Sk Zamaluddin Bin Abdus Subhan

26/09/2025

🎙️পশ্চিমবঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যের মাদ্রাসাগুলির দুরবস্থা

✒️শাইখ আব্দুল্লাহ সালাফী حفظه الله

পশ্চিমবঙ্গ ও তার পার্শ্ববর্তী রাজ্যসমূহের অধিকাংশ মাদ্রাসায় সঠিক পঠন-পাঠন হচ্ছে না বললে অত্যুক্তি হবে না। এর কয়েকটি কারণ নিম্নরূপ—

১) মাতৃভাষায় পঠন-পাঠনের অভাব।
আরবি শেখার জন্য উর্দু নামক একটি অতিরিক্ত ভাষার মাধ্যমে পড়ানো হয়, যা বাঙালি ছাত্রদের কাছে অজানা। ফলে তারা উভয় দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ অর্ধশিক্ষিত আলেমদের এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। উর্দুকে যদি আলাদা ভাষা হিসেবে শেখানো হয় এবং আরবি ব্যাকরণ, সাহিত্য, কোরআন ও হাদিস মাতৃভাষা বাংলায় পড়ানো হয়, তাহলে ওপার বাংলার মতো এপার বাংলাতেও বাংলাভাষী আলেমগণ পারদর্শী হবেন, ইনশাআল্লাহ।

২) যুগোপযোগী সিলেবাসের অভাব।
আজকের যুগে উন্নতমানের সিলেবাস সহজলভ্য হলেও পুরনো বইগুলো শিক্ষাক্রমে রাখা হচ্ছে, কারণ সেগুলোর অনুবাদ বাজারে পাওয়া যায় এবং অযোগ্য শিক্ষকদের দাবিতে তা বজায় রাখা হয়। অথচ আরবি ব্যাকরণের বই হওয়া উচিত সরল এবং তা মাতৃভাষায় পড়ানো প্রয়োজন। বেদনাদায়ক হলেও সত্য, অধিকাংশ শিক্ষক বাংলা ভাষা ও এর সঠিক ব্যবহার জানেন না। অথচ পশ্চিমবঙ্গে প্রায় তিন কোটি বাঙালি মুসলিম এবং অগণিত বুদ্ধিজীবী ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে উদাসীন। আমার মতো অল্প জ্ঞানসম্পন্ন কিছু মানুষ চিন্তা করলেও তাদের পরামর্শ 'সাদা সাহারা' বা 'অরণ্যে রোদন' সমতুল্য। যাদের সমাজে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাদেরই এ বিষয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আমি পাঁচ বছর শিক্ষকতা কালে বাংলার মাধ্যমে পঠন-পাঠন চালালে, অজ্ঞ কিছু শিক্ষক ষড়যন্ত্র করে কমিটিকে বোঝায় যে আমি নাকি উর্দু জানি না। এর প্রেক্ষিতে আমি শিক্ষকতার ময়দান ছেড়ে দিয়ে ভিন্নভাবে দ্বীনি খেদমত শুরু করি। আর রাহীকুল মাখতুম-এর প্রখ্যাত রচয়িতা শাইখ শফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহিমাহুল্লাহ) আমাকে এ কাজে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তাতে বারাকাহ দান করেছেন। তিনি যেন এই নগণ্য পরিশ্রম কবুল করেন।

৩) অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া।
যে বিষয়ে কারো জ্ঞান নেই তাকে সে বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া এবং তার গ্রহণ করা বড় অপরাধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
"যখন অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করো।" (সহীহুল বুখারী, হাদিস: ৬৪৯৬)

তিনি আরও বলেছেন: "দুটি ক্ষুধার্ত বাঘকে যদি একটি ছাগলের পাল ছেড়ে দেওয়া হয়, তারা যত ক্ষতি করবে, তার চাইতে বেশি ক্ষতি করে সমাজে সেই ব্যক্তি—এক. সম্পদের লোভী, দুই. দ্বীনি সম্মান কামনাকারী।" (সহীহুল জামে: ৫৬২০, তিরমিজি: ২৩৭৬)

বর্তমানে এটাই ঘটছে। অযোগ্য অনেক ব্যক্তি শাইখুল হাদিস সেজেছেন; যারা আরবি সাহিত্য ও ব্যাকরণ নিজেরাও বোঝেন না, অথচ শিক্ষকতা করছেন। আল্লাহ বলেন:
"যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে কথা বলো না। নিশ্চয় তোমার শ্রবণ, দৃষ্টি ও হৃদয়—এসব বিষয়ে তোমাকে জিজ্ঞাসা করা হবে।" (সূরা আল-ইসরা: ৩৬)

৪) পাশ-ফেল বিষয়ে খিয়ানত।
মাদ্রাসার কমিটির কাছে নাম কামানোর জন্য অনেক অযোগ্য ছাত্রকে বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়। অথচ তারা বুখারী-মুসলিমের আরবি পাঠ পড়তে অক্ষম, অর্থ বোঝা তো দূরের কথা। তারপরও তাদের ফাজিলাতের শাহাদাহ বা ইজাযাহ প্রদান করা হয়। এ কাজ প্রায়শই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকরাই করে থাকেন। আল্লাহ বলেন:
"সত্য সাক্ষ্য গোপন করো না। যে তা গোপন করে, তার হৃদয় পাপী।" (সূরা আল-বাকারাহ: ২৮৩)

