27/08/2025
গল্পঃ ১৫_বছর_বয়সী_মা (০২)
লেখনীতেঃ সোফিয়া_সাফা
"মা তোমার মেয়েকে নিয়ে যাওতো নইলে আমি কিন্তু ওর মাথার সব চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো। আমার সাথে মশকরা করা"
ঊর্মিলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই শাহানাজ বেগম ঊর্মিলাকে থামিয়ে দেয়,
"একদম চুপ যা এখান থেকে"
শাহানাজ বেগমের ধমক খেয়ে ঊর্মিলা হাসতে হাসতেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, শাহানাজ বেগম দরজা পর্যন্ত এসে ফের আলভীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
"চেহারার এই অবস্থা নিয়ে নিচে আসিস না। আমি তো আর ঊর্মিলার মতো করে বাকি সবাইকে ধমক দিয়ে চুপ করাতে পারবোনা। ভালো করে মুখ ধুয়ে তারপর রুম থেকে বের হোস"
শাহানাজ বেগম রুম থেকে বের হতেই আলভী দ্রুতপায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলো তারপর সময় নষ্ট না করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়াতেই তার চোখজোড়া কপালে উঠে গেলো। তার ডান গালে মেহেন্দির রঙ লেগে আছে, উজ্জ্বল ফর্সা চেহারায় লাল রঙ একদম ফুটে রয়েছে, আলভী একহাতে নিজের গাল স্পর্শ করে নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করলো,
"আমার ডান গালে মেহেন্দি লাগলো কিভাবে? তার মানে যেই মেয়েটা রাতে এই রুমে ছিলো তার হাতে মেহেন্দি ছিলো? আমি কি করেছি মেয়েটার সাথে?"
ভাবতেই আলভীর গলা শুকিয়ে এলো,
"আমি কি করে একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে কিছু করতে পারি? ওয়েট রিফাত গেলো কোথায়? আমার মনে আছে ওর দেওয়া ড্রিংকস টা খাওয়ার পরেই আমার মাথা ঘোরাচ্ছিলো, তারপর থেকেই আমার আর কিচ্ছু মনে পরছেনা। ওহ গড, ও আমার বন্ধু হয়ে আমার সাথে এরকম টা করতে পারলো?"
আলভী ঘুরে এসে প্রথমে বেডশিট তুলে নিলো, তারপর লাগেজ থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
,
আসমা বানু ঘুম থেকে উঠে পাশে অলিকে না দেখতে পেয়ে পুরো রুমে চোখ বুলালেন কিন্তু অলি রুমে নেই, অন্যপাশে ফিরে নিজের স্বামীকে খুজলেন কিন্তু তাকেও পেলেন না। আসমা বানু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে গেলেন, আজকে সে এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে? আসমা বানু দ্রুত বিছানা ত্যাগ করলেন।
অলির শরীর ভালো নেই, সারা শরীর ব্যথায় জর্জরিত, অলি ড্রইংরুমের এককোনায় থাকা চেয়ারের উপর বসে ছিলো তখনই তার খালাতো বোন ইশা ঊর্মিলাকে নিয়ে অলির দিকে এগিয়ে গেলো, ইশা হচ্ছে তিশার বোন আর ঊর্মিলা হচ্ছে ইশা আর তিশার ফুপাতো বোন। যার মানে আলভী তার মামাতো বোন তিশার বিয়ে উপলক্ষে মামার বাড়িতে এসেছে। ইশা অলির গোমড়া ফ্যাকাশে মুখটা দেখে একটু বিচলিত হলো, অলি মেয়েটা সব সময়ই হাসিখুশি থাকে একস্থানে এভাবে চুপচাপ বসে থাকার মতো মেয়েই না। ইশার চাহনি দেখে অলি নিজের গায়ে প্যাচানো ওড়নাটা আরেকটু জড়িয়ে নিলো,
"কিরে অলি তুই এভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেনো? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?"
অলি জিভ দিয়ে নিজের ক্ষতবিক্ষত ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে বললো,
"এমনি আপু, ভালো লাগছেনা কিছু সেই জন্যই বসে আছি"
ঊর্মিলা অলির ঠোঁটের ক্ষতগুলো লক্ষ্য করে বললো,
"অলি তোমার ঠোঁটে কি হয়েছে?"
