রোডের বাড়িটি হয়ে ওঠে আমারও বাড়ি। ঘোর লাগা সেই কবিতা দিবসের দিনগুলিতে কত দিবস-রজনী কেটে গিয়েছে যে এই বাড়িটিতে তার লেখাজোখা নেই। শ্যামলের এই আস্তানাটি বর্ধমান ও বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের কবিতা-শিল্পপ্রেমি মানুষদের কাছে হয়ে উঠেছিল অবারিত দ্বার। শ্যামলের উদ্যোগেই, কবিতার প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যেই আশির দশকেই আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলি ‘বাকচর্চা’ নামে কবিতা কেন্দ্রিক সংগঠন। শ্যামলবরণ অঙ্কিত প্রচ্ছদ এবং তার তত্ত্বাবধানেই, ‘বাকচর্চা’ প্রকাশ করে তরুণ কবিদের দশটিরও বেশি এক ফর্মার সুদৃশ্য কবিতার বই। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মারক সম্মানে সম্মানিত নির্মল হালদার-এর ‘ধান ও জলের ধ্বনি’ এবং গৌতম বসুর ‘অতিশয় তৃণাঙ্কুর পথে’ শীর্ষক একফর্মার কাব্যগ্রন্থ দুটি প্রকাশিত হয় ‘বাকচর্চা’ থেকেই। আমার এক ফর্মার ‘শতাব্দী শেষের আকাশ’ সুদৃশ্য কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করে ‘বাকচর্চা’। এখানে উল্লেখ থাক ‘বাকচর্চা’ প্রকাশ করে বাংলাভাষার অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ দেবদাস আচার্য প্রণীত ‘আচার্যের ভদ্রাসন’। ‘বাকচর্চা’-র কবিতা কেন্দ্রিক আর একটি উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড হল মাসিক কবিতা পাঠের আসর ‘কবিতা এখন’। কবিতা প্রেমিক শ্রোতায় ভরে যেত কোর্ট কম্পাউন্ডের অরবিন্দ ভবনের দোতলার সভাঘরটি। নীচে, সবুজ ঘাসের সুদৃশ্য চাদরে বসে কবিতা শুনেছেন অজস্র মানুষ। সেখানে আমরা কবিতা পড়েছি। আমাদের আমন্ত্রণে সুদূর নদীয়া, কলকাতা, পুরুলিয়া থেকে কবিতা পড়তে এসেছেন কবি দেবদাস আচার্য, গৌতম বসু, একরাম আলি, নির্মল হালদার। প্রতিমাসে কবিতা পাঠ শুনতে চলে এসেছেন কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন ও গবেষণাগারের কর্ণধার সন্দীপ দত্ত।
আমার প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ ‘ভাতগুলি, ফুলগুলি’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালে। এই কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ এবং ভেতরের কয়েকটি ছবি এঁকে দিয়েছিলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী গণেশ হালুই। আশির দশকের মাঝামাঝি ‘শতভিষা’ পত্রিকার উদ্যোগে কলকাতার এলগিন রোডের নেতাজী রিসার্চ ইনসটিটিউটে নির্বাচিত তরুণ ও অগ্রজ কবিদের নিয়ে একটি বড়োসড়ো আমন্ত্রণমূলক কবিতা পাঠের আসর হয়। সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে এই কাব্যগ্রন্থ থেকে পড়েছিলাম কয়েকটি কবিতা। মনে আছে সভা শেষে আমার কবিতাগুলি তাঁর ভালো লাগার কথা জানিয়েছিলেন কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এই সুযোগে, তাঁর জন্মশতবর্ষে, তাঁকে প্রণাম জানাই।

