23/08/2025
“খেলা” ধরে ফেলল সুপ্রিম কোর্ট….
SIR এর সাদা কুর্তায় কালি ছেঁটানোর “খেলা” ধরে ফেলল দেশের শীর্ষ আদালত। SIR নিয়ে, ADR বনাম জাতীয় নির্বাচন কমিশন মামলায়, সুপ্রিম কোর্টের গতকালের নির্দেশ নিয়ে মানুষকে ফের বোকা বানানোর খেলা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন খবরের কাগজের হেডলাইনসের স্ক্রিন শট লাগিয়ে অনেকেই দেখছি ঘোলা জল আরও ঘুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন। তার পর্দা ফাঁস করব। কিন্তু তার আগে আপনাদের বলব সেই কথা, যা কেউ বলছে না।
আপনারা জানেন, বিহারে SIR চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে, Association for Democratic Reforms বা ADR বলে একটি সংস্থা। মামলায় যোগ দিয়েছে একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দল। মূল অভিযোগ কী কী ?
১. জাতীয় নির্বাচন কমিশন মোদী-অমিত শাহর হাতের পুতুল।
২. SIR এর নামে বেছে বেছে মুসলিমদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।
৩. বেছে বেছে বিরোধী দলগুলির সমর্থকদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।
বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ এই মামলা শুনছে। আপনারা এও জানেন যে, বিহারে SIR প্রক্রিয়ায় প্রায় ৬৫ লক্ষ, মৃত, ভুয়ো, বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গার নাম বাদ গেছে। এই মামলাতেই গত ১৪ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, নির্বাচন কমিশনকে এই ৬৫ লক্ষ নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নাম বাদ যাওয়া যে কোনও বৈধ ভোটার, আইন মেনে, তালিকায় নাম নথিভুক্ত করতে আবেদন করতে পারবেন। কমিশন নিযুক্ত বুথ লেভেল অফিসার বা BLO এবং ১২ টি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল নিযুক্ত বুথ লেভেল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা BLA রা সেই সব আবেদন খতিয়ে দেখে, বৈধ অথচ ভুল বশত বাদ যাওয়া ভোটারদের নাম ফের তালিকায় তুলবেন।
গতকাল সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময়, কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী আদালতে একটি রিপোর্ট জমা দেন। জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা হচ্ছে। কিন্তু সেই রিপোর্ট দেখেই সুপ্রিম কোর্ট বিস্মিত। এ কী ! রাজনৈতিক দলগুলির মোট ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৮১৩ জন BLA, ২২ দিনে মোট ২ জন ভোটারের নাম তুলতে আবেদন জানিয়েছে !!!! প্রথম স্ক্রিন শট দেখুন। শুধু তাই নয়, কমিশনের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, এপর্যন্ত ৮৪ হাজার ৩০৫ জন “ভোটার” নাম বাদে আপত্তি জানিয়ে, তালিকায় ফের নাম তোলার জন্য আবেদন করেছেন। দ্বিতীয় স্ক্রিন শট দেখুন। নাম বাদ যাওয়া ৬৫ লাখের মধ্যে ৮৪ হাজার মানে কত শতাংশ ? মাত্র ১.৩ শতাংশ !! তাহলে ? “ভোটার“ বা “ভূতেরা” সব গেলেন কোথায় !!!! স্বাধীনতার পর দেশে যত ভোট হয়েছে, যত ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছে, তাতে মার্জিন অফ এরর বা ভুলের সম্ভাবনা কত শতাংশ ছিল ? মোটামুটিভাবে ৪ থেকে ৫ শতাংশ। সেই তুলনায় ১.৩ শতাংশ তো কিছুই নয়। তাহলে কি SIR নিয়ে হল্লা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ? অসাড় ? ভোটের দিন “ভূতেদের” উপদ্রব বন্ধ হয়ে যাবে বুঝে, ভয় পেয়ে, সাধারণ মানুষের মনে অযথা ভ্রম তৈরির জন্য ভেবেচিন্তে বিশেষ ভাষ্য রচনা ?
সন্দেহ হতেই তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, রাজনৈতিক দলগুলির ১ লক্ষ ৬০ BLA, রোজ, নাম বাদ যাওয়া ১০ জন করে “বৈধ” ভোটারের নাম তুলতে সাহায্য করবে। রোজ তাহলে ১৬ লক্ষ মানুষের নাম নথিভুক্ত হয়ে যাবে। ৫ দিনের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলিকেই এবার নাম বাদ যাওয়া “বৈধ” ভোটারদের হাজির করতে হবে। পারলে ভালো। না পারলে ? দুধ কা দুধ, পানি কা পানি 😀
এবার আসি, আধার প্রসঙ্গে। তিন নাম্বার স্ক্রিন শট দেখুন। দেখুন তো, সুপ্রিম কোর্ট ১৪ তারিখ যে নির্দেশ দিয়েছিল, আর গতকাল যে নির্দেশ দিয়েছে, তার মধ্যে আদৌ কি কোনও ফারাক আছে ? না। নেই। আগের দিনও আদালত বলেছিল, বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলে, নাম তোলার আবেদনপত্রের সঙ্গে আধার কার্ডের প্রতিলিপি জমা দেওয়া যাবে। কিন্তু এটা বলেনি যে, আধার জমা দিলেই ভোটার তালিকায় নাম উঠে যাবে। সুপ্রিম কোর্ট গতকালও একথা বলেনি। আসলে সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দিতেই পারবে না। এবার বুঝে নিন, কেন পারবে না।
চার নম্বর স্ক্রিন শট দেখুন। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১৬ ধারা কী বলছে। ভোটার তালিকায় তাঁর নামই থাকবে, যিনি ভারতের নাগরিক। মানে খুব সোজা। ভারতীয় নাগরিক নন, এমন কারও নাম ভোটার তালিকায় থাকবে না। এবার দেখুন ৫ নম্বর স্ক্রিন শট। দেখুন তো, আধার আইন কী বলছে ? বলছে, আধার ভারতে বসবাস করার নথি। নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। ভুলে যাবেন না, কমিশনের সুরে সুর মিলিয়ে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ইতিমধ্যেই মেনে নিয়েছেন, আধার নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। সেই বেঞ্চই কী করে স্ববিরোধী নির্দেশ দেবে ? আদালতকে যদি তেমন নির্দেশ দিতেই হয়, তাহলে তার আগে, জন প্রতিনিধিত্ব আইনের ১৬ ধারা আর আধার আইনকে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ বলে ঘোষণা করতে হবে।
অতএব, মিথ্যে প্রচারে কান দেবেন না। SIR আসলে ভালো “খেলছেন”। বুঝে গেছে দেশের শীর্ষ আদালত। আপনিও বুঝে ফেলুন।
১. SIR হচ্ছেই।
২. শুধু আধার দেখিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলা যাবে না।
৩. ভোটার তালিকা থেকে মৃত, ভুয়ো, বাংলাদেশি রোহিঙ্গা, সব বাদ যাবে।
পরের সব সরকার নির্বাচন করবেন ভারতের নাগরিকরা। বিদেশিরা নন।