ঊর্মিলার কথা শুনে ইশা অলির ঠোঁটের দিকে তাকাতেই অলি নিজের ঠোঁট আড়াল করে ফেলে, ইশা চিন্তিত কন্ঠে বলে,
"কি হয়েছে দেখি"
অলি এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে,
"আমি ওয়াশরুমে থাকা কলের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম তাই কেটে গেছে, তুমি চিন্তা কোরোনা আপু"
ইশা আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে তার চাচাতো বোন সামিরা তাকে ডাক দেয়,
"তোরা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস? তোদেরকে তিশার গায়ে হলুদের গহনা বানানোর জন্য ফুল আনতে পাঠিয়েছিলাম"
ইশা মিনমিনিয়ে বলল,
"স্যরি আপু আমরা যাচ্ছি"
ইশা চট করেই অলির হাত ধরল,
"চল অলি তুইও আয়"
অলি না বলতে চাইলেও পারলোনা তাদের সাথে বাগানে চলে গেলো।
,
পুরো ১ ঘন্টা ধরে শাওয়ার নেওয়ার পর আলভী ওয়াশরুম থেকে বের হলো, হাতে থাকা কাপড়গুলো নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে মেলে দিলো, তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা ভালো করে পরখ করে দেখলো মেহেন্দির দাগগুলো এখন সামান্যই অবশিষ্ট আছে, আলভী হতাশ হলো সে ১ ঘন্টা যাবত এটা তোলারই চেষ্টা করে গেছে। নিজের চেহারার অবস্থা দেখে আলভীর খুবই খারাপ লাগছে, নিজের ঠোঁটদুটো পর্যন্ত সঠিক কন্ডিশনে নেই।
"আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা, এতোটা অসহায় জীবনেও লাগেনি, আমি কি করবো? আমি যে আমার হানি'বি কে ভালোবাসি। আমি তাকে ছাড়া অন্য কাউকে যেখানে কল্পনাও করতে পারছিনা সেখানে আমি কি করে একটা মেয়ের সাথে int!mate হলাম? এই জীবনে যদি হানি'বিকে না পাই তাহলে এই জীবনটাই রাখবোনা, তার আগে ওই রিফাতকে কু'চি কু'চি করে কে'টে কু'ত্তাদের খাওয়াবো"
আলভী নিজের পরণের গ্রে রঙের শার্টটার বাটন গুলো লক করে শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ফ্লোড করলো ফোনটা পকেটে নিয়ে রিফাতকে খোজার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ড্রইংরুমে আসতেই শাহানাজ বেগম ছেলের দিকে এগিয়ে গেলেন,
"এভি ব্রেকফাস্ট করে নে বাবা"
আলভী মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
"রিফাত কোথায় মা?"
"ও তোকে বলে যায়নি?"
আলভী ভ্রু কুচকে তাকালো,
"কি বলে যাবে?"
শাহানাজ বেগম ডাইনিং রুমের দিকে যেতে যেতে বললেন,
"ও তো রাত দেড়টা নাগাতই শহরে ফিরে গেছে, বললো ওর নাকি কি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে গেছে, সেই জন্যই তো ছেলেটা ওভাবে তড়িঘড়ি করে চলে গেলো"
মায়ের কথা শুনে আলভী প্রচন্ড পরিমানে রেগে গেলো, সে রেগেমেগে সামনে তাকাতেই অলি, ইশা আর ঊর্মিলাকে দেখতে পেলো। মূহুর্তেই তার দৃষ্টি আটকে গেলো গাঢ় সবুজ রঙের টপস স্কার্ট পরিহিতা মেয়ে অলির দিকে, অলির কানে একটা ডেইজি ফুল গোজা, অলি আলভীকে দেখেনি সেতো ইশার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত, কিন্তু যখনই অলি আর আলভীর দৃষ্টি মিলিত হলো তখনই অলির হাত থেকে ফুলের ঝুড়িটা নিচে পড়ে গেলো। অলি না চাইতেও কাপতে শুরু করলো, ইশা বলে উঠলো
"এটা তুই কি করলি অলি, ফুলগুলো ফেলে দিলি?"
অলি মুখে কিছু না বলে ইশার পেছনে লুকাতে লাগলো। অলির এহেন কর্মকান্ডে ইশা, ঊর্মিলা আর আলভী ৩ জনই অবাক হয়ে গেলো, ইশা অলির হাত টেনে ধরে অলিকে সামনে এনে বললো,
"অলি ভয় পাচ্ছিস কেনো, কালকেই না এভি ভাইয়ার সাথে আপু পরিচয় করিয়ে দিলো?"
