16/03/2024
Natural Aquarium
আজ আমার দেখা এক অদ্ভুত Aquarium এর গল্প বলবো। সেই অর্থে এটা হয়ত কোনো ভ্রমণ কাহিনী নয়। কারন, এতে না থাকবে কিভাবে গেলাম, কোথায় থাকলাম, কি খেলাম, কি কি দেখলাম, কত খরচ হলো ইত্যাদির কথা।
প্রত্যেকটা ভ্রমণপিয়াসি মানুষ, ছবি দেখে বা পড়ে বা গল্প শুনে কোনো একটা বিশেষ জায়গার প্রতি আকৃষ্ট হন। সেটা পাহাড়, জঙ্গল বা সমুদ্র হতে পারে| আমিও তার ব্যাতিক্রম নই| শুধু উপযুক্ত সময়ে পকেট গ্রিন সিগনাল দিলেই হলো। আমারও স্বপ্ন ছিল আন্দামান।
কোনো একদিন প্লেনের চাকাগুলো আমায় নিয়ে পোর্টব্লেয়ারের মাটি স্পর্শ করেছিল, আমায় সমৃদ্ধ করেছিল। প্রথমেই বলেছি এটা আমার কোনো ভ্রমণ বৃত্তান্ত নয়….মনমুগ্ধকর সমুদ্রের/বীচের/water sports/mud volcano/জঙ্গল/limestone cave/সেলুলার জেল/spread boat এর journey…ইত্যাদির ছবি বা তার কথা এ লেখায থাকবে না । অনেকেই এখানে গেছেন বা ছবি সহ অনেক সুন্দর সুন্দর লেখা পড়েছেন। তাই, সোজা চলে যাচ্ছি একদম নীল দ্বীপে….এখানেই যে দেখেছিলাম Natural Aquarium।
নীলে আছে অসাধারণ সব সী বীচ….। এর মধ্যে লক্ষণপুর ১ এ আছে বিখ্যাত Natural Coral Bridge, যার সাথে আপনারা অর্থাৎ ভ্রমণপ্রেমী মানুষরা প্রায় সবাই পরিচিত । এখান থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য নাকি পাগল করা । দুপুরের খাওয়া সেরে খানিকটা আগেই পৌছে গেলাম । দেশি, বিদেশি tourist এ পরিপূর্ণ । এখানে এসে বুঝলাম ঘরোয়া আড্ডায় আমার এক বন্ধু কি জরুরি information দিয়েছিল। কদিন আগেই ওরা ঘুরে গেছে। বলেছিল হাওয়াই চটি ছাড়া একজোড়া কিটো জুতো নিয়ে যেতে । সত্যি না হলে এভাবে ঘুরতে বা ছবি তুলতে পারতাম না । মনে মনে ওদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানালাম । কি ভীষণ ধারালো, সূচালো, রুক্ষ, এবড়ো খেবড়ো, কোথাও কোথাও হাটু সমান গর্ত…. অসম্ভব শক্ত একদম ঝামার মত…. মৃত কোরাল জমে জমে তৈরি হয়েছে এই সী বীচ । Coral Bridge এর ছবি তুললাম, সবাই তুলছে । এরপর ভীড় এরিয়ে একটু দূরে ফাঁকা জায়গার দিকে বীচ ধরে, জল জমা গর্ত এরিয়ে হাটা দিলাম ।
সূর্যদেব ধীরে ধীরে তার লালিমা ছড়িয়ে দিচ্ছেন, আর একটু পরেই টুপ করে ডুব দেবেনদেবেন, অসাধারণ সব দৃশ্য সৃষ্টি হচ্ছে চোখের সামনে । ক্যামেরায় চোখ লাগিয়ে একটু সরতে গিয়েই একটা ছোট গর্তে বেসামাল হয়ে পড়লাম, হাটুর ছাল উঠে গেল খানিকটা । ওই পড়াটাই আশির্বাদ । না হলে হয়ত ঠিক ভাবে চোখ যেত না নীচের দিকে । এবার বিভিন্ন জায়গায়, জমাজলের গর্তের ভেতরে চোখ আটকে যাচ্ছে । আমি জীব বিজ্ঞানের কিছুই জানি না, কিন্তু জীবন, প্রাণ বা প্রাণী, তো আকৃষ্ট করে । স্কুবা ডাইভ বা