Chakma Media

Chakma Media Covering culture, religion, music, food and various topics about Chakma and other indigenous peoples of the world's.

বুদ্ধ পুর্ণিমা উপলক্ষে পার্বত্য জেলায় শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিতচাকমা মিডিয়া ডেস্ক১১ মে ২০২৫, রবিবার১০ মে ২০২৫ র...
11/05/2025

বুদ্ধ পুর্ণিমা উপলক্ষে পার্বত্য জেলায় শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

চাকমা মিডিয়া ডেস্ক
১১ মে ২০২৫, রবিবার

১০ মে ২০২৫ রাঙামাটিতে শুভ বুদ্ধ পুর্ণিমা ২৫৬৯ বুদ্ধাব্দকে সামনে রেখে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি পালিত হয়েছে। এ দিনটি সিদ্ধার্থের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ ত্রিস্মৃতি বিজরিত। এ দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি অতীব পবিত্র ও মহান পুণ্যময় দিন।

পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ এর উদ্যোগে রাঙামাটি সদর, খাগরাছড়ি সদর, দীঘিনালা, বাঘাইছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সদরে সর্বজনীনভাবে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে।

রাঙামাটি সদরে এ আয়োজনে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা দাঙ্গু সুপ্রদীপ চাকমা, এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ দাঙ্গু কাজল তালুকদার, সদস্য দাঙ্গু দেবপ্রসাদ দেওয়ান, সদস্য দাঙ্গুবি বৈশালী রায়, প্রাক্তন উপমন্ত্রী দাঙ্গু মনিস্বপন দেওয়ান, শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের যুগ্মসচিব দাঙ্গু কৃষ্ণচন্দ্র চাকমা উপস্থিত ছিলেন। রাঙামাটির তবলছড়ি আনন্দ বিহারে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমন্বিত বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালঙ্কার মহাথের, আশীর্বাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাভিসবার উপসংঘরাজ ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথের মহোদয়।

এসময় সভায় উপস্থিত বক্তারা বলেন তথাগত গৌতম বুদ্ধের শিক্ষাকে জীবনে ধারণ করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

এর আগে সকাল সাড়ে সাতটায় রাঙামাটি পৌরসভা মাঠ হতে ধর্মীয় শোভাযাত্রা আরম্ভ হয়ে তবলছড়ি আনন্দ বিহারে এসে শেষ হয়। অনুষ্ঠানে আগত পূণ্যার্থীদের পায়স বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে ধর্মীয় প্রতিযোগিদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘচাকমা মিডিয়া ডেস্ক৪ মে ২০২৫, রবিবাররাঙামাটিতে আসন্...
04/05/2025

বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ

চাকমা মিডিয়া ডেস্ক
৪ মে ২০২৫, রবিবার

রাঙামাটিতে আসন্ন শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছে। পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ রাঙামাটি পৌর ও সদর উপজেলা শাখার উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়। প্রাত্যহিক বন্দনা, চিত্রাঙ্কন, ধর্মীয় সংগীত ও প্রবন্ধ এ চারটি বিষয় নিয়ে প্রতিযোগীতার আয়োজনটি সাজানো হয়।

গত ২ মে ২০২৫ রাঙামাটি আনন্দ বিহারে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগীতা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এতে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সিনিয়র সভাপতি ও বৈশাখী পূর্ণিমা উদযাপন কমিটির সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালঙ্কার মহাথের এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে জেলাপরিষদ সদস্য দাঙ্গু দেবপ্রসাদ দেওয়ান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তি দাঙ্গু বিজয় কেতন চাকমা ও মোনঘর শিশু সদনের নির্বাহী পরিচালক দাঙ্গু অশোক কুমার চাকমা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ রাঙামাটি পৌর ও সদর উপজেলা শাখা কর্তৃক 'বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা' নামক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয় এবং প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

ছাত্রছাত্রীদের ধর্মীয় চেতনা জাগরণ ও গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদানের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ বলে আয়োজকরা জানান। প্রত্যেক বছর এ আয়োজনটি হয়ে আসছে বলে জানানো হয়। তৃতীয় হতে দ্বাদশ শ্রেণি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এটি আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগীতায় চারটি বিষয়ে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী অংশ গ্রহণ করে। উদ্বোধনীর দিন ২ মে প্রাত্যহিক বন্দনা আবৃত্তি ও দ্বিতীয় দিনে ৩ মে চিত্রাঙ্কন এবং ধর্মীয় সংগীত প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য আগামী ১০ মে শোভাযাত্রা সহ বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে সার্বজনীন বৈশাখী পূর্ণিমা উদযাপন করা হবে। এ দিন প্রতিযোগীদের পুরস্কার বিতরণ করা হবে।

মায়ানমার ভূমিকম্প দুর্গতদের আর্থিক সহায়তা দিল পার্বত্য ভিক্ষু সংঘচাকমা মিডিয়া ডেস্ক২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবারমায়ামারের ভ...
23/04/2025

মায়ানমার ভূমিকম্প দুর্গতদের আর্থিক সহায়তা দিল পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ

