04/07/2023
সে দেশে আজও রক্তকরবী ফোটে (৩)
জানলার কাঁচের ওপর দিয়ে বিকেলের রোদটা দেখলে, কেমন মনে হয় মেঘের আড়ালে একটা আলগা আলো। কিন্তু এই আলগা রোদটা, আমাদের গায়ে এসে পড়ে না, আমাদের ভিজিয়ে দেয় না এক নিমেষে। জানলা খুললেই যে রোদটা এসে গায়ে লাগে, সে রোদে ভিজলে আবার রাতে ভীষণ জ্বর আসে। সে জ্বরের খবর কে রাখে! ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে, সে জ্বরের ওপর রোজনামচার গল্প লেখা হয়। জ্বরের দাগগুলো ফিকে হয়ে যায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু শহরের কোনো চেনা গলিতে, তোমার সঙ্গে দেখা হলেই অসুখগুলো কেমন জানি ভীড় করে আসে। তারপর আবার ওরা মিলিয়ে যায় তোমার সাথেই।
এ শহরে যখন বৃষ্টি পড়ে, ভীষণ উদভ্রান্তের মতো উড়তে থাকে এই শক্ত সমর্থ রাস্তাগুলো। কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই এদের দাপট ছিল ভয়ঙ্কর। জলের মধ্যে টলতে থাকে ইমারত, তবু তোমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে কারণ তোমার চোখটা খুঁজে পাওয়া যায় দূর থেকে। বৃষ্টির জল তোমার চশমার কাঁচ ভেদ করে ঢুকে তোমার চোখকে ঝাপসা করতে পারে না। তাই তোমার চোখ এড়িয়ে বাঁচা যায় না। বারবার ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলাটা একটা অভ্যেস হত যদি তবে, আমার চশমা গুলো আরও বেশি টিকতো।
কিছু ফুল রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতেও কেমন থেকে যায়। যে রাস্তাগুলোতে মাঝরাতে কোনো আলো জ্বলে না, সেখানে সেই ফুলগুলো দিনের ইতিহাস লেখে। আমি সেই রাস্তাগুলোকে দেখি জানলা দিয়ে। সে রাস্তায় এক চিলতে রোদ এসে পড়লেই একটা ম্যাজিক হয়ে যায়। সে ম্যাজিক আমাকে আবার তোমার চোখের সামনে এনে ফেলে। তারপর সেই তোমার হেঁটে যাওয়া রাস্তাগুলোতে আমরা একসাথে হাঁটি, ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে। এই রাস্তা জুড়ে জুড়ে একটা দেশ রচনা করা যায়। যে দেশের মানচিত্র আঁকে অপেক্ষারা। সে দেশে আজও রক্তকরবী ফোটে।
-অস্মিতা