12/10/2023
অনেক অজানা তত্ত্ব- যা হয়তো অনেকেই যানেনা।
☆নফস এবং রুহের পার্থক্য ☆
নফস শব্দটি দিয়ে প্রাণকেই বােঝানাে হয়েছে । যদিও হিন্দুশাস্ত্রে নফসকে আত্মাই বলা হয়েছে তবে জীবের আত্মা বলা হয়েছে । এই নফস তথা প্রাণ কেবলমাত্র জিন এবং মানুষের মধ্যেই দেওয়া হয় নি , বরং স্থলচর , জলচর , সর্বপ্রকার অতি ক্ষুদ্র হতে অতি বড় জীব সবারই নক্স আছে তথা প্রাণ আছে । আরেকটু প্রশ্ন থেকে যায় যে , বৃক্ষ হতে তরু - লতারও প্রাণ আছে । এবং যে কঠিন ছােট ছােট পাথরগুলাে আস্তে - আস্তে প্রকাণ্ড পাথরে পরিণত হয় উহাতে কি প্রাণ আছে ? নাকি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনা - আপনি বেড়ে চলে ? এই প্রশ্নটির উত্তর জীববিজ্ঞানীরাই ভালাে দিতে পারবেন ।
তবে আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টিরাজ্যের মাঝে যাদেরকে নফস তথা প্রাণ দেওয়া হয়েছে তারা সবাই তৌহিদে বাস করে - একমাত্র জিন এবং মানুষ ছাড়া । কারণ , জিন এবং মানুষকে সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিটি দান করা হয়েছে । তথা ভালাে - মন্দ বিচার - বিবেচনা করার সীমিত স্বাধীন ক্ষমতাটি আল্লাহ কর্তৃক দান করা হয়েছে । অন্যথায় , আমাদের জানা মতে আর কোনাে জীবকেই এই রকম সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিটি দেওয়া হয় নাই । স্থলচর এবং জলচর যত প্রকার অসংখ্য ছােট এবং বড় প্রাণী আছে তাদের কারও শাহারগের তথা জীবন - রগের নিকটে আল্লাহ্র অবস্থান করার কথাটি কোরান - এ পাওয়া যায় না , এমনকি আল্লাহ্র তাঁর সমগ্র সৃষ্টিজগতের জড় পদার্থের সঙ্গে অবস্থান করার কথাটিও পাওয়া যায় না । অঙ্কের হিসাবের চেয়েও অনেক বেশি হিসাব করে আল্লাহ্ কোরান - এর প্রতিটি শব্দ চয়ন করেছেন ।
কিন্তু আমাদের বুঝবার সূক্ষ্ম দুর্বলতাটিকে প্রকাশ না করে গোঁজামিলের আশ্রয় নেই এবং নিতে হয় । যেমন রুহ শব্দটির পরিভাষা ইংরেজিতে পাওয়া যায় না । তাই না বুঝে ‘ স্পিরিট ' শব্দটি ব্যবহার করি । রুহের প্রতিশব্দ যদিও আমরা পাই না তবে হিন্দুশাস্ত্রে এই রুহ শব্দটিকে পরমাত্মা বলে অভিহিত করা হয়েছে । এখানে পরম অর্থটি হলাে আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্র আত্মা বলে বােঝানাে হয়েছে । অবশ্য কোরান - এ রুহকে বলা হয়েছে “ কুলুর রুহ মিন্ আমরি রাব্বি ” – অর্থাৎ , “ রুহ আমার রবেরই আদেশ হইতে আগত । ” জীবের জীবন আছে তথা প্রাণ আছে তথা নফস আছে । • তা হলে এই জীবন , এই প্রাণ এবং এই নফসকে কেমন করে আত্মা বলে ঘােষণা করি ? সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে ইহাও একটি সাংঘর্ষিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায় , তবে বুঝতে এবং বােঝাতে কোনাে উপায় থাকে না বলেই এই সাংঘর্ষিক বিষয়টি তুলে ধরতে হয় ।