চাকমা মিডিয়া ডেস্ক
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার

মায়ামারের ভূমিকম্প দুর্গতদের অর্থ সহায়তা দিয়েছে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত মায়ানমার দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের নিকট এ সহায়তা প্রদান করা হয়। গত ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ'র উপসংঘরাজ ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে নিযুক্ত মায়ানমার রাষ্ট্রদূত দাঙ্গু ক্য সোয়ে মোয়ের(Kyaw Soe Moe) নিকট বাংলাদেশী টাকা নগদ ৳১৪,০০,০০০(চৌদ্দলক্ষ টাকা) হস্তান্তর করেন। এ সময় পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের কেন্দ্রিয় সভাপতি ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথের, সহ-সভাপতি ভদন্ত সম্বোধি মহাথের, কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক ভদন্ত লোকমিত্র থের ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় যাষ্ট্রদূত খুব খুশি হন এবং ভিক্ষু সংঘকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।

প্রসঙ্গত বিগত ২৮ মার্চ ২০২৫ মায়ানমারের মান্ডালে সাগাইং অঞ্চলে রিক্তার স্কেলে ৭.৭ মাত্রার প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়ে বহু বৌদ্ধ বিহার ও মসজিদ সহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বসে পড়ে। এতে চাপা পড়ে অন্তত তিন হাজারের অধিক লোক নিহত ও চার হাজারের অধিক আহত হয় এবং অনেকেই নিখোঁজ হয়েছে। এমতাবস্থায় চরম মানবিক বপর্যয়ে পড়ে মায়ানমার দেশটি। এসময় সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে বহু দেশ বিদেশের সরকারি ও বেসরকারী সংস্থাগুলো। তারই হিসেবে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘও উদ্যোগ গ্রহণ করে সহায়তা দেওয়ার। এ সহায়তা উত্তোলনে সংঘ সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণ এতে সামিল হন।

ছবি : Parbatya Bhikkhu Sangha Bangladesh

ফুলবিঝুতে প্রবীণদের পা ধুয়ে দিলেন মন্ত্রী সান্তনা চাকমাচাকমা মিডিয়া ডেস্ক১৩ এপ্রিল ২০২৫, রবিবারআজ পেঁচারথল উদয়ন বৌদ্ধ...
13/04/2025

ফুলবিঝুতে প্রবীণদের পা ধুয়ে দিলেন মন্ত্রী সান্তনা চাকমা

চাকমা মিডিয়া ডেস্ক
১৩ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার

আজ পেঁচারথল উদয়ন বৌদ্ধবিহার কর্তৃক আয়োজিত হয় ফুলবিঝু উৎসব। শুরুতে বৌদ্ধবিহারে বুদ্ধ বন্দনা, পঞ্চশীল গ্রহণ ও দান কার্য সম্পাদন করা হয়। পরে সেখান থেকে দেও নদী(দেরগাঙ) পর্যন্ত শোভাযাত্রার মাধ্যমে ফুল গঝানা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা বিধান সভার কেবিনেট মন্ত্রী দাঙ্গুবি সান্তনা চাকমা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি পুরো ত্রিপুরাবাসী সহ সমগ্র ভারত ও এর বাইরের সকলের উদ্দেশ্যে ফুলবিঝুর শুভেচ্ছা জানান।
নদীতে ফুল গঝানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে পেঁচারথল এলাকার চাকমা যুবাদের উদ্যোগে আরো একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানটি ছিল প্রবীণদের পা ধুয়ে দিয়ে প্রণাম সহকারে আশীর্বাদ নেওয়া। এতে মন্ত্রী সান্তনা চাকমাও সামিল হন এবং স্বয়ং প্রবীণদের চরণ ধুয়ে দিয়ে ও প্রণাম করে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। এমন মহান উদ্যোগ গ্রহণ করায় তিনি যুবাদের ধন্যবাদ জানান।

প্রসঙ্গত চাকমা ঐতিহ্য অনুসারে ফুলবিঝু দিনে বুদ্ধমূর্তি স্নান করানো এবং প্রবীণদের স্নান করানো ও প্রণাম করা একটি মহান রীতি। এছাড়াও ঘরে ঘরে গিয়ে যাদের হাস-মুরগীকে আদার(খাদ্য) দেওয়ারও রীতি রয়েছে। বস্তুত এটি হচ্ছে চাকম সামাজের সুশৃঙ্খল সমাজ ব্যববস্থার একটি বিশেষ রূপ। ধর্মীয় নীতিবোধ, গুরুজনের মান্যতা, ছোটজনের স্নেহ ও সৌহার্দ্য পূর্ণ এবং বিশ্বাসভরা সামাজিক বন্ধন এখানে ফুটে ওটে।

পরিতাপের বিষয় বর্তমান সময়ে এসব সুন্দর রীতিগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এর মূল্যবোধ হ্রাস পাচ্ছে। তবে এমন ক্রান্তিলগ্নে এসে এরূপ ঐতিহ্য সচেতনদের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া।

তিন গেরিলা এবং লোগাং ইতিহাসের গোপন পাতালেখা : পূর্ণলাল চাকমাআজ ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে আমার পুরনো ব্যাগ চোখে পড়ল। খুব ময়লা...
10/04/2025