৫) খতমে বুখারীর প্রহসন।
খতমে বুখারী নামক অনুষ্ঠান আসলে এক ধরনের বিদআত। এর মাধ্যমে কোরআনকেই অসম্মান করা হয়। কেননা মাদ্রাসায় খতমে কোরআন নামে কোনো অনুষ্ঠান হয় না। তাছাড়া যারা খতমে বুখারী করে, তাদের প্রকৃত অবস্থা কী—তা দেখলেই বোঝা যায়। আলহামদুলিল্লাহ, জামিয়া সালাফিয়া বেনারসে এ বিদআতকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।

৬) জলসার মাধ্যমে সনদ বিতরণ।
পাবলিকের সামনে অযোগ্য ছাত্রদের যোগ্য বলে প্রচার করা হয়, যদিও তারা হাদিসের গ্রন্থ বা ব্যাকরণ সঠিকভাবে পড়তে অক্ষম। এটি বড় ধরনের প্রতারণা।

৭) নির্ধারিত সিলেবাস অনুসরণ না করা
সহীহুল বুখারী ছাড়া অন্যান্য কিতাব প্রায়ই অবহেলিত থাকে। বুখারীতেও শেষ মুহূর্তে দ্রুত পড়ানো হয়, অথচ বোঝানো বা গভীরে নেওয়ার চেষ্টা থাকে না।

৮) শিক্ষকদের দিয়ে অর্থ সংগ্রহ।
কমিটি কেবল দর্শকের ভূমিকা পালন করে। অথচ তাদেরই কাজ অর্থ সংগ্রহ করা। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেয়। এর ফলে ছাত্রদের বারবার ছুটি দেওয়া হয়—অর্থ সংগ্রহের জন্য, কৃষিকাজের জন্য, বার্ষিক জলসার জন্য ইত্যাদি। পড়াশোনার কোনো সময়সূচি থাকে না।

৯) সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় শিক্ষা প্রদান।
অসহায় ছাত্রদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া ঠিক আছে। কিন্তু হাদিসের অপব্যাখ্যা করে সবার জন্য বিনা পয়সায় শিক্ষা চালানো ভুল। যেমন: "যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য বের হলো, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথে রয়েছে।" (সহীহ তারগীব, ২৬৪৮)
কিন্তু এ হাদিসের সানাদকে অনেক মুহাদ্দিস দুর্বল বলেছেন। ফলে যাকাত ও দানের অর্থ ব্যবহার সবার জন্য বৈধ নয়। সূরা তওবা (আয়াত: ৬০)-এ ফী সাবিলিল্লাহ মূলত মুজাহিদ ও জিহাদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ আজ তা যাকাতের অপব্যবহারে পরিণত হয়েছে। ছাত্রদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী ফি নেওয়া উচিত এবং কমিটিই অর্থ সংগ্রহে সক্রিয় হতে হবে। তাহলেই শিক্ষকবৃন্দ নিশ্চিন্ত মনে শিক্ষা দিতে পারবেন।

১০) কমিটির সদস্যদের সন্তানের মাদ্রাসায় পড়াশোনা।
যদি কোনো কমিটির সদস্যের সন্তান মাদ্রাসায় না পড়ে, তবে তিনি নৈতিকভাবে সদস্য হওয়ার যোগ্য নন। দুনিয়ার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেমন নিয়ম আছে, দ্বীনি প্রতিষ্ঠানেও তেমন থাকা উচিত। এতে করে কমিটির সদস্যরা প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে আন্তরিক হবেন।

১১) শরিয়তনিষ্ঠতা।
কমিটি, শিক্ষক ও ছাত্র—সবারই শরিয়তের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হওয়া জরুরি। অমলহীন ব্যক্তির সম্পৃক্ততা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া কিছু নয়। কথা ও কাজের মিল অপরিহার্য।

১২) অর্থায়নের উৎস।
দায়িত্বশীলদের নিশ্চিত করতে হবে যে অর্থায়ন যেন হারাম বা সন্দেহজনক উৎস থেকে না হয়। কারণ অপবিত্র দ্বারা পবিত্র অর্জন করা অসম্ভব। কিয়ামতের দিনে মানুষের কাছ থেকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে, তার একটি হলো—“কোথা থেকে উপার্জন করেছ এবং কোথায় ব্যয় করেছ।” (সহীহ তিরমিজি, হাদিস: ২৪১৭)

১৩)দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলে জান্নাতের সুগন্ধ নসিব হবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
"যে বান্দার অধীনে আল্লাহ কিছু মানুষকে রাখেন, অথচ সে তাদের প্রতি সুপরিচালনা করে না, সে জান্নাতের সুবাসও পাবে না।" (সহীহুল বুখারী, হাদিস: ৭১৫০)
অন্য হাদিসে এসেছে: “জান্নাতের সুবাস চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকেও অনুভূত হয়।” (সহীহুল বুখারী, হাদিস: ৩১৬৬)

