17/07/2025
সুরের অমলছায়ায় আরতি মুখার্জি: আজ তাঁর জন্মদিনে এক শ্রদ্ধার্ঘ্য
Joy Bangla Sambad
১৮ জুলাই, ১৯৪৩—ঢাকার বুকে জন্ম নিয়েছিলেন এক সুরময় বিস্ময়, যিনি পরবর্তী কালে হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী। তিনি আর কেউ নন—আরতি মুখার্জি। সংগীত, আবেগ এবং ঐতিহ্যের এক অনন্য মেলবন্ধনের নাম আজও তাঁর কণ্ঠ।
সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এক পরিবারে জন্ম নিয়ে সংগীত ছিল তাঁর রক্তে মিশে থাকা এক উত্তরাধিকার। ছোটবেলা থেকেই মা-ই ছিলেন তাঁর প্রথম গুরু। সংগীতের প্রথম পাঠ, প্রথম সাধনা, প্রথম নীরব কান্নাও জড়ানো ছিল মা-র ছায়াতেই। এরপর সুশীল বন্দ্যোপাধ্যায়, ওস্তাদ মোহাম্মদ সাগিরউদ্দিন খান, পণ্ডিত চিন্ময় লাহিড়ী, লক্ষ্মণ প্রসাদ জয়পুরওয়ালা এবং রমেশ নাদকর্ণির মতো গুণী গুরুর ছায়ায় তিনি পেয়েছিলেন সংগীতের গভীরতা, প্রসার এবং আধ্যাত্মিকতা।
তাঁর প্রতিভার প্রথম বড় স্বীকৃতি আসে "মেট্রো-মরফি কনটেস্ট" জেতার মাধ্যমে—যেখানে বিচারকের আসনে ছিলেন অনিল বিশ্বাস, নওশাদ, বসন্ত দেসাই এবং সি রামচন্দ্রের মতো কিংবদন্তিরা। এর পর শুরু হয় তাঁর চলচ্চিত্র সংগীতের যাত্রা—১৯৫৮ সালে ‘সাহারা’ ছবির মধ্য দিয়ে। যদিও শুরুটা সহজ ছিল না, তবে হার মানেননি তিনি। ১৯৬২ সালে ‘কন্যা’ ছবি দিয়ে বাংলা গানের দুনিয়ায় পা রাখা—আর তারপর থেকেই শুধু এগিয়ে চলা।
ষাটের দশকের শেষ থেকে আশির দশক অবধি বাংলা গানের জগতে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল তাঁর। তাঁর কণ্ঠে যেমন ছিল মাধুর্য, তেমনই ছিল অভিনব আবেগের সূক্ষ্মতা। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পর বাংলা সিনেমার গানে যে শূন্যতা তৈরি হচ্ছিল, তা পূরণ করেন আরতি মুখার্জি।
সুচিত্রা সেন, মাধবী মুখার্জি, দেবশ্রী রায়, তনুজা কিংবা রাখি—প্রায় প্রতিটি অভিনেত্রীর সুরের আড়ালে শোনা যেত তাঁর কণ্ঠ। ‘গল্প হলেও সত্যি’, ‘ছুটির ফাঁদে’, কিংবা হিন্দি ছবিতে ‘তপস্যা’, ‘মাসুম’-এর মত সিনেমায় তাঁর গান সময়কে ছাপিয়ে গিয়েছে।
নিজের সঙ্গীত জীবনে নানান সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছেন এই কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী। ১৯৬৫ সালে বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার
১৯৬৭: 'গল্প হলেও সত্যি' ছবির জন্য সেরা মহিলা প্লেব্যাক
১৯৭৬: 'ছুটির ফাঁদে' সিনেমার জন্য বিএফজে পুরস্কার
১৯৮৪: ফিল্মফেয়ার—‘মাসুম’ ছবির ‘দো নয়না’ গানের জন্য সেরা নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী
গুজরাট সরকার থেকে টানা তিন বছর শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী
২০১৫: উড়িষ্যা সরকারের লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট
২০১৬: টাইমস অফ ইন্ডিয়া গ্রুপের আজীবন সম্মাননা
আরতি মুখার্জির ব্যক্তিজীবনেও ছিল বহু চড়াই-উৎরাই। সুবীর হাজরার সঙ্গে বিচ্ছেদ, পরে নতুন করে সংসার—তবুও সংগীত ছিল তাঁর নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। তিনি কখনও বিনয়ের আবরণ ভেদ করেননি, বরং শিল্পে ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।
আজ তাঁর জন্মদিন। বাংলা সঙ্গীতের এক সোনালি অধ্যায়ের জন্মদিন। তিনি আমাদের শোনাননি শুধু গান, তিনি শোনান হৃদয়ের কথা। তাঁর কণ্ঠে ছিল আত্মার ছোঁয়া, বাংলার মাটি, আর এক অনন্ত মুগ্ধতা।
আজকের দিনে, আমরা শ্রদ্ধায় অবনত হই সেই কণ্ঠের সামনে, যিনি আমাদের কানে পৌঁছে দিয়েছেন প্রেম, বেদনা, আশা আর স্বপ্নের সুর।
শুভ জন্মদিন আরতি মুখার্জি। বাংলা ও ভারতীয় সংগীতজগত আপনাকে চিরকাল মনে রাখবে।
Santanu Ray Santanu Ray Official জয় বাংলা সংবাদ Bengal News TODAY Kolkata Municipal Corporation Asansol " CITY OF BROTHERHOOD "