তিন গেরিলা এবং লোগাং ইতিহাসের গোপন পাতা
লেখা : পূর্ণলাল চাকমা

আজ ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে আমার পুরনো ব্যাগ চোখে পড়ল। খুব ময়লা হয়েছে। বাইরে পরিষ্কার করে ভেতরে দেখলাম পুরনো ডায়েরিগুলো ঠিক আছে কিনা। কিন্তু চোখে পড়ল সেই ডায়েরি যেখানে ৫৭টি পৃথিবী না-জানা বীরত্বের কাহিনি নিয়ে অবহেলায় রাখা এই ৩০ বছর পুরনো স্মারক।

এই একেকটা কাহিনী যেন ইতিহাসের মাটিতে পুঁতে রাখা বিস্ফোরক। কিছু গল্প আছে, যা বললে শুধু চোখে জল আসে না, বরং চোখের জলে আগুন জ্বলে।

সেই ৫৭টি পৃথিবী না-জানা বীরত্ব কাহিনীর একটি আজ না বলে থাকতে পারলাম না। কারণ এই কাহিনী না বলা পর্যন্ত বুকে বাঁধা পাথর সরাতে পারছি না, যা আমি ৩০ বছর ধরে নীরবে যন্ত্রণায় একাকী বয়ে চলেছি। আমি চাই এই কাহিনী আমার মতো আর কেউ বয়ে নিক এবং আমাকে এই বোঝা বয়ে নিতে সাহায্য করুক।

কারণ নীরবতা কখনো নিরীহ থাকে না। অনেক সময় নীরবতার কাঁধেই জুলুমের ভার চাপিয়ে দেয় শাসক। তাই বলতে হবে। এবার বলতে হবে। তাই লিখে প্রকাশ করছি।

দিনটি ছিল ১০ এপ্রিল ১৯৯২ সাল।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসকারী আদিবাসী পাহাড়িদের সবচেয়ে বড় তিন দিনব্যাপী উৎসবের দিন ফুল বিঝু। আনন্দের দিন। এই দিনে আদিবাসী শিশুরা গ্রামের পাশের বনের হরেক রকম পাহাড়ি ফুল তুলে, আর সেই বন্য ফুল দিয়ে ঘর সাজায়। এমনকি তাদের পালিত গরু, মহিষ এবং ছাগলের গলায়ও আদরে ফুলের মালা পরায়।

এই আনন্দ শুধু উৎসব নয়—এটা এক মাটি-কেন্দ্রিক সংস্কৃতির আত্মা, যা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার এক নিরীহ প্রথা অথচ অবিনাশী অস্তিত্বের প্রতীক।

মালার কাজ শেষ হলে কিছু চাল এবং ধান নিয়ে পাহাড়ি জুমে ধানের বীজ বোনার ছোট্ট কুরুম কোমরে বেঁধে গ্রামে হাস-মুরগিকে খাবার দিতে বের হয়, যেন গ্রামের কোনো পালিত প্রাণী না খেয়ে থাকে। কারণ আজ বিঝু। সারা পাহাড় জুড়ে গা জুড়ানো আনন্দের দোলা। সেই আনন্দ পাহাড়ি না হলে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।

অবশ্যই সেই আনন্দের সুর কেবল পাহাড় জানে, সমতলের রাষ্ট্র তা বোঝে না। বোঝেও না বোঝার ভান করে।

এই দিনে পাহাড়ি আদিবাসী লোকেরা বন-জঙ্গল থেকে পাহাড়ি আলু, পাজনের শাকসবজি সংগ্রহ করে। কেউ পাহাড়ি নদীতে মাছ ধরে। কেউ পাহাড়ে শিকার করে। কারণ পরের দিন মূল বিঝু। অতিথি আসবে। তাদের সুন্দর খাবার খাওয়াতে এই আয়োজন।

সকালে লোগাং গুচ্ছ গ্রামের অনেকে ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে জঙ্গলে গেছে।

তারা জানত না, সে দিন জঙ্গলই হবে তাদের শেষ আশ্রয়। যে পাহাড় এতকাল বাঁচিয়েছে, আজ তারই কোলে লুকাতে হবে প্রাণ।অথবা সেখান থেকে ভারতে গিয়ে শরণার্থী হয়ে মানবেতর জীবন শুরু হবে। দেখা হবে না আর কোনদিন গুচ্ছগ্রামে ফেলে আসা পরিবারের সেই প্রিয় মুখগুলি। তারা হারিয়ে যাবে চিরতরে।

সে দিন লোগাংয়ের পূর্ব পাড়ে তারাবনের মুখে একদল শান্তি বাহিনী পেটের ক্ষুধায় অস্থির হয়ে আছে। তারা ভাত খেয়ে বড় হয়েছে। কিন্তু সরকার সব পাহাড়িদের লোগাং গুচ্ছগ্রামে রাখায় কোনো পাহাড়ি এখানে কোন ঘর ছিল না। তাই তাদের এই ভাতের অভাব।

কিন্তু পেটের ক্ষুধার চেয়ে বিবেকের ক্ষুধা শতগুণে তীব্র।সেটা তারা একটু পরে টের পেল।