স্মরকলিঙ্গ এর থেকেও এতো কম আকর্ষণীয় নয় । অজানা নেশায় আটকে গেলাম । আমার সঙ্গী বিরক্ত হচ্ছে, বুঝতে পারছি, তাগাদা দিচ্ছে খালি। ওকে আমি ব্যাপারটা বোঝাবার বৃথা চেষ্টা করছি । খালি মনে হচ্ছে কেন আরও আগে এলাম না । কালকেও সারাদিন নীলেই থাকবো, পরশু বেরোব এখান থেকেথেকে, কোনো scheduled program নেই । কাল যাব সীতাপুর বীচে । এই বীচের natuure ও নাকি অনেকটাই একইরকম। মাথায় সারাদিনের program set হয়ে গেল ।
পরের দিন খুব তাড়াতাড়িতাড়াতাড়ি (ভাটা পড়ার সময়টা জেনে নিয়েছি) ভাতটাত খেয়ে, কিছু শুকনো খাবার, জলের বোতল আর চায়ের ফ্লাস্ক পিঠে ফেলে সোজা সীতাপুর বীচ । আহা…. কি দেখছি চোখের সামনে । অসাধারন ফাঁকা, একদম ধূ ধূ করছে U আকৃতির একটা বীচ । একপাশে বেশ জঙ্গল মতো আছে, আর একপাশে খাড়া পাহাড় মতো আছে । অনেক দূরে ৫/৭ জন বিদেশী শুয়ে আছেন…. ব্যাস আর কেউ নেই । একটু পরে ওনারাও চলে গেলেন । খানিক বাদে ওই জঙ্গলের সরু পায়েচলা পথ দিয়ে দেখলাম আর এক বিদেশিকে সাইকেল নিয়ে, সমুদ্রের দিকে এগিয়ে গেলেন । সাথে একগাদা বড় বড় ছিপ । প্রায় সন্ধ্যা অবধি ওনাকে একা একা ছিপ ফেলতে দেখেছিলাম সেদিন। এবার আসি আসল কথায়, এই বীচটির একটা পাশ একদম কাল বিকেলে দেখা রুক্ষ, জল জমা গর্তে পরিপূর্ণ…. ঠিক যেমনটি চেয়েছিলাম। ইতিমধ্যে জানিয়ে রাখি, গতকাল সন্ধ্যাথেকে আমি আমার সঙ্গীকে এই গর্ত পর্যবেক্ষণের জন্য একটু আগ্রহী করতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছি । এই বীচের শেষে সমুদ্রের জল । সব জায়গাতেই যেমন হয় । বীচটা অনেকটাই falt type এর । জোয়ারের সময় ডুবে যায়, গর্তে আটকে থাকা জীবনগুলো চলে যায় গভীর সমুদ্রে, আবার ভাটায় আটকে যায় নতুন প্রাণ…. আটকে থাকে পরবর্তী জোয়ারের অপেক্ষায়, মুক্তির অপেক্ষায়। এই জোয়ারের অপেক্ষায়, মুক্তির অপেক্ষায় । এই aquarium এর জল পাল্টাতে কাউকে পরিশ্রম করতে হয় না…. একদম কাচের মতো পরিষ্কার জল প্রকৃতি নিজেই দায়িত্ব নিয়ে পাল্টে দেন । পাল্টে দেন, নানা রকমের রঙ বেরঙ এর ছোট ছোট মাছ,শঙ্খ,কড়ি, সমুদ্র শসা, বিছে/কেচো টাইপের প্রাণী এবং অসংখ্য নাম না জানা প্রাণী/রঙ্গিন কোরালদের প্রতিনিয়ত । কোথা দিয়ে যে এদের কীর্তিকলাপ দেখতে দেখতে ঘন্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল, টেরই পেলাম নানা, এবার কিন্তু সন্ধ্যা নেবে আসছে । সত্যিই আমার সঙ্গীর ওপর এবার ভীষণ রাগ হচ্ছে, ওকে এক একটা গর্তের পাশ থেকে টেনে তুলতে পারছি না। ফ্লাস্ক থেকে ঢেলে দেওয়া চা, এক চুমুকও দেয়নি, পুরো ঠান্ডা করে ফেলেছে। এই ঘোর কাটিয়ে উঠে গরম চায়ের বায়না জুড়লে অবশ্যই বিপদে পড়ব।
কলমে:
Shantanu Mukherjee