১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় আমার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘তিনি ওই মাঠের দেবতা’। রামকিঙ্করের আঁকা ধানকাটা ও ধানবাঁধার কাজে কর্মরত দুজন আদিবাসী কৃষাণ-কৃষাণীর ছাপাই ছবি ব্যবহার করেছি বইটির প্রচ্ছদে। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত রামকিঙ্করের জীবন ও শিল্পকলা নিয়ে নিবিষ্টভাবে অধ্যায়ণ করেছি। তাঁর জীবন ও শিল্পের একটি প্রামাণিক গ্রন্থের কাজে মাইলের পর মাইল হেঁটেছি। ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয় আমার ‘রামকিঙ্কর’ গ্রন্থটি।। কবি-শিল্পী ও শিল্পরসিক মহলে এই গ্রন্থটি আজও রামকিঙ্করের জীবন ও শিল্পের একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত। এরপরও গোটা দুয়েক কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে আমার। বেরিয়েছে শিল্পকলা বিষয়ে কয়েকটি গ্রন্থ।

একটি সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দা আমি। আমার জন্মভূমির এপাশে কৃষি, ওপাশে শিল্পাঞ্চল। এপার ছেড়ে দলে দলে মানুষকে ওপারে চলে যেতে দেখেছি। কৃষি প্রধান যৌথ গ্রামজীবন ভরে যেতে দেখেছি ফাটলে ফাটলে। উত্থান-পতনময় এই যৌথ গ্রামজীবন আমার চেতনার আকাশ ছেয়ে ধেয়ে এসেছে। মাটির সঙ্গে সংলগ্ন থেকে আমার কবিতায় আনতে চেয়েছি একটি স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। আবহমান বাংলা কবিতারই একটি অংশ বিশেষ হল আমার কবিতা। একদিন, হয়তো-বা, তারা, কালের স্রোতে ভেসে যাবে।
মেঘ ভেঙে বৃষ্টি নামবে এখনি।
আরো জোরে লাঙল চালাও মহিতোষ।
মনে রেখো
এই গ্রাম বাগুইহাটি।
এই মাঠ, লাঙলের ফালে উপড়ানো
তরুণ তামাটে মাটি।
মনে রেখো
সন ১৩৫৬, ১২ই বৈশাখ
পিতা পরাণ মণ্ডলের রক্তে ভেসে যাওয়া মাটি।
(মাটি/ তিনি ওই মাঠের দেবতা) "

আগামীকাল স্বকাল পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশ দাসের সাহিত‍্যজীবনের প্রথমদিনগুলির কথা থাকবে অনপেক্ষর পাতায়।
01/09/2020

আগামীকাল স্বকাল পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশ দাসের সাহিত‍্যজীবনের প্রথমদিনগুলির কথা থাকবে অনপেক্ষর পাতায়।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে কবি ও সম্পাদক প্রকাশ দাসের লেখা।

05/03/2020

আজ থেকে দুর্গাপুরে পাওয়া যাবে স্বকালের কবি আলোক সরকার সম্মাননা সংখ‍্যাটি। আগ্রহীরা ফোন করুন 9734796007 এই নম্বরে।

প্রিয় পাঠক আপনার স্পর্শের খোঁজে কলেজস্ট্রিটে পৌঁছে গেল স্বকালের কবি আলোক সরকার সম্মাননা সংখ‍্যা। পাবেন ধ‍্যানবিন্দু ও পা...
04/03/2020

প্রিয় পাঠক আপনার স্পর্শের খোঁজে কলেজস্ট্রিটে পৌঁছে গেল স্বকালের কবি আলোক সরকার সম্মাননা সংখ‍্যা। পাবেন ধ‍্যানবিন্দু ও পাতিরামে।

স্বকাল ।। কবি আলোক সরকার সম্মাননা সংখ্যা।। প্রচ্ছদ : শ্যামলবরণ সাহাশুধুমাত্র কবিতাই নয়, উপন্যাস, ছোট গল্প, অনুবাদ, আত্ম...
18/02/2020