দূর থেকে দেখা গেল একদল আদিবাসী শিশু লোগাং পশ্চিম পাড়ে চরে গরু চরাচ্ছে। এখনো ১১ টা বাজেনি। কিন্তু হঠাৎ একজন টের পেল কিছু একটা হচ্ছে। কোমর থেকে দূরবীন বের করে দেখা গেল। পাঁচজন মিলে এক আদিবাসী কিশোরীকে ধাওয়া করে ধরে বালু চরে ফেলে ঝাঁপটে ধরেছে।

এই যেন এক নিরীহ, ফুটফুটে হরিণ শাবকের চারপাশে পাঁচ ক্ষুধার্ত পাঁচ হায়েনা।ছিঁড়ে খাবে শাবকের মাংস।এখন বুঝতে দেরি হল না কী হচ্ছে। কাছে মনে হলেও যেতে সময় লাগে।

মুহূর্তে চোখের সামনে ঘটনা ঘটে গেল। এক এক করে পাঁচজন তাদের লালসা মেটাল।তারপর গলা কেটে মুরগি জবাই করল। কি বীভৎস! কি লোমহর্ষক মুহূর্ত!

তারা বুঝে গেল রাষ্ট্র যখন পাহাড়ের ফুলকে রক্ষা করে না, তখন হায়েনার লালসা কেবল একজনকে নয়—সমস্ত জাতিসত্তাকেই অপমান করে।

এখন কি করা?

কেউ গুলির অনুমতি চাইল। কিন্তু অনুমতি মিলল না।

কারণ উত্তরে একটি পোস্ট, দক্ষিণে আরেকটি পোস্ট। তাছাড়া অনেক দূর। খালি চোখে পরিষ্কার দেখা যায় না। দূরবীনে দেখতে হয়। গুলি এত দূর ধরলেও কার্যকর ফলাফল হবে কিনা সন্দেহ। এখন গুলি করলে গুচ্ছ গ্রামের সব লোক মারা যাবে। সেটলার এবং সেনা, বিডিআর মিলে সব পাহাড়ি জবাই করবে।

তাই কমান্ডার "না" করে দিলেন।

এই "না" ছিল নৈতিকতার মৃত্যু পরোয়ানা। এই না-র অর্থ—সব দেখেও কিছু না করা।

এই অপমানে, দুঃখে, ক্ষুধা ভুলে গেল। হৃদয় থেকে যেন ফুঁস ফুঁস করে নিশ্বাসের সঙ্গে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বেরিয়ে আসছে সবার।

না, এই হায়েনার দল থামেনি। এবার একই ভাবে আরেকজনকে ধাওয়া করছে। মুহূর্তে আরেক আদিবাসী কিশোরীর সতীত্ব তারা কেড়ে নিল। ঐ একই জবাই। তারা আরেকটি বীভৎস মুহূর্তের নীরব সাক্ষী হয়ে গেল তারা।

আর নয়।

তিনজন এবার কমান্ডারের কোনো কথা মানলো না। শান্তি বাহিনীর ড্রেস খুলে লুঙ্গি পরে নিল। রাইফেল রেখে কোমরে পিস্তল এবং ছোরা নিয়ে সাধারণ মানুষের ভান করে লোগাং পূর্ব পাড়ে মাছ খুঁজতে খুঁজতে গরুর পালের দিকে অগ্রসর হতে থাকল।

এই অবাধ্যতাই ছিল প্রকৃত গেরিলা সিদ্ধান্ত। সব গেরিলা যুদ্ধ বন্দুক দিয়ে হয় না—মানবতার পক্ষ নেওয়াই বড় যুদ্ধ।

ততক্ষণে আরেক ত্রিপুরা কিশোরীর দিকে হায়েনারা অগ্রসর হচ্ছে। তিনজনের শরীরের মাংসপেশিগুলি আগে থেকেই শক্ত হয়ে আছে হায়েনা মারার নেশায়। কিন্তু এখনো মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। দৌড়ানো যাবে না। স্বাভাবিক থাকতে হবে। যাতে বিডিআর-এর পোস্ট থেকে তাদের টের না পায়।

কিন্তু যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছল তখন সেটলার হায়েনারা কিশোরীকে ধরে ফেলেছে। পরনের তামী এক হাতে ধরে, অন্য হাতে প্রতিরোধ করছে মেয়েটি। দুই হায়েনা দুই পা ধরে রেখেছে। হিংস্র হায়েনারা দাঁত বের করে হাহা করে হাসছে। এবার দুই হাতও ধরে ফেলল। বাকি একজন লুঙ্গি না খুলেই তার সেই লালসার অস্ত্র দেখাচ্ছে। লুঙ্গির ভিতরে যেন কিছু একটা লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে যেন ভেতরে কেউ নেশাঘোরে নাচছে।

আর দেরি নয়। তিনজন বজ্রপাতের মতো তীব্র আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ল এই পাঁচ হায়েনার উপর। এই আক্রোশে পাঁচ সেকেন্ডে নিভিয়ে দিল হায়েনাদের লালসা। লোগাংয়ের পবিত্র বালু যেন এই পাপিষ্ঠদের রক্ত শুষে নিতে চায় না।

