28/05/2025
সীমাহীন পথের যাত্রী: মিচ হাচক্রাফটের গল্প সবার জন্য
হিমেল বাতাসে ভেসে আসছিল সমুদ্রের গর্জন। চোখের সামনে ছিল বিশাল নীল জলরাশি আর সামনে একটি ছোট্ট নৌকা। তার পাশেই দাঁড়িয়ে এক তরুণ, চোখে আগুন জ্বলা স্বপ্ন—নাম তার মিচ হাচক্রাফট।
সে জানত, এই পথ সহজ নয়। কিন্তু সহজ পথের মানুষ সে নয়।
ছোটবেলা থেকেই মিচ ছিল অন্যরকম। বন্ধুরা যখন ভিডিও গেমে ব্যস্ত, তখন সে পড়ে থাকত অ্যাডভেঞ্চার আর পর্বতারোহণের গল্পে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে একা একা জয় করেছিল আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারো। তখন থেকেই সে জানত, তার জীবন হবে ভিন্ন।
২০ বছর বয়সে হঠাৎ হারালেন বাবা—সবকিছু যেন থেমে গেল। কিন্তু মিচ থামেনি। সে পা রাখল ব্রিটেনের রয়্যাল মেরিন বাহিনীতে। সেখানে শিখল শৃঙ্খলা, সাহস আর নিজের সীমাকে পেরিয়ে যাওয়ার কৌশল।
বাহিনী থেকে বেরিয়ে আসার পরেও মিচের মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল—
"মানুষের আসল সীমা কোথায়?"
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু হয় "প্রজেক্ট লিমিটলেস"—এক স্বপ্ন, যেখানে শুরু হবে সমুদ্র থেকে, আর শেষ হবে পৃথিবীর ছাদে—মাউন্ট এভারেস্টে।
২০২৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, ইংল্যান্ডের ডোভার থেকে শুরু হলো সেই অবিশ্বাস্য যাত্রা।
প্রথমেই তাকে পাড়ি দিতে হলো ৩৪ কিমি জলের ধারা—ইংলিশ চ্যানেল। কনকনে ঠান্ডা জল, ঢেউয়ের ধাক্কা, ক্লান্ত শরীর—তবু সে সাঁতরে পৌঁছল ফ্রান্সে।
তারপর শুরু হল সাইকেল যাত্রা—প্রায় ১২,০০০ কিমি। ইউরোপের বরফঢাকা রাস্তা, বুলগেরিয়ায় একদল সশস্ত্র লোকের মুখোমুখি হওয়া, ভারতীয় গরমে দগ্ধ হওয়া—সবকিছুই ছিল এই পথে। তবু সে চলেছে—একাই।
এরপর সে পৌঁছল ভারতের দিঘায়। সেখান থেকে ৯০০ কিমি দৌড়ে পৌঁছল কাঠমান্ডু, নেপালে। পা ফুলে গেছে, হাঁটু ব্যথায় অবশ, কিন্তু সে থামেনি।
শেষে সে পাড়ি দেয় এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে। ২০২৫ সালের ১১ মে সকালে, ঠিক ৭টা ২০ মিনিটে, সে দাঁড়িয়ে ছিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দুতে—মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে।
এই ২৪০ দিনের যাত্রায় মিচ শুধু নিজেকে জয় করেনি। সে দেখিয়েছে—
"মানুষ চাইলে কোথা থেকে কোথায় পৌঁছাতে পারে।"
সে এই যাত্রার মাধ্যমে টাকা তুলেছে SAVSIM নামের একটি দাতব্য সংস্থার জন্য—যা প্রাক্তন সেনাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও বন্যপ্রাণ রক্ষায় কাজ করে।
আমরা প্রায়ই বলি,
"আমার পক্ষে সম্ভব না",
"সময় নেই",
"শরীর ভালো না",
"অবস্থা খারাপ..."
কিন্তু একবার ভাবুন—মিচ যদি এত প্রতিকূলতার পরেও হেরে না যায়,
তাহলে আপনিও পারেন।