01/06/2025
#মনিপুর_ট্যুর_প্ল্যান ❤️
❤️
ভারতের উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য যাদের একত্রে "সেভেন সিস্টারস্" স্টেট বলা হয়ে থাকে। এই রাজ্য গুলো হল - আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যাল্ড, মণিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং মেঘালয়। স্বাধীনতার পরবর্তীকাল থেকে গোটা ভারতের যেভাবে উন্নতি হয়েছে, কিন্তু উত্তর পূর্ব ভারতের এই রাজ্যগুলো সেই তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে থেকেছে, সেই জন্য সরকারী উদাসীনতা অনেকটা দায়ী। কিন্তু উত্তর পূর্ব ভারতের মানুষগুলো কিন্তু খুবই সহজ সরল সাধাসিধে, এর পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে শিক্ষার হারও ভারতের মূল ভূখন্ডের চেয়ে অনেকটাই বেশি।
উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কিন্তু ভরপুর, বেশ কিছু দারুণ দারুণ সব ট্যুরিস্ট স্পট আছে এই রাজ্যগুলিতে। এমন এমন অদ্ভূত জায়গা আছে যেগুলো বাকি ভারতবর্ষে আর কোথাও খুঁজলে পাবেন না। এই সাতটি রাজ্যই প্রায় স্বাধীনতার পরবর্তীকাল থেকে ট্যুরিসম শিল্পের তেমন কোনো বিকাশ হয়নি, তার জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী, সে দিকে না গিয়ে প্রসঙ্গে ফিরে আসি। যেহেতু এই পোস্টের মূল বিষয়বস্তু মণিপুরের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পট ও ট্যুর প্ল্যান তাই সেগুলোই নিয়েই আলোচনা করা যাক।
©️ ভ্রমন পিপাসু
#মণিপুর_কিভাবে_পৌঁছোবেন :- মণিপুরের কোনো ট্রেন লাইন নেই ( ত্রিপুরা থেকে জিরিবাম হয়ে সম্প্রতি একটি লাইন হয়েছে এবং কাজ চলছে তবে ট্রেনে যোগাযোগ খুব একটা ভালো না) তাই আপনাদের ত্রিপুরা পৌঁছতে হলে দুভাবেই পৌঁছতে হবে এক ফ্লাইট, দুই সড়কপথে। আপনাকে মণিপুর পৌঁছতে হলে সর্বপ্রথম রাজধানী ইম্ফলে পৌঁছতে হবে। ইম্ফল এয়ারপোর্টও আছে আপনি চাইলে গৌহাটি, কলকাতা বা দিল্লী থেকে সরাসরি চলে আসতে পারবেন। আর কম খরচে আসতে চাইলে আপনাকে বাইরোড আসতে হবে। যার জন্য আপনাকে ট্রেনে আগে আসতে হবে গৌহাটি, ডিমাপুর, বা শিলচর তারপর সড়কপথে শেয়ার গাড়ি, রিজার্ভ গাড়ি বা বাসে আপনাকে পৌঁছতে হবে ইম্ফলে।
গৌহাটি বা ডিমাপুর থেকে দিনে বেশ কয়েকটা বাস চলে ইম্ফলে আসার জন্য, শিলচর থেকেও যায়। আবার ডিমাপুর থেকে বিভিন্ন ছোটো শেয়ার গাড়ি ও চলাচল করে। একইরকম ভাবে আসামের শিলচর থেকেও শেয়ার সুমো গুলো চলাচল করে জিরিবাম হয়ে ইম্ফলে। এছাড়াও আরো একটা কাজ করতে পারেন আপনারা নাগাল্যান্ড ঘুরে কোহিমা থেকে ডিমাপুর থেকে আসা বাস ও শেয়ার গাড়ি গুলো ধরে নিয়ে ইম্ফল চলে আসতে পারেন।