যে দেশ তারই এক প্রান্তে নাগরিকদের সেনা পাহারা দেয়, আবার সেটলারদের হাতে তুলে দেয় সেই পাহাড়িদের শরীর—সেখানে সময় নয়, শুধু নীরবতা থাকে। লোগাং তার প্রমাণ।

আর একটু দুরে যেতে চোখে আখ ক্ষেত। সেখানে এক সাদা দাড়িওয়ালা বুড়ো ঝাঁপিয়ে ধরে আছে এক মাঝ বয়সী মহিলা। গলায় ধারালো ছুড়ি দিয়ে হুমকি দিয়ে বলছে "চুপ নড়বে না! চিল্ললাবি না।"

প্রতিতুত্তরে শোনা গেল, " দিলে দেনা। কক্কন ধরি রাগেবে।"

একজনকে পাহারায় রেখে দুজন ভিতরে ঢুকে সেই বুড়ো হায়েনাকে ধরে ফেলে গেরিলা নিয়ম মেনে আগে কিছু তথ্য আদায় করতে চেষ্টা করল। যে তথ্য পেল তা হৃদয় কেঁপে উঠল। তার মানে এখনই লোগাং হত্যাকাণ্ড শুরু হবে। আর মাত্র ১৫ মিনিট বাকি।

পাহাড়ি মেয়েদের শরীর যেন সেই হত্যাকাণ্ডের আগমনী বার্তা হয়ে উঠেছিল।

এক সাথে ফিরে আসা সম্ভব নয়। তিন জনে তিন দিকে লোগাং পার হয়ে পূর্বদিকে আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করল যাতে পাশের পোস্ট থেকে কিছু বুঝতে না পারে। যারা জংগলে শাকসবজি কিংবা ছোট পাহাড়ি নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিল তাদের আটকাতে হবে। তা না হলে তারাও মারা যাবে।
তাদের খবর ছড়িয়ে দিতে পাহাড় থেকে পাহাড়ে জোর গলায় বলে দেওয়া হল, "গ্রামে ফির না। পরিস্থিতি খারাপ।"

খবর ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু এত অল্প সময়ে সবাইকে রোধ করা গেল না।

পনের মিনিট নয় ঠিক ৩৫ মিনিট পর গুচ্ছ গ্রাম থেকে গুলির আওয়াজের সঙ্গে কালো ধোয়া শুরু হল। সঙ্গে গগন বিদারী নিরীহ মানুষের চিৎকার।

নিমেষে শেষ হয়ে গেল হাজারো আদিবাসীর সেই বিঝুর আনন্দের স্বপ্ন। আনন্দ হয়ে গেল বিষাদ আর প্রিয়জন হারানোর অশ্রু আর বাকরুদ্ধ কান্নায়।

ফুল তুলে ঘর সাজানো যে দিন, সে দিনই কেউ সাজাল আগুন। কারো হাতে ফুল ছিল, কারো হাতে গুলি।

তারপর তো সবায় আমরা জানি কি হয়েছে। কত বীভৎস ছিল সেই গণহত্যা! এমনকি সেই সময়ের এক মহান ব্যক্তি যিনি তখন পানছড়ি জোনে কর্মরত ছিলেন তার কথা শুনলে বুঝা যায় এই লোগাং হত্যাকাণ্ড কতটুকু লোমহর্ষক ছিল।

তার ভাষায়, " লোগাং গণহত্যার সময় আমি পানছড়ি জোন সদরে কর্মরত ছিলাম। এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। সে ভয়ানক দৃশ্য না দেখলে কাউকে বোঝানো যাবে না এর নৃশংসতা। মায়ের বুকে ছোট শিশু পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে অগণিত লাশের স্তূপে যাদের সৎকারও ভাগয়ে জুটেনি। মানুষ এত নির্মম হতে পারে তা কল্পনাও করা যায়না। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই লোগাং গণহত্যার খবর জানে না। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন সেই ভয়াল গণহত্যার দৃশ্য ভুলবো না। যারা সেই দিন হত্যাকাণ্ডে নিহত হয়েছেন তাদেরকে আমরা আর ফিরে পাবো না তবে যারা এই হত্যার সাথে জড়িত তাদের বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে নিহতের আত্মা শান্তি পাবে।"

লোগাং গণহত্যার আজ কত বছর পেরিয়ে গেল? বিচার তো দূরের কথা। কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে কি?

যাক। এই গল্প আজ ৩০ বছর পরে প্রকাশ করার অর্থ শুধু লোগাং গণহত্যার লোমহর্ষক দিক তুলে ধরে সরকার এবং সেনা- সেটলারদের মুখোশ উন্মোচিত করা নয় বরং সেই তিন শান্তিবাহিনী অবাধ্য বীরদের বীরত্বের কথা স্মরণ করার জন্য। তারা বেঁচে থাকুক আমাদের হৃদয়ে সত্যিকারের বীর হিসেবে।

তারা আমাদের শেখায়—মানুষ হতে হলে আদেশ মানতে হয় না, বিবেক মানতে হয়।

তাদের দু’জন আজ আর আমাদের মাঝে নেই। কয়েক বছর আগে তারা ভ্রাত্রিঘাতে শহীদ হয়েছেন। আর যিনি এখনো বেঁচে আছেন, হয়তো বসে আছেন তার সেই পোড়া জুমের পাশের ছোট্ট সদ্য গড়া জুমঘরে—নিঃসঙ্গ, নীরব।

