15/10/2023
*পুজোর প্রেম*
নীলাঞ্জনা চক্রবর্তী
অষ্টমীর অঞ্জলীর সময় কে যে পেছন থেকে মাথায় ফুল ছুঁড়ে দিচ্ছিল বুঝতে পারছিল মেয়েটা। প্যান্ডেলে আজ খাওয়া দাওয়ার সময় তার পাতেই বার বার যে বেগুনী দিতে আসছিল, আর তাদের সামনে এসে সেল্ফি তুলছিল, সেই ছেলেটা। ষষ্ঠী থেকেই লক্ষ্য করছে সে। পাড়ার সব ছেলেরাই তার চেনা, কেউ দাদা, কেউ কাকা, কেউ বন্ধু, কিন্তু হাজার চেনার ভিড়ে এই অচেনা ছেলেটা কে? যার চোখদুটো শুধুই ওকে দেখে যাচ্ছে, ও বুঝতে পারছে। একটা অস্বস্তি, একটা ভালোলাগা, একটা মন কেমন তাকে ঘিরে রাখছে। খাওয়া দাওয়া শেষে প্যান্ডেলে বসে গল্প করছিল ওরা। বড়রা সবাই চলে গেছে, বন্ধুরাও উঠবে উঠবে করছে। অগত্যা উঠতেই হল। আজ বিকেলে বাড়ি থেকে ঠাকুর দেখতে যাওয়া। প্রতি বছর এই নিয়ে ওর খুব উৎসাহ থাকে। কিন্তু এবার প্যান্ডেল ছেড়ে যেতে যেন মন চাইছেনা। অষ্টমীর মায়া ভরা পড়ন্ত বেলায় মেয়েটা বাড়ির পথ ধরল। পেছনে সেই নাম না জানা ছেলেটা। যদিও তার নাম ঠিকানা মেয়েটা এতক্ষনে জেনেই ফেলেছে।
ছেলে -বউ, মেয়ে - জামাই, নাতি নাতনি, সব মিলে বাড়িটা গমগম করছে। বাড়ির ছোট বাবুটি অকৃতদার। তবু এ সংসারের অন্যতম খুঁটি তিনি। বাড়ির সবাই হই হই করে ঠাকুর দেখতে চলল। তাঁকেও সঙ্গে যেতে হবে। কিন্তু তিনি যেতে চাইলেন না। বয়স হয়েছে, আর এত ঘোরা পোষায় না। তার চেয়ে প্যান্ডেলে থাকবেন। আর মনের একান্ত গভীরে আশা করে রইলেন, সুবর্ণা যদি আজ আবার আসে? যেমন এসেছিল গতবার অষ্টমীর সন্ধ্যায়?
সরকার গিন্নি যত্ন করে শাড়িটা ভাঁজ করে রাখল। সরকার বাবু দেখল সেটা। এই একটিই শাড়ি সে এবার পেয়েছে পুজোতে তার বাপের বাড়ি থেকে। পুজোর আগেই কারখানা বন্ধ হয়ে গেল। তাই কিছুই দিতে পারেনি বউকে।
"এবার তোমাকে কিছুই দিতে পারলামনা ।" গলা ধরে আসে কষ্টে। "তুমি এমন ছেলেমানুষ কেনো গো? আসছে বছর দিও।" "কি ই বা দিতে পারি তোমায়?" গভীর নিশ্বাস পড়ে। কত্তার পাশে এসে গিন্নি বসে। "পুজোর দিনে অমন মন গুমরে থাকেনা গো। আর দেখো মা এবার সব ঠিক করে দেবেন।" গিন্নী কপালে হাত ঠেকায় মায়ের উদ্দেশ্যে। ঘরের আবছা আলোয় কি স্বর্গীয় দেখায় তাকে। সরকার বাবু সেই হাতদুটো ধরে বলে, "একটা গান শোনাবে আজ, কতদিন তোমার গান শুনিনা।"