04/11/2025
মধ্যমগ্রাম ট্রলি কাণ্ডে মা ও মেয়ের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা
মধ্যমগ্রামে ট্রলি ব্যাগে করে খুনের পর মৃতদেহ পাচারের ঘটনায় সাড়ে ৮ মাসের মধ্যে মা ও মেয়েকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডর সাজা শোনালো বারাসত আদালত। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যমগ্রামের খুনের ঘটনায় আরতী ঘোষ ও তার মেয়ে ফাল্গুনী ঘোষকে নিয়ে আসা হয় সোমবার বারাসাত আদালতে। সমস্ত প্রমাণ সহ্য মধ্যমগ্রামে ট্রলি ব্যাগে করে খুনের পর মৃতদেহ পাচারের ঘটনায় এই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডর সাজা শোনাল বারাসাত আদালত।খুনের মামলায় যাবজ্জীবন জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস আরো অতিরিক্ত কারাবাস। এছাড়াও ২৩৮/৩ বিএনএস তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য সাত বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। তবে এক্ষেত্রে বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল প্রথম সাত বছর অর্থাৎ তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য যে সাত বছরের জেল দেওয়া হয়েছে সেটা থাকতেই হবে । তারপর যাবজ্জীবনের শাস্তি শুরু হবে। ডিফেন্স আইনজীবী তারক চন্দ্র দাস জানিয়েছেন, এই বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আবেদন জানাবেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ওই খুনের ঘটনার পর মা ও মেয়েকে ঘটনাস্থলে তদন্তের জন্য পুলিশ নিয়ে যায়। সেখানে আরতী ঘোষ নিজেই হাত দিয়ে দেখিয়ে দেন খুনের পর সে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র জলে ফেলেছিল। যে মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার হয় সেই মহিলার পোশাক কোথায় ফেলেছিল তাও দেখিয়ে দেন ফাল্গুনী।আনা হয় ডুবুরি ।উদ্ধার হয় খুনে ব্যবহৃত বঁটি। তবে ডুবুরির কাছে স্থানীয় এক বাসিন্দা শিলা বসু আবদার করেন আমার সোনার এবং রুপোর দুটি আংটি এই পুকুরের জলে হারিয়ে গিয়েছিল। একটু খুঁজে দেবেন প্লিজ। কিছুটা অবাক হয়ে যায়, ফাল্গুনীর সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও ডুবুরি। পরে যদিও বিনা বাক্য ব্যয় সকলে ঘটনাস্থল ছাড়েন। এদিকে ডুবুরি শীলাদেবীর আংটি খুঁজে না দাওয়ায় আশাহত হয়ে বাড়ি ফেরার সময় তিনি বলেন, কালী পূজার সময় তিনি ওই আংটি পুরোহিতকে দিয়েছিলেন।পুরোহিত ভুল করে পুজোয় ব্যবহৃত ঘটে রেখে দিয়েছিল। পরবর্তীতে পূজো শেষে ঘট বিসর্জন দেয়া হয় পুকুরে। সেই সময় ঘটের সঙ্গে রুপো এবং সোনার আংটি ও পুকুরের জলে হারিয়ে যায়। বহু খোঁজাখুঁজির পর মেলেনি সেই দামি গয়নাগুলি। ফলে ট্রলি কাণ্ডে পুকুরে ডুবুরি নামার খবর পেতেই ছুটে আসেন শীলা দেবী। খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে উদ্ধার হয়ে গেলেও সেই গয়না অবশ্য উদ্ধার হয়নি। পুলিশকর্মীরা এলাকা ছেড়ে চলে গেলে আশাহত হয়ে বাড়ি ফিরে যান শিলা দেবী। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন গয়না তো আর পেলাম না দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করি গিয়ে।মঙ্গলবার পিসি শাশুড়িকে খুনে অভিযুক্ত ফাল্গুনী ঘোষের ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লির এলাকার পুকুরে নামে ডুবুরি। মা ও মেয়েকে নিয়ে আসা হয় সেখানে। এদিকে ওই পুকুরের জলে ডুবুরি নামতেই এদিক ওদিক থেকে নানা ধরনের অনুরোধ ভেসে আসতে থাকে প্রতিবেশীদের পক্ষ থেকে। কেউ বলেন ওই পুকুরের জলে তার মূল্যবান আংটি হারিয়ে গিয়েছে কেউ আবার বলেন অন্য কিছু। পুলিশ কর্মীরা ও ডুবুরি ১৫ মিনিটের মধ্যে অস্ত্র উদ্ধার করে ওই স্পট ছেড়ে চলে যায়। সমস্ত উৎকণ্ঠার যবনিকা ঘটে। বারাসাত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া জানান ঘটনার তদন্তের ভার কলকাতা পুলিশের হাত থেকে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর হবার পর এক এক করে কিছু তদন্তে উঠে আসে। ২৫ মে প্রথম চার্জশিট জমা হয় আদালতে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমস্ত সাক্ষী সবুদ সম্পন্ন করা হয়।প্রায় ৩2 জন সাক্ষী দেন এই মামলায়। ট্রায়াল মনিটরিং নিয়মিত করা হয়েছে তাই এই দ্রুত সাফল্য।