19/08/2025
১৯১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর।
আমেরিকার টেনেসি অঙ্গরাজ্যের কিংস্টন শহরে ঘটেছিল মানবসভ্যতার অন্যতম এক নিষ্ঠুর ঘটনা। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম এবং শেষবারের মতো একটি হাতিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
হাতিটির নাম ছিল ‘বিগ ম্যারি’। পাঁচ টনের এই এশীয় হাতি বহু বছর ধরে স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস ট্রাভেলিং সার্কাস-এর প্রধান আকর্ষণ ছিল। অসাধারণ কসরত ও শান্ত স্বভাবের জন্য সে দর্শকদের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিল। মালিক চার্লি স্পার্কসের পরিবার ছোটবেলায়ই তাকে কিনে এনেছিল, আর তখন থেকেই ম্যারি ছিল দলের অপরিহার্য সদস্য।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন অভিজ্ঞ মাহুতকে সরিয়ে দিয়ে নতুন মাহুত রেড এল্ড্রিক্সকে হাতির দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগের অভিজ্ঞতা থাকলেও নতুন জায়গার হাতির ব্যাপারে রেড ছিল অনভিজ্ঞ। এক প্রদর্শনীর সময়, ম্যারি যখন পেছনের দুই পায়ে দাঁড়িয়ে কসরত দেখাচ্ছিল, রেড অকারণে লোহার শিক দিয়ে তার কানে আঘাত করতে থাকে। ব্যথা ও উত্তেজনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ম্যারি তাকে মাটিতে ফেলে পায়ে পিষে দেয়।
এই ঘটনার পর হাতিকে ঘিরে শহরে চরম উত্তেজনা আর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জনতার দাবি—“খুনি” হাতির শাস্তি চাই, নইলে তারা সার্কাস বয়কট করবে। মালিক বোঝানোর চেষ্টা করলেও কেউ শুনল না যে রেডের নিষ্ঠুরতা ও অনভিজ্ঞতাই দুর্ঘটনার মূল কারণ। কেউই চার্লি স্পার্কসের কোনও শো দেখতে যাচ্ছিল না এই ঘটনার প্রতিবাদে। সার্কাসটি একসময় প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। অবশেষে জনরোষ প্রশমনের জন্য মালিককে রাজি হতে হল ম্যারিকে হত্যা করতে।
কীভাবে ম্যারিকে হত্যা করা হবে, তা নিয়ে নানান প্রস্তাব এল। কেউ বলল গুলি করে হত্যা করা হোক, কেউ বলল ট্রেনে পিষে ফেলা হোক, আবার কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে মারার প্রস্তাব দিল। কিন্তু শেষমেশ ঠিক হল—ম্যারিকে ক্রেনে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেওয়া হবে, আর তা স্বচক্ষে দেখার জন্য নাগরিকদের ডাকা হবে।
হাজারো মানুষ সেদিন জড়ো হয় এক অবলা জীবের “বিচার” দেখতে। ভারী চেন দিয়ে ম্যারিকে ক্রেনের হুকে বাঁধা হয়। চালু হতেই এক ঝটকায় তাকে ২০ ফুট ওপরে তুলে নিল ক্রেন। কিন্তু ভারে চেন ছিঁড়ে সে মাটিতে পড়ে যায়—মেরুদণ্ড ও পা ভেঙে যায়, রক্ত ঝরতে থাকে। তবু উন্মত্ত জনতা দয়া দেখায়নি। পুনরায় গলায় চেন বেঁধে উপরে তোলা হয় তাকে। প্রবল আওয়াজ আর ছটফটানিতে কেঁপে ওঠে দিক-বেদিক, তারপর চিরনিস্তব্ধতা। জনতার উল্লাসে সেদিন ভেঙে যায় মানবতার সমস্ত সীমা—“খুনি হাতি” তার প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—সেদিন কি সত্যিই খুনি মারা গিয়েছিল? নাকি ফাঁসির দড়িতে ঝুলেছিল মানবতা, সহানুভূতি ও সভ্যতার মুখোশ? ইতিহাস আজও সেই উত্তর খুঁজে বেড়ায়।
-----------------------------------------------------------------
লেখাটি সৈকত বিশ্বাস'এর। তাঁকে আমি চিনি না। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়ে ভালো লাগলো। শেয়ার অপশন খুঁজে না পাওয়ায় কপি করলাম।