#কোন_সময়ে_মণিপুর_আসবেন :- মণিপুর আপনি চাইলে সারাবছরই আসতে পারেন, তবে আমি বলবো এই বর্ষাকালটিকে বাদ দিয়ে বাকি যেকোনো মাসেই আসতে পারেন। মোটামোটি জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই চার মাস বাদে আপনি আসার চেষ্টা করবেন, কারণ মণিপুরের রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব একটা ভালো না, আর বর্ষাকালে সেগুলো আরো খারাপ হয়ে যায়। এটাই মানা করার প্রধান কারণ। অক্টোবর থেকে মার্চ এখানে আসার সেরা সময়।
#মণিপুরের_বিভিন্ন_ট্যুরিস্ট_স্পট :- সবার আগে মণিপুরের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পট গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরা যাক। ভারতের অন্যান্য প্রান্তের ও অন্য রাজ্যের ট্যুরিস্ট স্পট গুলো সম্পর্কে আমরা কম বেশি জানলেও এই রাজ্যের এরকম অনেক সুন্দর সুন্দর দেখার জায়গা আছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা প্রায় জানিও না বা বলতে গেলে জানার চেষ্টাও করিনি। বর্তমানে স্যোসাল মিডিয়ার কল্যাণে বেশ কিছু জায়গা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এমনিতে এই দু-রাজ্যে দেখার মত প্রচুর জায়গা আছে কিন্তু ৩ থেকে ৪ দিনের সময়ে আপনারা যেকটি জায়গা আপনারা দেখে নিতে পারবেন সেগুলোই আমি তুলে ধরবো।
#মনিপুরের_ট্যুরিস্ট_স্পট :-
১. কেইবুল লামজাও ন্যাশনাল পার্ক
২. লোকটাক লেক।
৩. ইমাম কৈথল (এশিয়ায় বৃহত্তম মহিলাদের মার্কেট)
৪. INA মিউজিয়াম & মেমোরিয়াল, মৈরাং ।
৫. কাংলা ফোর্ট।
৬. চুরাচন্দ্রপুর।
৭. মোরেহ বর্ডার।
৮. শ্রী গোবিন্দজি মন্দির, ইম্ফল।
৯. ইম্ফল ওয়ার মেমোরিয়াল
িউজিয়াম_মৈরাং :- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিষ্ণুপুর জেলার মৈরাং শহরটির একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। কারন ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই এপ্রিল এই মৈরাং এর মাটিতেই নেতাজীর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারতের মধ্যে প্রথম দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলো। তার ফলে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পাশাপাশি বাঙালিদের কাছেও এই জায়গাটির গুরুত্ব খুবই বেশি, কিন্তু এই জায়গাটি সম্পর্কে আমরা কেউই প্রায় জানি না।
INA যেই জায়গাটিতে এই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিল সেখানে বর্তমানে একটি মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে, যা INA Martyr's Meuseum নামে পরিচিত, যেখানে INA বা নেতাজি সমন্ধে যুক্ত বহু মূল্যবান সম্পদ, নথি এখানে রাখা আছে।
ার_মেমোরিয়াল :- মণিপুরের আরো একটি অদেখা জায়গা যে জায়গাটি ইতিহাসের দিক বাঙালি তথা ভারতবাসির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই জায়গাতেই নেতাজির নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ ব্রিটিশদের পরাজিত করে সর্বপ্রথম ভারতের মাটিতে দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