কেউ জেনে - শুনে তুলে ধরেন ,
আবার কেউ না - জেনে তুলে ধরেন ।
বিষয়টি ভুল হলেও দোষ দেওয়া যায় না । কারণ জ্ঞানের অভাবেই এ - রকমটি হয় বলে মনে করি । জীবের প্রাণ আছে , কিন্তু কোনাে আত্মা নাই এই কথাটি কেমন করে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরব ? আসলে হাকিকতে কোনাে জীবেরই আত্মা নাই - একমাত্র জিন এবং মানুষের শাহারগের তথা জীবন - রগের নিকটে অতীব সূক্ষ্মরূপে অবস্থান করে , যাহা টের পাবার কোনাে উপায় থাকে না সেই পর্যন্ত , যে - পর্যন্ত না একজন মানুষ একটানা কয়েক বছর কামেল গুরু অথবা কামেল গুরুর খেলাফতপ্রাপ্ত কোনাে খলিফার নির্দেশে নির্জন স্থানে একাকী ধ্যানসাধনায় মগ্ন থাকে । কারণ , রুহ বিষয়টি কথার দ্বারা বােঝানাে যায় না ।।
মানুষের শাহারগের তথা জীবন - রগের নিকটে অতীব সূক্ষ্মরূপে অবস্থান করে , যাহা টের পাবার কোনাে উপায় থাকে না সেই পর্যন্ত , যে - পর্যন্ত না একজন মানুষ একটানা কয়েক বছর কামেল গুরু অথবা কামেল গুরুর খেলাফতপ্রাপ্ত কোনাে খলিফার নির্দেশে নির্জন স্থানে একাকী ধ্যানসাধনায় মগ্ন থাকে ।
কারণ , রুহ বিষয়টি কথার দ্বারা বােঝানাে যায় না । তবে অতি সামান্য একটি ধারণার ছায়া দেওয়া যায় । কোরান - এর এই ছােট্ট আয়াতটির দিকে একটু বিশেষভাবে লক্ষ করে দেখুন যে , কুলুর নাফসি মিন রাব্বি’ বলা হয় নি । কেন বলা হয় নি ? কারণ , আল্লাহর কোনাে নফস নাই । নফস যাদের আছে তাদের অবশ্যই একটিবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে । কিন্তু যেহেতু রুহ রবেরই আদেশ বলা হয়েছে সেই হেতু রুহ জন্ম - মৃত্যুর বৃত্তে তথা বলয়ে অবস্থান করে না । যেহেতু রবের আদেশটি হলাে রুহ এবং এই রুহ নামক আদেশটি আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টিরাজ্যের মধ্যে ( অবশ্য আমাদের জানা মতে , কারণ অন্য গ্রহে যদি এই জাতীয় কোনাে জীব থেকে থাকে ! )
কেবলমাত্র দুটি জীবের সঙ্গে তথা দুইটি নফসের কাছাকাছি অতীব সূক্ষ্মরূপে অবস্থান করে ।
সেই দুইটি জীবের নাম হলাে :
একটি জিন এবং অপরটি মানুষ ।
যেহেতু আমাদের কাজ - কারবার মানুষদের নিয়েই সেই হেতু ইচ্ছা করেই জিন জাতিকে এড়িয়ে যাই । তা ছাড়া কোরান এই মানুষকেই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব ( ক্রাউন অব দ্য ক্রিয়েশন ) বলে ঘােষণা করেছেন । এর পরেও আরও কিছু কথা থাকে আর সেই কথাটি হলাে , শয়তানকেও আল্লাহ্র সমগ্র সৃষ্টিরাজ্যের মধ্যে জিন এবং মানুষের অন্তরে অবস্থান করার আদেশটি আল্লাহ্ কর্তৃক দেওয়া হয়েছে । আমাদেরকে ভালাে করে মনে রাখতে হবে যে জিন এবং মানুষের অন্তর বিহনে আর কোথাও শয়তানকে অবস্থান করার অনুমতিটি দেওয়া হয় নাই । সুতরাং , শয়তানের যত বাহাদুরি , যত নর্তন - কুর্দন সব কিছু এই জিন এবং মানুষের অন্তরের মধ্যেই অবস্থান করে ।