ঊর্মিলা হাসতে হাসতেই বললো,
"আমি সিওর যে অলি তারপরেও ভাইয়াকে দেখেই ভয় পাচ্ছে"
ঊর্মিলার কথা শুনে আলভী চমকে তাকালো,
"আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে দেখে ভয় পাবে আশ্চর্য"
ঊর্মিলা হাসির গতি বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
"ভাইয়া তুই মুখটাকে এরকম করে রাখিস যে যে কেউই তোকে দেখে ভয় পেয়ে যাবে, একটু হাসতেও তো পারিস নাকি? শুধু শুধু মেয়েটাকে ভয় দেখাচ্ছিস কেনো?"
আলভী এবার অলির দিকে এগিয়ে গেলো, ইশার উদ্দেশ্যে বলল,
"দেখি সর তো"
ইশা সরতে চাইলে অলি ইশার পরণের ওড়না টেনে ধরে, অলির রিয়েকশন দেখে আলভী এবার পুরোপুরি ভাবে সিওর হলো যে অলি তাকে দেখেই ভয় পাচ্ছে, ভয়ে মেয়েটার চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে সেই সাথে চোখদুটোতেও অশ্রুকণা জমেছে, আলভী অসহায় চোখে অলির দিকে তাকালো। আলভী অলিকে ভালোবাসে, অলির চোখে থাকা তার প্রতি এই ভয়টা আলভী মেনে নিতে পারছেনা।
"অলি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছো,,,"
আলভী পুরো কথা শেষ করার আগেই অলি তাকে পাশ কাটিয়ে সিড়িবেয়ে উপরে উঠতে লাগলো, আলভী অলির দিকে তাকাতেই দেখলো অলি নিজের পরণের স্কার্ট হাল্কা উঁচু করে সিড়িবেয়ে উপরে উঠছে তখনই আলভীর নজর অলির পায়ের উপর পড়লো, সে দেখলো অলির বাম পা ফাকা শুধু ডান পায়েই নূপুর আছে। আলভীর মুখ থেকে আপনা-আপনি বেরিয়ে এলো,
"শিট, আলভী তাসনীম মির্জা আই থিংক ইউ ফা'কড আপ"
এভাবে অলিকে চলে যেতে দেখে ইশাও অলির পিছু পিছু চলে যায়, অগত্যা ঊর্মিলাকে নিচে পড়ে থাকা ফুলগুলো তুলতে হয়, আলভীর ভাবনার মাঝেই তার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে। আলভী ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজ টা দেখামাত্রই তার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়,
ম্যাসেজ- কিরে বন্ধু রাত কেমন কাটলো? আহহা ধন্যবাদ দিতে হবেনা। তো বল এখনো মেয়েটার প্রতি তোর ফিলিংস কাজ করছে তো? শোন ওর মতো থার্ড ক্লাস মেয়েরা একবার বেড পর্যন্তই ঠিক আছে, কিন্তু তুই তো সেটা মানতেই চাইছিলি না। কি বলেছিলি তুই - যে অলির দিকে কেউ তাকালে তুই নাকি তার চোখ তু'লে নিবি হাত বাড়ালে হাত কে'টে ফেলবি। তো এখন নিজের চোখ তো'ল আর হাত কা'ট। মেয়েদের দিকে না তাকিয়ে এতোদিন নিজেকে বেশ মহান মনে করেছিস, এখন নিজেই বুঝবি যে ওর মতো মেয়েরা আসলেই একবার ইউজ করার জিনিস।
ম্যাসেজ টা পড়েই আলভী সেই নম্বরে কল দিলো, কিন্তু নম্বরটা বন্ধ। আলভী রেগেমেগে ফোনটাই ছুড়ে মা'রলো, অলির বাবা লিয়াকত হোসাইন কাজের লোকের সাথে বাজারের ব্যাগগুলো রান্নাঘরে দিয়ে আসার উদ্দেশ্যে ড্রইংরুম পেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলেন তখনই আলভীর ছুড়ে মা'রা ফোনটা দূর্ঘটনা বশত ছিটকে গিয়ে লিয়াকত হোসাইনের মাথা বরাবর লাগলো,
"আহহ,"
চলবে,,,