জায়গাটি হল মৈরাং যেখানে লোকটাক হ্রদটি অবস্থিত। মৈরাং আসলে আপনার একসাথে দুটি জায়গা দেখা হয়ে যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেতাজির নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ ঘাঁটি গেরেছিলো জাপানি অধিকৃত বার্মাতে। এই বার্মা থেকেই আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের মূল ভূখন্ডে আক্রমণ শুরু করে নেতৃত্বে ছিলেন INA কমান্ডার শওকত মালিক, তার নেতৃত্বেই INA মণিপুরের মৈরাং দখল করে সেখানে ভারতীয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
এই মৈরাং এ একটি INA মিউজিয়ামও বর্তমানে গড়ে তোলা হয়েছে। এবং নেতাজির একটি আবক্ষ মূর্তিও গড়ে তোলা হয়েছে। এই মিউজিয়ামের আজাদ হিন্দ ফৌজের ব্যাবহূত বিভিন্ন সামগ্রী এখানে আসলে দেখতে পাবেন। এই মৈরাং আসা খুবই সহজ, রাজধানী ইম্ফল থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১ ঘন্টা। এখানে আসতে আপনারা কেইবুল লামজাও ন্যাশনাল পার্ক ও সাথে সাথে দেখে ফেলতে পারবেন।
#কাংলা_ফোর্ট :- মনিপুরের রাজধানী ইম্ফলের একেবারে কেন্দ্রস্থলে ইম্ফল নদীর তীরে এই প্রাচীন ফোর্ট । কাংলা ছিল নিংথৌজা রাজবংশের ( 33 CE থেকে 1891 CE) মেইতি শাসকদের প্রশাসনের আসন। বর্তমানে এই প্রাসাদের অনেক অংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গিয়েছে।
এই কাংলা ফোর্টের ভেতরে দেখার মত অনেক কিছুই আছে তার মধ্যে বেশ কিছু জায়গার নাম আমি উল্লেখ করে দিচ্ছি যেমন - মেইতি হেরিটেজ পার্ক, প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর, পাখংবা মন্দির, কাংলা বোটইয়ার্ড, পোলা গ্রাউন্ড, কাংশালা, সিংহ দেবতা নংশাবাকে উৎসর্গ করা এক জোড়া ভাস্কর্য, রাজকীয় বাসভবন প্রভৃতি, আর অনেক কিছু।
#ইমা_কৈথাল :- ইমা কৈথাল কথাটির অর্থ মায়েদের মার্কেট এটি মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের পাওনা বাজারে বসে থাকে। এটি পুরোপুরি মহিলাদের পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত একটি বাজার, এই বাজারে পুরুষ বিক্রেতাদের বসার ও কোন জিনিস বিক্রি করার কোনো অধিকার নেই।
এই ইমা মার্কেটটি এশিয়ার বৃহত্তম মহিলাদের পরিচালিত বাজার এবং এটি বিশ্বের একমাত্র বাজার যা সম্পূর্ণভাবে নারী দ্বারা পরিচালিত হয়। এই মার্কেটটি ১৬ শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রায় ৫০০০ মত মহিলা বিক্রেতা তাদের বিভিন্ন ধরনের পণ্য এখানে বিক্রি করে থাকে। বর্তমানে এটি মণিপুরের একটি জনপ্রিয় পর্যটনস্থল, মণিপুরে যদি ঘুরতে আসতে তবে এই জায়গাটি একটি Must Visited.
