06/07/2025
গল্পের নাম:: আয়নার ওপারে
কলকাতার এক বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ে মেহরিন। খুব মেধাবী, কিন্তু একাকী। তার বাবা-মা মারা গেছেন ছোটবেলায়। হঠাৎ সে জানতে পারে, তার ঠাকুরদা যিনি ব্রিটিশ আমলে তামিলনাড়ুতে চাকরি করতেন, উটির পাহাড়ে একটি বিশাল বাংলো রেখে গেছেন – এখন সেটা তার নামে হয়েছে।
মেহরিন ট্রেনে করে উটির স্টেশনে নামে। কুয়াশায় ঢাকা রাস্তায় লোকজন তাকে বলে,
"ম্যাডাম, ওই বাংলোতে কেউ থাকে না… আয়নার ঘরটায় গেলে সাবধানে যাবেন!"
সে হেসে উড়িয়ে দেয়। বাংলো বিশাল, নীরব। পুরনো আসবাব, মেঝেতে ধুলো, আর কেন্দ্রে একটি রাজকীয় আয়না—পুরো দেওয়ালজুড়ে।
রাত গভীর হতেই সে দেখে, আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব এক সেকেন্ডের জন্য কাঁপে—আর একটু হাসে।
পরদিন স্থানীয় বাজারে এক বৃদ্ধা বলে,
"বাবু, ওই আয়নায় শায়রা নামের মেয়েটি আটকে আছে। সে ছিল পাহাড়ি গ্রামের মেয়ে, কিন্তু সাহেবদের কু-চাহনির শিকার হয়ে ওই বাংলোতেই আত্মহত্যা করে। তারপর তার আত্মা আটকে যায় সেই আয়নায়…"
মেহরিন বিশ্বাস করে না। সে রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে।
ছবিতে সে দেখে, পিছনে আরও একজন—একটা মেয়ের ছায়া, কাঁধে চুল, চোখে রক্তমাখা দাগ।
ঘুমে বারবার দেখা যায়—এক মেয়ে তাকে বলছে,
"আমার জীবন শেষ হয়েছে… তোমার জীবনটা আমায় দাও…"
ঘরের জিনিসপত্র নড়ে, দরজা খুলে যায়, আয়নার কাচে হাতের ছাপ পড়ে।
শেষে সে ডায়েরি খুঁজে পায়—তার ঠাকুরদা লিখেছিলেন:
"এই আয়নাটি ‘জন্ম-বন্ধ’ আয়না। যার ছায়া তাতে বন্দি হয়, সে চাইলে নিজের জায়গায় কাউকে রেখে যেতে পারে। একবার যদি সে সফল হয়, আয়নার ভেতরে নতুন বন্দি জন্মায়…"
এক রাতে ঘুম ভেঙে দেখে—আয়নায় থাকা মেয়েটি (শায়রা) এখন আর ছায়া না, বরং জীবন্ত। মেহরিন দেখে, নিজের মুখে কাঁদছে, কিন্তু আয়নার ভেতর থেকে।
শায়রা তখন আয়নার বাইরের দেহে ঢুকে পড়েছে। মেহরিন আটকে গেছে আয়নার ভেতর।
পরদিন গ্রামবাসীরা দেখে মেহরিন বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মুখে হালকা হাসি, চুল খোলা, চোখে একধরনের অচেনা শীতলতা।
তবে তার কণ্ঠ বদলে গেছে। এক বাচ্চা ছেলে বলে: "তুমি কি সত্যিই আগের সেই দিদি?"
সে হাসে, আর বলে: "আমি এখন মুক্ত… এবার তোমাদের সবাইকেই দেখব…"
তার পেছনে আয়নার ভেতর থেকে মেহরিনের চোখ কান্নায় ভিজে — কিন্তু বাইরে শায়রার শরীর হেসে যাচ্ছে।
এই গল্পটি যদি animated দেখতে চান কমেন্ট করুন