হয়তো তাকিয়ে আছেন দূরের সবুজ পাহাড়ের দিকে, সেই নতুন পোড়া কালো জুমের ওপর দিয়ে দূরে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর হয়তো এখনো বুকের ভেতর ধারণ করে রেখেছে এক চিরতরুণ মন, যে আজও খুঁজে ফেরে সেই রংরাঙ্গের ডাক, সেই তীব্র প্রতিজ্ঞা, সেই স্বপ্নের তিন সীমানার গহিন অরন্য।

পরিশেষে দুটি হাত তুলে বলি "যেখানে থেকো —ভাল থেকো, সেই অবাধ্য শান্তিবাহিনীর গেরিলা বীর। আজ অশ্রুভরা নয়নে তোমাকে স্মরণ করছি। স্মরণ করছি তোমাদের বীরত্বের সেই কাহিনী। অনেক তরুণ আজ হতে তোমাদের বীরত্বের কাহিনী মনে রাখবে।"

(বিদ্রঃ ছবিটি তাদের স্মরণে আঁকা)

লোগাঙ গণহত্যালেখা : ইমতিয়াজ মাহমুদ(১) আজ ১০ই এপ্রিল, বাংলাদেশের পাহাড়গুলিতে চলছে বিজু উৎসবের প্রস্তুতি। রাঙামাটিতে গত ক...
10/04/2025

লোগাঙ গণহত্যা
লেখা : ইমতিয়াজ মাহমুদ

(১)
আজ ১০ই এপ্রিল, বাংলাদেশের পাহাড়গুলিতে চলছে বিজু উৎসবের প্রস্তুতি। রাঙামাটিতে গত কয়েক বছর ধরে বিজু উপলক্ষ্যে মেলা হয়- মেলা চলছে। ছোটখাটো নানারকম অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে ত্রিপুরা থেকে একজন নৃত্যশিল্পী এসেছেন বাংলাদেশ, রাঙামাটি দীঘিনালা খাগড়াছড়িতে নেচে গেয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে একটা উৎসব আড়ম্বরের আগমনী সুর- হয়তো কোথাও কোথাও বিজুপেক্কো ডাকাও শুরু করে দিয়েছে। এরকমই উৎসবের আগমনিত সুর ভেসে বেড়াচ্ছিল ১৯৯২ সনের এপ্রিলের দশ তারিখে।

কিন্তু সেবছর পাহাড়ের মানুষ বিজুতে আর উৎসব আনন্দের মেজাজে থাকতে পারেনি- সেবারের বিজু ছিল কেবল কান্নার। সেবার এপ্রিলের দশ তারিখে সেটেলার বাঙালী এবং সরকারী কয়েকটা বাহিনীর লোকেরা মিলে খাগড়াছড়ি জেলার পানছরির লোগাং গ্রামে হামলা করে অসংখ্য আদিবাসী মানুষকে বল্লমে গেঁথে, আগুনে পুড়িয়ে, গুলি করে, কুপিয়ে হত্যা করে। জ্বালিয়ে দেয় একটি গ্রুচ্ছগ্রামের প্রায় সকল ঘরবাড়ী, পুড়ে যায় দরিদ্র পাহাড়ি আদিবাসীদের যা কিছু সম্বল ছিল সব। যারা প্রাণে বেচেছিল ওরা প্রায় সকলেই সেবার পালিয়ে যায় সীমান্ত অতিক্রম ক্রে ভারতে, সেখানে শরণার্থী হিসাবে ছিল ওরা ১৯৯৭ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত।

(২)
কি হয়েছিল সেদিন লোগাংএ? এটা নিয়ে আমি আগেও কয়েকবার লিখেছি। প্রতিবার বিস্তারিত লিখতে গিয়ে মন খারাপ হয়, ইমোশনাল হয়ে পড়ি, গ্লানিতে মাথা নিচু হয়ে আসে। কেবল মনে হয় আমার এই প্রিয় মাতৃভূমিতে আমাদের পাহাড়ে একটি মাত্র দিনে তিন চারশ মানুষকে এইভাবে এইভাবে হত্যা করা হয়েছে- যারা হত্যা করেছে ওরা আমার মতোই বাঙালী, ওদের একটা অংশ আমাদের সরকারের চাকরী করে। ওদের কারো একটুও সাজা হয়নি, ওদের চাকুরীতে কোন অসুবিধা হয়নি। নিশ্চিন্ত আরামে ওরা জীবন কাটিয়ে গেছে এই দেশে। এমনকি হত্যাকারীদের কাউকে আমরা নিন্দাও করি না। বাঙালী হিসাবে আমি কি লজ্জিত হবো না? লিখতে ভালো লাগে না, তথাপি সংক্ষেপে বলি।