এছাড়াও আছে অনেক জায়গা যেগুলো সম্পর্কে ইনফরমেশন আমি ট্যুর প্ল্যানের সাথে দিয়ে দেবো।
#পারমিট :- মণিপুরে প্রবেশের জন্য আপনার পারমিটের প্রয়োজন, যাকে Inner Line Permit ( ILP) বলে। আপনি এই পারমিট অনলাইন অফলাইন দু ভাবেই করতে পারেন। তবে আমি বলবো অনলাইনে আগে থেকে করা যাওয়াই ভালো। অনলাইন সাইটে গিয়ে খুব সহজে এই ILP করে নিতে পারবেন, আর আগে হোটেল বুকিং Details দেওয়া বাধ্যতামূলক।
#ট্যুর_প্ল্যান :- মণিপুরের ট্যুর নিয়ে করা এই পোস্টে আমি ৩ দিনের একটা ট্যুর প্ল্যান আপনাদের দিচ্ছি । তার সাথে যাওয়া আসা ব্যাপারটা আলাদা। আপনাদের এই প্ল্যানটা শুরু হচ্ছে মনিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে থেকে। ইম্ফল আপনারা দুভাবেই পৌঁছতে পারেন ফ্লাইট অথবা বাইরোড। কিভাবে পৌঁছোবেন সেটা আমি আগেই উল্লেখ করে দিয়েছি।
#প্রথম_দিন :- ধরে নিলাম আপনারা ইম্ফল পৌঁছে গিয়েছেন বাস, ফ্লাইট এমনভাবেই বুক করবেন যেগুলো সকালে আপনাকে ইম্ফল পৌঁছে দেবে। বাইরোডে আসলে ডিমাপুর থেকে বাসে আসতে আপনাদের বিকেল হয়ে যেতে পারে। তাই সেদিন হোটেলে থেকে নেক্সট দিন থেকে আপনাদের ট্যুর শুরু করবেন। হোটেল আগে থেকে বুক করে আসবেন একেবারে ৪ দিনের জন্য। হোটেল বুক ছাড়া আপনি কিন্তু ILP পাবেন না ।
দিন সকাল সকাল উঠে ব্রেকফাস্ট করে আপনাদের একটা অটো রিজার্ভ করে ফেলতে হবে। এছাড়াও আপনারা গাড়িও রিজার্ভ করতে পারেন। আজ আপনারা যাবেন মৈরাং যা মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় অবস্থিত একটি শহর। এই মৈরাং কে কেন্দ্র করে একসাথে আপনারা তিনটি জায়গা দেখে ফেলতে পারবেন, এক লোকটাক লেক, কেইবুল লামজাও ন্যাশনাল পার্ক, তিন INA মিউজিয়াম। সবগুলো জায়গায় পাশাপাশিই অবস্থিত। সেইজন্য একটা অটো রিজার্ভ করে জায়গা গুলো খুবই সহজে দেখে ফেলতে পারবেন। ইম্ফল থেকে এই মৈরাং পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা। অটো ভাড়া নিতে পারে ১৫০০ - ১৬০০ টাকার মত। মৈরাং পৌঁছে সবার প্রথমে দেখে নেবেন INA মিউজিয়াম বা মেমোরিয়াল, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে। টিকিট মুল্য - ২০ টাকা, সোমবার এটি বন্ধ থাকে।
মিউজিয়ামটি দেখে তারপর ঘুরে নিন উত্তর পূর্ব ভারতের বৃহত্তম লেক লোকটাক লেক। এখানে বোটিং এর ও ব্যবস্থা আছে, এই লোকটাক লেকের প্রধান বিশেষত্ব হল ভাসমান ঘাস যাদের থুমডিস বলে, যার ওপরে পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান ন্যাশনাল পার্ক - কেইবুল লামজাও অবস্থিত। এই থুমডিস গুলোর ওপরে ভাসমান বিভিন্ন হোমস্টে ও আছে, আপনি চাইলে এই হোমস্টে গুলোতে একটা রাত থাকতেও পারেন, থাকা খাওয়া সহযোগে একটা আলাদাই অভিজ্ঞতা হবে এটা বলতে পারি। তবে বর্তমানে সরকার থেকে এই ভাসমান হোমস্টে গুলোকে বন্ধ করে দিয়েছে কারণ এতে লেকের জল নোংরা হচ্ছিলো এবং দূষণ ছড়াচ্ছিলো, হাতে যদি একটা দিন না থাকে তাহলে এগুলো দেখে ফিরে চলে আসতে পারেন।