জাগতিক সভ্যতার বিকাশ ঘটানাের পেছনে এবং ধ্বংসের বিভীষিকা ছড়ানাের পেছনে শয়তানের অবদান কতটুকু তা আমাদের জানা নাই । এই শয়তান আবার চারটি রূপ ধারণ করতে পারে এবং এই চার রূপের যে - কোনাে রূপ ধারণ করে মানুষকে সঠিক পথ হতে সরিয়ে দিয়ে ভ্রান্ত পথে ঠেলে দেয় ।
সেই চারটি রূপ হলাে :
◆এক . শয়তান , ◆দুই . ইবলিস ,
◆তিন , মরদুদ এবং◆ চার , খান্নাস ।
যেহেতু ‘ মিন শাররি ওয়াসওয়াসিল খান্নাস ' তথা খান্নাসের অপকারিতা হতে আশ্রয় চাওয়ায় কথাটি কোরান - এ বলা হয়েছে তাই পবিত্র তথা প্রাণ তথা জীবনের সঙ্গে একত্রে বাস করে নফসটিকে খান্নাস - রূপী শয়তান মােহ - মায়ার জালে আটকিয়ে রাখে ।
এই মােহ মায়ার জালটিকে ছিন্ন করতে পারলেই নফসের নিকট যে - রুহ অতীব সূক্ষ্ম রূপে অবস্থান করছে উহা তখন পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করতে থাকে । সাধকেরা একটানা ধ্যানসাধনা করার পর আল্লাহর বিশেষ রহমতপ্রাপ্ত হলেই রুহের অতীব সূক্ষ্ম রূপটিকে পরিপূর্ণরূপে দেখতে পেয়ে অবাক বিস্ময়ে হতভম্ব খেয়ে যায় । এই পরিপূর্ণতার প্রশ্নে সাধকদের নিকট রুহের দর্শনে ফানা - বাকার এমন রহস্যময় লীলাখেলা চলে যে সাধারণ মানুষ তাে দূরে থাক , বরং বড় - বড় বিদ্বান পণ্ডিতেরাও এদের বিষয়ে খেই হারিয়ে ফেলে ।
রুহের পরিপূর্ণ জাগ্রত অবস্থানটি যে - সাধকের মধ্যে অবস্থান করে তিনিই বান্দানেওয়াজ তথা আল্লাহর বিশেষ রহমতপ্রাপ্ত বান্দা । তিনিই রুহুল্লাহ তথা পরিপূর্ণ রুহের অধিকারী । তিনিই ওয়াজহুল্লাহ্ তথা তিনিই আল্লাহ্র চেহারা । তিনিই নরের রূপে নারায়ণ তথা নরনারায়ণ । আল্লাহ্র এই দানটি একমাত্র শক্তিশালী রাত্রিতে দান করা হয় । ইহা কোনাে নৈসর্গিক রাত্রি নহে , বরং আধ্যাত্মিক রাত্রি । নফস এবং খান্নাস জোড়া হলে এই শক্তিশালী রাত্রির সন্ধান পাওয়া যায় না । তাই খান্নাসকে তাড়িয়ে দিয়ে সাধক যখন বেজোড় রাত্রিতে অবস্থান করে তখনই সেই রাত্রিটি হয় শক্তিশালী রাত্রি এবং এই শক্তিশালী রাত্রেই আল্লাহ্ রহিম ’ - রূপটি ধারণ করে ( রহমান - রূপে নয় কারণ রহমান - রূপে সাধারণ দান ) দান করেন । তাই আল্লাহ্ এখানে গফুরুর রহিম , কিন্তু গফুরুর রহমান নন , কারণ কোরান - এর একটি স্থানেও গফুরুর রহমান ব্যবহৃত হয় নি ।রহিম পরম দাতা।।
[ সংখিপ্ত আলোচনা করা হলো]
সুত্রঃ কোরানুল মজিদ --(২য় খন্ড)
হুবুহু সব্দ অনুবাদ ও সামান্য ব্যাখ্যা-----
কালান্দার বাবা জাহাঙ্গীর আল সুরেশ্বরী (রহঃ)