01/07/2025
বিয়ের আগে শুধু ছেলে নয়, তার পরিবারটা কতটা সুস্থ তা জানাটাও সমান জরুরি।
অনেক সময় আমরা একটা ছেলেকে ভালোবেসে ফেলি তার ব্যবহার, কথা বলা, ভালোবাসা দেখানোর ভঙ্গি দেখে। মনে হয়, এ তো বুঝি পারফেক্ট একজন মানুষ। আমাদের সমাজেও সেই মানুষটাকে যাচাই করার মাপকাঠি খুব সীমিত—সে কত টাকা আয় করে, দেখতে কেমন, পড়াশোনায় কেমন ছিল, আর বাবা-মায়ের প্রতি তার দায়িত্ববোধ কেমন। কিন্তু একটা জিনিস প্রায়ই বাদ পড়ে যায়—সে আসলে কী ধরনের সম্পর্ক দেখে বড় হয়েছে? তার চোখের সামনে কেমন ছিল স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক?
অনেকেই বলে, “ছেলেটা তো খুব ভালো, মায়ের কথায় চলে।” কিন্তু সেই মা-ই যদি ঘরের বউকে সম্মান না করে, অথবা বাবা-মার সম্পর্ক যদি সারাজীবন তিক্ততায় ভরা হয়, তাহলে সেই ছেলেটি শেখে সম্পর্ক মানে অভিযোগ, অপমান, সহ্য করে টিকে থাকা। ছোটবেলার সেই স্মৃতি, সেই সম্পর্কের ছায়া তাকে গড়ে তোলে। সে হয়তো নিজেও জানে না, তার মধ্যে কোন মানসিকতা বসে গেছে। সে মনে করে, এটা-ই স্বাভাবিক, এভাবেই তো সংসার চলে।
তাই এমন একটা পরিবারে বড় হওয়া ছেলে, যতই আধুনিক হোক, যতই ভালোবাসুক, একটা সময়ে গিয়ে তার ভেতরের বিষাক্ত শিক্ষা আচরণে ফুটে উঠবেই। হয়ত সে চিৎকার করে না, মারধর করে না, কিন্তু স্ত্রীর কথা উপেক্ষা করা, সিদ্ধান্তে তাকে না রাখা, দোষ চাপিয়ে দেওয়া, অনুভূতি না বোঝা—এসব ধীরে ধীরে সম্পর্ককে নিঃশ্বাসরুদ্ধ করে তোলে। আর মেয়ে তখন ভাবে, “আমি কি ভুল করলাম?” অথচ ভুলটা সে করেনি, ভুলটা ছিল তার না-জানার, না-বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
আমাদের সমাজে মেয়েদের বলা হয়, সবকিছু মেনে চলতে হয়। কিন্তু কেউ বলে না—তুমি সম্পর্কের আগে সম্পর্কের মাটিটা পরীক্ষা করো। তুমি নিজেকে প্রশ্ন করো, এই মানুষটার সঙ্গে পুরো জীবন কাটানো যাবে কিনা, শুধু তাকে ভালোবেসে নয়, তার পরিবারটাকে বোঝার চেষ্টা করেও।
কারণ একটা পরিবার যেমন শিশুকে গড়ে তোলে, ঠিক তেমনই সেই পরিবার ভবিষ্যতের সম্পর্কের ছায়াও হয়ে দাঁড়ায়। যেখান থেকে সে এসেছে, সেটা যদি অসুস্থ হয়, সেখানে দাঁড়িয়ে সুস্থ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা অনেক কঠিন। ভালোবাসা থাকলেই সব সম্ভব—এই ধারণাটা অনেক সময় বিপদ ডেকে আনে। ভালোবাসা টিকে থাকে, যদি সেই ভালোবাসার ভেতরে সম্মান থাকে, বোঝাপড়া থাকে, নিরাপত্তা থাকে। আর সেটা তখনই আসে, যখন মানুষটা ছোটবেলা থেকে এসব শিখে এসেছে—কাজেই আপনি সেই শিক্ষার উৎসটাকে একবারও যদি দেখেন না, বোঝেন না, তাহলে আপনি নিজের ভবিষ্যতের ঝুঁকি নিচ্ছেন।
এই সমাজে ডিভোর্সের হার শুধু বেড়ে যাচ্ছে এই কারণেই নয় যে মানুষ বদলে যাচ্ছে, বরং মানুষ অনেক আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য। আর মেয়েরা অনেক সময় শুধু ছেলেকে দেখে, পরিবারটা না দেখে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। অথচ সম্পর্কটা কেবল দুইজনের নয়, বরং দুইটি দৃষ্টিভঙ্গির, দুটি সংস্কৃতির, দুটি মানসিক শিক্ষার মিলন।
তাই এখনই সময়। আপনি যদি নিজের জীবনে সম্মান চান, নিরাপত্তা চান, একজন জীবনসঙ্গীর ভালোবাসার পাশাপাশি একজন ভালো মানুষ চান—তাহলে শুধু তার বাহ্যিক গুণ নয়, তার ভেতরের মানুষটা গড়ে উঠেছে যে জায়গায়, সেটাকেও বুঝে নিন। নয়তো পরে চাইলেও কিছু পাল্টানো যাবে না, কারণ তখন আপনি শুধু একজন মানুষের নয়, তার অভ্যাস, তার মানসিক গঠন, আর একটা গোটা পরিবারের আচরণ বদলানোর দায়িত্ব নিয়ে ফেলবেন—যেটা কখনো আপনার একার পক্ষে সম্ভব নয়।
ভালোবাসা আসলে খুব মূল্যবান একটা জিনিস। এটা অবহেলার জন্য না, এটা বাজি ধরার জন্য না। তাই ভালোবাসার আগেই একটু বুঝে নেওয়া—এটাই ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।
লেখা সংগৃহীত
゚viralシfypシ゚viralシalシ