এরপর এই লোকটাক লেক দেখে সোজা চলে আসুন যার কথা আগে বললাম সেই ভাসমান কেইবুল লামজাও ন্যাশনাল পার্কে দুরন্ত মোটামোটি ২০ কি.মি। এই কেইবুল লামজাও ভাসমান ন্যাশনাল পার্ক হওয়া ছাড়াও আর যে কারণে বিখ্যাত সেটা হল সাংগাই ডিয়ার, এক বিশেষ প্রজাতির হরিণ যা কেবলমাত্র এই ন্যাশনাল পার্কেই দেখতে পাবেন। এটিও কিন্তু সোমবার বন্ধ থাকে। এই ভাবেই একই দিনে এই তিনটি জায়গা দেখে ফেরার আগে মৈরাং থেকে লাঞ্চ করে আবার ইম্ফল ব্যাক চলে আসুন সন্ধ্যার মধ্যে।
#দ্বিতীয়_দিন :- দ্বিতীয় দিন আপনাদের গন্তব্য মোরেহ, ভারত - মিয়ানমারের বর্ডার। ইন্ডিয়া-মিয়ানমার বর্ডার - মোরে, মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে ১১০ কি.মি দূরে অবস্থিত ভারতের সীমান্ত শহর মোরে। কিন্তু আপনি এই মোরে তে কেনো আসবেন? কারন এখানে আসলে আপনি খুব কাছ থেকে মিয়ানমারকে তো দেখতে পাবেনই তার সাথে সাথে বিনা ভিসা ও পাসপোর্টে আপনি একদিনের জন্য মিয়ানমার ঘুরেও আসতে পারবেন, শুধু আপনারা দরকার হবে একটি আধার কার্ড। একদিনের জন্য ঘুরে মিয়ানমার বর্ডারের ওপারে অবস্থিত মিয়ানমারের মার্কেট থেকে কেনাকাটা এবং খাওয়া দাওয়া সব কিছুই করে আবার বিকেলের মধ্যে ফিরে আসতে হবে। এই সুবিধা একমাত্র আপনি এই মোরে বর্ডারেই পাবেন।
মণিপুর হয়েই আসতে হবে, মণিপুরের মোরেহ বর্ডারের। মণিপুরের রাজধানী শহর ইম্ফল থেকে প্রায় ১১০ কি.মি দূরে অবস্থিত এই সীমান্ত শহর মোরে বা মোরেহ। বর্ডারের উল্টো দিকেই আছে মিয়ানমারের টামু শহর।সেইজন্য এই বর্ডারকে মোরেহ বর্ডার বা মোরেহ টামু বর্ডার ও বলা হয়ে থাকে।
#মোরে_টাউন :- মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে ১১০ কি.মি দূরে অবস্থিত এই মোরেহ শহরকে মিনি ইন্ডিয়া ও বলা হয়ে থাকে। শহরটি ছোট্টো হলেও আপনি এখানে সমস্ত কিছু পাবেন, ভারতের প্রায় সমস্ত অঞ্চলের মানুষদের এখানে দেখতে পাবেন। এই শহরটি সীমান্ত শহর হওয়ার জন্য বড় ব্যাবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে তার সাথে চোরাই মালের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র। এই মোরেহ শহরের মার্কেট থেকে আপনি চীনা, বর্মী, থাইল্যান্ডের বিভিন্ন সামগ্রী খুব কম দামে পেয়ে যাবেন, যা চোরাই পথে এই মোরেহ শহরে এসে থাকে। এই জন্য ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তার মধ্যে মারোয়ারী, পাঞ্জাবি, বিহারী, তামিল বাঙালি রাজস্থানী