19/10/2025
বাঙ্গালীরা তাদের সর্বাপেক্ষা বড় ইষ্টদেবী 'দুর্গা'-এর বানান যেরকম ভুল লেখে, তাতে জাতি হিসাবে আমাদের বর্তমান অবস্থা একেবারে জাস্টিফায়েড। তবে যা গিয়েছে, গিয়েছে, সামনে যে পুজোগুলো আসছে, দয়া করে সেই পুজো সম্পর্কিত বানানগুলো সঠিক লেখার চেষ্টা করুন। একটা রেডি-রেকনার তালিকা দিয়ে দিলাম, আপনাদের আর কিছু মনে পড়লে জানাবেন, যুক্ত করতে থাকবো।
১) পুজো / পূজা ('পূজা' সংস্কৃত শব্দ)।
২) দুর্গা (দেবী যেহেতু 'দুর্গতিনাশিনী')।
৩) সংস্কৃতে 'কালিকা' হলেও বাংলায় মা কালী (বাংলায় 'কালি' শব্দের অর্থ হলো রং)।
৪) বাংলায় 'দীপাবলি' (দীপের উৎসব), হিন্দিতেও 'দীওয়ালি' (दीवाली), বস্তুতঃ হিন্দিতেও 'দীপাবলি' শব্দ অপভ্রংশ হয়েই 'দীওয়ালি' এসেছে।
৫) ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। কঠিন বানান লিখতে না পারলে 'ভাইফোঁটা' লিখুন, কিন্তু দয়া করে ভুলভাল লিখবেন না আর 'ভাইফোঁটা' বানানেও কিন্তু চন্দ্রবিন্দু অবশ্যই দিতে হবে।
৬) জগদ্ধাত্রী (জগতের ধারণকারিণী)
৭) কার্ত্তিক (মাতা কৃত্তিকার পুত্র)
পুজো সম্পর্কিত বানান ছাড়াও আরও কিছু প্রচলিত ভুল বানানের শুদ্ধরূপ লিখে দিচ্ছি। আশা করা যায়, এই ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি আর হবে না।
★ দূর, দূরত্ব বাদ দিয়ে মোটামুটি আর যত শব্দ আছে, যেখানে 'দু'-এর পরে রেফ হবে, সব শব্দেই 'দু' হবে, 'দূ' নয়। যথাঃ দুর্গা, দুর্যোগ, দুর্যোধন, দুর্নীতি, দুর্নিবার, দুর্বল, দুর্বৃত্ত, দুর্বিষহ, দুর্বিপাক ইত্যাদি। এমনকি দুঃসহ, দুঃশাসন, দুমদাম বানানগুলোতেও 'দু'-ই হবে।
★ র ও ষ-এর পরে ণত্ব ও ষত্ববিধান অনুযায়ী সদাসর্বদা ণ-ই হবে। যথাঃ পাষাণ, পাষণ্ড, ষণ্ডাগুণ্ডা, রণ, প্রণাম (কিন্তু পেন্নাম), অরণ্য, মৃণ্ময় (কিন্তু চিন্ময়, যেহেতু এখানে ন-এর আগে র নেই) ইত্যাদি। কিন্তু 'পরনে' হবে, যেহেতু, এটা তৎসম শব্দ নয়, তদ্ভব।
★ ক, চ, ট, ত, প বর্গের কোনো অক্ষরের সঙ্গে নাসিক্য বর্ণ (ঙ,ঞ, ণ, ন, ম)-এর সন্ধি হলে সর্বদা সেই অক্ষর যে বর্গের, যুক্ত হবে সেই বর্গের নাসিক্য বর্ণের সঙ্গে। যথাঃ আকাঙ্খা (যুক্তাক্ষরে খ আছে, তাই খ-এর সঙ্গে ক বর্গের শেষ অক্ষর ঙ-এর সন্ধি হবে), কাঞ্চন (যুক্তাক্ষরে চ আছে, তাই চ-এর সঙ্গে চ বর্গের শেষ অক্ষর ঞ-এর সন্ধি হবে), বিজ্ঞান (যুক্তাক্ষরে জ আছে, তাই জ-এর সঙ্গে চ বর্গের শেষ অক্ষর ঞ-এর সন্ধি হবে), ঘণ্টা, কণ্ঠ, লণ্ঠন, গণ্ডগোল, গুণ্ডা, পাণ্ডু, পাণ্ডব, লণ্ডভণ্ড (এই শব্দগুলোতে সব থেকে বেশি ভুল হয়, এখানেও সেই একই সূত্র ― দেখুন, যুক্তাক্ষরে ট, ঠ, ড আছে, তাই ট, ঠ, ড-এর সঙ্গে ন-এর সন্ধি হবে না, সর্বদা ণ-এর হবে, কারণ, ট বর্গের শেষ অক্ষর হলো ণ), অন্ত, চন্দন, বন্ধু (যুক্তাক্ষরে ত, দ, ধ আছে, তাই এই অক্ষরগুলোর সঙ্গে ত বর্গের শেষ অক্ষর ন-এর সন্ধি হবে), পম্পা, রম্ভা, গুম্ফা (যুক্তাক্ষরে প, ফ, ভ আছে, তাই এই অক্ষরগুলোর সঙ্গে প বর্গের শেষ অক্ষর ম-এর সন্ধি হবে)।
★ প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ অথবা না হলে প্রশ্নে 'কি' হবে আর উত্তর বর্ণনাত্মক হলে প্রশ্নে 'কী' হবে। যথাঃ "তুমি কি খাবে?" উত্তরে হ্যাঁ অথবা না হবে। আর "তুমি কী খাবে?"-এর উত্তরে ভাত, মাছ, সব্জি হবে।
★ দুইজন, দুইদিন, নয়দিন এই সব শব্দগুলোকে সংক্ষেপে লিখলে অর্থাৎ 'ই' বা 'য়'-কে উহ্য রাখলে একক উদ্ধৃতি চিহ্ন (Single Inverted Comma) দিতে হবে অর্থাৎ দু'জন, দু'দিন, ন'দিন।
★ র-এর সঙ্গে য-এর সন্ধি হলে সর্বদা র-ফলা বসবে, যথাঃ সূর্য্য, ভট্টাচার্য্য, কার্য্য, কার্য্যালয় ইত্যাদি।
★ 'টি', 'টা', 'খানা', 'খানি', 'গুলো', 'গুলি' হলো পদাশ্রিত নির্দেশক শব্দ। এই শব্দগুলো কখনই একা বসতে পারে না, সর্বদা মূল শব্দের সঙ্গে একত্রে অর্থাৎ একমাত্রায় বসবে, যথাঃ বইটি, ছেলেটা, কলমখানি, কিন্তু কখনই বই টি, ছেলে টা, কলম খানি হবে না।
আবারও বলছি, আপনাদেরও এরকম আরও কিছু প্রচলিত ভুল মনে এলে বলে দিন, তালিকায় যোগ করে দেবো।
Sayan Pal এর দেওয়াল থেকে।