শব্দ - মাধূর্য

শব্দ - মাধূর্য কবিতায় ভালোবাসা-ভালোলাগা খূঁজে পাই

পল্লী জননী- জসীম উদ্‌দীন-রাত থম থম স্তব্ধ নিঝুম, ঘোর-ঘোর-আন্ধার,নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।রুগ্ন ছে...
07/02/2025

পল্লী জননী
- জসীম উদ্‌দীন-
রাত থম থম স্তব্ধ নিঝুম, ঘোর-ঘোর-আন্ধার,
নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,
করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।
শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,
তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।

ভন্ ভন্ ভন্ জমাট বেঁধেছে বুনো মশকের গান,
এঁদো ডোবা হতে বহিছে কঠোর পচান পাতার ঘ্রাণ?
ছোট কুঁড়ে ঘর, বেড়ার ফাঁকেতে আসিছে শীতের বায়ু,
শিয়রে বসিয়া মনে মনে মাতা গণিছে ছেলের আয়ু।

ছেলে কয়, “মারে, কত রাত আছে? কখন সকাল হবে,
ভাল যে লাগে না, এমনি করিয়া কেবা শুয়ে থাকে কবে?”
মা কয়“বাছারে ! চুপটি করিয়া ঘুমা ত একটি বার, ”
ছেলে রেগে কয় “ঘুম যেআসে না কি করিব আমি তার ?”
পান্ডুর গালে চুমো খায় মাতা, সারা গায়ে দেয় হাত,
পারে যদি বুকে যত স্নেহ আছে ঢেলে দেয় তারি সাথ।
নামাজের ঘরে মোমবাতি মানে, দরগায় মানে দান,
ছেলেরে তাহার ভাল কোরেদাও, কাঁদে জননীর প্রাণ।
ভাল করে দাও আল্লা রছুল। ভাল কোরে দাও পীর।
কহিতে কহিতে মুখখানি ভাসে বহিয়া নয়ন নীর।

বাঁশবনে বসি ডাকে কানা কুয়ো,রাতের আঁধার ঠেলি,
বাদুড় পাখার বাতাসেতে পড়ে সুপারীর বন হেলি।
চলে বুনোপথে জোনাকী মেয়েরা কুয়াশা কাফন ধরি,
দুর ছাই। কিবা শঙ্কায় মার পরাণ উঠিছে ভরি।
যে কথা ভাবিতে পরাণ শিহরে তাই ভাসে হিয়া কোণে,
বালাই, বালাই, ভালো হবে যাদু মনে মনে জালবোনে।
ছেলে কয়, “মাগো! পায়ে পড়ি বলো ভাল যদি হই কাল,
করিমের সাথে খেলিবারে গেলে দিবে না ত তুমি গাল?
আচ্ছা মা বলো, এমন হয় না রহিম চাচার ঝাড়া
এখনি আমারে এত রোগ হোতে করিতে পারি ত খাড়া ?”
মা কেবল বসি রুগ্ন ছেলের মুখ পানে আঁখি মেলে,
ভাসাভাসা তার যত কথা যেন সারা প্রাণ দিয়ে গেলে।

“শোন মা! আমার লাটাই কিন্তু রাখিও যতন করে,
রাখিও ঢ্যাঁপের মোয়া বেঁধে তুমি সাত-নরি শিকা পরে।
খেজুরে-গুড়ের নয়া পাটালিতে হুড়ুমের কোলা ভরে,
ফুলঝুরি সিকা সাজাইয়া রেখো আমার সমুখ পরে।”
ছেলে চুপ করে, মাও ধীরে ধীরে মাথায় বুলায় হাত,
বাহিরেতে নাচে জোনাকী আলোয় থম থম কাল রাত।

রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া কত কথা পড়ে মনে,
কোন দিন সে যে মায়েরে না বলে গিয়াছিল দুর বনে।
সাঁঝ হোয়ে গেল আসেনাকো আই-ঢাই মার প্রাণ,
হঠাৎ শুনিল আসিতেছে ছেলেহর্ষে করিয়া গান।
এক কোঁচ ভরা বেথুল তাহার ঝামুর ঝুমুর বাজে,
ওরে মুখপোড়া কোথা গিয়াছিলি এমনি এ কালি-সাঁঝে?

কত কথা আজ মনে পড়ে মার, গরীবের ঘর তার,
ছোট খাট কত বায়না ছেলের পারে নাই মিটাবার।
আড়ঙের দিনে পুতুল কিনিতে পয়সা জোটেনি তাই,
বলেছে আমরা মুসলমানের আড়ঙ দেখিতে নাই।
করিম যে গেল? রহিম চলিল? এমনি প্রশ্ন-মালা;
উত্তর দিতে দুখিনী মায়ের দ্বিগুণ বাড়িত জ্বালা।
আজও রোগে তার পথ্য জোটেনি, ওষুধ হয়নি আনা,
ঝড়ে কাঁপে যেন নীড়ের পাখিটি জড়ায়ে মায়ের ডানা।

ঘরের চালেতে ভুতুম ডাকিছে, অকল্যাণ এ সুর,
মরণের দুত এল বুঝি হায়। হাঁকে মায়, দুর-দুর।
পচা ডোবা হতে বিরহিনী ডা’ক ডাকিতেছে ঝুরি ঝুরি,
কৃষাণ ছেলেরা কালকে তাহার বাচ্চা করেছে চুরি।
ফেরে ভন্ ভন্ মশা দলে দলে বুড়ো পাতা ঝরে বনে,
ফোঁটায় ফোঁটায় পাতা-চোঁয়াজল গড়াইছে তার সনে।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা।
সম্মুখে তার ঘোর কুজঝটি মহা-কাল-রাত পাতা।
পার্শ্বে জ্বলিয়া মাটির প্রদীপ বাতাসে জমায় খেল,
আঁধারের সাথে যুঝিয়া তাহার ফুরায়ে এসেছে তেল।

05/02/2025

একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
তবুও আপনার মনে থাকবে খাবার খেতে বসেও কেঁদেছিলেন আপনি। নিজেকে কোন ভাবেই আটকে রাখতে পারেন নি।

একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
তবুও আপনার মনে থাকবে দুর্দিনে সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোই অবহেলায় ছেড়ে গিয়েছিলো আপনাকে।

একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
তবুও আপনার মনে থাকবে কত রাত আপনি এক ফোটাও ঘুমাতে পারেন নি। বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন আপনি।

একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
তবুও আপনার মনে থাকবে বিষন্ন বিকেল গুলোতে কেউ আপনার পাশে ছিলো না। কেউ না।

একদিন হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে, হয়তো হবে না।
তবে কিছু মানুষ, তাদের কিছু কথা, ব্যবহার, কিছু মুহূর্ত আপনার সারাজীবন মনে থেকে যাবে। আপনি খুব করে চাইলেও তা ভুলতে পারবেন না। কখনই না।

লেখক- মেহেদী হাসান শুভ্র

Address

Dhaka

Telephone

+8801731440768

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when শব্দ - মাধূর্য posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to শব্দ - মাধূর্য:

Share