লোকেদের এখানে পেয়ে যাবেন, এবং সেই জন্য, বিভিন্ন রাজ্যের খাওয়ার এখানে পেতে আপনার কোনো অসুবিধা হবে না। অনেকে আছে যারা একসময় মিয়ানমারে থাকতো, সেনা শাসনের সময়ে তারা ওই দেশ ছেড়ে এই মোরে তে এসে স্থায়ী ভাবে থাকা শুরু করে। মোরেতে আপনি সাধারণ মানের, মাঝারি মানের অনেক হোটেল পেয়ে যাবেন রাতে থাকার জন্য। মোরেতে আসলে আরো একটি জিনিস খুব লক্ষ্য করবেন সেটা হলো নাম্বারপ্লেট বিহীন এক ধরনের বাইক, যাদের কেনবো বাইক বলে, এগুলো আসলে মিয়ানমারের বাইক যা খুব কম দামে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে এই মোরে এবং আসে পাশের এলাকায় নিয়ে আসা হয়। দাম কম সাথে নাম্বার প্লেট লাগানোর খরচা ও অনেকটা বেঁচে যায়, সেইজন্য ভারতীয় বাইক থেকে এই কেনবো বাইক বেশি মাত্রায় দেখতে পাবেন।
টামু- মিয়ানমার :- ভারতের মোরে বর্ডার থেকে উল্টো দিকেই আছে এই টামু শহর। আপনি যদি বাই রোড মিয়ানমার আসতে চান তাহলে আপনাকে এই টামু শহর হয়েই যেতে হবে মিয়ানমারের বাকি অংশে। টামু থেকে মান্দালয় বা রাজধানী নাইপিতাও যাওয়ার জন্য বাস পেয়ে যাবেন। মোরেহ থেকে টামু শহরের দূরত্ব মাত্র ৩ কি.মি। বর্ডার ক্রস করেই অটো বা যে কাউকে পেয়ে যাবেন তবে একটা জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখবেন যদি আপনারা নিজস্ব গাড়ি বা বাইক নিয়ে আসেন সেটা হলো, মিয়ানমারে কিন্তু ড্রাইভিং করার ক্ষেত্রে আমেরিকার রুলস্ ফলো করে মানে ডান সাইড হয়ে ড্রাইভিং, রাস্তায় এরকম অনেক বোর্ড ও দেওয়া থাকবে। গাড়ি চালানোর সময়ে এটা আপনাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। টামু শহরের আগেই অবস্থিত একটি বড় মার্কেট যার নাম নাফালং মার্কেট, এই মার্কেট তেই একমাত্র আপনি বিনা ভিসাতে যেতে পারবেন, মিয়ানমারের এই নাফালং মার্কেটের বাইরে আপনার যাওয়ার কোন পারমিশন নেই, এখানে খুব কম দামে জিনিস কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া চাইলে করে নিতে পারেন। সস্তাতে শপিং করতে হলে এই মার্কেট থেকে করতে পারেন।
যাইহোক আপনারা ইম্ফল থেকে এই মোরে বর্ডার আসার জন্য বাসে আসতে পারেন ভাড়া ১৫০ টাকার মতো নিতে পারে। অথবা আপনি শেয়ার গাড়ি গুলোতে ও এখানে আসতে পারেন সময় অনেক কম লাগবে এবং ভাড়া নেবে ৩০০ টাকা। বাস স্ট্যান্ডে নামার পর যেকোনো অটোতে বর্ডার চলে আসবেন।
বিনা ভিসায় ও পাসপোর্টে আপনি যদি মিয়ানমার যেতে চান তাহলে আপনার ভারতীয় যেকোনো একটি আইডেন্টিটি কার্ড লাগবে, আধার কার্ড বেশী প্রযোজ্য।