স্বকাল ।। কবি আলোক সরকার সম্মাননা সংখ্যা।। প্রচ্ছদ : শ্যামলবরণ সাহা

শুধুমাত্র কবিতাই নয়, উপন্যাস, ছোট গল্প, অনুবাদ, আত্মজীবনী, প্রবন্ধ-সাহিত্য মিলিয়ে আলোক সরকারের সৃষ্টির পরিধিটি ছিল বিস্তৃত। স্বাধীনতা উত্তর বাংলায়, পঞ্চাশের দশকের সূচনায়, ' শতভিষা ' নামের ক্ষীণতনু, নিরাভরণ কবিতা পত্রিকাটি হয়ে উঠেছিল ভিন্নধারার কবিতা আন্দোলনের একটি নীরব অভিমুখ। সম্পাদনার সূত্রে এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থেকে তিরিশ পরবর্তী বাংলা কবিতার উজ্জীবনে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। ১৯৫০ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'উতলনির্জন' প্রকাশের সময় থেকে ২০১৬ সালের নভেম্বরে, তাঁর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে পর্যন্ত, প্রায় সাতটি দশক জুড়ে বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃত ভুবনে কবি আলোক সরকারের ছিল নীরব চলাচল। সেই অর্থে জনপ্রিয় ছিলেন না তিনি। বরং বলা ভালো, সাহিত্যের জনপ্রিয়তার চলতি সংজ্ঞাটিকে সারাজীবন তিনি সতর্কভাবে এড়িয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। পরিবর্তে , কবিতার এক তন্ময় বিশ্বে একাকী পরিব্রাজক হিসাবেই কাটিয়ে গিয়েছেন সারাজীবন। কবি আলোক সরকারের ৮৯ তম জন্মদিন উপলক্ষে , আগামী ৩মার্চ , বিকাল ৫টায়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাংলা আকাদেমির জীবনানন্দ সভাঘরে , তাঁর বিস্তৃত সাহিত্য-ভুবনের পরিধিটিকে স্পর্শ করে প্রকাশিত হচ্ছে প্রায় সাড়ে চারশো পৃষ্ঠার ' স্বকাল ' পত্রিকার কবি আলোক সরকার সম্মাননা সংখ্যাটি।

অন্য কবিদের কথা শঙ্খ ঘোষ" -- শুদ্ধতার এই সূত্রে দ্বিতীয় একটি নাম মনে পড়ে , আলোক সরকার। এই এক অনতিলক্ষ্য কবি, খুব নিভৃত...
17/10/2019

অন্য কবিদের কথা
শঙ্খ ঘোষ

" -- শুদ্ধতার এই সূত্রে দ্বিতীয় একটি নাম মনে পড়ে , আলোক সরকার। এই এক অনতিলক্ষ্য কবি, খুব নিভৃত উচ্চারণে তাঁর ভালবাসার জগৎ রচনা করে যান, " সমস্ত গোধূলিবেলা একই কথা" বলে যেন প্রণয়িনীরা ধীর পায়ে চলে যায় । আলোকের কবিতাবলি যেন ভিন্ন ভিন্ন কবিতাই নয় , তাঁর সব রচনাই যেন এক বড় রচনার অন্তর্গত , যা ক্রমাগতই রচিত হয়ে চলেছে এক ধূসর বর্ণে । প্রকৃতির ছবি সেখানে ফিরে ফিরে আসে যেন ধূসর কাঁচের মধ্য দিয়ে দেখা , আর তাঁর শব্দ ব্যবহারের আপনরীতিও তাঁকে এক গোপন আবরণের মধ্যে রেখে দেয় , যেন তাঁর কবিতা সকলের সামনে আসবার জন্যই নয়। "
- - -

মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্তও সাহিত্য সাধনায় মগ্ন ছিলেন উত্তর জীবনানন্দ যুগের অন্যতম প্রধান কবি আলোক সরকার । সারাজীবনই কবিতার প্রতি এই মগ্ন সাধনাটুকুরই প্রত্যাশি ছিলেন তিনি। সাহিত্যের প্রায় সব সীমানাকে স্পর্শ করে যেখান থেকে উঠে এসেছে একটি মৌলিক কণ্ঠস্বর। বস্তুত নিভৃতচারি এই কবির কোনো পূর্বসূরীও নেই, উত্তরসূরীও নেই। স্বকাল সাহিত্য পত্রিকা এই কবিকে নিয়ে প্রকাশ করছে একটি বিশেষ সংখ্যা। চার শতাধিক পৃষ্ঠার কবি আলোক সরকার সম্মাননা সংখ্যাটি প্রকাশিত হবে আগামী ডিসেম্বর, ২০১৯ । আগামীকাল এই কবির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী দিবস। তাঁকে সশ্রদ্ধ প্রণাম।

‌ কবি আলোক সরকার

"পুরস্কার কোনো কবির কোনো দিক থেকেই কোনো কাজে আসে বলে মনে হয় না। তা কেবল যারা পুরস্কার পেল না তাদের ভিতর কারো কারে...
16/10/2019

"পুরস্কার কোনো কবির কোনো দিক থেকেই কোনো কাজে আসে বলে মনে হয় না। তা কেবল যারা পুরস্কার পেল না তাদের ভিতর কারো কারো মনে একটা হতাশা আনে। এই হতাশার নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া থাকতেই পারে। এসব ভেবে যাবতীয় পুরস্কার প্রদান বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কে পুরস্কৃত হবে তা তো নির্ধারণ করেন অনেক সময় প্রকৃতপক্ষে কয়েকজন মাত্র --তাঁদের সকলের যোগ্যতা এবং সাধুতা বিষয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।অনেক সময় পুরস্কারদাতার লাভ-অলাভের চিন্তাও পুরস্কারপ্রাপক নির্বাচনে বেশ কাজ করতেই পারে। ওইসব কথা ভেবে পুরস্কারপ্রাপকের অযোগ্যতা অথবা যোগ্যতা নিয়ে আমি অন্তত মুহূর্তও চিন্তিত হই না। একজন লেখক অথবা কবি আমার কাছে, আর আমার মতো অনেকের কাছেই পুরস্কার পাওয়ার আগেও যেমন, পুরস্কৃত হবার পরেও ঠিক তেমন। রাজশেখর বসুর 'চলন্তিকা' অভিধানে পুরস্কার শব্দটির একটা অর্থ হচ্ছে 'বকশিশ'। অন্তত আজকাল কোনো-কোনো ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রভুর দেওয়া বকশিশ হয়ে ওঠে বৈকি! "
--- কবি আলোক সরকার।
কবি পরিচয়কে ছাপিয়ে তিনি ছিলেন ভিন্নধারার ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, কাব্যনাট্যকার এবং ছিলেন 'শতভিষা' নামে বাংলা কবিতার একটি ঐতিহাসিক ছোট কাগজের নীরব সম্পাদক। পঞ্চাশের বাংলা কবিতায়, সর্বার্থেই, আলোক সরকার হয়ে উঠেছিলেন একটি স্বতন্ত্র ধারা, একটি স্বতন্ত্র জগৎ,একটি স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। বাংলা কবিতার বিরল প্রজাতির এই কবির সামগ্রিক সাহিত্যকৃতির মূল্যায়ন ধরা থাকছে 'স্বকাল' পত্রিকার আগামী কবি আলোক সরকার সসম্মাননা সংখ্যাটিতে। সংখ্যাটির প্রকাশ-প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে। প্রিয় পাঠক আপনি সঙ্গে থাকুন।

28/09/2018

First time users use code RANDOM15 for minimum purchase of INR 700/- and get upto 15% random discount on total cost. Dismiss

Address

Swakal, Ed./Prakash Das, Panagarh, Panagarh Bazar
Burdwan
713148

Telephone

+918001942346

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when স্বকাল - Swakal posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to স্বকাল - Swakal:

Share

Category