28/01/2024
— JODI GOLPO TO VALO LAGE PLEASE COMMENT BOX E JANABEN.
ওগো শুনছো? সামনের কামরায় মনে হয় আগুন লেগেছে গো!
চোখে একটু তন্দ্রা ভাব এসেছিল, মায়ার এমন ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর শুনে রাজের তন্দ্রা ছুটে গেলো এক নিমেষে। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলো দুই কামরা আগে একটি কামরা থেকে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে, জানালা দিয়ে গলগল করে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। এর মধ্যেই শোনা গেলো অনেক মানুষের আর্তনাদ, নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর করুণ আবেদন। এক মুহূর্তে শরীরের শিরায় শিরায় উষ্ণ রক্ত আরো টগবগ করে ফুটে উঠেলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো তার স্ত্রী মায়া'র কোলে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে তাদের একমাত্র মেয়ে। বাইরে আবার তাকিয়ে দেখলো ঢাকা টু বেনাপোলগামী এক্সপ্রেস তখনো ছুটে চলেছে সাঁই সাঁই করে। পাশের কামরায় আগুন বাড়ছে, ছড়িয়ে পড়ছে অন্য কামরায়।
মায়ার হাত দুটি ধরে শান্ত স্বরে রাজ বললো,
— মায়া তুমি ভয় পেও না, আমি তো আছি, তুমি এখানেই বসো। খবরদার চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে যেও না। আমি দেখছি কি করা যায়।
কাঁদতে কাঁদতে রাজের হাত চেপে ধরে মায়া,
— ওগো তুমি আমাদের ছেড়ে যেও না গো, আমার বড্ড ভয় করছে!
মায়ার কথা শুনে তার বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। কিন্তু তাও সে উঠলো,
— আমি আসছি মায়া, তুমি বসো একটু।
কোনোরকমে কামরার দরজার কাছে যেতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো সে, ইতিমধ্যেই এই কামরায় পৌঁছে গেছে নিজের লেলিহান বুভুক্ষু শিখা নিয়ে। ট্রেনের গতি আস্তে আস্তে ধীর হচ্ছে। হাতের কাছে যতজনকে পারলো কামরা থেকে বের করে দিলো রাজ। পাশের কামরার অনেক জন এসেও হাত লাগিয়েছে। কিন্তু এ আগুন নেভানো যাচ্ছে না কিছুতেই, যেন ঠিক করেই নিয়েছে সর্বস্ব গ্রাস করে নেবে আজকেই। ওরা কয়েক জন প্রাণপণে চেষ্টা করলো অসহায় মানুষগুলোকে ওখান থেকে বের করার। ট্রেন থেমে গেছে ততক্ষণে।
ঠিক তখনই রাজের মস্তিস্কের মধ্যে ভেসে উঠলো দুটি মানুষের মুখ, তার স্ত্রী আর সন্তান। তাড়াতাড়ি আগুনের ঝাপটা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে ভিতরে ঢুকেই বুকটা ধক্ করে উঠলো তার; কোথায় মায়া আর কোথায় বা তাদের মেয়ে? বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ভরে উঠেছে কামরা, কিছু দেখা যায় না। এখনো কিছু মানুষ রয়েছে, সেখানে কেও কেও তখনো শ্বাস নিচ্ছে, কেও বা ত্যাগ করেছে শরীরের মায়া। তাদের মধ্যেই কোনোরকমে হাতড়ে হাতড়ে খুঁজতে শুরু করলো নিজের স্ত্রী, মেয়েকে। এক সময় দেখলো জানালার নীচে গুটিয়ে বসে আছে মায়া, আর বুকে তখনো জড়িয়ে ধরে রেখেছে নিজের একরত্তি মেয়েকে। আগুনে অর্ধেক ঝলসে গেছে তারা, মেয়েটা হয়তো আর বেঁচে নেই। মায়া শ্বাস নিচ্ছে কোনোরকমে। রাজকে দেখেই বলে উঠলো,
— তুমি এসেছো? অনেক দেরি করে ফেললে যে!
কাঁদতে কাঁদতে ওদের বুকে জড়িয়ে ধরলো রাজ। ওর কানে তখনো ভাসছে মায়ার কান্না মাখানো কণ্ঠস্বর,
— আমার বড্ড ভয় করছে!
আগুন তখন সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। লকলকে শিখা বারবার ছুঁয়ে দিচ্ছে শরীর। জানালা দিয়ে কোনোরকমে মুখটা বাড়ালো সে। বাইরে তখন অনেক মানুষ, পুলিশ, সাংবাদিক। কেও কেও নিজের ফোন বের করে ক্যামেরাবন্দী করছে মুহুর্তগুলো।
তার মধ্যেই কিছু মানুষ এসে তাকে জোর করে জানালা দিয়ে বের করার চেষ্টা করলো। কিন্তু সে বেরোলো না, সে দৃঢ় গলায় বলে দিলো,
— ভিতরে আমার স্ত্রী, সন্তান আছে। তাদের ফেলে আমি যাবো না।
শরীর পুড়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। এই আগুনেই সমাধি হয়েছে তার ভালোবাসার, তাই এই আগুনের বুকেই শেষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে সে।
লেখা ও ছবি - সংগৃহীত