লোগাং ছিল একটা গুচ্ছগ্রাম। সেখানে চাকমা ও ত্রিপুরা আদিবাসীরা বাস করতো, কয়েকঘর অন্য আদিবাসীও ছিল। লোগাং নদীর পারে বলে গ্রামটার নামও লোগাং। গুচ্ছ গ্রাম থেকে কাছেই আরেকটা পাহাড়ে দুইজন পাহাড়ি মেয়ে গিয়েছিল গরু চড়াতে বা অন্য কোন কাজে, সেখানে ওদেরকে ধর্ষণের চেষ্টা করে কয়েকজন সেটেলার যুবক। পাহাড়ি মেয়েরা আত্মরক্ষার জন্যে হাতের দা দিয়ে ওদেরকে আঘাত করে। সেই আঘাতে গুরুতর আহত নিপীড়ক সেটেলার যুবকদের মধ্যে একজন পড়ে হাসপাতালে মারা যায়। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে সন্ধ্যার দিকে গুচ্ছগ্রামে হামলা করে সেটেলার, বিডিআর, ভিডিপি ও অন্যান্য বাহিনীর লোকজন। গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে ওরা।

গ্রামটিকে ঘিরে গ্রামের কাঁচা ঘরগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন থেকে বাঁচতে পাহাড়ি লোকজন যখন দৌড়ে বেরিয়ে আসে তখন অপেক্ষমাণ হন্তারকরা ওদেরকে হত্যা করতে থাকে। যাদের হাতে বন্দুক ছিল ওরা গুলি করতে থাকে, অন্যরা বল্লম, দা সড়কি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আক্রান্ত পাহাড়ি মানুষের জন্যে পালিয়ে যাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। আবার এতজন সশস্ত্র আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে লড়াই করাও ওদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারাতে থাকে নারী, শিশু, যুবক বয়োবৃদ্ধ সব মানুষ। কেউ কেউ মারা যায় ঘরের মধ্যে আগুনে পুড়ে। যারা কোনক্রমে পালাতে পেরেছিল প্রাণ হাতে নিয়ে, ওরা সীমানা পার হয়ে রাতের অন্ধকারে ভারতে চলে যায়- রিফিউজি ক্যাম্পে ওরা থাকতো।

(৩)
কতজন পাহাড়ি মানুষকে ওরা হত্যা করেছিল সেদিন? একদম সঠিক সংখ্যাটা কেউ বলতে পারে না, নানাভাবে হিসাব করেছে অনেকেই, খুঁজে পাওয়া লাশ, বেঁচে থাকা আত্মীয় স্বজনের প্রদত্ত তথ্যআর একদম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না যাদেরকে এই সব মিলিয়ে কম করে হলেও চারশ আদিবাসী মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন। প্রকৃত সংখ্যাটা আরও বেশীও হতে পারে। ঘটনার পর থেকেই ঘটনাস্থলটি ঘিরে রেখেছিল মিলিটারিরা- অনেকদিন সেই এলাকায় কাউকে যেতে দেয়নি ওরা। ঢাকার সাংবাদিকদের খাগড়াছড়িতেই যেতে দিচ্ছিল না- শহরের বাইরেই আটকে দিতো।

বাঙালীদের মধ্যে খুব বেশী মানুষ যে সেখানে যেতে চেয়েছিল তাও না। সারা হোসেন ও আনু মুহম্মদ সহ একদল বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী ঘটনার দুদিন পর সেখানে যেতে চেয়েছিলেন, ওদরকে ঘটনাস্থলের আশেপাশেই ঘেষতে দেয়নি মিলিটারি, খাগড়াছড়ির বাইরেই আটকে দিয়েছিল। সেই দলে, যতটুকু মনে পড়ে, হাসান আরিফ ছিলেন, এবং (সম্ভবত) বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও ছিলেন। আজকের সিপিবির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গিয়েছিলেন- তিনি তখন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আনু মুহাম্মদ সেই ঘটনা অনেকবার প্রেসের কাছে বলেছেন- খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।

সেসময় দেশে প্রদাহ্নমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া আর শেখ হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলের নেতা। শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন কয়েকদিন পর। ঘটনাস্থলে তাকে যেতে দেওয়া হয়েছিল কিনা মনে নেই, তবে তিনি একটা জনসভা করেছিলেন আশেপাশেই কোথাও। সেই জনসভায় শেখ হাসিনার সাথে ছিলেন সদ্য প্রয়াত মতিয়া চৌধুরী ও আইভি রহমান। সেই জনসভায় সেদিন শেখ হাসিনা কেঁদেছিলেন। এই কথাটা আজ আমাকে বলতেই হয়, সেদিনের পানছরি সফরটা সম্ভবত শেখ হাসিনাকে পাহাড়ের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।

(৪)
সেইবার পাহাড়ে বিজু হয়নি। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও নানাভাবে প্রতিবাদ ও স্মরণ এইসব কর্মসূচী হয়েছে। মানুষ কেঁদেছে, স্মরণ করেছে মৃতদের, বিচার চেয়েছে, প্রতিকার চেয়েছে। প্রতিকার পায়নি- বিচার তো এখনো হয়নি। আমার জীবদ্দশায় হবে বলে মনেও হয় না।

