05/12/2023
পুরীর সীবিচে সাবুর পাঁপর বিক্রি করেন।
বললাম, একটা ছবি তুলবো আপনার? ঘাড় নেড়ে বললেন, তুলুন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, কেমন হয়েছে ছবিটা? আমি বললাম, ভালো। জিজ্ঞাসা করলাম, ফেসবুকে পোস্ট করতে পারি?
উনি হেসে সায় দিলেন।
জন্মান্ধ মানুষ। ভিক্ষাবৃত্তি বেছে না নিয়ে পরিশ্রম করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।
পাঁপর আমি তেমন খাই না। তবুও কিনলাম এক প্যাকেট। দশটাকা দাম। ইচ্ছে করেই পঞ্চাশ টাকার একটা নোট দিলাম। ভেবেছিলাম বুঝতে পারবেন না। কিন্তু দুবার আঙুল ঘষে বাকিটা ফেরত দিতে উদ্যত হলেন। বললাম, ঠিক আছে.. ফেরত দিতে হবে না আপনাকে, বাকিটা রাখুন প্লিজ।
মানুষটা হেসে চল্লিশ টাকা রিটার্ন দিয়ে চলে গেলেন।
আমিই বোধহয় ওনাকে অপমান করে ফেলেছিলাম। উনি ভিক্ষা করছেন না। উনি রীতিমত পরিশ্রম করছেন, তাই এক্সট্রা টাকা নেওয়ার পক্ষপাতী নন। আমি ক্ষমা চাইতে বললেন, যদি কখনও দরকার হয় তখন চাইবো।
এক হাতে লাঠি, অন্য হাতে পাঁপরের বস্তা। জীবন সংগ্রামে নেমেছেন। থেমে গেলেই হেরে যাবেন....তাই এগিয়ে চলেছেন....
আজ প্রতিবন্ধী দিবসে আবার মনে পড়ে গেলো ওনাকে। যিনি দৃষ্টিহীন হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে প্রতিবন্ধীর দলে ফেলতে নারাজ। আবার কত মানুষকে দেখি, সুন্দর চেহারা, কর্মক্ষম হয়েও বিভিন্ন ফিকির বের করে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলেছেন। দিনরাত লোক ঠকিয়ে উপার্জন করে চলেছেন।
সত্যি বলতে কী প্রতিবন্ধী ঠিক কারা আমার আজও বোঝা হলো না। আমার তো মনে হয় প্রতিবন্ধী নন বরং এনারা বিশেষভাবে সক্ষম হন। এনাদের মনের জোর আমাদের মত সক্ষম মানুষদের থেকেও কয়েকগুণ বেশি থাকে। সামনে না দেখা গেলেও ভাঙা মেরুদণ্ডের মানুষরাও কিন্তু আদপে প্রতিবন্ধীর তালিকাভুক্ত।
জীবনের কত দিক দেখা বাকি আছে আমার। আরও কত জানা বাকি....এনাদের দেখলে মনেহয় 'লড়াই' শব্দটাই একমাত্র প্রতিশব্দ 'জীবনের'।
ভালো থাকুন আপনারা। আর আমাদের মত মানুষদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন, কারা প্রকৃত প্রতিবন্ধী!
যারা সচল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কারণে আপনাদের দিকে করুণার চোখে তাকাই তাদের বুঝিয়ে দিন, আপনারা করুণা চান না, কারণ আপনাদের লড়াইটা আপনাদেরই লড়তে হয়, অন্য কেউ লড়ে দেয় না।
কলমে-অর্পিতা সরকার
ছবি- অর্পিতা সরকার