03/07/2024
ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়তাম ভোরে উঠতাম।বাবা একটা সাদা এলার্ম ঘড়ি কিনে দিয়েছিলো ক্লাস টেনে, যেটাতে এলার্ম দিতাম। ভোর চারটেয় উঠে একদফা পড়ে নিতাম সকালে উঠে মুখ ধুয়ে মিছরির সরবত, ছোলা ভেজানো খেয়ে আবার ছটায় পড়তে বসতাম মাঝে আবার কোনদিন ঘুমিয়ে ও পড়তাম।
যেদিন টিউশন থাকত সেদিন আলাদা রুটিন। মাঝে মা এসে চা আর দুটো লেড়ো বিস্কুট কিংবা দুটো পাউরুটি ঘি ভেজে চিনি দিয়ে দিয়ে যেত। অঙ্ক আর ভুগোল ভালোলাগার বিষয় ছিল। টেস্ট পেপার করতে আরো বেশি ভালো লাগতো তখন কিন্তু আমার অঙ্কের উত্তর মিলতো না কেন জানিনা যেভাবে এখন জীবনের উত্তর গুলো মেলাতে পারিনা। যাক অঙ্ক নিয়ে সে কথা পরে বলবো না হয়।
পড়ে উঠে স্নান করতে যেতাম আমাদের পুরানো বাড়িতে। সে এক দিন ছিল আমরা ভাই বোনেরা মিলে অনেকজন, কলতলায় সে এক দৃশ্য চলতো রোজ। চুলোচুলি ছুটোছুটি কে আগে বাথরুমে ঢুকবে সে নিয়ে চলতো ঝগড়া, জল ছোঁড়াছুঁড়ি কখনও কখনও মা কাকিমা এসে দু এক ঘা পিঠে দিতো।
ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত, ডাল, আলু সেদ্ধ, ঘি আর মাছ ভাজা এই ছিল রোজের খাবার। তাড়াতাড়ির ঠেলায় সবজি জুটতোনা বেশির ভাগ দিনই যেদিন সকালে সবজি না খেয়ে যেতাম মা রেখে দিতো, বিকেলে এসে খেতাম। ছোট থেকেই আমার সবজি খুব পছন্দের। মোটামুটি দশটা দশ পনেরো করে বাড়ি থেকে বেরোতাম। ঝড়ের গতিতে হাঁটতাম দশ মিনিট লাগতো। মা পাঁচ টাকা করে দিতো তখন ক্লাস ইলেভেনে উঠে দশটাকা হয়েছিলো সেটা। স্কুল থেকে ফিরে আবার টিউশন কখনও একটা কখনও দুটো, ফিরতে ফিরতে রাত। বাবা এগিয়ে যেতো আনতে। তখন ফোন ছিলোনা স্যারের ফোনে বাবাকে বলে দিতাম আনতে আসো।
একটু টিভি দেখতাম জানিনা কেন টিভি সিরিয়াল দেখতে আমার ভালো লাগতো কখনও তাই মায়ের সাথে রান্নার কাজ করতাম ছোট থেকেই। রাতের খাবার খেয়ে আবার পড়তে বসা। রাত জাগতে আমার ভালো লাগতো না কোন কোনদিন বই খুলেই বইয়ের ওপর ঘুমিয়ে যেতাম। মা কিংবা বাবা এসে ঠিক করে শুইয়ে দিতো ঘুমিয়ে পড়লে তখন আমি মরা এতো ঘুম ছিল আমার। এই অকৃত্রিম দিন গুলো সহজ সরল ভালোবাসার হিসাব গুলো বেশ ছিল।
Annesha Jana
----অনুকথিকা