বিচার হবে কি করে? সেই ঘটনার কথা বললেও এখন হেনস্থা হতে হয়। বাসন্তী চাকমার কথা মনে আছে আপনাদের? আওয়ামী লীগ থেকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হয়েছিলেন তিনি। বাসন্তী চাকমা কৈশোরে আদিবাসীদের উপর এইরকম একটা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে পরিবারের সাথে দেশ ছেড়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পার্লামেন্টে তাঁর প্রথম বক্তৃতায় বাসন্তী সেই স্মৃতির কথা বলেছিলেন। এইজন্যে বাসন্তী চাকমার বিরুদ্ধে পাহাড়ের সেটেলাররা চূড়ান্ত রকমের বিশোদ্গার ও বিক্ষোভ করতে থাকে। কারা সেইসব সেটালারদেরকে আশকারা দিয়েছিল সেকথা আমি বলছি না। বাসন্তী চাকমাকে বাধ্য করেছিল ওরা ওর বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে।

বাসন্তী, প্রিয় বোন আমার, তিনি এখন কোথায় কি বয়স্থায় আছেন জানি না। আজকে এই লোগাং দিবসে এই পোস্ট লিখতে গিয়ে আমি এই সুযোগে তাকে আমি একটা সালাম জানিয়ে রাখি। তাঁর জন্যেই আমাদের জাতীয় সংসদের কার্যবিবরণীতে অন্তত একটা বক্তৃতা চিরদিনের জন্যে লেখা হয়ে থাকবে যেখানে সেটেলার ও মিলিটারিদের অত্যাচার নির্যাতন আর আদিবাসী মানুষের কষ্টের কথা উল্লেখ করা আছে।

(৫)
লোগাং হত্যাকাণ্ড। আহা লোগাং! চাকমা ভাষায় লোগাং কথাটার অর্থ রক্তের নদী- বাংলা করলে আপনি রক্তগঙ্গা বলতে পারেন। লোগাং নদীটা খুবই ছোট ক্ষীণ একটা নদী- এটার নাম রক্তগঙ্গা হয়েছে কেননা এই নদীটির পানির রঙ লাল, রক্তের মতো। লোগাং নদীটিকে আমরা বাঙালীরা একদিন আসলেই রক্তগঙ্গায় পরিণত করেছিলাম। জীবদ্দশায় আমি হয়তো এই বিচার দেখে যেতে পারবো না- বাকি জীবন আমাকে এই গ্লানি নিয়েই বাঁচতে হবে যে আমি হচ্ছি সেই কওমের একজন যারা সেদিন নদীটিকে পাহাড়ি মানুষের রক্তে প্লাবিত করেছিল।

এবং আমার কওমের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজন এই ঘটনা নিয়ে একটুও লজ্জিত নয়।

জাতীয় দলের অধিনায়ক হলেন পুস্কর খীসাচাকমা মিডিয়া ডেস্ক০৮ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবারনাম পুস্কর খীসা মিমো। জন্ম জুন, ১৯৯৩। বা...
08/04/2025

জাতীয় দলের অধিনায়ক হলেন পুস্কর খীসা

চাকমা মিডিয়া ডেস্ক
০৮ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার

নাম পুস্কর খীসা মিমো। জন্ম জুন, ১৯৯৩। বাড়ী রাঙামাটি সদরে। ৩১ বছর বয়সী এ খেলোয়ার বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলে ফরওয়ার্ডে ১৬ বছর ধরে খেলছেন। একজন চাকমা আদিবাসী খেলোয়ার হিসেবে তার সেরাটাই দিয়ে চলেছেন নিষ্ঠার সাথে। খেলার পারফরম্যান্স, দলীয় শৃঙ্খলা এবং সর্বোপরি ব্যক্তি আদর্শে সততই তিনি সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন বলা যায়।
তারই ফলশ্রুতিতে তিনি গর্বীত জীবনের সম্মান ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের অগ্রাধিকার লাভ করেছেন। সম্প্রতি জাতীয় হকি ফেডারেশন কর্তৃক তাঁকে দলের অধিনায়ক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি যেমনি তাঁর জন্য সম্মানের, গৌরবের তেমনি তাঁর মা-বাবা সহ সমগ্র চাকমা জাতির জন্যেও সমানভাবে গৌরবের বিষয়।

জাতীয় দলে তাঁর অধিনায়কত্ব প্রাপ্তির বিষয়টি তিনি ফেসবুকে লিখেছেন। তাঁকে এমন মহান দায়িত্ব অর্পণের জন্য তিনি জাতীয় হকি ফেডারেশন, কোচ, দলীয় সতীর্থদের এবং পরিবার সহ সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। একই সাথে সকলের নিকট আশীর্বাদ কামনাও করেছেন। তিনি বলেন 'চলার পথটা সহজ ছিল না, তবে আজকের এই মুহূর্তটা সব কষ্টকে সার্থক করে তুলেছে। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের সম্মান ও সুনাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করব।'

সমগ্র চাকমাজাতির পক্ষ থেকে দাঙ্গু পুস্কর খীসা মিমোকে অভিন্দন ও শুভেচ্ছা রইল। তিনি যেন বহুদূর এগিয়ে যেতে পারেন।

08/04/2025

Ami hi sonar somari
Nahi langye langoni...
performed by
Mangali & Klinton

Address

Rangamati
792103

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Chakma Media posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Chakma Media:

Share

Chakma Media

Chakma Media begor Kodha Koi. Chakma Media shout for all.