মোরে তে মিয়ানমার বর্ডারে দু দেশের মধ্যে দুটি গেট আছে একটি গেট নাম্বার এক, এবং একটি গেট নাম্বার দুই। আপনি ভিসা পাসপোর্ট নিয়ে কয়েকদিনের জন্য মিয়ানমার যেতে চান তাহলে আপনাকে গেট নাম্বার এক দিয়ে যেতে হবে, এখানে ইমিগ্রেশন সেন্টারও আছে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করে একটি ইন্দো - মিয়ানমার ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ ক্রস করেই ওপারেই মিয়ানমার। আপনি এখানে এসে অটো একবার ঘুরে যেতে পারেন। আর আপনি আধার কার্ড দিয়ে যেতে চাইলে আপনাকে গেট নাম্বার দুই দিয়ে যেতে হবে এখানে ফ্রেন্ডশিপ গেটও আছে, এখানে আধার কার্ড দেখিয়ে ওপারে অবস্থিত নাফালং মার্কেট আসে পাশে কিছু এলাকা ঘুরে নিতে পারেন। সাথে এই মার্কেট থেকে খুব কম দামে বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়ও করতে পারবেন, যেগুলো ইন্ডিয়ান মার্কেটে দাম টা একটু বেশি, মোর থেকে অনেকেই এই মার্কেট থেকে বিভিন্ন সামগ্রী কিনে নিয়ে যায়, এমন কি আপনার প্রায় গোটা মণিপুরেই এই নাফালং মার্কেটের বিভিন্ন জিনিস পেয়ে যাবেন। এর সাথে সাথে আপনারা খাওয়ার দাওয়ার করতে চাইলেও করতে পারবেন, তবে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে, আপনাকে কিন্তু বিকেল ৪টা মধ্যে বর্ডার ক্রস করে আবার মোরে ফিরে আসতে হবে। নাহলে কিন্তু সমস্যা ও কিছুটা হলে ও হতে পারে।
বর্ডার দেখে নিয়ে আবার বাসে, শেয়ার গাড়ি বা রিজার্ভ গাড়িতে আবার সেদিনই ফিরে চলে আসুন ইম্ফলে। যাওয়ার সময়েই ফেরার বাসের টাইমটা একটু আগে থেকে শুনে রাখবেন তাহলে ফেরার সময়ে বাস মিস হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না। ইম্ফলে পৌঁছে হোটেলে ফিরে রেস্ট নিন, এবং দ্বিতীয় দিনের আপনাদের মনিপুর ভ্রমনের ইতি ঘটবে।
#তৃতীয়_দিন :- তৃতীয় দিন আমাদের ট্যুরটা থাকবে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলকে কেন্দ্র করেই এবং মাত্র ২, ৩ টে জায়গায় আপনাদের এই ট্যুরে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, আপনি চাইলে এই তৃতীয় দিনের প্ল্যানটাকে বাদও দিতে পারেন। তৃতীয় দিনের প্ল্যানে আপনারা দেখে নেবেন - তিনটে জায়গা - কাংলা ফোর্ট, ইমা মার্কেট, এবং মণিপুর স্টেট মিউজিয়াম। এই তৃতীয় দিনের ট্যুরে আপনাদের কোনো গাড়ি বা অটো রিজার্ভ না করলেও হবে। শেয়ার অটোতে জায়গা গুলো কভার করে নিতে পারবেন।
প্রথমেই ব্রেকফাস্ট চলে আসুন ইমা মার্কেটে যা ইমা কৈথাল নামে পরিচিত। ইমা কথার অর্থ - মহিলা এবং কৈথাল - মার্কেট। এটি একটি সরকারি অনুমোদিত মহিলাদের পরিচালিত একটি মার্কেট, এই মার্কেট সম্পর্কে বিস্তারিত আমি আগেই উল্লেখ করে দিয়েছি। তাই সেদিকে আর গেলাম না, মার্কেটটি ভালো ভাবে ঘুরে দেখতে আপনাদের প্রায় অনেকটা সময়ই লেগে যাবে।