আল্লাহ আমাদের নিয়াতের বিশুদ্ধতা, আমলের পরিপক্কতা , দায়িত্ব পালনে আমানতদারিতা করুন এবং কর্মে আল্লাহভীরুতা দান করুন। আমিন।

23/09/2025

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ ‏ رحمه اللهইন্তেকাল করেছেন। إنا لله وإنا إليه راجعون
‎

20/09/2025

তার জন্য দুটি মুক্তি লিখে দেওয়া হয়:
كتب له براءتان:
=~=~=~=~=~=~=~=~=
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন যাবত তাকবীরে তাহরীমা সহকারে জামায়াতে নামায আদায় করবে, তার জন্য দুটি মুক্তি লিখে দেওয়া হবে:
জাহান্নাম থেকে মুক্তি।
নিফাক হতে মুক্তি।
(সহীহ তিরমিযী নং ২৪১)
✓ ৪০ দিনের পাঁচ ওয়াক্তের নামায সংখ্যা দাঁড়াবে দুই শত ওয়াক্ত।
✓ নিফাক বা মুনাফিক হচ্ছে, মুখে ইসলাম স্বীকার করা এবং অন্তরে কুফর বজায় রাখা। উপরে ইসলাম ভিতরে কুফরী।
✓ তাকবীরে তাহরীমা ঐ তাকবীরকে বলা হয় যা দ্বারা নামায শুরু করা হয়। অর্থাৎ সে কেবল জামায়াত সহকারে নামায পড়ে নি; বরং জামায়াতের প্রথম তাকবীরের সাথে সালাত আদায় করেছে।
✓ মুক্তি অর্থাৎ সে জাহান্নাম যেতে পারে না এবং সে মুনাফেকও হতে পারে না।

§ আল্লাহ্ ভালো জানেন, আমরা এই মুক্তির খাতায় নাম লেখাতে পেরেছি কী?

17/09/2025

ইমাম শাফে'ঈ رحمه الله বলেন,

"একজন পুরুষের জন্য তার বয়স প্রকাশ করা মর্যাদার কাজ নয়।"

[হিল্যাতুল আউলিয়া, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১২৯]

মালিক ইবনু আনাস رحمه الله কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তার বয়স সম্পর্কে, তিনি বলেছিলেন,

"তোমার নিজের ব্যাপারে মনোযোগ দাও।"
এবং তিনি আরও বলেছিলেন:
"একজন পুরুষের জন্য নিজের বয়স প্রকাশ করা মর্যাদার মধ্যে পড়ে না; কারণ যদি সে ছোট হয়, তবে মানুষ তাকে তুচ্ছ করবে, আর যদি সে বয়স্ক হয়, তবে মানুষ তাকে বৃদ্ধ বলে অবজ্ঞা করবে।”

(দেখুন: আল-ফাদানি, পৃষ্ঠা ৮৫–৮৬)
সংকলনে, আবু তুবা মোজাহিদুল ইসলাম

16/09/2025

10/09/2025

শাইখ ইবনু উসাইমিন رحمه الله বলেন:

“তুমি যদি কাউকে তার চেহারা বা বাহ্যিক রূপের কারণে সমালোচনা করো, তবে তা এমন যেন তুমি সৃষ্টিকর্তাকেই সমালোচনা করছো। এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়।”

[সূরাহ হুজুরাতের তাফসীর, আয়াত ১১]

09/09/2025

আপনি কি আপনার শিশুকে এ ধরনের ইসলামী আদব শিক্ষা দিতে চান? তাহলে আমার লেখা (পাঠ্যপুস্তকের নিয়মে তাওহীদ ও শিষ্টাচার) বইটি সংগ্রহে রাখুন।
প্রাপ্তিস্থান: লেখকের নিকট থেকে সংগ্রহ করুন।

08/09/2025

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"যে তোমার প্রতি কোনপ্রকার কল্যাণ করে, তুমিও তাকে তার সমপরিমাণ প্রতিদান দিও। যদি না পারো তো তার জন্য দুআ করিও"। (স্বাহীহুল জামি: ৫৯৩৭)

07/09/2025

❇️ নামায❇️
⏺️الصلاة⏺️
⭐ রিয্ক আনয়নকারী।
⭐ স্বাস্থ্যের হেফাজতকারী।
⭐কষ্ট দূরকারী।
⭐রোগ বেয়াদী দূরকারী।
⭐ অন্তর দৃঢ় কারী।
⭐ মুখমন্ডল উজ্জলকারী।
⭐ আত্মাকে প্রশান্তিদাতা।
⭐ অলসতা দূরকারী।
(যাদুল মা'আদ:৪/৩০৪)

06/09/2025

অন্তর নষ্ট হয়ে গেলে চোখ, কান এবং জিহ্ববা ও নষ্ট হয়ে যায়।
(ইবনুল কায়্যিম)