ইমা মার্কেটটি দেখে চলে আসুন ঠিক পাশেই ইম্ফলের কাংলা ফোর্টে, প্রাচীন মনিপুরের রাজকার্জ যেখান থেকে পরিচালিত হতো এই সেই জায়গা। জায়গাটির বর্তমানে ভালো ভাবে সংস্কার করা হয়েছে। সোমবার বাদে যেকোন দিন আপনি চাইলে এই কাংলা ফোর্টে আসতে পারেন। ভিতরে দেখার মত প্রচুর জায়গা আছে যেগুলো ওপরে আমি উল্লেখ করে দিয়েছি। যেহেতু এখানে দেখার জায়গা প্রচুর আছে তাই দেখতে আপনাদের অনেকটা সময় লেগে যাবে, যদি আপনাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, স্থাপত্যের প্রতি আকর্ষন থেকে থাকে। এই কাংলা ফোর্টে ঢোকার গেটটিও কিন্তু বেশ সুন্দর।
এই কাংলা ফোর্ট দেখে নিয়ে দুপুরের লাঞ্চটা করে নিন তারপর চলে আসুন পরের গন্তব্য মণিপুর স্টেট মিউজিয়ামে এটি ও একদমই ঠিক কাংলা ফোর্টের পাশেই অবস্থিত। এখানে দেখতে পাবেন মণিপুরের প্রাচীন কালচার, তাদের ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনাপন্জির দলিল আরো অনেক কিছু। এরপর দেখে নিন ইম্ফল ওয়ার মেমোরিয়াল এবং শ্রী গোবিন্দজী মন্দির। আমি আগেই বলেছিলেন আপনাদের হাতে যদি সময় কম থাকে তাহলে তৃতীয় দিনটাকে বাদ ও দিতে পারেন। এগুলো দেখে নিয়ে এরপর চলে আসুন আপনাদের বুক করা হোটেলে। হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে বিকেলটা আশপাশে বা মার্কেট গিয়ে কেনাকাটা করে নিতে পারেন বা পরের দিন ভোরে ডিমাপুর বা গৌহাটির বাসের টিকিট টা কেটে নেবেন।
পরের দিন সকালে উঠেই যদি ফ্লাইটের টিকিট থাকে তাহলে গাড়ি করে এয়ারপোর্টে রওনা দিন নাহলে স্ট্যান্ডে চলে আসুন আপনাদের বাস ধরার জন্য। ইম্ফল থেকে ডিমাপুর পৌঁছতে আপনাদের ৮ ঘন্টা তো লেগেই যাবে, বিকেলে হয়তো পৌঁছে যাবেন তারপর রাতের ট্রেন ধরে ফিরে চলে আসুন, সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতা গুলো নিয়ে ফিরে আসুন বাড়িতে।
#হোটেল_ইম্ফল :- ইম্ফলের কিছু ভালো হোটেলের নাম তাদের নাম্বার আপনাদের সুবিধার্থে দিলাম, আপনারা ফোন করে দেখতে পারেন...
১. শিরুই লিলি হোটেল - 0385 244 4446
২. হোটেল নির্মলা - 0385 245 8904
৩. কাংলা ইন - 0385 244 1849
৪. হোটেল মেট্রো ( মিডিয়ার রেঞ্জ)
#খরচা :- আমি আপনাদের ৩ রাত ৩ দিনের ট্যুর প্ল্যান দিলাম আপনারা চাইলে একটা দিন কমাতে ও বাড়াতে পারেন।
এবার আসি প্রধান বিষয়ে, সেটা হলো এই ট্যুরের খরচা। আপনারা যদি গ্রুপে ৪ থেকে ৫ জন আসেন তাহলে এই ৩ রাত ৩ দিনের জন্য আপনাদের পার হেড প্রায় ৬ - ৭ হাজার টাকা খরচা হতে পারে, এর বাইরেও আছে কিছু এক্সট্রা ধরে রাখতে পারেন। যেমন ট্রেন ভাড়া, বা ফ্লাইট, বিভিন্ন এন্ট্রিফি, অ্যাক্টিভিটি বাস এবং অটো ভাড়া। আপনি যদি লোকাল ট্রান্সপোর্ট ইউজ করেন তাহলে খরচ আরো কমে যাবে।
Courtesy: Santanu Adak